শ্রীখণ্ড নাম নগরী রাঢ়ে বঙ্গেষু বিশ্রুতা।
সর্বেষামেব বৈদ্যানামাশ্রয়ো যত্র বিদ্যতে।।

শ্ৰীপাট শ্রীখণ্ড – কাটোয়া মহকুমা বা অখণ্ড বর্ধমান জেলার একটি গ্রাম। তবে সে একটি নিছক গাঁ ঘর নয়, সেখানে ইতিহাস , সংস্কৃতি , ঐতিহ্য বঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হয়ে অবস্থান করছে। এই বঙ্গে যতগুলি বৈষ্ণব তীর্থ বা পীঠস্থান আছে তার মধ্যে অন্যতম হল শ্ৰীখণ্ড গ্রাম। শ্রীখণ্ড ২৮৫ জন কবির জন্মস্থান। শ্ৰীখণ্ড বৈষ্ণব সাধক, ধর্মপ্রচারক, রাজসেবী বৈদ্য কবিরাজ, রাজ – আমলা দ্বারা অলঙ্কৃত হয়েছিল। শ্রীখণ্ড হতে রচিত হয়েছে অজস্র সংস্কৃত , বাংলা, ব্রজবুলি ভাষায় রাধাকৃষ্ণ , গৌরপদাবলী, বৈষ্ণব রসশাস্ত্র তথা পদসংকলন গ্রন্থ। এই গ্রামেই চর্চিত ,লালিত পালিত হয়েছে মনোহরশাহী কীর্তন গানের ধারা। শ্রীখণ্ড সেই অর্থে শ্ৰীপাট নয় , #মহাপাট।

এক দুই বৈষ্ণব যাহা তাহা পাট সাক্ষী।
অনেক বৈষ্ণব তাহা মহাপাট লেখি।।

তবে শ্রীপাট শ্রীখণ্ড কেবলই কি ঐতিহ্যমন্ডিত বৈষ্ণবপাট? না , বিষ্ণুর উপাসনা ব্যতীত শ্ৰীখণ্ড সুপ্রাচীন শৈব, শাক্ত তথা তন্ত্রচর্চার সুপ্রসিদ্ধ জনপদ। এখানে প্রাচীন একাধিক দেবদেবী বংশানুক্রমে উপাসিত হয়ে আসছেন। রাময়েত বৈষ্ণব সম্প্রদায় শ্ৰীখণ্ডে সুপ্রসিদ্ধ ছিল। শ্ৰীচৈতন্য মহাপ্রভুর গুরু শ্ৰী অদ্বৈত আচার্য ছিলেন রাময়েত বৈষ্ণব। আনুমানিক তিনশত বৎসর পুরাতন রঘুনাথ শিলা পূজিত হয়ে আসছেন শ্ৰীখণ্ডের মজুমদার পরিবারে। রাঢ়বঙ্গের কুলদেবতা রূপে এ গ্রামে ধর্মরাজ বা ধর্মঠাকুর পূজিত হন। এই গাঁয়ে পঞ্চানন ঠাকুর, গাছকালীর পূজা ঐতিহ্যবাহী। একসময় তন্ত্রচর্চার অন্যতম ক্ষেত্র ছিল এই শ্রীখণ্ড। পাঁচখানি পঞ্চমুন্ডির আসন সেই অতীত ঐতিহ্যের সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে। আর কে আছেন? আর আছেন খণ্ডেশ্বরী। তিনি শ্রীখণ্ড গাঁয়ের কুলদেবী। তিনি শ্রীখণ্ডে সুপ্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী।

গঙ্গাবীচিপ্লুত পরিসরঃ সৌধমালাবতংসো
বাস্যতুচ্চৈ স্তুয়ি রসময়ো বিস্ময়ং সুহ্ম দেশঃ।

অর্থাৎ, ‘যে-দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গঙ্গাপ্রবাহের দ্বারা প্লাবিত হয়, যে দেশ সৌধশ্রেণীর দ্বারা অলংকৃত, সেই রহস্যময় সুহ্মদেশ তোমার মনে বিশেষ বিস্ময় এনে দেবে।’

খ্রিস্টীয় ৮ ম ও ৯ ম শতাব্দীতে সমগ্র রাঢ়দেশ শূর বংশীয় নৃপতিদের অধিকার ভুক্তছিল। তৎপরে পালরাজ গণের প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে তাঁদের অধিকার ভুক্ত স্থান উত্তররাঢ় এবং শূর ও দাস বংশ অধিকারভুক্ত স্থান দক্ষিণ রাঢ় নামে পরিচিতি হয়। বর্তমান বর্দ্ধমানের উত্তরাংশ ও মুর্শিদাবাদে আজও উত্তর রাঢ়ীয়দিগের আদি সমাজ স্থান এবং বর্দ্ধমান জেলার দক্ষিণাংশে , হুগলী ও ২৪ পরগনা মধ্যে দক্ষিণরাঢ়ীয়দিগের সমাজ স্থান নির্দিষ্ট হয়ে থাকে । বর্দ্ধমানস্থ শূরনগর , প্রদু্্যম্নপুর , গড়মন্দারণ নামক স্থানে বিভিন্ন শূররাজের এবং হুগলীর ভুরসুট নামক স্থানে দাস বংশের এবং তৎপরে রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণরাজ বংশের রাজধানীর চিন্হ বিদ্যমান।

রাঢ় ভূমি , যুগ যুগ ধরে তন্ত্র সাধনা এখানে প্রচলিত । পূর্বেই বলেছি যে রাঢ় বঙ্গ গৌড় হতে পৃথক ছিল না। তাছাড়া স্কন্দপুরাণে পঞ্চ গৌড়ের উল্লেখ আছে ।

সারস্বতা কান্যকুব্জা উৎকল মৈথিলাশ্চ যে
গৌড়াশ্চ পঞ্চব্য চৈব – পঞ্চগৌড়া প্রকীর্তিতা।।

সারস্বত কনৌজ উৎকল মিথিলা ও গৌড়ের অধিবাসী ব্রাহ্মণদের পঞ্চগৌড়া বলে অভিহিত হন। কুর্ম্ম এবং লিঙ্গ পুরাণেও গৌড়ের উল্লেখ আছে।

নির্মিতা যেন শ্রাবস্তী গৌড়দেশে দ্বিজোত্তমা।

স্কন্দপুরাণের সহ্যাদি খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে যে, কুরুক্ষেত্র এবং গৌড় সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থান করছে। নানা শিলালিপি ও তাম্রশাসনে সেই গৌড়ের উল্লেখ আছে। গৌড় চেদি, মালব, বেরার সীমান্ত অবধি বিস্তার লাভ করেছিল।

পাণিনি বলেছেন – অরিষ্ক গৌড় পূর্বে চ ….

শক্তি সংগম তন্ত্রে বলা হয়েছে। –

বঙ্গদেশং সমারভ্য ভুবনেশান্তগং শিবে।

এহেন সুপ্রাচীন রাঢ় তথা গৌড় বঙ্গের সুপ্রাচীন সনাতন ধর্ম তার সকল মান ও ঐতিহ্য নিয়ে অবস্থান করত। সেখানে নিরাকার রূপে প্রকৃতির উপাসনা হতে সিদ্ধ তন্ত্রপীঠ সকলের অবস্থান ছিল একাধারে। সেখানে অবস্থান ছিল ত্রিকালজ্ঞ মুনি ঋষিদের তপোবনের। সেই রাঢ় তথা গৌড়ে জন্ম হয়েছিল সুপ্রাচীন তন্ত্র সাধনার।

গৌড়ে প্রকাশিতা বিদ্যা , মৈথিলৈঃ প্রবলীকৃতা।
ক্কচিৎ , ক্কচিন্মরাষ্ট্রে গুর্জরে প্রলয়ং গতা।।

পূর্বকালে এতদঞ্চলে যেমন বৈষ্ণব এবং বৈষ্ণবমার্গীয়দের প্রভাবাধিক্য ছিল তেমনই শক্তিসাধক সম্প্রদায়ের প্রভাবও বড় কম ছিল না । তাঁরাও কালীকীর্তনে ধর্মজগৎ কম্পিত করে সিংহের ন্যায় ধরা বিচরণ করত। শাক্ত মহাত্মাগনের নাম এবং সাধন স্থানে বহু নিদর্শন সিদ্ধপীঠ , উপপীঠ নাম ধারণ করে আজও বিরাজ করছে ।

পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ধর্মের বজ্রযান শাখাও তন্ত্রভাবাপন হয়ে পড়ে । ওই সমস্ত বৌদ্ধ তান্ত্রিকগন রাঢ়ের জঙ্গলাকীর্ণ পশ্চিমাঞ্চলে, মলুটি, তারাপীঠ, ভাবুক ইত্যাদি স্থানে তাদের তন্ত্র সাধনা চালিয়ে যান ।

অতীতে রাঢ় অঞ্চলের পশ্চিম প্রান্ত অরণ্যময় । সেই অঞ্চলটি নানা সাধক, তান্ত্রিক এবং পরবর্তী কালে বৌদ্ধদের প্রভাবাধীন ছিল । জঙ্গলের মধ্যে তান্ত্রিকগন ছোট ছোট মন্দির তৈরি করে তার ভিতর তাদের উপাস্য দেবীকে স্থাপন করে গোপনে সাধন ভজন করত। বহু গ্রামেই এই সকল দেব দেবীর প্রস্তর প্রতিমা দেখতে পাওয়া যায় ।

ঐতিহাসিক বিনয়তোষ ভট্টাচার্য্য বলেছেন ” বজ্রযানী বৌদ্ধদের প্রভাব বাংলা বিহার উড়িষ্যায় যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। এই সব জায়গায় বৌদ্ধদের দেবদেবীর মূর্তি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। “

ব্রহ্মার মানসপুত্র বশিষ্টদেব সাধন ক্রিয়ার জন্য কামরূপে পাড়ি দেন কিন্তু কামরূপের সাধনার মার্গফল করা সম্ভব নয় দেখে তিনি অঙ্গদেশ ত্যাগ করেন। এরপর তিনি সাধন পদ্ধতির জন্য রাঢ় বাংলায় পাড়ি দেন। রাঢ়দেশে অন্তর্গত বক্রেশ্বরের ঈশান কোন অবস্থিত দ্বারকা নদীর পূর্ব তীরে শ্মশানে প্রতিষ্ঠিত এক পঞ্চমুন্ডির আসনে তিনি গভীর তপস্যায় বসেন এবং সিদ্ধিলাভ করেন। তিনি দেবী উগ্রতাঁরার মাতৃরূপ দর্শন করেন। পরে একই আসনে সিদ্ধিলাভ করেন সাধক বামাক্ষ্যাপা । সেই সিদ্ধস্থানই তারাপীঠ এবং কিরীটেশ্বরী নামে সুপরিচিত।

আদিদেব পশুপতি শিবের উপাসনা হত এই প্রাচীন বঙ্গে। বৌদ্ধ জাতকের গল্পে বর্ধমান এবং মেদিনীপুর অঞ্চলে শিবি এবং চেত নামক দুই রাষ্ট্রের উল্লেখ আছে। এই দুই রাষ্ট্রেই শিবপূজার প্রচলনের কথা জানা যায়। এই সব পূজাই হতো প্রাচীন বৃক্ষতলে। রামায়ণ , মহাভারত , পুরানাদিতে , তন্ত্রে নানাভাবে বঙ্গ সহ তার নানা স্থানের উল্লেখ আছে। রাঢ় অঞ্চলের নানা স্থানে ত্রিকালজ্ঞ মুনি ঋষিদের আশ্রম ছিল এরূপ প্রবাদ আছে। জলন্দার গড়ের কিছু দূরে আঙ্গোরা নামক স্থানের ঋষি অঙ্গীরার আশ্রম ছিল। মুলুকের নিকটবর্তী শিয়ান গ্রামে ঋষ‍্য‍শৃঙ্গ মুনির আশ্রম ছিল । মুলুকের অনতি উত্তরে ঋষ‍্যশৃঙ্গের পিতা বিভান্ডকের আশ্রম ছিল বলে কিংবদন্তি আছে আর বক্রেশ্বরে ছিল ঋষি অষ্টবক্রার আশ্রম।

রাঢ় দেশ একসময় শৈব এবং শাক্ত গণের লীলাস্থান বলে গণ্য ছিল। তার কারণ ৫১ পীঠের মধ্যে এই রাঢ় বঙ্গেই ৯ টি ডাকর্ণব পীঠ অবস্থিত। কুঞ্জিকাতন্ত্রের ৭ ম পটলে কর্ণসুবর্ণ বা কর্ণস্বর্ণ ,ক্ষীরগ্রাম , বৈদ্যনাথ , বিল্বক , কিরীট , অশ্বপ্রদ বা অশ্বতীর্থ , মঙ্গলকোট ও অট্টহাস এই আটটি সুপ্রাচীন সিদ্ধপীঠের উল্লেখ আছে।

তন্ত্রচূড়ামণি গ্রন্থে বহুলা, উজাণী, ক্ষীরখণ্ড , কিরীট, নলহাটী , বক্রেশ্বর , অট্টহাস, মন্দিপুর এই ৯ টিকে মহাপীঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শিব চরিত সংগ্রহ গ্রন্থে অট্টহাস, নলহাটী ও মন্দিপুর উপপীঠ বলে গণ্য হয় এবং সুগন্ধা , রণখণ্ড ও বক্রনাথ মহাপীঠ বলে গণ্য হয়। যা হোক এসব ক্ষেত্রে কুঞ্জিকাতন্ত্রকেই প্রামাণ্য হিসাবে ধরা হয়।

শ্রীপাট শ্রীখণ্ড গ্রামের কুলদেবী – গরাম – গ্রাম্যদেবী খণ্ডেশ্বরী। রামগোপালদাস মহাশয়ের #শাখানির্ণয় গ্রন্থে দেবী #খণ্ডেশ্বরীর ঐতিহাসিক অস্তিত্ব মেলে। এছাড়া দুর্গাপুজো বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ যেমন #বৃহন্নাদিকেশর থেকে জানা যায় খণ্ডেশ্বরীর কথা। সুপ্রাচীন কাল থেকে রামায়ণ , মহাভারত , পুরণাদি এবং মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্যগুলির দিগবন্দনায় নানা দেবদেবীর বন্দনা থাকে। এর মধ্যে কোনো দেবী বা দেবতা লৌকিক নামে, লৌকিক ভাবে এবং লৌকিক রূপে পূজিত হলেও তাঁদের উল্লেখ ও বন্দনা লেখা থাকে। দুর্গাপুজো বিষয়ক নানা পুঁথি, গ্রন্থেও গ্রাম, লৌকিক, আঞ্চলিক এবং দেশবাসিনী দেবীদের কথা উল্লিখিত হয়েছে।

মহাষ্টমী বা মহানবমীর পুজোর সময় সর্তোভদ্র মণ্ডলের পুজোর পরে আঞ্চলিক, লৌকিক, কুলদেবী এবং দেশবাসিনী দেবীদের পূজার বিধান আছে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি দেশবাসিনী দেবী বলতে অখণ্ড এবং বৃহত্তর ভারতবর্ষের প্রাচীন পীঠস্থানগুলির শাক্তদেবীদের বোঝানো হয়েছে। এসকল দেবীদের মধ্যে অখণ্ড বঙ্গের কয়েকটি প্রাচীন পীঠস্থানের নাম উল্লেখ হয়েছে। যার মধ্যে শ্ৰীহট্ট, রাঢ়বঙ্গ, পুন্ড্রবর্ধন , গোকর্ণ এবং খণ্ডপুর বা শ্ৰীখণ্ডের নাম উল্লিখিত হয়েছে। বৃহন্নাদিকেশ্বর পুরাণানুগ্রহীত বিধান অনুসারে যজুর্বেদীয়গণের প্রয়োগের জন্য অংশে দেবী খণ্ডেশ্বরীর উল্লেখ আছে।

সুতরাং , নিঃসন্দেহে বলা যায় যে , শ্ৰীখণ্ড সুপ্রাচীন কাল থেকে তন্ত্রচর্চার অন্যতম প্রাচীন শাক্ত পীঠস্থান ছিল। এই জন্যই তার নাম হয়েছিল #খণ্ডপুর। রামগোপালদাস তাঁর শাখানির্ণয় গ্রন্থে শ্ৰীখণ্ডের এই প্রাচীন খ্যাতিকে সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন –
ক্ষিতি নব খণ্ড মাঝে খণ্ড মহাস্থান।
সর্বত্র সৌরভ যার মলয়জ সমান।।

হিতেশ রঞ্জন স্যন্যাল মহাশয় তাঁর রচিত ” শ্ৰীখণ্ডের দেবদেবী ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, বৈষ্ণব সংস্কৃতি শ্ৰীখণ্ডে প্রাচীন এবং মুখ্য হলেও আদ্য পরিচয় নয়। নরহরি ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত গৌর বিগ্রহ শ্ৰীখণ্ডের সর্বপ্রধান দেবতা। কিন্তু শ্ৰীখণ্ডের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন খণ্ডেশ্বরী। শ্ৰীখণ্ডের প্রকৃত নাম খণ্ড। বৈষ্ণবতা বিধায় এখানে শ্ৰী যুক্ত হয়েছে। খণ্ডেশ্বরী খণ্ডের অধিকারিণী।

খণ্ডের কুলদেবী, খণ্ডের অধিশ্বরী দেবী খণ্ডেশ্বরীর মূর্তির উচ্চতা চার ইঞ্চি । মূর্তিটি ধাতব। খণ্ডেশ্বরী তলার একটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে দেবীর অবস্থান করেন বাৎসরিক পুজোর সময়। এই সুপ্রাচীন মূর্তির সেবাইত গ্রামেরই বন্দ্যোপাধ্যায় – গাঙ্গুলী পরিবার। বৎসরের বাকি সময়টা দেবী থাকেন সেবাইত গৃহে, যথা – শ্ৰীখণ্ড , চৈতন্যপুর এবং বনকাপাশিতে।

দেবীর বাৎসরিক পুজো হয় দোলের সময় শ্ৰীখণ্ড গ্রামে। সেদিন গোটা গাঁ ঘর, দূরদূরান্ত থেকে ষোলোআনা মানুষজন পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। দেবীর উপাসনা হয় শাক্ত মতে। দেবীর মন্ত্র উচ্চারিত হয় জয়দুর্গা ধ্যানমন্ত্রে। দোলপূর্ণিমায় দেবীর পূজা উপলক্ষে খণ্ডেশ্বরী তলায় হৈহট্ট বেঁধে যায় , বসে মেলা। দেবীর সঙ্গে পূজিত হন নারায়ণ, রঘুনাথ শিলা এবং সূর্যশিলা।

দেবী খণ্ডেশ্বরী হলেন গজলক্ষ্মী। তিনি পদ্মবেদিকায় পদ্মাসনে উপবিষ্টা। দূর থেকে দেবীকে চতুর্ভূজা বলে মনে হলেও , আসলে তিনি দ্বিভূজা। তাঁর দুই হস্তে বড় করে দন্ডায়মান হয়েছেন দুই শ্বেত হস্তী। তাঁরা তাঁদের শুঁড়দ্বয় দিয়ে কলস ধারণ করে দেবীর মস্তকে পুণ্য বারি সিঞ্চন করছেন।

হিতেশরঞ্জন স্যন্যাল মহাশয় দেবীকে বৌদ্ধতান্ত্রিক দেবী চর্চিকা বা বজ্রচর্চিকা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলছেন দেবী তান্ত্রিক দেবী এবং তাঁর ধ্যান গোপ্যা। আমি মহাশয়ের মতো এত পন্ডিত অথবা গুণীজন নই। তবুও আমার যতটুকু জ্ঞান তাতে মাতৃ মূর্তিটি চর্চিকা নয়।

মা চর্চিকা। তিনি হিঙ্গুল পর্বতে অধিষ্ঠিত।সেই যে মরু তীর্থ হিংলাজ, করাচীর দশ মাইল উত্তরে বিখ্যাত স্থান.. “বামন পুরান” মতে অন্ধকাসুরের যুদ্ধের সময় মহাদেবের কপালের শ্বেতজল হতে শোনিতপ্লুতা চর্চিকা দেবীর আবির্ভাব ঘটে।

ডক্টর সুকুমার সেনের মতে, একটি সময় পর্যন্ত দেবী চামুণ্ডা চর্চিকা নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি মহাকালী। বর্ধমান জেলার কাঞ্চননগরের মন্তেশ্বরে চামুন্ডা মূর্তি হল প্রকৃত পক্ষে রুদ্র চর্চিকার মূর্তি ।

গজচর্মভৃদূর্ধবাস্যপাদা স্যাদ্রুদ্রচর্চিকা।
সৈব চাষ্টভুজ দেবী শিরোডমরুকান্বিতা।।

রুদ্রচর্চিকা গজচর্মধারিণী ,মুখ ও পদ ঊর্ধ্ব ভাগে । তিনি অষ্টভুজা, নরমুন্ড ও ডমরু হস্তান- সেই জন্যই তিনি নৃত্যেশ্বরী নৃত্যারতা রুদ্রচামুন্ডা।

খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি উমাপতি ধর রচিত একটি শ্লোকে চর্চিকা দেবীর উল্লেখ আছে ।

বন্দে তামজিনাবৃতোৎকট শিরাপৃষ্টাস্থিসারাকৃতিং।
দংস্ট্রাকটিতটোৎপতিষ্ণু দিতিজাসৃক চর্চিতাং চর্চিকম্।
এই শ্লোকে পতিত দৈত্যদের রক্তে শোভিতা মৃগচর্ম পরিহিতা দেবী চর্চিকার বন্দনা করা হয়েছে।

অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমারগোস্বামী কতৃক বাণগড় থেকে আবিষ্কৃত ও পঠিত একাদশ শতাব্দীতে পালরাজা নয়পালের সময় উৎকীর্ণ একটি তাম্র শাসনে চর্চিকা দেবীর স্তুতি আছে এরূপ উল্লেখ করেছেন। স্তুতিটি নিম্নরূপ ছিল-

ইত্যাহারদরিদ্রতাকুলতয়া শুষ্যত্তং বিভ্রতি।
কপ্লানতে নৃকপালমন্ডনবিধিঃ পায়াজজগচ্চর্চিকা।।

অর্থাৎ, এখানে নর কপালের অলংকার পরিহিতা শুষ্ক দেহ ধারিণী দেবী চর্চিকা। এখানে তিনি শিব পত্নী- চর্চিকা চামুণ্ডা কালী অভিন্না।

তিনিই স্বয়ং চন্ডী। স্বামী জগদীশ্বরানন্দ সম্পাদিত শ্রী শ্রী চন্ডী গ্রন্থে দেবী কবচ অংশে চর্চিকার কথা উল্লেখিত হয়েছে।

নাসিকায়াং সুগন্ধা চ উত্তরোষ্ঠে চ চর্চিকা।
অধরে চামৃতা বালা জিহ্বায়ঞ্চ সরস্বতী।।

শ্রীযুক্ত পঞ্চানন তর্করত্ন ভট্টাচার্য সম্পাদিত শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থে দেবীকবচম্ অধ্যায় পাই-

কপোলৌ কালিকা রক্ষেৎ কর্নমূলে তু শঙ্করী। নাসিকায়ং সুগন্ধা চ উত্তরষ্ঠ চ চ্চর্চিকা।।

বৌদ্ধ বজ্রযানী সাধনায় এই চর্চিকার দেবীর নাম উল্লেখ রয়েছে। তিনি বৌদ্ধ বজ্রযানে আক্ষোভ্যকুলের দেবতা। তাই তিনি রক্তবর্ণা। তিনিই চামুন্ডা। ভয়ের চেয়েও ভয়ঙ্কর ।শরীরের সমস্ত হাড় বের হয়ে থাকে ।প্রসারিত শব দেহের উপর পা রেখে তিনি অর্ধপর্যঙ্কসনে নৃত্যারতা। তিনি ষষ্ঠ ভুজা। বাম দিকে তিনটি হাতে যথাক্রমে কপাল, রত্ন ও পদ্ম ধারণ করে রয়েছেন । অন্যদিকে দক্ষিণ হস্তে খড়্গ, বজ্র ও চক্র ধারণ করেছেন। তাই বজ্রযানী সাধনায় দেবীকে বজ্রচর্চিকা বলে উল্লেখ করা হয় ।

সুতরাং , দেবী খণ্ডেশ্বরীর রূপ বর্ণনা অনুসারে তিনি কোনোভাবেই চর্চিকা বা বজ্রচর্চিকা হতে পারেন না আশা করি প্রমাণ করতে পারলাম। তবে অনেকেই এই দেবী খণ্ডেশ্বরী মূর্তিকে কমলেকামিনী বলে প্রমাণ বা উল্লেখ করতে চেয়েছেন!

মুণ্ডমালাতন্ত্র অনুসারে আদ্যাশক্তি মহামায়ার দশবিদ্যার দশমতম বিদ্যা হলেন কমলেকামিনী। মালিনী বিজয় অনুসারে কমলা হলেন দেবীর পঞ্চম বিদ্যা। গুহ্যাতিগুহ্য তন্ত্রে বলা হয়েছে মহাবিদ্যাগণই হলেন বিষ্ণু দশ অবতারের উৎস। দেবীর এই দশ রূপ, তা ভয়ংকরই হোক বা কোমল, বিশ্বজননী রূপে পূজিত হয়।

..কালিরূপং মহেশানি সাক্ষাৎ কৈবল্যদায়ীনি..।
..তারকত্বাৎ সদাতারা তারিনী চ প্রকীর্তিতা..।
.. শ্রীদাত্রি চ সদা বিদ্যা ষোড়ষী প্রকীর্তিতা..।
..ভৈরবী দুঃখহন্ত্রী চ যমদুঃখ বিনাশীনি..।
..ভুবনানাং পালকত্বাৎ ভুবনেশী প্রকীর্তিতা..।
..ত্রীশক্তি কলদা দেবী ছিন্না চৈব সুরেশ্বরী..।
..ধূমরূপা মহাদেবী চতুর্বগপ্রদায়ীনি..।
..ব – কারে বরুনীদেবী গ- কারে সিদ্ধিস্মৃতা
ল- কারে পৃথিবী চৈব্য চৈতন্য মে প্রকীর্তিতা..।
..সর্বাপত্তারিনীদেবী মাতঙ্গী করুনাময়ী..।
.. বৈকুন্ঠবাসীনি দেবী কমলা ধনদায়ীনি..।

এতেঃ দশমহাবিদ্যাঃ সিদ্ধবিদ্যাঃ প্রকীর্তিতঃ….

মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্য জুড়ে কমলেকামিনী চন্ডিকা মাতার অবস্থান দেখা যায়।

রাত্রিদিন চলে সাধু তিলেক না রহে
উপনীত শ্রীপতি শ্রীকালিদহে ।
পদ্মাবতী সনে যুক্তি করিয়া অভয়া
শ্রীপতিরে ছলিবারে পাতিলেন মায়া ।
আপনি করিল মায়া হরের বনিত ।
চৌষড়ী যোগিনী হৈল কমলের পাতা ।
অমলা কমল হইলা পদ্মা কবিবর
হাসিতে লাগিলা শতদলের উপর ।

কমলাকামিনী বরাভয় প্রদায়িনী শুদ্ধ চৈতন্যের দেবী এবং শেষতমা। ভাগ্যদেবী লক্ষ্মীর অন্যরূপ। তান্ত্রিক লক্ষ্মী নামেও অভিহিতা। হিন্দু পুরাণের দশমহাবিদ্যার অন্যতম দেবী কমলাকামিনী। কমলাকামিনী বরাভয় প্রদায়িনী শুদ্ধ চৈতন্যের দেবী। ভাগ্যদেবী লক্ষ্মীর অন্যরূপ। তান্ত্রিক লক্ষ্মী নামেও তিনি পরিচিত। কমলা মানে হচ্ছে পদ্ম। কমলাকামিনী দেবীর যে রূপ কল্পনা করা হয় তাতে দেখা যায় যে, দেবীকে চারটি বড়ো হাতি স্নান করাচ্ছে এবং দেবী পদ্মের উপর বসে আছেন। তাঁর চারটি হাত আছে, দুই হাতে কামিনী আর অন্য দুই হাত রয়েছে আশীর্বাদ দেবার ভঙ্গিতে। দেবীকে মূলত বিশুদ্ধতার প্রতীক হিসাবে দেখানো হয়েছে। কমলার সঙ্গে সমৃদ্ধি ও সম্পদ, উর্বরতা ও ফসল, এবং সৌভাগ্য এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত উপাদান রয়েছে। তন্ত্রে উল্লিখিত কমলেকামিনী এবং অষ্টলক্ষ্মীর চতুর্থ লক্ষ্মী গজলক্ষ্মীর রূপ সমতুল্য। তবে মঙ্গলকাব্যগুলিতে দেবী কমলেকামিনীর ভয়াল এবং অবিদ্যা স্বরূপ রূপটিকে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি সেখানে গজ ভক্ষণরতা ভীষণা।

শুন পূর্ব ইতিহাস মাতার আৰ্দ্দাস
নিদর্শন তিনে জয়পাতি।

মাত পুজে ভদ্রকালী তাঁর ঘট পায়ে টালি
সিংহলে আইলে লঘুগতি ।

চণ্ডী – লঙ্ঘনের ফলে বান্ধা গেলে বন্দিশালে
আমার হইল উৎপতি।

পোসেন পালেন মাত শুনান পুরাণ – কথা
জতনে পড়ায় নানা পূথি ।

গুরু সনে কৈল কলি গুরু মোরে দিল গালি
ভণ্ড বলি ব্রাহ্মণসভায়।

তোমার উদ্দেশ যত্ন লইয়া রাজার রত্ন
ভরা দিয়া আইনু সাত নায়ে ।

ঝড়বৃষ্টি মগরায় কালিদহে বিষমসঙ্কট নায়
কালিদহে হইনু উপনীত।

বিকচ কমলদলে বসি রামা গঞ্জ গিলে
উগারয়ে দেখি বিপরীত ।

প্রতিজ্ঞা রাজার স্থানে হারি সভা বিদ্যমানে
কোটাল বধিতে নয়ে প্রাণ।

চণ্ডীর চরণ সেবি ব্রাহ্মণীর বেশে দেবী
মসানে দিলেন প্রাণদান ।

যজ্ঞবিদ্যা মহাবিদ্যা গুহ্যবিদ্যা চ শোভনা ।
আত্ম্যবিদ্যা চ দেবি বিমুক্তিফলদায়িনী ।।

তিনি পদ্মাসনা , পদ্মহস্তা, দ্বিভুজা বা চতুর্ভুজা। মহামায়া ব্রহ্মময়ীর এক রূপ মহালক্ষ্মী কমলেকামিনী।

শ্রীঃ কমলা বিদ্যা মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া সতী ।
পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী ।।
ভূতানামীশ্বরী নিত্যা মতা সত্যাগতা শুভা ।
বিষ্ণুপত্নী মহাদেবী ক্ষীরোদতনয়া ক্ষমা ।।
অনন্তলোকলাভা চ ভূলীলা চ সুখপ্রদা ।
রুক্মিণী চ তথা সীতা মা বৈ বেদবতী শুভা ।।
এতানি পুন্যনামানি প্রাতরুথায় যঃ পঠেৎ ।
মহাশ্রিয়নবাপ্নোতি ধনধান্যকল্মষম্ ।।

শ্রী, কমলা বিদ্যা, মাতা, বিষ্ণুপ্রিয়া, সতী, পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী, ভূতগণের ঈশ্বরী, নিত্যা, সত্যাগতা, শুভা, বিষ্ণুপত্নী, ক্ষীরোদ – তনয়া, ক্ষমা স্বরূপা, অনন্তলোকলাভা, ভূলীলা, সুখপ্রদা, রুক্মিণী, সীতা, বেদবতী – দেবীর এ সকল নাম। প্রাতেঃ উত্থান কালে যারা দেবীর এই পুন্য নামাবলী পাঠ করেন তারা বিপুল ঐশ্বর্য পেয়ে ধনী হয়ে থাকেন।

প্রাচীন মুদ্রা – শিলালেখ এবং মূর্তি পরিকল্পনা বহু সুপ্রাচীন। দেবী মহাশক্তিকে উর্বরা শক্তি এবং প্রজননের দেবী হিসাবে সুপ্রাচীন কাল হতে পূজা করা হত।

মহাবলীপুরমের গজলক্ষ্মী

প্রাচীনকাল হতেই দেবীর মহালক্ষ্মী রূপ আরাধিতা। দেবী মহালক্ষ্মী আবার অষ্টরূপী। তাই অষ্টলক্ষ্মীর আরাধনা করাই রীতি। অষ্টলক্ষ্মী হলেন হিন্দু ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর আটটি বিশেষ শাস্ত্রীয় রূপ। তারা সম্পদের আটটি উৎস তথা লক্ষ্মীদেবীর বিভিন্ন শক্তির প্রতীক। অষ্টলক্ষ্মী লক্ষ্মীর অপ্রধান রূপভেদ। অষ্টলক্ষ্মী কর্তৃক প্রদায়িত “সম্পদ” কথাটির অর্থ হল সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য, জ্ঞান, শক্তি, সন্তানাদি ও ক্ষমতা। মন্দিরে অষ্টলক্ষ্মীকে একযোগে পূজা করা হয়ে থাকে।
১). আদিলক্ষ্মী,
২). ধনলক্ষ্মী,
৩). ধান্যলক্ষ্মী,
৪). গজলক্ষ্মী,
৫). সন্তানলক্ষ্মী,
৬). বীরলক্ষ্মী,
৭). বিজয়ালক্ষ্মী এবং
৮). বিদ্যালক্ষ্মী।

শক , পার্থিয় , শুঙ্গ , কুষাণ , গুপ্ত যুগের সুবর্ণ মুদ্রায় দেবী লক্ষ্মী পদ্মাসনা বরদা। আবার অন্যান্য প্রস্তর মূর্তির তুলনায় গজলক্ষ্মী মূর্তি সেই সুপ্রাচীন কাল হতে পূজিত হয়ে আসছেন। পদ্মাসনা দেবী মহালক্ষ্মীর দুইদিকে একজোড়া দিকহস্তী কুম্ভোদক ঢেলে অভিষিক্ত করছেন। সাঁচী – ভারহুতের স্তূপেও গজলক্ষ্মী খোদিত ।গজলক্ষ্মী পশু সম্পত্তি এবং পশু পালনের মারফৎ যে অর্থ আসে – তার অধিষ্ঠাত্রী প্রদায়িনী দেবী। পশুপালনের দ্বারা সভ্যতার বিকাশ, লাঙল, রথ টানা ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজের বিকাশ হয়েছিলো। এই দেবীর কৃপায় দেবতাদের রাজা ইন্দ্র দেব ঐরাবত বাহন রূপে প্রাপ্ত করেন। গজলক্ষ্মী রাজকীয় শক্তি প্রদান করেন। এই দেবীর দুই হাতে দুই পদ্ম, এবং বাকি দুই হাতে বরদা ও অভয় মুদ্রা। আর দুই পাশে দুই হস্তি। সনাতন এবং প্রতিটি সনাতনী মার্গে মহামায়ার অন্নদাত্রী রূপ মা লক্ষ্মী উপাসিতা হন।

আঙ্করভাট গজলক্ষ্মী

দেবি ! প্রসীদ পরমা ভবতী ভবায়
সদ্যো বিনাশয়ি কোপবতী কুলানি।
বিজ্ঞাতমেতদধুনৈব যদস্তমেত-
ন্নীতং বলং সুবিপুলং মহিষাসুরস্য।।

হে দেবী তুমি দীপ্তিশালীনী এবং শ্রেষ্ঠা । তুমি মঙ্গলের জন্য প্রসন্না হও। তুমি ক্রুদ্ধ হলে যে তৎক্ষণাৎ বংশনাশ হয়। তাই মহিষাসুরের সুবিশাল সৈন্যবাহিনী কেবলমাত্র তোমার রোষে বিনষ্ট হয়েছে।

তে সম্মতা জনপদেষু ধনানি তেষাং
তেষাং যশাংসি ন চ সীদতি ধর্ম্মবর্গঃ।
ধন্যাস্ত এব নিভৃতাত্মজভৃত্যদারা
যেষাং সদাভ্যুদয়দা ভবতী প্রসন্না।।

তুমি হয়ে যাদের উন্নতি বিধান কর তারা সকল দেশে সম্মান পায়। তাদের ধনসম্পদ , কীর্তি সকল এবং ধর্ম কর্ম সমুদয় অক্ষয় হয়।

দুর্গে স্মৃতা হরসি ভীতিমশেষজন্তোঃ
স্বস্থৈঃ স্মৃতা মতিমতীব শুভাং দদাসি।
দারিদ্র্যদুঃখভয়হারিণি ! কা ত্বদন্যা
সর্ব্বোপকারকরণায় সদার্দ্রচিত্তা।

হে দারিদ্রনাশিনী , হে দুঃখনাশিনী , হে ভয়নাশিনী , বিপদে পড়ে তোমাকে মনে করলে তুমি সকল জীবের ভয় দূর করে থাক। যারা সুস্থ , অর্থাৎ বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন , তারা তোমাকে মনে করলে তুমি তাদের শুভবুদ্ধি দান করে থাক সকলের মঙ্গল করার জন্য এমন দয়াদ্রহৃদয় তুমি ব্যতীত কেহ নাই।

তাই তিনি অষ্টলক্ষ্মী রূপে পূজিতা। তিনি আদিম, তিনি পশুমাতা , তিনি শাকম্ভরি অন্নপূর্ণা , তিনি ধনসম্পদা , তিনি প্রজনন দেবী সন্তান দায়িনী, তিনি বুদ্ধি জ্ঞান বিদ্যা ও প্রজ্ঞা, তিনি বিজয়া বিজয়প্রদায়িনী, তিনি সকল যুদ্ধের ধৈর্য্য দায়িনী।

শক্তি না থাকলে জগতে ন্যায়, ধর্ম কিছুই রাখা যায় না । শক্তিহীনের দ্বারা আত্মজ্ঞানও লাভ হয় না। তাই উপনিষদে আছে –

নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ

স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ গীতা জ্ঞানে অর্জুনকে সেই শক্তিমন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছেন –

ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ নৈতৎ ত্বয্যুপপদ্যতে।
ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্ব্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় সেই মহামায়া মায়া এবং যোগমায়া নামে অভিহিত হয়েছেন। সেখানে কৃষ্ণ পার্থকে বলছেন –

দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া।
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে।।

অর্থাৎ , মায়া যখন অবিদ্যা তখন সেই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমণীয়া। কিন্তু যাঁরা আমাতে প্রপত্তি করেন, তাঁরাই এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারেন।

ইলোরা গুহা গজলক্ষ্মী


এই মহামায়ার সংসারে জাগতিক চাওয়া পাওয়া , দুঃখ যন্ত্রনা হতে মুক্তি পেয়ে বিদ্যারূপী পরম ব্রহ্মস্বরূপ , যোগ স্বরূপ মায়াকে প্রাপ্ত হবার নিমিত্ত সকল জাগতিক চাহিদা পরিত্যাগ করে আমার স্মরণ নাও। মায়ার সংসারে জীবকুল জাগতিক বিষয় বন্ধনে আবদ্ধ থেকে তাই আমি তাঁদের গোচর হই না। মূঢ় লোকে তাই আমাকে অজ ও অব্যয় বলে জানতে পারেন না। চন্ডীতে আদি পরাশক্তি মহামায়া এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় তিনিই বিষ্ণুমায়া, যোগমায়া এবং মহামায়া হিসাবে অবস্থান করছেন।

এই শক্তি শুধু শরীরের নয় – এই শক্তি মানসিক শক্তি, অর্থ শক্তি , বিদ্যা শক্তি , জনশক্তি – পৃথিবীর সর্ব বস্তু , এমন কি জড়ের অন্তরালে যে মহাশক্তি সুপ্ত হয়ে আছেন, সেই আদিশক্তি মূলশক্তি।

প্রথম আদি তব শক্তি–

আদি পরমোজ্জ্বল জ্যোতি তোমারি হে

         গগনে গগনে ॥

তোমার আদি বাণী বহিছে তব আনন্দ,

জাগিছে নব নব রসে হৃদয়ে মনে ॥

মানব হৃদয়ে মনে যদি দুঃখীর দুঃখ দূর করার ইচ্ছা হয়, অর্থশক্তি না থাকলে তা পারে না। যদি প্রবলের অত্যাচার থেকে দুর্বলকে রক্ষা করতে হয় তবে শারীরিক শক্তি না থাকলে সম্ভব হয় না। যদি কঠোর সাধনার শক্তি না থাকে তবে আত্মজ্ঞান লাভ হয় না। কাজেই জীবনকে সার্থক করে তুলতে হলে সর্বপ্রকার শক্তি অর্জন অবশ্যই প্রয়োজন। তাই সেই মহাশক্তি মহামায়া মহাদেবী মহাবিদ্যা মহাশক্তির আরাধনা চিরন্তর।

ভারহুত স্তূপ গজলক্ষ্মী

সুতরাং , দেবী খণ্ডেশ্বরী মঙ্গলকাব্যোক্ত ভীষণা কমলেকামিনী নন বরং শ্ৰীসূক্ত এবং তন্ত্রোক্ত শান্ত সমাহিত কমলা বা গজলক্ষ্মী মূর্তিই রূপে অবস্থান করছেন। তবে দেবী কেন শ্ৰীখণ্ড আরাধ্যা হয়ে উঠলেন? শ্ৰীখণ্ডের চারিপাশে প্রচুর গভীর বিলের অবস্থান আছে। শ্ৰীখণ্ড নদীর চরা থেকে উদ্ভূত জনপদ। এ অঞ্চল বণিক জনবসতি পূর্ণ ছিল। তাঁরাই গজলক্ষ্মী উপাসনা করতেন। ডক্টর সুকুমার সেন মুকুন্দের চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের ভূমিকায় লিখেছেন যে , গজলক্ষ্মীর মূর্তি বণিক জাতির লাঞ্ছনরুপে স্বীকৃত ছিল। সেই কারণে দেবী গজলক্ষ্মীর মূর্তি খণ্ড অঞ্চলের জাগ্রত কুলদেবী পূজিত হয়ে আসছেন।

কালকেতু উপাসিত দেবী মঙ্গলচন্ডী এবং মা কমলেকামিনীর পরিচয় বৃহদ্ধর্মপুরাণে উল্লিখিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে –

শ্ৰীশালবাহননৃপাদ বণিজং স্বসূনো
রক্ষোহম্বুজে করিচয়ং গ্রসন্তী বমন্তী।।

পূর্বেই বলেছি সিল, মুদ্রা , ভাস্কর্যে গজলক্ষ্মীর উপস্থিতির কথা। নানা সিল , মুদ্রা, ভাস্কর্যে খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে দেবী গজলক্ষ্মী একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। নানা প্রাচীর এবং স্তম্ভগাত্রেও গজ- লক্ষ্মীর মূর্তি বিরল নয়। কোথাও তিনি দ্বিহস্ত বিশিষ্টা । অনেক স্থানে গজলক্ষ্মীকে সামান্য- লক্ষ্মী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। শিল্পসারে তিনি ইন্দ্রলক্ষ্মী বলে অভিহিত হয়েছেন।

মহাবলীপুরমে সামান্য- লক্ষ্মীর একটি অপরূপ সুন্দর মূর্তি আছে। সেখানে দেবী দ্বিভূজা, সাগরোদ্ভূত পূর্ণবিকসিতা পদ্মাসনের উপর উপবিষ্টা। আসন ও পদ্মপত্রটি অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। তাঁর মস্তক আবরণ অসাধারণ। কর্ণে বৃহৎ ও গোলাকার কুণ্ডল এবং অঙ্গে আভরণ। দেবীর হস্তদ্বয়ে দুইটি পদ্মকোরক সংস্থাপিত। চারিজন সহচরী তাঁর সেবায় তৎপর।

তাঁর উভয়ে পার্শ্বে দুইটি বিশালাকায় হস্তী শুঁড় দিয়ে মস্তকে জল সিঞ্চনরত। দেবীর দ্বিতীয়া সহচরীর হস্তে একটি সনাল উৎপল এবং দক্ষিণভাগে অপর সহচরীর হস্তে চন্দন, হরিদ্রা অথবা অন্য কোন প্রকার সুগন্ধ দ্রব্য রাখবার নিমিত্ত একটি সুদৃশ্য পাত্র। সহচরীদের শিরোভূষণ এবং অলঙ্কার আড়ম্বরবিহীন এবং উল্লেখযোগ্য। কারণ এটি হতে পল্লবযুগের পরিমার্জিত রুচির পরিচয় প্রাপ্ত হয়।

উক্ত মুর্তিগুলির সঙ্গে পল্লব স্থাপত্যের কৃষ্ণমন্ডলস্থ গোপীদের যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়। এসকল মূর্তি সমসাময়িক হওয়াই সম্ভব।

পদ্মারূঢ়া দেবী পদ্মলোচনা, শ্বেতবস্ত্র আচ্ছাদিতা, হেমপত্রজলসিক্তা, পদ্ম হস্তা। মূর্তিতে প্রাপ্ত সকল কিছু ঋগ্বেদের শ্ৰীসূক্তে গীত হয়েছে।

সাঁচি স্তূপ গজলক্ষ্মী

অশ্বপূর্বাং রথমধ্যাং হস্তিনাদপ্রবোধিনীম্ ।
শ্রিয়ং দেবীমুপহ্বয়ে শ্রীর্মাদেবীর্জুষতাম্ ॥
কাং সোস্মিতাং হিরণ্যপ্রাকারামার্দ্রাং জ্বলন্তীং তৃপ্তাং তর্পয়ন্তীম্ ।
পদ্মে স্থিতাং পদ্মবর্ণাং তামিহোপহ্বয়ে শ্রিয়ম্ ॥
চন্দ্রাং প্রভাসাং য়শসা জ্বলন্তীং শ্রিয়ং লোকে দেবজুষ্টামুদারাম্ ।
তাং পদ্মিনীমীং শরণমহং প্রপদ্যেঽলক্ষ্মীর্মে নশ্যতাং ত্বাং বৃণে ॥
আদিত্যবর্ণে তপসোঽধিজাতো বনস্পতিস্তব বৃক্ষোঽথ বিল্বঃ ।
তস্য ফলানি তপসা নুদন্তু মায়ান্তরায়াশ্চ বাহ্যা অলক্ষ্মীঃ ॥
উপৈতু মাং দেবসখঃ কীর্তিশ্চ মণিনা সহ ।
প্রাদুর্ভূতোঽস্মি রাষ্ট্রেঽস্মিন্ কীর্তিমৃদ্ধিং দদাতু মে ॥
ক্ষুত্পিপাসামলাং জ্যেষ্ঠামলক্ষ্মীং নাশয়াম্যহম্ ।
অভূতিমসমৃদ্ধিং চ সর্বাং নির্ণুদ মে গৃহাত্ ॥

হ্যাভেল বলেছেন মহাবলীপুরমের মূর্তিটি ” স্বর্গোত্থিতা লক্ষ্মী”। মঙ্গলকোট থেকে প্রাপ্ত মৃৎসিলে দেবী গজলক্ষ্মীর ছাপ রয়েছে। মূর্তিতত্ত্বের হিসাবে গজলক্ষ্মী থেকেই কমলেকামিনীর উৎপত্তি হয়েছে। সুতরাং সুপ্রাচীন দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়া গজলক্ষ্মী রূপে শ্ৰীখণ্ডে অবস্থান করছেন এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই।

তিনি মহর্ষি ভৃগুর কন্যা,বিষ্ণুভার্যা বিষ্ণুপ্রিয়া,আবার বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী সমুদ্রমন্থনকালে লক্ষ্মী আবির্ভূত হয়ে বিষ্ণুর বক্ষে আশ্রয় নেন।আবার মার্কণ্ডেয় পুরাণে বর্ণিত চণ্ডীর উপাখ্যানে মহিষাসুর বধ উপাখ্যানে দেবী মহালক্ষ্মী নামে সুপ্রিদ্ধা এখানে উল্লেখযোগ্য যে দেবী এখানে অষ্টাদশভূজা এবং মহালক্ষ্মী রুদ্রে শক্তি রূপে আরাধ্য ইনি সিদ্ধচামুণ্ডা।

শ্ৰী স্যন্যাল তাঁর রচনায় উল্লেখ করেছেন যে, দেবীর ধ্যান গুপ্ত। এটিও সঠিক নয়। তিনি গজলক্ষ্মী। তবে খণ্ডেশ্বরীতে পুরোহিত কমলেকামিনী হিসাবে পূজা করেন জয়দুর্গা ধ্যান মন্ত্রে।

শ্রীখণ্ডের খণ্ডেশ্বরীকে কেন্দ্র করে একদা তন্ত্রচর্চার সমৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায় পঞ্চমুণ্ডী আসনের প্রত্ন সাক্ষ্যে। এ বিষয়ে অগ্রণী ছিলেন শ্ৰীপাট শ্ৰীখণ্ডের ভট্টাচার্য এবং গাঙ্গুলী পরিবার। গাঙ্গুলী পরিবার দেবীর আদি সেবাইত। তাঁদের স্মৃতি এখনো নিকটবর্তী গাঙ্গুলীডাঙা নামক গ্রামনামের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়। শ্ৰীখণ্ড উচ্চবিদ্যালয়ের মধ্যে একটি পঞ্চমুণ্ডীর আসন রয়েছে। জনশ্রুতি আছে যে , এই আসনে বসে মাতৃসাধনা করতেন কার্তিক ভট্টাচার্য। সামন্ত পাড়া এবং ঠাকুরপাড়ার সীমান্তে গাঙ্গুলী পরিবারের পঞ্চমুণ্ডীর আসনটি অবস্থিত। এখানে বতর্মানে ধুমধাম করে কালী পূজা হয়। শ্ৰীখণ্ডের যে জোড়া শিবমন্দিরটি আছে সেখানেও একটি পঞ্চমুণ্ডীর আসন পাওয়া গেছে। তবে সেটি লুপ্তপ্রায়। বাথানতলার পঞ্চমুণ্ডীর আসন আছে। এটি ভট্টাচার্য পরিবারের। জগৎপতি ভট্টাচার্যের প্রোপিতামহ এখানে সাধনা করতেন। গ্রামের দক্ষিণে পঞ্চানন তলায় একটি আসন আছে। এখানে কোনো দেবীর পূজা না হলেও বাবা পঞ্চানন গাঁ ঘরের ইচ্ছায় পূজিত হন।

শ্ৰীখণ্ডের কুলদেবী খণ্ডেশ্বরী যেমন সুপ্রাচীন শাক্তভাবকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন , তেমন তাঁর সঙ্গে পূজিত হতেন খণ্ডেশ্বর। সেইটি প্রাকচৈতন্য যুগের ধাতব কৃষ্ণমূর্তি ছিল। এই খণ্ডেশ্বরের সঙ্গে মরু আক্রমণের এক রক্তাক্ত ইতিহাস জড়িত আছে। সে আলোচনাও অন্য কোনোদিন করব।

ত্রিধা চকার চাত্মানং স্বেচ্ছয়া প্রকৃতি স্বয়ং।
মায়া বিদ্যা চ পরমেত্যেবং সা ত্রিবিধাঽভবৎ॥
মায়া বিমোহিনী পুংসাং যা সংসার-প্রবর্তিকা।
পরিস্পন্দানিশক্তি র্যা পুংসাং যা পরমা মতা।
তত্ত্বজ্ঞানাত্মিকা চৈব সা সংসার-নিবর্তিকা॥

অর্থাৎ, মূলপ্রকৃতি পরব্রহ্ম ভগবতী স্বয়ং স্বেচ্ছায় নিজ শক্তিকে মায়া, বিদ্যা এবং পরমা এই ত্রিবিধরূপে বিভক্ত করেন।

— ভগবতীর অবিদ্যারুপী মায়াশক্তি বিমোহিনী সংসার-প্রবর্তিকা শক্তি, ভগবতীর এই মায়া শক্তি সংসার বন্ধনের মূল ।

— যে শক্তি পরিস্পন্দাদি ব্যাপার-বিধায়িনী চৈতন্যময়ী সঞ্জীবনী শক্তি সে ভগবতীর পরমা শক্তি ।

— আর তত্ত্বজ্ঞানাত্মিকা সংসার-নিবর্তিকা শক্তি হলো ভগবতীর বিদ্যা শক্তি । ভগবতীর এই বিদ্যা শক্তি হলো সংসার হতে মুক্তির হেতু, শুদ্ধবিদ্যা l

অহং রুদ্রেভির্ব্বসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ
অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা।

সেই মহাপরমা শক্তিকে আমার প্রণাম জানাই।

তথ্যঃ ১. খণ্ডেশ্বরী এবং শ্ৰীখণ্ডের ধর্মীয় পরিমণ্ডল
২. চণ্ডী
৩. দেবতাদের খোঁজে

©দুর্গেশনন্দিনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.