পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে হামলার পর বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রত্যাঘাত কতটা সফল, সেই নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। ক’জন জঙ্গি ছিল সীমান্ত পারের ঘাঁটিতে, আদৌ কি খতম হয়েছে জইশ শিবির, উপগ্রহ চিত্র নিয়েও দেখা দিয়েছিল সংশয়। যাবতীয় দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে প্রযুক্তিগত উপায় মিটিয়ে ফেলার জন্য এ বার নতুন উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। উন্নতমানের এই উপগ্রহের নাম অ্যাডভান্সড ইলেকট্রনিক ইনটেলিজেন্স স্যাটেলাইট বা এমিস্যাট (EMISAT)।
শত্রু শিবিরে নজরদারি চালাতে এমিস্যাট খুবই কাজে আসবে বলে জানিয়েছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)। বিজ্ঞানী রবি গুপ্তর কথায়, এই উপগ্রহের রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। প্রথমত এটি শত্রু শিবিরের রাডারের নাগাল সহজেই পাবে, দ্বিতীয়ত এর শক্তিশালী সেন্সর বলে দেবে সীমান্ত পেরিয়ে শত্রপক্ষ হামলার জন্য তৈরি হচ্ছে কিনা, কী কী অস্ত্র বা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট রয়েছে তাদের ঝুলিতে। তা ছাড়াও, শত্রু ঘাঁটির নিখুঁত ও স্পষ্ট ছবি তুলেও পাঠাতে পারবে এমিস্যাট।
ডিআরডিও সূত্রে খবর, ৪৩৬ কিলোগ্রামের এই উপগ্রহটি আগামী ১ এপ্রিল মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। পৃথিবী থেকে ৭৬৩ কিমি দূরত্বের কক্ষপথে সেটি স্থাপন করা হবে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দাবি সীমান্ত পারের যে কোনও জায়গায় জঙ্গি শিবিরে কড়া নজরদারি চালাবে এই নয়া উপগ্রহ।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ইলেকট্রনিক স্যাটেলাইট সহজেই বলে দেবে শত্রু শিবিরে কী কী গ্যাজেট সক্রিয়। বালাকোটে হামলার পর ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন জানিয়েছিল সীমান্ত পারে জইশ ঘাঁটিতে সক্রিয় ছিল ৩০০-রও বেশি মোবাইল। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কথায়, এমিস্যাটের উন্নত প্রযুক্তি শুধু মাত্র গ্যাজেটের সংখ্যাই নয়, কথোপকথনের বিস্তারিত তথ্যও পাঠাতে সক্ষম। জানুয়ারিতে ইসরো আরও একটি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছিল যার নাম মাইক্রোস্যাট-আর, যেটি রাতের পরিষ্কার ছবি তুলতে সক্ষম। তবে ডিআরডিও জানিয়েছে, এমিস্যাটের ক্ষমতা মাইক্রোস্যাট-আরের চেয়েও অনেক বেশি।
ভারতীয় বায়ু সেনার হাতে থাকা অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও যুদ্ধ বিমানের নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভাবে সাহায্য করার জন্য ভারতের হাতে রয়েছে মোট ৪৭টি নয়া প্রযুক্তির উপগ্রহ। রাতের বেলা নজরদারির জন্য রিস্যাট-২, তা ছাড়া কারটোস্যাট-২ সিরিজের চারটি উপগ্রহের (২সি, ২ডি, ২ই, ২এফ)রয়েছে হাই-রেসোলিউশন প্যানক্রোম্যাটিক ক্যামেরা যা একবার ৯.৬ কিমি বিস্তৃত এলাকার সাদা-কালো ছবি তুলে পাঠাতে সক্ষম। যোগাযোগ রক্ষাকারী জিস্যাট-২৯ স্যাটেলাইট তো রয়েছেই। এর আগে ভারতীয় নৌ বাহিনীকে সাহয্যের জন্য ২০১৩ সালে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল জিস্যাট-৭ স্যাটেলাইটটিকে। যাকে সেনা বাহিনীতে রুক্মিনী নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এই উপগ্রহটি ভারত মহাসাগরে বিভিন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে নৌ বাহিনীকে সাহায্য করেছে বলে জানা গিয়েছিল।