রাহুল গান্ধীর মতো ব্রিটিশ শাসকরাও ভারতীয়দের কুকুরের সমগোত্রীয় ভাবতেন

অবশেষে রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করেই ফেললেন। ২০১৩ সালে কংগ্রেসের সহ-সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ৪৩টি নির্বাচনে লড়াই করে ৩৫টিতে পরাজিত হয়েছে। গান্ধী পরিবারের কেউ কোনোদিন যা করেনি, হাল আমলের নির্বাচনগুলিতে নতুন ভারতের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, সোনিয়া গান্ধীরা সেই সমস্ত কাজও করেছেন। মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছেন, গঙ্গায় স্নান করেছেন, যজ্ঞ করেছেন, ঘোমটা দিয়েছেন, কৈলাশ মানস সরোবর যাত্রা করে কট্টর শিবভক্ত সাজার চেষ্টা পর্যন্ত করেছেন। তবুও শেষ রক্ষে হয়নি। এই সমস্ত পরাজয়ের কোনোটাই তারা যে মেনে নিতে পারছেন না তা রাহুল গান্ধীর পদত্যাগ পত্রের বয়ানেই পরিষ্কার। রাহুল লিখেছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ নেই। কিন্তু আর এস এস বিজেপি যে ভারত নির্মাণ করতে চাইছে তার জন্য প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে তিনি লড়বেন। ভারতের লোকতন্ত্র মূলগত ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখানে মিডিয়া, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ কেউ নিরপেক্ষ ছিল না। ফলে নির্বাচন নিরপেক্ষ ছিল , ভবিষ্যতেও হবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না জনগণের রায়, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও তার মাধ্যমে আসা পরিবর্তনের প্রতি রাহুল গান্ধীর মনে তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে জন্ম নেওয়া হতাশা থেকেই এই পদত্যাগ। মনস্তত্ত্ব বলছে মাইন্ড সেটই ঘৃণা, বিদ্বেষ, হতাশার জন্মদাত্রী। সেজন্য বর্তমান। পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধীদের মাইন্ডসেট বিশ্লেষণ খুব জরুরি।
২১ জুন বিশ্ব যোগদিবস উপলক্ষে যখন সমগ্র বিশ্ব যোগাভ্যাসরত সে সময় রাহুল গান্ধী ভারতীয় সেনার ডগ স্কোয়াডের ছবি টুইট করেছেন। ছবির শিরোনামে লিখেছেন ‘নিউ ইন্ডয়া’। ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রশিক্ষকরা যোগাভ্যাস করার সময় যে সমস্ত পোজ নিচ্ছেন ঠিক একই রকম পোজ নিচ্ছে প্রশিক্ষিত সারমেয়রা। এই টুইট ঘিরে বিস্তর বিতর্ক হচ্ছে। কেউ বলছেন রাহুল গান্ধী যোগ অভ্যাসকারীদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে ভারতকে অপমান করেছেন, কেউ বলছেন এটা ভারতীয় সেনার অপমান, আবার কেউ এই টুইটকে প্রশিক্ষিত সারমেয়দের অপমান হিসেবে দেখেছেন। কার অপমান এই নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এই টুইটের প্রভাব যে নেতিবাচক সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তবেমাইন্ড সেট কী ধরনের হলে পরে ভারতের জন্য গৌরবসূচক একটি দিনে কোনো ভারতীয় এই ধরনের টুইট করতে পারে সেটি বিশ্লেষণ করা খুবই জরুরি।নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের এক মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও ধর্মনিরপেক্ষ শিবির থেকে যে সমস্ত কথা শোনা যাচ্ছে সেগুলি শুনতে শুনতে মানুষ ক্লান্ত। যেমন বলা হচ্ছে ইভিএমে কারচুপি করেই মোদী জয়ী হয়েছেন। আবার কেউ বলছেন হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি করে মোদী জয় পেয়েছেন। আবার এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন এই নির্বাচনে পাটিগণিতের চেয়ে রসায়ন বেশি কাজ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে কী সেই রসায়ন?
এই রসায়নের খোঁজ পেতে হলে প্রথমেই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এই নির্বাচনে এনডিএ-র অভূতপূর্ব বিজয়ের পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরকার্যবাহ ভাইয়াজী যোশী বলেন, দেশ আবার একবার স্থিতিশীল সরকার পেল। এটা কোটি কোটি ভারতবাসীর ভাগ্য। এটা রাষ্ট্রীয় শক্তির বিজয়। লোকতন্ত্রের এই বিজয়যাত্রায় যাদের অবদান আছে তাদের সকলকে অভিনন্দন। বিশ্বের সামনে আরো একবার ভারতীয় লোকতন্ত্রের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হলো।
আর এস এসের সহ-সরকাৰ্যবাহ মনমোহন বৈদ্য বলেন, আসলে এই নির্বাচন ছিল ভারতের দুটো বিচারধারার লড়াই। একদিকে ভারতের প্রাচীন আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক একাত্ম, সর্বাঙ্গীণ সর্বসমাবেশক জীবন দৃষ্টি বা চিন্তন সমস্ত বিশ্ব যাকে হিন্দু জীবনদৃষ্টি বা হিন্দু চিন্তন, নামে চেনে। অন্যদিকে অভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি যা ভারতকে ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার সমষ্টিবলে মনে করে। নিজ নিজ স্বার্থের জন্য যারা সমাজকে জাতি, ভাষা, প্রদেশ ও ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে এসেছে। এই বিভাজনের রাজনীতিতে অভ্যস্ত শিবির নিরন্তর সেই শক্তির বিরোধিতা করে এসেছে যারা চিরকাল ভারতীয় সমাজকে এক ও অখণ্ড ভেবে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চায়। এই অখণ্ড ভাবনার বিরোধিতা করতে গিয়ে এই শিবির বিভিন্ন সময় ভিত্তিহীন মিথ্যে অভিযোগ এনে নিরন্তর ভুল ধারণা নির্মাণের প্রয়াস করেছে। স্বাধীনতা-পূর্ব সময় থেকে চলতে থাকা এই বিচারধারার লড়াই এখন নির্ণায়ক স্তরে পৌঁছে গেছে। এই লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এই নির্বাচন। সমাজ এক ও অখণ্ড বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, ফলে বিভাজনের রাজনীতির প্রভাব ক্রমশই সঙ্কুচিত হচ্ছে। সে জন্য বিভাজনের নীতিতে বিশ্বাসীরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে জোটবদ্ধ হয়ে এক ও অখণ্ডতার আদর্শে বিশ্বাসীদের মোকাবিলা করার প্রয়াস করেছে। ভারতের প্রাজ্ঞ ও বুদ্ধিমান মানুষ ঐক্যের পক্ষে ক্রিয়াশীল সর্বসমাবেশক ভারতকে সমর্থন করে সবার সঙ্গে সবার বিকাশের সুত্রকে জয়ী করেছে। ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এই জয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। ভারতের জনগণ এই জয়ের জন্য ধন্যবাদের পাত্র। এই বৈচারিক লড়াইয়ে ভারতের পক্ষে থাকা মজবুত নেতৃত্ব এবং সমস্ত কার্যকর্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন।
সঙ্ঘের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে এই নির্বাচন কোনো সাধারণ নির্বাচন নয় ভারতের পরিচয় প্রতিষ্ঠার লড়াই, দেশ হিসেবে ভারত নিয়ে দুটো নেরেটিভের লড়াই। একটি বিশেষ মাইন্ড সেট সম্পন্ন ভারতীয় সমাজ তৈরির উদ্দেশ্য নিয়েই মেকলে সাহেব এদেশে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। বছরের পর বছর ধরে এই শিক্ষাব্যবস্থায় ভারত সম্পর্কে ভারতবাসীর মনে। এক হীনমন্যতা তৈরি হতে থাকে।
দেশ স্বাধীন হলেও মেকলে প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার মূলগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই স্বাধীনতার সাত দশক পরেও ভারতে স্বাভিমানী ছাত্রসমাজ গড়ে উঠেনি। ফলে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে এখনো টুকরে টুকরে গ্যাং ভারত বিরোধী স্লোগান তুলতে সাহস পায়। মানব সভ্যতার বিকাশে জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, জীবন পদ্ধতির ক্ষেত্রে ভারতের অবদানকে তুলে ধরার এবং ভারতীয় ভাবনায় ভারতকে গড়ে তোলার সার্বিক কোনো প্রয়াস হয়নি। যারাই ভারতকে, ভারতীয়ত্বকে তুলে ধরার প্রয়াস করেছে বা তাদের কপালে জুটেছে প্রাচীনপন্থী, পশ্চাৎপদ তকমা। এতদিন তো ব্রিটিশ প্রভুদের তৈরি করা মাইন্ড সেট অনুসারে ভারতীয় জীবন পদ্ধতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ যোগ, ধ্যান, আসন, প্রাণায়ামকে অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কার বলে মনে করাটাই ছিল আধুনিকতা, প্রগতিশীলতা। দেশের বামপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষতার ঢ্যাড়া পিটাতে অভ্যস্ত প্রায় সিংহভাগ নেতা-নেত্রী যোগ সম্পর্কে এই ধরনের বিকৃত মানসিকতার শিকার। নাগাল্যান্ড মণিপুরে চার্চের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা এখনো ভারতীয়দের ‘ইন্ডিয়ান ডগ’বলে সম্বোধন করে থাকে। সন্দেহ নেই যে রাহুল গান্ধী ঠিক এই ধরনের মাইন্ডসেট থেকেই বিশ্ব যোগ দিবসে ডগস্কোয়াডের ছবি টুইট করে যোগদিবস। উদযাপনাকারীদের কটাক্ষ করেছেন।
কিন্তু এখন আর সেদিন নেই। রিপোর্ট বলছে শুধুমাত্র ভারতের গ্রাম-শহর – পাড়া-মহল্লা নয় ২১ জুন যোগদিবস উপলক্ষে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ যোগচর্চায় মেতে উঠেছিল। সৌদি আরবের মতো ইসলামিক দেশও আছে যারা নিজেদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যোগশিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে বা করার পরিকল্পনা করছে। বিশ্বের উন্নতদেশগুলিতে ভারতীয় জীবনচর্চা জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশ্বযোগ দিবস অর্থাৎ ভারতীয় জীবনচর্চার গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বের দরবারে ভারতকে নতুন করে সমীহ আদায় করতে সহায়তা করছে। বিদেশ সফরে গেলে ভারতের প্রতিদিনের দলীয় রাজনীতি থেকে অনেক দূরে অনাবাসী ভারতীয়দের প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ধরে উচ্চৈঃস্বরে ভারতমাতা কী জয়, বন্দে মাতরম, জয় শ্রীরাম স্লোগানের উচ্ছ্বাস আমরা দেখেছি। ভারতকে নিয়ে এ যেন এক নতুন উচ্ছ্বাস, নতুন উদ্দীপনা। অনাবাসীদের মুখে এই ধরনের স্লোগানগুলিতে নিশ্চয়ই ভারতের অন্তরাত্মার ছোঁয়া আছে, না হলে অনাবাসীরা কোন স্বার্থে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে এই ধরনের ধ্বনি দেবেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে এতদিন এই দৃশ্য দেখা যায়নি কেন? এই প্রশ্নের উত্তরও সহজ। এতদিন ভারতকে তুলে ধরার প্রয়াস হয়নি। এতদিন যারা দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মনে এই ভাবনা কখনোই আসেনি যে ভারতের নিজস্ব ভাবনাতেই ভারত ঘুরে দাঁড়াতে পারে। ভারত বিশ্বকে অনেক কিছুই দিতে পারে। বিশ্বগুরুর আসনে বসাতে পারে। শুধু এই মাইন্ডসেট নিয়ে দেশ পরিচালনা করা হয়েছে যে ভারত পিছিয়ে পড়া উন্নয়নশীল দেশ, সবার। সাহায্য নিয়ে ভারতকে উন্নত হতে হবে। ২০১৫ সালে বিশ্বযোগ দিবসের স্বীকৃতির মাধ্যমেইনব ভারতের এই উত্থানের আনুষ্ঠানিক সূচনা বলা যেতে পারে। ফলে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে অনাবাসীরাও এখন যে সমস্ত স্লোগান তুলছেন সেগুলিকে ভারতের জাতীয়তাবোধের বহিঃপ্রকাশ অর্থাৎ অন্তরাত্মার আওয়াজ বলা যেতে পারে। রাহুল গান্ধীর মতো তথাকথিত প্রগতিশীলরা নতুন ভারতকে মেনে না নিয়ে যদি সেই পুরানো মাইন্ডসেট নিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে যে ক্রমশই পিছিয়ে পড়বেন ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলির ফলাফলেই তা স্পষ্ট।
স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ইংরেজের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই জওহরলাল নেহরুর ভারতের যাত্রা শুরু হয়েছিল। স্বামীজীর ভাষায় বললে বলতে হবে নেহর ভারতে পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা, এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা…এই মাত্র সম্বলে’ ভারত উচ্চাধিকার লাভের স্বপ্ন। দেখতো। নেহরুর ভারতে রাষ্ট্রপ্রধান হতে গেলে বিদেশি ডিগ্রি, উচ্চবংশ, ধনাঢ্য হওয়া অলিখিত অনিবার্য নিয়ম ছিল।ফলে এক সময় এমন ছিল যে গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাতে পারে এটা নিরক্ষরতা ও দারিদ্রতার ফঁসে ফেঁসে থাকা ভারতের মানুষ ভাবতেই পারতো না। সাত ও আটের দশক পর্যন্ত এটাই ছিল ভারতের রাজনৈতিক ধারা। নয়ের দশক থেকে শুরু হয় জাতপাতের রাজনীতির উত্থান। বিশেষ করে বিহার উত্তরপ্রদেশের মানুষ জাতপাতের রাজনীতির মধ্যেই নিজেদের মুক্তির পথ খুঁজে পায়। MY ফ্যাক্টর (মুসলমান-যাদব ভোটব্যাঙ্ক) লালু যাদবকে এতটাই শক্তিশালী করে তুলল যে সে সময় স্লোগান উঠলো ‘যবতক সমোসামে আলু, জঙ্গলমে ভালু হোগা তবতক বিহার মে লালু রহেগা। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন প্রায় নিরক্ষর রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়েও অক্লেশে বিহারকে শাসন করতে সে সময়ের সুপারস্টার লালু যাদবের কোনো সমস্যাই হয়নি। জাতপাতের রাজনীতি বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে মুলায়েম সিংহ যাদব, মায়াবতীর মতো নেতা-নেত্রীরাও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এদিকে সময়ের সঙ্গে ভারতের নিরক্ষরতা ও দারিদ্র্যের হার কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারতান্ত্রিক ও জাতপাতের রাজনীতির উপর থেকে মোহমুক্তি ঘটতে শুরু করে ভারতীয় ভোটারদের। যার প্রতিফলন দেখা যায় ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে ভারতীয় ভোটাররা পরিবারতান্ত্রিক ও জাতপাতের রাজনীতিরকঁদে আর পা দিতে নারাজ। একদা MY ফ্যাক্টরে বলিয়ান লালু যাদব এবার বিহারে খাতা খুলতে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় ভুগছেন। জোটবেঁধে নির্বাচনে লড়েও অখিলেশ-মায়াবতী প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারলেন না। ক্ষমতাসীন থেকেও রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের পুত্রদের জেতাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
রাহুল গান্ধী ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া নিজেদের পারিবারিক লোকসভা কেন্দ্র বলে পরিচিত যথাক্রমে আমেথি ও গুনা থেকে জয়ী হতে পারলেন না। পরিবারতন্ত্র, জাতপাত, দলিত, সংখ্যালঘু নামক এক সময়ের দুর্দান্ত টনিক এখন ভারতীয় রাজনীতিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ রসায়ন মাত্র। এই রসায়ন না বদলালে, নতুন ভারতের তালে তালে মিলিয়ে চলতে না পারলে বিরোধীদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব যে আরও সঙ্কটাপন্ন হবে এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
সাধন কুমার পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.