পর্ব ৩
“সপ্তর্ষীণাং স্থিতির্যত্র যত্ৰ মন্দাকিনী নদী।
দেবর্ষিচরিতং রম্যং যত্র চৈত্ররথং বনং।”
মন্দাকিনী হল অলকানন্দার একটি উপনদী। কার্নিংহাম মন্দাকিনীকে বুন্ডেলখণ্ডের পৈশুন্ডির একটি ক্ষুদ্র উপনদী বলেছেন। এটি চিত্রকূট পর্বত এর উভয় পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে , তাই এর অপর নাম মাল্যবতী । এই নদীতে জলপদ্ম, শালুক ইত্যাদি জলজ ফুলের প্রাচুর্য পরিলক্ষিত হয়। মন্দাকিনী নদী বহু জলচর পাখির আবাসস্থল । স্বচ্ছতোয়া ,খরস্রোতা এই নদীর উভয় তীরস্থ বনরাজি সারা বৎসর কুসুমমন্ডিত হয়ে থাকে।
নদী ও তটসন্নিহিত অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি রম্য ও পুণ্য পরিবেশে যে সকল বাস্তুতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে সেগুলি হল –
ক ) পদ্ম ও শালুকের প্রাচুর্য ছাড়াও স্বাভাবিক বনজ ও অন্যান্য পুষ্পরাজি – যারা কোন বিশেষ অঞ্চলের সীমাবদ্ধ নয় । মোটামুটি সর্বত্র অল্পবিস্তর পাওয়া যায়।
খ ) রসাঙ্গ , কারন্ড, ক্রৌঞ্চ, প্লব , হংস, নটু্ ্যহ ইত্যাদি মতো জলবাসী পাখিরা এবং কোকিল ও চকোরের মতো বৃক্ষবাসী পাখিরা অরণ্য অঞ্চল মুখরিত করে রাখত। তৎসহ জলপানের জন্য আগত হত মৃগেরা।
গ ) নদীতটবাসী মানুষদের বড় অংশ ছিল ধার্মিক ঋষিবৃন্দ ও তাঁদের শিষ্যবৃন্দ এবং সিদ্ধপূরুষেরা – যাঁরা তাঁদের জীবনচর্যায় দৈনন্দিন ধর্মচারিতার দ্বারা সেখানে এক গভীর ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক বাতাবরণে রচনা করেছিলেন।
পূর্বে বিবৃত দুটি বৈশিষ্ট্য ছাড়াও চিত্রকূট অরন্যের অতিরিক্ত নিজস্ব বাস্তুতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল –
অ) অরণ্য প্রকৃতির যুগল বৈশিষ্ট্য : কৃষিহীন ও জনবসতিহীন অংশ বা সম্পূর্ণ বন্য অংশ এবং অ বন্য অংশ । জনমানব বর্জিত বন্যঅংশ সমস্ত অরন্যের খানিকটা অংশ জুড়ে ছিল এবং অ বন্য অংশের সঙ্গে পার্বত্য ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জলের ইকোসিস্টেম অঙ্গীভূত হয়ে ছিল।
আ) অরণ্যভূমির কাষ্ঠল উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য । উদাহরণ হল: কুষ্ট, স্থগরিক, ভূর্জ , ইঙ্গুদী ইত্যাদি। এর মধ্যে কুষ্ট এবং ভূর্জ হিমালয় অঞ্চলীয় উদ্ভিদ বটে।
ই) চিত্রকূটের উত্তর পূর্ব ভাগ থেকে মন্দাকিনীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে চিত্রকূট অরণ্যের মধ্যে আরেকটি উপ – অরণ্য এবং তার বাস্তুতন্ত্র ছিল। এই উপবিভাগের কারণ হলো , এর জলধারার বৈচিত্র, ফল মূলাদি , সুগন্ধীয় সপুষ্পক বৃক্ষরাজি ইত্যাদি র প্রকৃতি চিত্রকূট অরণ্যের মূল ইকোলজি থেকে বেশ কিছুটা স্বতন্ত্র।
ঈ) অরণ্যের শান্ত , অচঞ্চল পরিমণ্ডল থেকে উপ অরণ্যের কামমোহিত আবহ একে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছিল।
রামায়ণ কাব্য ও ইতিহাস , সেইসঙ্গে ধর্মশাস্ত্রও বটে। যার ঘটনা উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারত হয়ে বৃহত্তর ভারতে বিস্তার লাভ করেছে । তার প্রভাব সমগ্র অখন্ড ভারতের উপর ছায়াপাত করেছে।
কাব্যং রামায়ণং কৃৎস্নং সীতায়াশ্চরিতং।
সেই জন্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“সেই সত্য যা রচিবে তুমি,
ঘটে যা তা সব সত্য নহে। কবি, তব মনোভূমি
রামের জনমস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।”
বর্তমান দণ্ডকারণ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড় ,ওড়িশা, অন্ধপ্রদেশের অংশ নিয়ে গঠিত। দণ্ডকারণ্য নামের উৎপত্তি বিষয়ে নানা ধরনের মত প্রচলিত আছে।
প্রথমত, কেউ বলেন অরণ্যে দন্ডক নামক অসুরের নিবাস ছিল ।দ্বিতীয়ত, কেউ বলেন এই অঞ্চল দন্ড – তৃণ নামে এক দীর্ঘ প্রকার ঘাসে আবৃত ছিল । তাই থেকেই এই নাম হয়েছে । তৃতীয়ত , আবার কেউ বলেন দন্ড কথাটির অর্থ হল গাছের সারি। এটিও এক ধরনের আঞ্চলিক অরণ্য বৈশিষ্ট্য ।
দন্ডকারণ্য অসংখ্য গিরি, বনময় মালভূমি ও উপঅরণ্য নিয়ে গঠিত । দন্ডকারণ্যে অবস্থান করছে গোদাবরী এবং মন্দাকিনী, এছাড়াও অনেক ছোট-বড় স্রোতধারা প্রবাহিত হয়েছে।
দন্ডকারণ্যের ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ কোথাও সমভূমি বা সমস্থলী প্রায় , কোথাও উঁচুনিচু ভূমি বা স্থলমুপরা। এখানে যেমন শ্যামল ও নদীসেবিত ভূমি আছে , তেমনই কোথাও কোথাও ঊষর ও দুর্দশভূমি আছে । দুর্দশ অর্থাৎ জল যেখানে সুলভ নয়।
দন্ডকারণ্যে প্রধানত শাল ও মধুক বৃক্ষ ব্যতীতও অন্য উদ্ভিদ প্রকৃতিতে মিশ্র বৈচিত্র্য আছে। দন্ডকারণ্যে একক উদ্ভিদপ্রকৃতি সম্পন্ন মধুকবনের মতো যেমন উপোরণ্য আছে , তেমনি বিভিন্ন বৈচিত্র সমন্বিত অরণ্যভূমি এবং পর্ণমোচী কাষ্ঠল বৃক্ষরাজির মতো একাধিক উপ অরণ্যের সমবায়ও আছে। এরা প্রত্যেকেই নিজস্ব উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈশিষ্ট্য এবং জলধারার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে বর্তমান । মূল নদী এবং তাদের উপনদী ছাড়াও পার্বত্য ঝর্ণা ও জলের অন্যান্য উৎস স্বকীয় বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলেছে ।
রামায়ণ অধ্যয়ন করলে দন্ডকারণ্যের দুই ধরনের চরিত্র বা বাস্তুতন্ত্রের কথা জানতে পারবেন – ক ) দুর্গম , খ ) শান্ত
ক) বিশ্বামিত্র শ্ৰীরাম ও লক্ষ্মণকে নিয়ে উপস্থিত হলেন দন্ডকারণ্যে। উদ্দেশ্য তাড়কা দমন। যদিও তাড়কা ছিল যক্ষ কন্যা , তবুও নিজের লোভ ,লালসা ইত্যাদিকে ত্যাগ না করতে পারায় ঋষি অগ্যস্ত তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন । ফলত, সে ও তার সন্তান মারীচ এবং সুবাহু ইত্যাদি রাক্ষস বিভিন্ন জনপদ ও ঋষি মুনিদের আশ্রমের উপর নানা রকম অত্যাচার করতে শুরু করল। তাড়কা ব্রম্ভার বরে বলীয়ান। এক মাত্র রাম ব্যতীত কেউই তাকে বধ করতে পারতেন না। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা যখন অরণ্যে প্রবেশ করেন , তখন সেই অরণ্যের ভূদৃশ্য দেখে রামচন্দ্র মন্তব্য করেছিলেন, – ” জনসঞ্চার শূন্য এই অরণ্য কি দুর্গম ! দেখছি অরণ্য ঝিল্লিরবে সমাকুল। ভয়াবহ শ্বাপদ সংকুল জন্তুর বিকটরব এবং পক্ষীগণে এই অরণ্যের নানাস্থান পরিব্যাপ্ত ও তাদের ঘোর নিনাদে নিনাদিত। ইতস্তত ব্যাঘ্রাদি হিংস্র জন্তু সকল প্রধাবিত । ধব, অশ্বকর্ণ, কাকুভ, বিল্ব, তিন্দুক, বদরী প্রভৃতি পাদপ সমূহে এই অরণ্যের চতুর্দিক আচ্ছাদিত।”
দ্বিতীয়বার বনবাস কালে লক্ষ্মণ এবং সীতার সঙ্গে পুনরায় যখন শ্ৰীরাম দন্ডকারণ্যের অন্য অংশে অন্য উপ অরণ্যে প্রবেশ করলেন তার বর্ণনা পূর্ব পর্বে উল্লেখ করেছিলাম। পুনরায় আমি তা উল্লেখ করছি দন্ডকারণ্যের ভিন্ন দুই বাস্তুতন্ত্রের পার্থক্যকে বর্ণনা করার নিমিত্ত। বাল্মীকি সেই বর্ণনায় লিখছেন ,” তাঁরা সীতার সঙ্গে গমন সময়ে বিভিন্ন শৈলপ্রস্থ , অরণ্য , রমণীয় নদী, নদীতট, বিহারী সারস ও চক্রবাক, জলচর বিহঙ্গমপূর্ণ পদ্ম সমন্বিত সরোবর, যূথবদ্ধ পৃষত, সুবিশাল শৃঙ্গবিশিষ্ট মদোমত্ত মহিষ, বরাহ, ও বৃক্ষবৈরী হস্তী সকল দর্শন করলেন। অগস্ত্য মুনিরআশ্রমে যাবার সময় কান্তার মাঝে শত শত নীবার , পনস, শাল, বন্জুল, তিনিশ, চিরিবিল্ব, মধুক, বিল্ব, তিন্দুক ইত্যাদি পাদপরম্পরা তাঁদের পথে পতিত হতে লাগল। ওই সকল বৃক্ষের কুসুম সকল প্রস্ফুটিত হয়েছে, নানা প্রকার বিহঙ্গম মত্ত হয়ে মধুর্ধ্বনি করছে।কুসুমিতাগ্র বৃক্ষ ও লতা বানরগণের দ্বারা অতিশয় শোভা প্রাপ্ত হচ্ছে। হস্তীগনের শুঁড়ের আঘাতে তাদের শাখাপ্রশাখা ছিন্নভিন্ন হয়েছে।
দুবারের যাত্রা দণ্ডকারণ্যের বর্ণনায় দুটি ভিন্ন পরিবেশ ও পরিমন্ডলের কথা ব্যক্ত হয়েছে। প্রথমটিতে অরন্যের দুর্গমতা, কোলাহল , পাখি ও জীবজন্তুর শীৎকার, ঝিল্লীরব ও কণ্টকময় বৃক্ষের ( বেল , বদরী) উল্লেখ আছে। অবশ্য তিন্দুক ঘন শ্যামল। গহনতা বা ভয়াল বিজনতার পরিবেশ স্থানটিকে রাক্ষসের বাসভূমির উপযোগী করেছে। দ্বিতীয় যাত্রায় দণ্ডকারণ্যের যে বর্ণনা , তাতে অরণ্যের অ বন্য পরিবেশ ( ঋষি, যোগীদের আশ্রম) প্রাধান্য পেয়েছে।
রামায়নে বর্ণিত অরণ্যবাসীদের জাতগোত্রেরও বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এটিও জৈব বৈচিত্র্যের একটি বিশেষ দিক সূচিত করে। সেই দন্ডকারণ্যে একদিকে যেমন নরমাংস ভোজী সম্প্রদায়ের ( রাক্ষস) উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছিল , তেমনি অরণ্যের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে বাস করতে ত্রিকালজ্ঞ , মহাজ্ঞানী ঋষি ও যোগীদের আশ্রম। দন্ডকারণ্যের একটি অংশ সম্পূর্ণভাবে সূর্পনখার শাসনাধীন ছিল, সেই অঞ্চলে তার সেনাপতি ছিল খর ও দূষণ। তাদের অধীনে চার সহস্র রাক্ষস সেনা ছিল। অপরদিকে অরণ্যের একদিকে বাস করতেন অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন সিদ্ধপুরুষ শরভঙ্গ, সুতীক্ষ্ণ, অগস্ত্য, ভরদ্বাজ প্রমুখ একুশজন মুনি ঋষি। এছাড়াও সেখানে কিন্নর ও অপ্সরা সম্প্রদায়ের বাস ছিল। শেষোক্ত অধিবাসীদের অস্তিত্বের ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে হয়তো অনেকের মনে সন্দেহ আছে, কিন্তু বারবার যখন তাদের কথা উল্লেখ হয়েছে নিশ্চয়ই তারা ছিলেন ।
মহর্ষি অগস্ত্যের আশ্রমের আশ্চর্য প্রভাব দন্ডকারণ্যের এক বিশাল অংশে পড়েছিল। সেখানে শত্রু বলে কোনো শব্দের অবকাশ ছিল না। সেখানে যত রকমের প্রাণী , জীব বসবাস করত তাঁরা হিংসা ভুলে , হত্যাভাব ভুলে পারস্পরিক স্নেহের সাথে সহাবস্থান করত। মহর্ষির অলৌকিক তপোবালের প্রভাবে সেখানে চরম শান্তি বিরাজ করত। তাঁর আশ্রম অঞ্চলে রাক্ষসরাও শান্তির সঙ্গে অবস্থান করত। মহর্ষি অগস্ত্য দ্বারা প্রভাবিত অনেক রাক্ষস তাদের তামস গুন ত্যাগ করে , মহর্ষির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল, তারা শাস্ত্রাদিতে জ্ঞান লাভ করতে সচেষ্ট হয়েছিল। মহামুনি অগস্ত্যের স্থান সে যুগের সকল ঋষি মুনিদের মধ্যে সর্বপ্রথম ছিল।। সুগ্রহ দ্বারা দেবতা, রাক্ষস, খোক্ষস, যক্ষ, গন্ধর্ব, নাগ ইত্যাদি সকলকে সনাতনের আদি নিয়মধর্ম ভালোবাসা, মমতা, প্রীতি, প্রেমকে অনুসরণ করে তাদের জীবনযাপন করতে শিখিয়ে ছিলেন তিনি। এই শান্তিপূর্ণ অরণ্য অঞ্চলে চোর, দস্যু, কামুক, দুষ্ট ব্যক্তিরা আসার সাহস করত না।
অরণ্যের মধ্যে আশ্রমের লোকবসতি ছিল সব থেকে ঘন । এই সকল আশ্রমগুলির স্থান নির্বাচন করা হত অরণ্যের রমণীয় অংশে এবং অবশ্যই নদীতীরে বা কোন স্বাভাবিক উৎসের কাছে ।আশ্রমের সন্নিহিত অঞ্চলের কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত অরণ্য প্রকৃতি আমরা দেখতে পাই । সুতরাং এর বাস্তুতন্ত্রও মূল ভূখণ্ড থেকে বেশ কিছুটা স্বতন্ত্র। অরণ্যকাণ্ডে আশ্রমকে বর্ণনা করা হয়েছে –
অরণ্যয়িশ্চ মহাবৃক্ষপূনৈঃ স্বাদুফলয়ির্বতম্
অর্থাৎ দীর্ঘ শ্যামলতরু ও সুস্বাদু ফলপ্রসূ বৃক্ষের মধ্যে আশ্রমের অবস্থান । আশ্রমের চারিদিকে রোপিত থাকত নানা প্রয়োজনীয় বৃক্ষ ও লতা – যারা আহার্য , ভেষজ, প্রয়োজনীয় উপকরণ দানকারী এবং পরিবেশের শোভাবর্ধন করত।
” আত্মবান রাম দন্ডক নামক মহারণ্যে প্রবেশ করে তাপসগণের আশ্রমমন্ডল দেখতে পেলেন। কুশ ও চীর পরিব্যাপ্ত , ব্রাম্ভীশোভায় উদ্ভাসিত, অতএব আকাশস্থ প্রদীপ্ত সূর্য মন্ডলের ন্যায় সেই আশ্রম সমুদয় জীবের আশ্রয় স্থল। তাদের প্রাঙ্গণভূমি সর্বদাই পরিষ্কৃত এবং সুমার্জিত এবং চতুর্দিকে নানাবিধ পশু ও পাখিসমূহে সমাকীর্ন। অপ্সরা , কিন্নর , কিন্নরী , যক্ষ , যক্ষী সকলে দলে দলে এসে সেসব স্থানে নিত্য এসে গীতবাদ্য ও নৃত্য সহকারে পূজা করছে। সেই সব আশ্রম বিস্তৃত অগ্নিশালা, স্ক্রুগভান্ড, অজিন, কুশ, সমিধ, জলকলস এবং ফলমূল দ্বারা শোভিত রয়েছে এবং অরণ্যজাত বৃহৎ বৃহৎ সুস্বাদু ফলবিশিষ্ট পবিত্র বৃক্ষসমূহে সমাবৃত রয়েছে। ওই আশ্রমে প্রতিনিয়ত পুন্য বেদধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। নানাবিধ পুষ্পসকল পরিক্ষিপ্ত রয়েছে এবং বিচিত্র পদ্মযুক্ত সরোবর বিরাজ করছে। এই আশ্রমে ফলমূলাহারী ,চীর ও কৃষ্ণাজীর্ণ পরিধারী , সূর্য ও অগ্নি সদৃশ দীপ্তিশালী দান্তস্বভাব প্রাচীন মুনিগণ বাস করছেন। নিয়তাহারী পবিত্র পরমর্ষিসমূহে শোভিত ও নিয়ত বেদাধ্যয়ন শব্দে প্রতিধ্বনিত হওয়ায় আশ্রমসকল ব্রম্ভলোকের সদৃশ্য ধারণ করেছিল।”
ছোটো একটি থাকত ডিঙি
পারে যেতেম বেয়ে–
হরিণ চ’রে বেড়ায় সেথা,
কাছে আসত ধেয়ে।
গাছের পাতা খাইয়ে দিতেম
আমি নিজের হাতে–
লক্ষ্ণণ ভাই যদি আমার
থাকত সাথে সাথে।
কত যে গাছ ছেয়ে থাকত
কত রকম ফুলে,
মালা গেঁথে পরে নিতেম
জড়িয়ে মাথার চুলে।
ক্রমশ
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১. শ্রীমদ বাল্মীকি রামায়ণ
২. বাল্মীকি রামায়ণ : উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়
৩. প্রাচীন ভারতের পরিবেশ চিন্তা