১৯৪০ সালের ২৪ মার্চ মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশনে সেই কুখ্যাত পাকিস্তান প্রস্তাব পাশ হয়। এই প্রস্তাবে বলা হলো যে ভৌগোলিকভাবে সন্নিবিষ্ট এককগুলিকে চিহ্নিত করে এবং প্রয়োজনে পুনর্গঠন করে যে অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ (যেমন ভারতে উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চল) সেইসব অঞ্চলে মুসলমানদের জন্য স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ গঠন করতে। লাহোর অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাব ভারতের ইতিহাসের গতিপথকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল। কারণ জিন্নার কুখ্যাত দ্বিজাতিতত্ত্বকে সামনে রেখে মুসলিম লিগ এবার মুসলমানদের জন্য পৃথক বাসভূমি অর্জনের পথে অগ্রসর হবে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। আর সেই পথ যে শান্তিপূর্ণ, অহিংস পথ হবে না এর আগের কয়েকটি দশকের ঘটনাপ্রবাহে তার প্রমাণ ছিল। আর মুসলিম লিগের এই উদ্দেশ্যকে প্রতিহত করতে যে সুদৃঢ় ইচ্ছা এবং রাজনৈতিক কৌশলের প্রয়োজন ছিল তা তৎকালীন ভারতের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কতখানি আছে সে নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ ছিল। উপরন্তু একটি ঐক্যবদ্ধ দেশকে ভেঙে ধর্মের ভিত্তিতে নতুন একটি দেশ গড়ে উঠলে তার সামাজিক ও রাজনৈতিক ফলাফল যে মারাত্মক হতে পারে কংগ্রেসের তৎকালীন নেতৃত্বের সে ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল কিনা সন্দেহ। তবে অনাগত ভবিষ্যৎটি যে ভয়ংকর হতে পারে তা স্পষ্টতই বুঝতে পেরেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। মুসলিম লিগের আচরণ কেমন হতে পারে, বিশেষত বঙ্গপ্রদেশে, সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা ছিল শ্যামাপ্রসাদের। মুসলিম লিগের লাহোর প্রস্তাব পাশের ঠিক ১৩ দিন পরে ১৯৪০ সালের ৬ ও ৭ এপ্রিল সিলেটে অনুষ্ঠিত সুর্মাভ্যালি ও শিলং পার্বত্য জেলা হিন্দু কনফারেন্সে শ্যামাপ্রসাদ বলেছিলেন, “আমাদের সামনে এখন বিপদ অনেক, একেবারে সাম্প্রতিকতম বিপদটি হলো পাকিস্তানের দাবিতে আন্দোলন যাকে কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যারা হিন্দুস্থানকে ভালোবাসে তাদের সকলের উচিত এই অযৌক্তিক দাবিকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা।” শ্যামাপ্রসাদ দীর্ঘ দু দশক ধরে কংগ্রেস রাজনীতিকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। মুসলমানদের বিভিন্ন দাবির প্রতি কংগ্রেসের দুর্বলতার কথাও তিনি জানতেন। তাই সেই একই কনফারেন্সে কংগ্রেসকে সতর্ক করে দিয়ে শ্যামাপ্রসাদ বলেছিলেন, “বিভিন্ন সম্প্রদায়কে তার ছাতার তলায় এনে ঐক্যবদ্ধ ভারতের ভিত্তিকে মজবুত করার যে নীতি ভারতের। জাতীয় কংগ্রেস গ্রহণ করেছে তা আশাপ্রদ ফলদানে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বলে যে আমরা সত্যিই অন্য সম্প্রদায়কে খুশি রাখার উদ্দেশ্যে হিন্দুদের অধিকার ও স্বার্থকে বিসর্জন দিচ্ছি, আমরা যতই ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ দেওয়ার নীতি অনুসরণ করছি ততই আমরা দেখছি যে অন্য দিক থেকে যে সাড়া পাচ্ছি তা খুব একটা উৎসাহব্যঞ্জক নয়।” তিনি আরও বলেন, “মনে হচ্ছে এখনো অনেকেই সেই ভাবনায় মেতে আছেন যে যতক্ষণ না হিন্দুমুসলিম এবং অন্যান্যরা একটি একক রাজনৈতিক সংগঠনের ছাতার তলায় সমবেত হচ্ছেন ততক্ষণ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের আশা দুরাশাই থেকে যাবে। এটা সত্যি যে এই লক্ষ্য যদি অর্জন করা যেতো তবে স্বাধীনতার প্রক্রিয়া অনেক সহজ হতো এবং ভারতের সমস্যাবলীর প্রতি ব্রিটিশ মনোভাবও। অনেকটাই বদলে যেতো। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই ঐক্য যদি অর্জন করা সম্ভব না হয় তাহলে কি হিন্দুরা এমন সব চুক্তি করতেই থাকবে আর এমন সব শর্ত মানতেই থাকবে যা দেশে সর্বোচ্চ স্বার্থের হানিকারক এবং যা হিন্দুদের শক্তি এবং অবস্থানকে বরাবরের জন্য দুর্বল করে দেবে?”
প্রখর বাস্তববাদী শ্যামাপ্রসাদ বুঝেছিলেন যে পাকিস্তান প্রস্তাবের প্রভাব ভারতের সমাজ এবং রাজনীতিকে বদলে দেবে। এই অভিঘাত সামলানোর জন্য প্রয়োজন ছিল সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মানুষদের ব্যাপকভিত্তিক ঐক্য এবং শক্তিশালী জাতীয় নেতৃত্ব। কিন্তু তৎকালীন ভারতে এই দুইয়েরই যথেষ্ট অভাব ছিল। একদিকে লাহোর প্রস্তাব এবং জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্বমুসলমানদের একটি বড়ো অংশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বের একটা বড়ো অংশের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং সিদ্ধান্তহীনতা সংখ্যাগুর হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। দেশের মধ্যে বড়ো অংশের মানুষ তখন গান্ধীজীর দিকে তাকিয়ে ছিল। এ ব্যাপারে তিনি কী মতামত দেন তা জানতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। কিন্তু লাহোর প্রস্তাব সম্পর্কে গান্ধীজীর মত সবাইকে শুধু হতাশই করেনি, সংখ্যাগুরু হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্কের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। গান্ধীজী লাহোর প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান তো করেনইনি, বরং মত দিয়েছিলেন যে মুসলমানরা যদি নিজেদের পৃথক জাতি হিসাবে মনে করে তবে তিনি আপত্তি করবেন না। তাঁর সম্পাদিত ‘হরিজন পত্রিকার ৬ এপ্রিল, ১৯৪০ সংখ্যায় তিনি মত প্রকাশ করলেন, “আট কোটি মুসলমানকে অবশিষ্ট ভারতের ইচ্ছার কাছে নত করার কোনো অহিংস পদ্ধতি আমার জানা নেই, তা সেই ইচ্ছা যত শক্তিশালী হোক না কেন। অবশিষ্ট ভারতের মতো মুসলমানদেরও আত্ময়িন্ত্রণের অধিকার আছে। বর্তমানে আমরা যৌথ পরিবার। সেখান থেকে যে কেউ পৃথক হতেই পারে। যদিও এর পরের অংশেই ভারতের অঙ্গচ্ছেদের বিরোধিতা করে তিনি বলেছিলেন বহুদিন ধরে হিন্দু ও মুসলমানরা একটি জাতি হিসাবে বসবাস করে যে ঐক্যের বাতাবরণ গড়ে তুলেছে দেশভাগ তাকে নষ্ট করে দেবে। কিন্তু এই মত তিনি মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিতে চান না।
লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে সে সময়কার বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের, বিশেষত গান্ধীজীর শক্ত মনোভাবের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মুসলিম লিগের আগ্রাসী মনোভাবের কাছে গান্ধীজীর এই অসহায় আত্মসমর্পণ সংখ্যাগুরু হিন্দুদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছিল। বিশেষত, মুসলমান-অধ্যুষিত অঞ্চলে বসবাসকারী হিন্দু ও শিখরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়েছিল। ফলে দেশের ঐক্য রক্ষার জন্য কঠোর নীতি গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। কিন্তু ঐক্যের জন্য সংখ্যাগুরু হিন্দুদের স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তার নীতি ছিল সম্মানজনকভাবে এবং সাম্যের ভিত্তিতে সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান। কিন্তু হিন্দুরা যদি নিজেদের দুর্বল এবং ঐক্যহীন বলে প্রতিপন্ন করে তবে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের বীজ পুঁতে দেবে যেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব। সেই সময়কার ব্রিটিশ সরকারের গোপন রিপোর্টগুলোতে দেখা যায় যে মুসলিম লিগের পাকিস্তান প্রস্তাবের সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা এবং প্রতিরোধ এসেছিল হিন্দু মহাসভার কাছ থেকে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার যত বেশি হচ্ছিল এবং এই সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ব্যর্থতা যত প্রবল হচ্ছিল, হিন্দু মহাসভার গণভিত্তি ততই সম্প্রসারিত হচ্ছিল। বিশেষত বঙ্গপ্রদেশে কংগ্রেস নেতৃত্বের ব্যর্থতা ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছিল। এই প্রেক্ষাপটে শ্যামাপ্রসাদের নীতি ছিল হিন্দু ঐক্যকে জোরদার করা। তিনি চাইছিলেন মুসলিম লিগের দাবিকে আর যেন গুরুত্ব না দেওয়া হয়। হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হলেই ভারত ঐক্যবদ্ধ থাকবে। ১৯৪০ সালের ১৪ এপ্রিল নবম বিহার প্রাদেশিক হিন্দু কনফারেন্সে শ্যামাপ্রসাদ বলেন, “স্বাধীনতা আন্দোলনে খুব বেশি মুসলমান যোগ দেননি। আমরা হিন্দুরা মুসলমানদের সঙ্গে ঐক্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অনেক ন্যায্য দাবি ছেড়ে দিয়েছি। তাদের সমর্থন আদায়ের জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে আমাদের অসহায়তা এবং দুর্বলতা বলে ভুল করা হয়েছে।” তিনি মনে করেছিলেন যে, ‘অস্থিতিশীল অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির (অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্রিটিশ বিরোধী গণ-আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) সুযোগ নিয়ে মুসলিম লিগ ভারতকে ভাগ করে মুসলমানদের জন্য পৃথক দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। এখন হিন্দুদের নীতি হবে আর কোনো সুবিধা না দেওয়া। আর মুসলমানদের সমর্থনের প্রত্যাশী হয়ে লাভ নেই। এবার হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানের দাবির বিরোধিতা করতে হবে। কারণ। মুসলমানদের জন্য পৃথক দেশ গঠিত হলে ভারত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কিন্তু ১৯৪০-৪১ থেকেই বঙ্গপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। বিশেষত, নোয়াখালি অঞ্চলে হিন্দুদের উপর অত্যাচার শুরু হয়েছিল। ১৯৪১ সালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যাপক আক্রমণ হয় হিন্দুদের উপর। ১৯৪১-এর এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের প্রায় ৮০টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাপক লুটপাট এবং নারী নির্যাতন চলে। কয়েক হাজার হিন্দু ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হয়ে যায়। সারা বঙ্গপ্রদেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প বইছিল। কিন্তু হিন্দুদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করতে ফজলুল হক মন্ত্রীসভা ব্যর্থ হয়েছিল। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী বাধা না থাকার ফলে মুসলিম লিগ তার লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময়ে প্রয়োজন ছিল ব্যাপকভিত্তিক হিন্দু ঐক্য এবং সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ। কংগ্রেস এই কাজে ব্যর্থ হয়েছিল। শ্যামাপ্রসাদ কিন্তু এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন এই সন্ধিক্ষণে।
১৯৪২ সালে ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতার পক্ষে একটি বড়ো আঘাত ছিল। ক্রিপসের প্রস্তাব ছিল ভারতের কোনো অঞ্চল যদি নতুন সংবিধান না মানে, কিংবা ভারতে থাকতে না চায় তবে তাকে থাকতে বাধ্য করা হবে না। ক্রিপসের প্রস্তাবে মুসলিম লিগের দাবিকেই সিলমোহর দেওয়া হয়েছিল। স্ট্যাফোর্ডক্রিপসের সঙ্গে দেখা করে শ্যামাপ্রসাদ বলেছিলেন যে, ব্রিটিশ শক্তি ভারতে সবচেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে তা হলো ভারতে প্রশাসনিক ঐক্য স্থাপন। কিন্তু ক্রিপস প্রস্তাবে সেই সাফল্যকেই ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্রিপসের সঙ্গে দেখা করে শ্যামাপ্রসাদ বুঝেছিলেন যে ব্রিটিশ শক্তি আর মুসলিম লিগের লক্ষ্যের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। ১৯৪২ সালের ২৩ এপ্রিল গান্ধীজীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত কংগ্রেস নেতা চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী মাদ্রাজ আইনসভায় মুসলিম লিগের পাল্টা একটি প্রস্তাব পেশ করেন সেখানে বলা হয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে একটি কমিশন নিয়োগ করা হবে, যে কমিশন উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্ব ভারতে। মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলকে চিহ্নিত করবে এবং সেই অঞ্চলে গণভোটের মাধ্যমে ঠিক হবে তারা ভারতে থাকবে কিনা। এই প্রস্তাব মাদ্ৰাজ আইনসভায় পাশ হয় এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিও এই ‘রাজাজী সূত্র’গ্রহণ করে। ওয়ার্কিং কমিটি মনে করে যে, কোনো ভূখণ্ডের মানুষজন যদি মনে করে সে তারা ভারতীয় ইউনিয়নে থাকবে না, তাহলে সে ব্যাপারে তাদের বাধ্য করা যাবে না।
ভারতকে অখণ্ড রাখার ভাবনার পথে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব ছিল এক মারাত্মক আঘাত। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন পর্যন্ত শ্যামাপ্রসাদ সেখানে ভারতের পক্ষে লড়াই করেন। ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে মুসলিম লিগ পাকিস্তানের পক্ষে এবং হিন্দু মহাসভা অখণ্ড ভারতের পক্ষে লড়াই করে। এই নির্বাচনে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে মুসলিম লিগের ব্যাপক সাফল্য ভারতের ভবিষ্যত রাজনীতির দিনটিকে স্পষ্ট করে দিয়েছিল। এরপর শ্যামাপ্রসাদের লক্ষ্য ছিল বঙ্গপ্রদেশের হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা। সে কাজে তিনি সফল হয়েছিলেন। রক্ষা করেছিলেন এক উন্নত জনগোষ্ঠীকে অবধারিত ধ্বংসের হাত থেকে।
বাম-কংগ্রেস বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ শ্যামাপ্রসাদকে বঙ্গপ্রদেশ ভাগের জন্য দায়ী করেন। বাস্তবে শ্যামাপ্রসাদ বুঝেছিলেন বঙ্গ প্রদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে কিংবা শরৎ বসু, কিরণশঙ্কর রায়ের সূত্র অনুযায়ী সার্বভৌম স্বাধীন দেশ হলে ধ্বংস হয়ে যাবে হিন্দু বাঙ্গালি। স্বাধীনোত্তর যুগে পূর্বপাকিস্তান-সহ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ এটাই প্রমাণ করে যে শ্যামাপ্রসাদের আশঙ্কাই ছিল সত্যি। শ্যামাপ্রসাদ তাই ভারতের শ্রেষ্ঠ বাস্তববাদী রাজনীতিক।
বিমল শঙ্কর নন্দ
2019-08-09