রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিপ্লব দাশগুপ্তর (Biplob Dasgupta) মৃত্যুর কারণ নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ– এ কথা রাজ্য সরকারকে স্বীকার করতেই হবে। এমনই দাবিতে সরব হল NMO সহ রাজ্যের প্রথম সারির ৬টি চিকিৎসক সংগঠন।
রাজ্যে এমন ঘটনা এই প্রথম। এর আগে কখনও কারও মৃত্যুর কারণ কী হবে, তা নিয়ে সরব হয়নি চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন। কিন্তু এবার দাবি উঠেছে, বিপ্লব দাশগুপ্ত রাজ্যের নোভেল করোনাভাইরাসের (Novel coronavirus) বিরুদ্ধে যুদ্ধর প্রথম চিকিৎসক হুতাত্মা।
ইতিমধ্যেই ঘোষণা অনুযায়ী, চিকিৎসকগণ সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ রাজ্যজুড়ে দু’মিনিটের নীরবতা পালন করেছেন বিপ্লববাবুর স্মৃতিতে। প্রত্যেকেই নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে এই দু’মিনিট সময় দিয়েছেন। Nmo সহ রাজ্যের চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় স্বাস্থ্য ভবন তথা নবান্ন বেশ চাপের মুখে পড়ল। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, এভাবে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠনের প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসে সরকারের কাছে এমন দাবি একেবারেই নজিরবিহীন।
গত ১৭ এপ্রিল কোভিড-১৯ (Covid-19) পজিটিভ ধরা পড়ে বিপ্লববাবুর। বেশ কয়েকদিন বেলেঘাটা আইডি (Beleghata ID) হাসপাতালে চিকিৎসা চলার পর তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভর্তি করা হয় সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সূত্রের খবর মাস আটেক আগে হৃদরোগের জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল। এই স্বাস্থ্য অধিকর্তার অত্যধিক মাত্রায় সুগার এবং হাইপার টেনশন ছিল বলেও জানা গেছে।
১৭ এপ্রিলের কয়েকদিন আগে থেকে জ্বর, সর্দির মতো উপসর্গ দেখা যায় এই স্বাস্থ্য কর্তার। সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।এরপর বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁর লালারসের নমুনা পাঠানো হয় টেস্টের জন্য। রেজাল্ট আসে পজিটিভ।শনি-রবিবার মাঝের রাতে মারা যান তিনি।
তাঁর মৃত্যুর পরে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের তরফে একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত বাংলার অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। অনেককে আবার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি ন্যশনাল মেডিক্যাল কলেজের এক ইন্টার্ন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক নার্স, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের স্টোর ইনচার্জ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
NMO সংগঠনে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৮০ জন ডাক্তার পয়লা এপ্রিল থেকে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলায় টেলিমেডিসিনের অংশ হিসেবে টেলিফোনের পরামর্শ প্রদান কর শুরু করেছেন ….. এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ অভাবগ্রস্ত লোকেরা এটির সুবিধা লাভ করছেন।
যেহেতু লোকেরা কোরোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যসেবা সংকটের কারনে খুব বিরক্ত ছিলেন … তাই এই টেলিফোনের পরামর্শদাতারা তাঁদের অনেক সাহায্য করছেন। যেসব ব্লাড ব্যাংকে রক্তের সংকট রয়েছে সেখানে এনএমও পশ্চিমবঙ্গ রক্ত দানে উদ্যোগ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে আসানসোলের ডাক্তার শ্রীকান্ত গাঙ্গুলির নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য।
এনএমও ক্রমাগত মানুষকে করোনা সম্পর্কে সচেতন করে চলেছেন সোশ্যাল মিডিয়া ,ভিডিও বার্তা ইত্যাদির মাধ্যমে ।
এনএমও ডাক্তাররা স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন .. এবং সেবা বিভাগের সাথে যুক্ত লোকেরা কীভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে কাজ করবেন সে বিষয়টি পরিষ্কার করছেন।
এনএমও বেঙ্গাল ১০০০ উচ্চমানের মাস্ক বিতরণ করতে চলেছেন । এছাড়াও ৫০০ টি উন্নত মানের ফেসশিল্ড , পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সকল সরকারী মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের মধ্যে ৫০০ টি পিস স্যানিটাইজার বিলি করবেন। ডাক্তাররা মানুষকে রক্ষার জন্য সম্মুখ লড়াই করছেন ….. চিকিত্সকরা, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী লড়াই করেন কেবল তেমনি একজন ব্যক্তিই লড়াই করেন না ….. যদি একজন ডাক্তার করোনা প্রভাবিত হন তবে তা অনেককে প্রভাবিত করতে পারে.. ..এমন বিবেচনায় এনএমও প্রথমে চিকিত্সকদের রক্ষা করার পদক্ষেপ শুরু করেছেন … তারপরে অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্যও করবেন।
এনএমও বেঙ্গল সংগঠন প্রয়াত ডাঃ বিপ্লব দাসগুপ্তের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মাননীয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন যেন তাঁর পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয় ।… এ ছাড়া NMO স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে একটি আবেদন পত্রে অনুরোধও করেছিলেন কিছু পদক্ষেপ নিতে ,যা যেসব ডাক্তাররা করোনার সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করছেন তাঁদের উপকার হতে পারে । এই আবেদন পত্ৰ অনুসারে পত্রক্তো বিষয় গুলি প্রয়োগ করলে চিকিৎসকগন এই সঙ্কটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে পারবে।
চিকিত্সক সংস্থা এনএমও অনুভব করে যে সমাজের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে দাঁড়ানোও তাদের নৈতিক কর্তব্য, এই করোনার সংকটে মানুষের জন্য অনেকগুলি সেবা কার্যক্রমও করছেন তারা – জানালেন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত NMO প্রতিনিধি ডাক্তার প্রভাত কুমার সিং।