ইসরোর বিজ্ঞানীদের মোদী: সাহসী হোন, জীবনে ওঠা পড়া লেগেই থাকে

সব আগাম হিসাব মেনেই চলছিল। তবু ইসরো চেয়ারম্যান শুক্রবার সকালেই বলেছিলেন, শেষ পনেরো মিনিট হবে রূদ্ধশ্বাস। দেখা গেল, পনেরো, ষোলো, সতেরো মিনিট পরেও বিক্রম ল্যান্ডারের সাড়া নেই!

নেই তো নেইই..

সুতরাং আরও অপেক্ষা। আরও। অন্তত আরও পনেরো মিনিট। তবুও ল্যান্ডার থেকে যখন সাড়া মিলছে না, কোনও সিগন্যাল এসে পৌঁছচ্ছে না বেঙ্গালুরুতে ইসরোর কন্ট্রোল রুমে, দেখা গেল হতাশা গ্রাস ও উদ্বেগ গ্রাস করছে বিজ্ঞানীদের।

হতাশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। কিছু ক্ষণ আগেও গালে হাত দিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু গালে হাত দিয়ে হতাশা প্রকাশ কি তাঁর মানায়? মানায় না। চকিতে সে সব যেন ঝেড়ে ফেললেন। তার পর ইসরো চেয়ারম্যানের কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, ‘বি কারেজিয়াস। (সাহসী হোন)।’

সেখানেই না থেমে ইসরোর বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে বললেন, জীবনে ওঠা পড়া লেগেই থাকে। যে সাফল্য আপনারা অর্জন করেছেন, তা কম নয়। গোটা দেশ আপনাদের জন্য গর্বিত। আপনারা আবারও দেশকে গর্বিত করবেন, আমি নিশ্চিত।”

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত সিগনাল পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু আমরা আশায় থাকব। শুধু তা-ই নয়। উপস্থিত স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে কথাও বলেন মোদী। টিপস দেন, কী ভাবে লক্ষ্য পূরণ হবে তাঁদের। এক ছাত্র তাঁকে প্রশ্ন করে, রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য সে কী ভাবে প্রস্তুতি নেবে। হাল্কা খুনসুটির গলায় মোদী পাল্টা প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রী নয় কেন?

যেন কিছুই হয়নি। নিজের স্টেডি আচরণে এমনটাই বোঝাতে চাইছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ইসরোর বিজ্ঞানীদের মুখে তখন হতাশার ছাপ স্পষ্ট। কেউ-ই আর অপেক্ষা করছেন না সিগন্যালের জন্য। যেন অলিখিত এক পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা।

সকলকে আরও এক বার অভিনন্দন জানিয়ে মোদী চলে যান এর পরে। গোটা ঘটনাটি ইসরোর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিতে লাইভ দেখানো হচ্ছিল। মোদীর প্রস্থানের পরে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেগুলিও।

ইসরো থেকে বেরিয়েই টুইট করেন মোদী। লেখেন, “আমাদের বিজ্ঞানীদের জন্য গোটা দেশ গর্বিত। ওঁরা ওঁদের তরফে সেরা চেষ্টা করেছন দেশকে গর্বিত করার। এই সময়গুলোয় আর একটু সাহসী হতে হবে, আর আমরা সাহসী হবো।”

মোদীর মতো ইসরোর দফতরে উপস্থিত না থাকলেও, এ দিন আরও লক্ষ দেশবাসীর মতোই রাত জেগে স্ক্রিনে চোখ রেখেছিলেন রাহুল গান্ধী। অপেক্ষা করছিলেন চন্দ্রযান ২-এর চূড়ান্ত খবর পাওয়ার জন্য। সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরে টুইট করেন তিনিও। লেখেন, “ইসরোর বিজ্ঞানী দলকে চন্দ্রযান ২ অভিযানের জন্য অভিনন্দন।  আপনাদের আবেগ, আপনাদের একান্ত প্রচেষ্টা প্রতিটা দেশবাসীর অনুপ্রেরণা। আপনাদের এই পদক্ষেপকে একেবারেই ব্যর্থ বলে ভাববেন না, এটা ভারতের মহাকাশ চর্চা ক্ষেত্রে আগামী পথ পেরোনোর প্রথম ভিত্তি কেবল।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.