জাতির প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান “আত্মনির্ভর ভারতের”

সকল দেশবাসীকে শ্রদ্ধাপূর্বক নমস্কার

করোনা সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে সারা বিশ্ব।ইতিমধ্যেই প্রায় চার মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রায় বিয়াল্লিশ লক্ষেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং পৌনে তিন লক্ষের অধিক মানুষের দুঃখজনক মৃত্যু হয়েছে। ভারতেও বহু পরিবার নিজের আপনজনকে হারিয়েছেন।আমি সকলের প্রতি অন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

প্রিয় দেশবাসী,
একটা ভাইরাস!একটা ভাইরাস বিশ্বকে তোলপাড় করে দিয়েছে । সারা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি জীবন সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। সমগ্র বিশ্ব জীবন রক্ষার তাগিদে পরাক্রমী যুদ্ধ করছে। আমরা এমন সংকট না-কোনদিন দেখেছি,না-কোনদিন শুনেছি! মানবজাতির জন্য নিশ্চিতভাবে এই সমস্ত কিছু অকল্পনীয় । এই বিপর্যয় অভূতপূর্ব। কিন্তু তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়া, হেরে যাওয়া, ভেঙে পড়া, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানব জাতির পক্ষে প্রযোজ্য নয়। সতর্কতার সঙ্গে এমন যুদ্ধের সকল নিয়ম পালন করে আমাদের জীবনকে রক্ষা করতে হবে এবং ভবিষ্যতের দিকেও এগিয়ে যেতে হবে। যখন বিশ্ব সংকটে তখন আমাদের নিজেদের সংকল্পকে আরও দৃঢ় করতে হবে। আমাদের সংকল্প এই বিপর্যয়ের থেকেও বিরাট হবে ।

বন্ধুগণ,
আমরা বিগত শতাব্দী থেকে অনবরত শুনে এসেছি যে, ২১ শতক ভারতবর্ষের। করোনা-পূর্ব পৃথিবীকে, বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে আমাদের দেখার সুযোগ ঘটেছে। করোনা সংকটের পরবর্তী সময়ে বিশ্বে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা আমরা প্রত্যহ দেখছি । এই দুই কালখণ্ডকে ভারতের দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করলে উপলব্ধি হয় যে, একুশ শতক ভারতের। তা কেবল আমাদের স্বপ্নই নয় আমাদের দায়িত্বও
কিন্তু এর পথ কী? বিশ্বের আজকের পরিস্থিতি আমাদের একটি পথই নির্দেশ করে, যা হল “আত্মনির্ভর ভারত“। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে – “এসহঃ পন্থা …” অর্থাৎ , এটাই রাস্তা! আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণ!

আমার প্রিয় দেশবাসী,
রাষ্ট্র হিসেবে আজ আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। এত বড় বিপদ ভারতের জন্য একটি সংকেত নিয়ে এসেছে। একটি নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে।
আমি উদাহরণ স্বরূপ নিজের বক্তব্য প্রকাশ করার প্রয়াস করছি,যখন করোনা সংকট সূচিত হল তখন ভারতে একটিও PPE কিট বানানো হয়নি। N95 মাস্কের উৎপাদনও ভারতে নাম মাত্র ছিল। আজ ভারতেই প্রত্যহ দু’লক্ষ PPE কিট এবং দু’লক্ষ N95 মাস্ক উৎপাদন হচ্ছে। এটা আমরা এই জন্যই সম্ভব করতে পেরেছি কারণ, ভারত বিপদকে সুযোগে বদলাতে পেরেছে। বিপদকে সুযোগে বদলানোর এই যোগ্যতা “আত্মনির্ভর ভারত” গঠনে ভীষণ প্রভাব ফেলবে।
বন্ধুগণ,
আজ বিশ্বে আত্মনির্ভর শব্দের অর্থ সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে। বিশ্বায়নে আত্মনির্ভরতার সজ্ঞা বদলাচ্ছে। অর্থ কেন্দ্রীক বিশ্বায়ন বনাম মানব কেন্দ্রীক বিশ্বায়নের চর্চা আজ জোরের সঙ্গে হচ্ছে। বিশ্বের সামনে ভারতের মূলগত চিত্র আশার কিরণ রূপে প্রকাশিত হচ্ছে।

ভারতের সংস্কৃতি, সংস্কার, ভারতের বিচার সেই আত্মনির্ভরতার কথা বলে যার আত্মা হল “বসুধৈব কুটুম্বকম“‌। বিশ্ব একটি পরিবার। ভারত যখন আত্মনির্ভরতার কথা বলে , তখন আত্মকেন্দ্রীক ব্যবস্থার জন্য ওকালতি করে না। ভারতের আত্মনির্ভরতায় জগতের সুখ, সহযোগিতা ও শান্তির চিন্তা থাকে। ভারতীয় সংস্কৃতির ‘জয় জগত’-এ বিশ্বাস রাখে যে, জীব মাত্রেই কল্যাণ কামনা করে!যে পুরো বিশ্বকে পরিবার মানে! যে আস্থায় মাতা ভূমি, পুত্র অহম্ পৃথ্বীব্যার চিন্তা রাখে! যে পৃথিবীকে “মা” মনে করে! সেই সংস্কৃতি , সেই ভারত (India) ভূমি যখন আত্মনির্ভর হয় তখন তার থেকে এক সুখি সমৃদ্ধময় বিশ্বের সম্ভাবনা সুনিশ্চিত হয়। ভারতের প্রগতিতে সর্বদা সকল বিশ্বের প্রগতি নিহিত থেকেছে। ভারতের লক্ষ্যের প্রভাব, ভারতের কার্যের প্রভাব বিশ্ব কল্যাণের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে।

যখন ভারত খোলা জায়গায় শৌচকর্ম থেকে মুক্ত হয়, তখন পৃথিবীর ছবিও বদলে যায় । যক্ষ্মা,অপুষ্টি, পোলিও এগুলির উপর ভারতের অভিযানের প্রভাব বিশ্বের উপরও পড়েছে।ভারতের উদ্যোগে “আন্তর্জাতিক সৌর সঙ্ঘ” গঠন বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষ থেকে বিশ্বকে দেওয়া উপহার ছিল। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের প্রভাব মানব জীবনকে শারীরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ভারতের উপহার স্বরূপ। জীবন-মৃত্যুর সংগ্রামের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বিশ্বে আজ ভারতের ঔষধ নতুন ভাবে বাঁচার আলো দেখিয়েছে! এই সকল পদক্ষেপে সারা বিশ্বজুড়ে ভারতের প্রচুর প্রশংসা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সকল ভারতীয়রা গর্ববোধ করছেন। সারা পৃথিবী বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, ভারত খুব ভালো কাজ করতে পারবে। মানবজাতির কল্যাণের জন্য ভারত একটি ভালো দেশ হিসাবে আত্ম প্রকাশ করবে।
সকলের একটাই প্রশ্ন–কী করে সম্ভব ?এই প্রশ্নের উত্তরও আছে ১৩০ কোটি দেশবাসীর নিকট। তা হল আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্প

বন্ধুগণ,
আমাদের সুপ্রাচীন গৌরবময় ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাব , যখন ভারত সমৃদ্ধ ছিল, যখন ভারতকে স্বর্ণ পক্ষীর সঙ্গে তুলনা করা হত। তখনও ভারত বিশ্ব কল্যাণের পথে চলেছিল। সময় বদলেছে । দেশ দীর্ঘ বছর ধরে পরাধীনতার গ্লানি ভোগ করেছে । আমরা স্বাধীনতার জন্য , স্ব-বিকাশের জন্য ছটফট করেছি । কিন্তু আজ ভারত সেই বিকাশের দিকে সফল ভাবে এগিয়ে চলেছে। তবুও বিশ্ব কল্যাণের পথে অটল রয়েছে। চিন্তা করুন এই শতাব্দীর সূচনাকালে ওয়াই টু-কে (Y2K)-র সংকট এসেছিল। ভারতের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সমগ্র বিশ্বকে এই সংকট থেকে উদ্ধার করেছিলেন। আমাদের সাধনা আছে , আমাদের সামর্থ্য আছে । আমাদের কাছে বিশ্বের সবথেকে ভালো মেধা আছে। আমরা “বেস্ট প্রডাক্ট” বানাব। আমরা গুণমান আরও ভালো করব। সরবরাহ শৃঙ্খল (Suply Chain) আরও আধুনিক করব। আমরা এটা করতে পারব এবং অবশ্যই করব ।

বন্ধুগণ,
আমি আমার চোখের সামনে কচ্ছ ভূকম্পের সেই দিনকে দেখেছি, যখন চারিদিকে মৃত্যু আর ধ্বংস ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছিল না । সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।এরকম মনে হয়েছিল কচ্ছ যেন মৃত্যুর চাদর জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ওই পরিস্থিতিতে কেউ চিন্তাও করতে পারত না যে,কোনোদিন অবস্থার পরিবর্তন হবে। কিন্তু দেখতে দেখতে আবার কচ্ছ আবার উঠে দাঁড়িয়েছে, তার পুরনো রূপে ফিরে এসেছে। আজ কচ্ছ এগিয়ে চলেছে , এগিয়ে চলেছে ।এটাই আমাদের, ভারতীয়দের সংকল্প শক্তি। আমরা যদি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই তাহলে কোন লক্ষ‍্যই আমাদের কাছে অসম্ভব নয়। কোনও পথ বন্ধুর নয়। আর আজ তো চাহিদাও আছে, আর রাস্তাও আছে।এটাই হল ভারতকে “আত্মনির্ভর” করার স্বর্ণময় সময়।
ভারতের সংকল্প শক্তি এমনই যে ভারত আত্মনির্ভর হতে পারে ।

বন্ধুগণ,
আত্মনির্ভর” ভারতের সুরম্য প্রাসাদ পাঁচটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম স্তম্ভ–অর্থনীতি।এমন এক অর্থনীতি যা “ইনক্রিমেনটাল চেঞ্জ” নয় , বরং “কোয়ান্টাম জাম্প” দেবে। দ্বিতীয় স্তম্ভ- “ইনফ্রাস্ট্রাকচার“। এমন এক ইনফ্রাস্ট্রাকচার যা, আধুনিক ভারতের পরিচয় বহন করবে। তৃতীয় স্তম্ভ- আমাদের “সিস্টেম”। এমন এক সিস্টেম যা চলে যাওয়া শতাব্দীর রীতিনীতি নয় বরং ২১ শতকের স্বপ্নকে সাকারকারীটেকনোলজি ড্রিভন” ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। চতুর্থ স্তম্ভ-আমাদের “ডেমোগ্রাফি”। পৃথিবীর সবথেকে বড় ডেমোক্রেসিতে আমাদের ভাইব্রেন্ট ডেমোগ্রাফি আমাদের শক্তি স্বরূপ। আত্মনির্ভর ভারতের জন্য আমাদের সর্বশক্তির উৎস। পঞ্চম স্তম্ভ হল “ডিমান্ড”। আমাদের অর্থ ব্যবস্থায় ডিমান্ড এবং সাপ্লাই চেনের যে চক্র আছে, যা শক্তি স্বরূপ,তাকে পুরো ক্ষমতার সঙ্গে ব্যবহার করে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে । দেশের চাহিদা বাড়ানোর জন্য , চাহিদাকে পূরণ করার জন্য আমাদের যোগান ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক “স্টেকহোল্ডারের” শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। আমাদের সাপ্লাই চেইন, আমাদের চাহিদাপূর্তির সেই ব্যবস্থা,যাকে আমরা মজবুত করব,যাতে আমার দেশের মাটির গন্ধ থাকবে ।আমাদের শ্রমিকদের ঘামের সুগন্ধ থাকবে।

বন্ধুগণ,
করোনা সংকটের সঙ্গে যুদ্ধ করতে, নতুন সংকল্পের সঙ্গে আমি আজ এক বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করছি। এই আর্থিক প্যাকেজ “আত্মনির্ভর ভারত” অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ভিতের কাজ করবে ।

প্রিয় দেশবাসী,
কিছুকাল পূর্বে সরকার করোনা বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে আছে রিজার্ভ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত। এসব জুড়লে আজকের ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজ প্রায় কুড়ি লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এই আর্থিক প্যাকেজ ভারতের GDP-র প্রায় ১০% । এসবের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বর্গকে , আর্থিক ব্যবস্থার পর্যায়কে কুড়ি লাখ কোটি টাকার সম্বল দেবে। সহায়তা দেবে। কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার এই প্যাকেজ ২০২০তে দেশের বিকাশ যাত্রাকে, “আত্মনির্ভর ভারত” অভিযানকে একটা নতুন গতি দেবে। আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্পকে সিদ্ধ করার জন্য এই প্যাকেজে ল্যান্ড, লেবার, লিকুইডিটি এবং ল’ সবকিছুর উপর জোর দিয়েছে।
এই আর্থিক প্যাকেজ আমাদের কুটিরশিল্প, গৃহ উদ্যোগ ,ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগ,আমাদের MSME এর জন্য,যা কোটি কোটি ভারতবাসীর জীবিকার সাধন, যা আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্পের মজবুত আধার। এই আর্থিক প্যাকেজ দেশের সেই সমস্ত শ্রমিকদের জন্য, সেই সমস্ত কৃষকদের জন্য ,যারা সব পরিস্থিতিতে সব অবস্থায় দিবারাত্রি পরিশ্রম করেন। এই আর্থিক প্যাকেজ আমাদের দেশের মধ্যবিত্তদের জন্য যারা সততার সঙ্গে ট্যাক্স প্রদান করেন, দেশের বিকাশে নিজেদের সহযোগ দেন। এই আর্থিক প্যাকেজ ভারতের উদ্যোগ জগতের জন্য ,যারা ভারতের আর্থিক সামর্থ্যকে গতি এবং শক্তি দেবার জন্য সংকল্পিত। কাল থেকে শুরু করে আগামী কিছুদিন পর্যন্ত আমাদের অর্থমন্ত্রী ভারতের এই আর্থিক প্যাকেজ বিস্তারিত ভাবে জানাবেন।

বন্ধুগণ,
আত্মনির্ভর ভারত” গঠনের জন্য “বোল্ড রিফর্মস“-এর প্রতিশ্রুতির সঙ্গে দেশের প্রগতি অনিবার্যভাবে জড়িয়ে। আপনারাও অনুভব করেছেন যে, বিগত ছয় বৎসর ধরে যে “রিফর্ম” হয়েছে, তার কারণে সংকটের এই সময় ভারতের ব্যবস্থাগুলি অধিক সক্ষম ,অধিক সমর্থ হয়েছে। না হলে,কে ভাবতে পারত যে , ভারত সরকার যে পয়সা পাঠাবে সেটা সোজাসুজি গরিবের পকেটে, কৃষকের পকেটে পৌঁছে যাবে! কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে। এবং সেটা সম্ভব হয়েছে এমনকি এমন একটা সময়েও যখন, সকল সরকারী দপ্তর, পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ। জনধন , আধার, মোবাইল – “JAM” এই ত্রিশক্তিযুক্ত একটিমাত্র রিফর্মের প্রভাব আপনারা দেখেছেন।
এবার রিফর্মের সেই গতিকে আরও ব্যাপক করতে হবে। নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। এই রিফর্ম ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পুরো সাপ্লাই চেনে হবে , তাতে কৃষক অর্থবান হবেন।এবং ভবিষ্যতে করোনার মতো অন্য কোনো সংকটে কৃষির উপর সামান্য থেকেও সামান্যতম প্রভাব পড়বে না।এই রিফর্ম ন্যাশন্যাল ট্যাক্স সিস্টেম , সরল ও স্পষ্ট নিয়মকানুন , উত্তম ইনফ্রাস্ট্রাকচার , সমর্থ ও সক্ষম হিউম্যান রিসোর্সেস, মজবুত ফাইনাসিয়াল সিস্টেমকে স্থাপন করবে। এই রিফর্ম ব্যবসায়িক বৃদ্ধি আনবে, বিনিয়োগকে আকর্ষিত করবে এবং “মেক ইন ইন্ডিয়া” প্রজেক্টের সংকল্পকে শক্তিশালী করবে।

বন্ধুগণ,
আত্মবল এবং আত্মবিশ্বাসেই আত্মনির্ভরতায় সফলতার আগমন ঘটে। আত্মনির্ভরতা গ্লোবাল সাপ্লাই চেনে কঠিন প্রতিযোগিতার জন্য দেশকে তৈরি করবে এবং আজ এটা সময়ের দাবি ভারতকে প্রতিটি প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে হবে! গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে বড় ভূমিকা পালন করবে। এটা উপলব্ধি করেই আর্থিক প্যাকেজে অনেক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । এতে আমাদের প্রত্যেক সেক্টরের এফিশিয়েন্সি বাড়বে এবং কোয়ালিটিও সুনিশ্চিত হবে।
বন্ধুগণ,
এই সংকট এত বিশাল যে, বৃহৎ থেকে বৃহত্তম ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমরা, আমাদের দেশের গরিব ভাই-বোনেদের দারুণ সংঘর্ষশক্তি ও সংযম শক্তি দর্শন করেছি । বিশেষ করে প্রত্যহ কায়িক শ্রমদান করে চলেছেন যে ভাইবোনেরা, ঠেলা চালিয়ে, ডালা ভরে জিনিষ বিক্রয় করেন যাঁরা, আমাদের শ্রমিক সাথী, ঘরের ঠিকাকর্মী সকলেই এই দুঃসময়ও অনেক কষ্ট করেছেন। অনেক ত্যাগ, তপস্যা। এমন কেউ আছেন তাঁদের অনুপস্থিতিকে অনুভব করেননি। তাই আমাদের কর্তব্য হল, ওঁদের শক্তিধর করা, ওঁদের আর্থিক হিতের জন্য বড় কদম নেওয়া। সেই দিকে লক্ষ রেখে গরিব, শ্রমিক, প্রবাসী (পরিযায়ী) শ্রমিক, পশুপালক, মৎস্যজীবী, তা সে সংগঠিত বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের হোক, সকলের জন্যই এই প্যাকেজে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থার ঘোষণা আছে।

করোনার এই সংকটময় পরিস্থিতি আমাদের ‘লোকাল ম্যানুফ্যাকচারিং‘, ‘লোকাল মর্কেট‘, ‘লোকাল সাপ্লাই চেন‘-এর গুরুত্ব পুরোদস্তুর বুঝিয়ে দিয়েছে। সংকটকালে লোকালই আমাদের চাহিদা পূরণ করেছে, আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই লোকাল শুধু প্রয়োজন নয়, এর প্রতি আমাদের দায়িত্বও রয়েছে। সময় আমাদের শিখিয়েছে, লোকালকেই আমাদের জীবনমন্ত্র করতে হবে।

আজ যে গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো আমাদের আকর্ষণ করে সেগুলোও এক সময় লোকালই ছিল। কিন্তু যখন সেখানকার লোকেরা এই সমস্ত লোকাল বা স্থানীয় জিনিষগুলোর ব্যবহার শুরু করল, তার প্রচার শুরু করল, তার ব্র্যান্ডিং করল, তাকে নিয়ে গর্ব করল, তখন সেই সমস্ত জিনিষ লোকাল থেকে গ্লোবাল হয়ে গেল। এই জন্য আজ থেকে প্রত্যেক ভারতবাসীকেই “লোকালের জন্য ভোকাল হতে হবে“। শুধু কিনলেই হবে না তা গর্বের সঙ্গে তার প্রচার করতেও হবে। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে, সমস্ত দেশ এরকম করতে পারবে। আপনাদের প্রয়াস প্রতিবারই আপনাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাকে আরও বৃদ্ধি করেছে। গর্বের সঙ্গে আমি এটা উপলব্ধি করি। মনে আছে,আমি আপনাদের কাছে খাদি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম এবং হ্যান্ডলুম কর্মীদের সাহায্য ও সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তার ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে খাদি এবং হ্যান্ডলুম উভয় বস্ত্রের চাহিদা এবং বিক্রি রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছিল। কেবল তাই নয় আপনারা একে বড় ব্র্যান্ডেও পরিণত করেছেন। ভীষণ ছোট্ট প্রয়াস ছিল। কিন্তু খুব ভালো ফল মিলেছিল।
বন্ধুগণ,
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিজ্ঞানীরা বলেন যে, করোনা দীর্ঘ সময়ের জন্য আমাদের জীবনের অংশ হয়ে থাকবে। কিন্তু তার সঙ্গে আমরা এটাও হতে দিতে পারি না যে, আমাদের জীবন কেবল করোনাকে কেন্দ্র করেই ঘুরে যাবে। আমরা মাস্ক পরব, দু গজের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখব , কিন্তু আমাদের লক্ষ্যকে কোনদিন দূর হতে দেব না। এই জন্য লকডাউনের চতুর্থ অধ্যায় সম্পূর্ণভাবে নতুন রঙরূপধারী হবে, নতুন নিয়ম যুক্ত হবে । রাজ্যগুলি থেকে যে সমস্ত পরামর্শ মিলছে তার উপর নির্ভর করে “লকডাউন ফোর” সম্পর্কিত সংবাদ আপনাদের ১৮ ই মের পূর্বেই দিয়ে দেওয়া হবে।
নিয়ম মেনে আমরা করোনার সঙ্গে লড়ব এবং এগিয়েও চলব, এব্যাপারে আমার পুরো আস্থা আছে।

বন্ধুগণ,
আমাদের এখানে বলা হয়েছে “সর্বম‌্ আত্মবশম‌্ সুখম” অর্থাৎ যা আমাদের বশে আছে, নিয়ন্ত্রণে আছে সেখানেই সুখের অবস্থান। আত্মনির্ভরতা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং তার মাধ্যমেই আমরা সুখের সন্ধান করব। একুশ শতকে ভারতকে উন্নয়নের শীর্ষে নিয়ে যাওয়া আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আত্মনির্ভর ভারতের প্রতিজ্ঞাই আমাদের লক্ষ্য। এই প্রতিজ্ঞা ১৩০ কোটি দেশবাসীর সম্মিলিত প্রাণশক্তিতেই পূরণ হবে। আত্মনির্ভর ভারতের এই যুগ ভারতবাসীর জন্য নতুন পণ, নতুন পর্ব হবে। এখন এক নতুন প্রাণশক্তি, নতুন সংকল্প শক্তি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আচারে-বিচারে-কর্তব্যজ্ঞানে এক নতুন প্রভাত আনতে হবে । কর্মযোগের পরাকাষ্ঠা, কুশলতা পুঁজি হলে কার সাধ্য আত্মনির্ভর ভারতের উদয়কে রোখে! আমরা ভারতকে আত্মনির্ভর বানাতে পারি, বানাবই। এই সংকল্পের সঙ্গে, এই বিশ্বাসের সঙ্গে আমি আপনাদের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।আপনারা নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি, পরিবারের প্রতি এবং নিজের আপনজনদের প্রতি খেয়াল রাখবেন।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.