সারা বিশ্বের সামনে আবারও নিজেকে হাসির খোরাক করে তুলল পাকিস্তান। পাক সেনাবাহিনীর তরফে দাবি করা হল, জইশ-ই-মহম্মদ নামের কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর অস্তিত্বই নেই তাঁদের দেশে!
অথচ কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শা মাহমুদ কুরেশি স্বীকার করেছিলেন, জইশ-প্রধান মাসুদ আজহার সে দেশেরই সেনা হাসপাতালে রয়েছে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়। মঙ্গলবারই পাকিস্তানের ইমরান খান সরকার জানিয়েছে, জইশের সদস্য, মাসুদ আজহারের ছেলে ও ভাইকে আটক করেছে তারা। আর তার পরেই তারা জানাল, জইশ-ই-ইমহম্মদের অস্তিত্বই নাকি নেই!
ঘটনার পরেই নানা মহলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা ও হাসির ঝড় বয়ে গিয়েছে। কেউ বলছেন, তা হলে রাওয়ালপিণ্ডির সেনা হাসপাতালে ভর্তি থাকা মাসুদ আজহারের পরিচয় কী। কেউ আবার বলছেন, যদি জঙ্গি সংগঠনই না থাকবে, তা হলে বালাকোটে কীসের শিবির ছিল? সব চেয়ে হাস্যকর বিষয় হল, পাক সেনা এই দাবি করার পরেই জইশ-ই-মহম্মদের তরফে একটি অডিও টেপ প্রকাশ করা হয়। তাতে রীতিমতো হুমকির সুরে কথা বলেছে তারা।
তার পরেও, বুধবার পাকিস্তানি সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গাফুর নিজে এই কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, “পাকিস্তানে জইশের অস্তিত্ব নেই।” এর আগে পাক বিদেশমন্ত্রী বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আজহার পাকিস্তানে রয়েছে। যতদূর জানি শরীর খুব খারাপ। এতটাই খারাপ যে নিজের বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না। শয্যাশায়ী হয়ে রয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতীয় সেনা কনভয়ে হামলার পরেই পাকিস্তানে কাজ করা জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছিল। এর ১২ দিন পরে, ২৬ তারিখ কাকভোরে ভারতীয় বায়ুসেনা এয়ারস্ট্রাইক করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে। নিকেশ হয় বহু জঙ্গি ঘাঁটি।
এই জঙ্গি সংগঠন পাকিস্তানে থেকেই গত কয়েক বছরে বারবার ভারতে নাশকতা চালিয়েছে। অভিযোগ, ওই সংগঠন পাকিস্তানি সরকারের টাকায় ভারতে নাশকতা চালায়। অথচ পাক সেনা তাদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করল।
বস্তুত ঘটনার পর থেকেই পাকিস্তান একাধিক বার দ্বিমুখী অবস্থান নিয়ে সারা বিশ্বের কাছে হাস্যাস্পদ হয়েছে। জঙ্গি হানার পরেই তারা দাবি করেছিল, সমস্ত জঙ্গি হানার দায় পাকিস্তানের কেন হবে। এর পরে ২৬ তারিখ পাল্টা প্রত্যাঘাতের পরে তারা দাবি করে, কোনও কিছুই নাকি হয়নি। কোনও মানুষ মারা যায়নি। অথচ এর পর থেকেই নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করতে থাকে তারা।
পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একাধিক বার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার বার্তা দেন। অথচ জইশ-ই-মহম্মদের বিরুদ্ধে বা অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেন না এত বড় হামলার পরেও। এর মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাক সেনাদের হাতে ধরা পড়ে যায়। ভিডিও প্রকাশ করে দেখা যায়, অভিনন্দনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করছে তারা। অথচ অভিনন্দন দেশে ফিরে দাবি করে, মানসিক নির্যাতন চলেছে তাঁর উপরে।
এই সব কিছু মিলিয়ে বারবারই দ্বিচারিতার পরিচয় দিয়েছে পাকিস্তান। এতে আন্তর্জাতিক মহলে বারবারই হাস্যাস্পদ হয়েছে। কিন্তু এ দিনের দাবি যেন সে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে।