আমেঠি ছাড়াও কেরালায় ওয়াইনাড লোকসভা আসন থেকে রাহুল গান্ধী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে চলেছে। আমেঠি নেহরু-গান্ধী পরিবারের দীর্ঘদিনের জেতা আসন হলেও কয়েক দশক ধরে এলাকাটি পেছনের সারিতে থেকেছে । এই কারণে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে হারা সত্ত্বেও, এলাকার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ স্মৃতি ইরানী গত পাঁচ বছর ধরে উৎসাহী প্রচার চালিয়ে গেছে। বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে আমেঠিতে পাঁচটি আসনের চারটি বিধানসভা আসন জিতেছে। এই সব কারণগুলি একসঙ্গে এই মুহুর্তে রাহুল গান্ধীকে একটু পিছিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু ওয়াইনাড আসনটি কেন?
কেরালায় বামপন্থী প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন রাহুল গান্ধী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন, যা মূলত একটি সহযোগী দল? কংগ্রেসের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক বামপন্থী-উদারবাদী সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীকেও অবাক করে দিয়েছে। রাহুল গান্ধীর জন্য ওয়াইনাড কি সত্যিই সম্ভাব্য “নিরাপদ আসন”? যদি রাহুল দক্ষিণ ভারতে সহজ জয়লাভ চাইতেন, তবে কি তিনি কর্ণাটকের পুরাতণ মহীশূর অঞ্চলে একটি আসন বাছাই করতে পারতেন না? সেখানে বিজেপি অত্যন্ত দুর্বল।
কংগ্রেস পার্টির এই সিদ্ধান্তের পিছনে একটি গভীর চিন্তা ভাবনা আছে বলে মনে করছে অনেকে। আর তা হচ্ছে কংগ্রেস দলটি জেন ভবিষ্যতে ভারতের হিন্দু সংখ্যালঘু এলাকাগুলির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ ওয়াইনাড লোকসভা আসন এলাকায় ৫৬% জনসংখ্যাই মুসলীম সম্প্রদায়ের।
ওয়াইনাড লোকসভা আসনে ওয়াইনাড জেলার ৩টি, মালাপ্পুরম জেলার ৩ টি এবং কোজিকোড়ের ১ টি বিধানসভা আসন রয়েছে।
ওয়াইনাড লোকসভা কেন্দ্রের পরিবর্তে ওয়াইনাড জেলার জনসংখ্যাকে ব্যবহার করে সামাজিক ও মূলধারার প্রচার মাধ্যমে ভুল ধারণার প্রচার করে বলা হচ্ছে ওয়াইনাড আসনে হিন্দুরা ৪৯%। কিন্তু ভুল ধারণা বিখ্যাত’ মিডিয়া এবং সাংবাদিকরা কেন ছড়িয়ে দিচ্ছে? এটা কি ভুল নাকি ইচ্ছাকৃত? এর অনুমান খুবই সহজ।
আসলে যেখানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু এরকম ওয়াইনাড কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস ভবিষ্যতের নির্বাচনী রাজনীতির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলো আসলে যেন এক একটি বড় বড় কোম্পানীর মত। বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানীগুলি যেমন সবসময় নতুন জিনিসের সন্ধান করে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে চায় নইলে দেউলিয়া হতে বেশি সময় লাগে না তেমনি রাজনৈতিক দলগুলো।
স্বাধীনতার পর থেকে ৭২ বছরের মধ্যে ৫৮ বছর শাসন করেছে কংগ্রেস। তারা ভারতের সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক দল।
তবে ২০১৪ সালে তারা মাত্র ৪৪ টি আসনে জিতে তাদের এযাবৎ সর্বনিম্ন ধাপে পৌঁচেছিল। তাই পুনরুদ্ধারের জন্য কংগ্রেসের একটি নতুন ধারার প্রয়োজন যাতে দলটি ভবিষ্যতে টিকে থাকতে পারে নতুবা দেউলিয়া হতে বেশি সময় লাগবে না ।
ওয়াইনাড আসনটি কি তাহলে কংগ্রেসের সেই ভাবনাকে প্রতিফলিত করছে যে ভবিষ্যতে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হবে?
ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মঙ্গলকামনার উপর ভিত্তি করে কি কংগ্রেস তাহলে আগামীতে এগোতে চায়?
একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচনী এলাকাতে স্থানান্তরিত করার মাধ্যমে কংগ্রেসে কি মুসলিম ভোটব্যাংককে তাদের ভবিষ্যত নির্ণায়ক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
কংগ্রেসের এটা জানে যে হিন্দু সংখ্যালঘু কেন্দ্রে সরে যাওয়ার কারণে বিজেপির থেকে কড়া মন্তব্য আসতে পারে। তাদের এটাও জানা উচিত যে এই পদক্ষেপ হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় তাদের কর্মীদের মধ্যে মনক্ষুণ্ণতা সৃষ্টি করবে।
এত কিছু জানার পর কংগ্রেস কি তাহলে ভারতের নির্বাচনী ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে?
এই মুহুর্তে পদক্ষেপটি যদিও উপলব্ধি করা যাবে না। কিন্তু এখন থেকে প্রায় ১৫ বছর পর হিন্দুরা যখন কেরালা, আসাম, বাংলা, এমনকি অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু তে সংখ্যালঘু হয়ে উঠবে, এমনকি পশ্চিম উত্তর প্রদেশের বড় অংশে যখন হিন্দু জনসংখ্যা ৫০% এর চেয়েও কম হবে তখন কি হবে? এমনিতেই বিহারের সীমাঞ্চলের বড় অংশে হিন্দুরা ইতিমধ্যে সংখ্যালঘু।
কংগ্রেসের এই দীর্ঘমেয়াদী মুসলিম ভোটব্যাংকের পদক্ষেপকে আটকাতে হলে সমগ্র ভারত জুড়ে হিন্দুরা যেন সংখ্যালঘু না হয় সেদিকেই নজর দিতে হবে।
কংগ্রেস সেই দিকে দ্রুত এগোতে চাইছে যখন কোনও হিন্দু ভোটের জন্য তাকে নির্ভর করতে হবে না। কংগ্রেসের কাছে তাই রাহুলের জন্য ওয়াইনাড আসনটি আসলে বড় বড় কোম্পানীর নতুন জিনিসের সন্ধানে বিনিয়োগ এর মতো। যা আজ হয়তো কিছু নয় কিন্তু ভবিষ্যৎ সময়ে ফল দেবে।