ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের মূল কান্ডারি দুই মহিলা, চিনে নিন তাঁদের

ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেটের সাহায্যে চাঁদে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-২ স্যাটেলাইট। পরিসংখ্যান বলছে, অভিযানে সফল হলে চাঁদের মাটিতে মহাকাশযান পাঠানো দেশগুলির তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে আসবে ভারতের নাম। এই অভিযানের খরচ প্রায় ১০০০ কোটি টাকা। আর এই অভিযানের মূলে রয়েছেন দুই মহিলা বিজ্ঞানী। চন্দ্রযান-২-এর মিশন ডিরেক্টরের পদে আছেন ‘রকেট ওম্যান’ রিতু কারিদহাল শ্রীবাস্তব। এবং প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের পদে আছেন বনিতা এম।

এক নজরে চিনে নিন ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের দুই মূল কান্ডারিকে-

  • রিতু কারিধাল 

লখনউয়ের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রিতু কারিধাল (Ritu Karidhal)। ছোট থেকে বড্ড ন্যাক ছিল মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে। স্বপ্ন দেখতেন মহাকাশের খুঁটিনাটি নিয়ে গবেষণা করার। লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন রিতু। এরপর দেন গেট পরীক্ষা। ফল ভালো হওয়ায় ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অফ সায়েন্সে পড়ার সুযোগ পান তিনি। সেখানে থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করেন রিতু। তারপর চাকরির জন্য আবেদন করেন ইসরোতে। পিএইচডি করাকালীনই ডাক আসে ইসরো থেকে। পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ে সফল হয়ে যোগ দেন ইসরোতে।

এর আগে মঙ্গল অভিযানের সময়েও স্পেসক্রাফটের অটোনমির ক্ষেত্রে রিতুই ছিলেন মূল দায়িত্বে। এখানেই শেষ নয়। চন্দ্রযান-১ -এর মূল টিমেও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন রিতু কারিধাল শ্রীবাস্তব। এ বার চন্দ্রযান-২-এর অভিযানেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। অভিযানের সবকিছু থাকবে তাঁর নখদর্পণে। ২০০৭-সালে এপিজে আব্দুল কালামের হাত থেকে ইসরোর সেরা নবীন বিজ্ঞানী-র পুরস্কারও পান রিতু। বিশ্বের দরবারে ‘রকেট ওম্যান অফ ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত তিনি। সহপাঠীদের কাছে কিন্তু রিতু পরিচিত ছিলেন আবেগপ্রবণ হিসেবেই। তবে কাজের ব্যাপারে তিনি এক্কেবারে ‘পারফেকশনিস্ট’। 

  • এম বণিতা

চন্দ্রযান-২ এর অভিযানে প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের পদে রয়েছেন এম বণিতা। রিতু কারিধালের মতোই মহাকাশ নিয়ে ছোট থেকেই আগ্রহ ছিল বণিতারও। বরাবরের মেধাবী ছাত্রী বণিতা ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। ২০০৬ সালে তিনি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার ‘সেরা মহিলা বিজ্ঞানী’র পুরস্কারও পেয়েছেন। এ বার চন্দ্রযান-২-এর অভিযানে প্রোজেক্ট ডিরেক্টর হিসাবে হার্ডওয়্যারের ডেভলপমেন্ট এবং অন্যান্য বিষয়ে নেতৃত্ব দেবেন বণিতা।

  • চন্দ্রযান-২-এর অভিযানকে সফল করতে টিমে রয়েছেন প্রায় ৩০ জন মহিলা। তবে প্রমীলাবাহিনীর পাশাপাশি এই অভিযানে পিছিয়ে নেই পুরুষরাও। দলে রয়েছেন এক বঙ্গ সন্তানও। হুগলির বাসিন্দা চন্দ্রকান্ত কুমার। ২০০১ সাল থেকে ইসরোর সঙ্গে যুক্ত তিনি। প্রথম চন্দ্রাভিযানেও সামিল ছিলেন চন্দ্রকান্ত। এ বার রয়েছেন আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে। চন্দ্রযান এবং ভারতের মাটিতে বসানো যে অ্যান্টেনা, সেটা যারা নির্মাণ করেন, সেই দলের প্রধান চন্দ্রকান্ত। এই অ্যান্টেনা এবং চন্দ্রযানে বসানো রিসিভার ও ট্রান্সমিটারের মধ্যেই রেডিয়ো তরঙ্গ মারফত নির্দেশ ও তথ্য আদান প্রদান করা হয়।

১৫ জুলাই শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে চন্দ্রযান-২ স্যাটেলাইট। সে দিন রাত ২.৫১ নাগাদ চন্দ্রযান-২-কে নিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে পাড়ি দেবে এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল(GSLV) মার্ক থ্রি বা ‘বাহুবলী’। ১৬ মিনিট উড়ানের পর মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে যাবে চন্দ্রযান-২। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ৬ সেপ্টেম্বর পৌঁছনো যাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.