পুলওয়ামা আত্মঘাতী হামলার পরবর্তিতে ২৬শে ফোব্রুয়ারী বালাকোটের জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় বায়ু সেনা এয়ার স্ট্রাইক করে। তারপর ভারতের আকাশসীমা পেরিয়ে পাকিস্তান এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের সাহায্যে AMRAAM মিসাইল ক্ষেপনাস্ত্র ছুড়েছিল ভারতের দিকে। নিয়ন্ত্রনরেখা পেরিয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র AIM-120C-5 AMRAAM এর ধ্বংসাবশেষ এর নমুনা ভারত সরকার আগেই জনসমক্ষে এনে, বলেছে এটা পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কাজ। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে পারে এবং তা হবে পাকিস্তানকে পক্ষে বড় রকমের কূটনৈতিক আঘাত। কিন্তু প্রতিবেশী শত্রু দেশটি দাবি করে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসাবশেষ তাইওয়ানের কাছে বিক্রি করা ক্ষেপণাস্ত্রের অংশ বলে। তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে পাকিস্তানের সকল দাবি অস্বীকার করে বলেছে যে ধ্বংসাবশেষটির সাথে তাইওয়ানের অস্ত্র ভাণ্ডারের কোনো মিল নেই।
১৯৮০র দশকের প্রথম দিকে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েতদের প্রতিহত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছিল তখনি তারা যুদ্ধ জেট এফ-১৬ পাকিস্তানকে বিক্রি করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পারমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এফ -১৬ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কাছে ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ বিমান। প্রেসলার সংশোধনীর অন্তর্গত পারমাণবিক বিস্তার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারনে ১৯৯০ সালের পর, মার্কিন সরকার এফ-১৬ বিক্রি বাতিল করে দেয়। আমেরিকার বাতিলের শর্তাবলী অনুসারে তারা অর্থ ও বিমান উভয়ই নিজেদের অধিকারে রাখে।
সেপ্টেম্বর১১ র হামলার পর, প্রেসলার সংশোধনের তিক্ত অভিঞ্জতা ভুলে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য জর্জ ডব্লু বুশ প্রশাসনের আবেদন জানায় ইসলামাবাদ। অপরদিকে আফগানিস্তানের তালিবান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে ইসলামাবাদের সহযোগিতা পেতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী ছিল। পাকিস্তান তালিবান শাসকদের সমর্থন করা থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে আমেরিকার নেতৃত্বে আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে যোগ দেয়। এই কারনে ২০০৫ সালে বুশ প্রশাসন পুনরায় পাকিস্তানকে এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান বিক্রির কথা ঘোষণা করে। পারমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এই যুদ্ধ জেটগুলিকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে এই আশঙ্কায় ভারত সরকার এর প্রতিবাদ করে। ভারতের বিরোধীতার পরেও পাকিস্তানকে এফ -১৬ যুদ্ধজাহাজ দিলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহার সংক্রান্ত বিশেষ এন্ড ইউজার চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানেরর ভূমিকা সীমিত করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী জেটগুলি শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার কারনে ব্যবহার করা যাবে। ২০১৫ সালেই পাকিস্তান ১৮ টি নতুন এফ -১৬ সি / ডি ফাইটিং ফ্যালকন ব্লক ৫২ যুদ্ধ বিমান কিনেছিল। এফ -১৬ গুলি ছিল উন্নত প্রযুক্তির অত্যন্ত দক্ষ, সুপারসনিক ক্লাসের বহুমুখী কৌশলগত যুদ্ধ বিমান। পাকিস্তান এন্ড ইউজার শর্তকে ভুলে গিয়ে সন্ত্রাসবাদের পরিবর্তে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধ লড়তে থাকা ভারতের উপর যুদ্ধ জেট গুলি ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
পাকিস্তান একদিকে বলছে ভারতকে তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছিল অন্য দিকে বলছে তারা তাদের জেটগুলি সফল ব্যবহার করেছিল। তারা পরষ্পরবিরোধী যাই দাবি করুক না কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা এফ-১৬ এর এন্ড ইউজার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। অতীতেও এফ-১৬ ব্যবহার সম্পর্কে পাকিস্তানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আশা করা যায় এবারও চুক্তি লঙ্ঘনের কারনে সেগুলি কে টানা হতে পারে। কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এফ-১৬ গ্রাউন্ডিংয়ের দাবি করতে পারে। কেবলমাত্র একটা হারায়নি বরং তারা তাদের সমস্ত এফ-১৬ জেটগুলি হারাতে পারে। যার পরিণতি পাকিস্তানের জন্য মারাত্মক হবে।