লোকসভা ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদী পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হলে ভারত-পাকিস্তান শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা বাড়বে বলে জানালে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ইমরান তার কারণও নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, “ভারতে পরবর্তী সরকার যদি কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত হয়, তা হলে সেই সরকার ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা এগোনোর প্রশ্নে সর্বদাই শঙ্কিত থাকবে। তাঁদের মনে এই কারণেই আশঙ্কা থাকবে যে চরম ডানপন্থীরা এতে পাল্টা রে রে করে উঠতে পারে। তাই একমাত্র যদি উগ্র ডানপন্থীদের নেতৃত্বে কোনও সরকার গঠিত হয়, তবেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে,- যার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের পথ বেরোতে পারে।”
যদিও সাক্ষাৎকারে ভারতে বর্তমান সরকার তথা পরিস্থিতির সমালোচনা করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে ধরনের আক্রমণ ও অত্যাচার চলছে তা কখনও ভাবতেই পারিনি। গোটা দেশ বিশেষ করে কাশ্মীরের মুসলিমরা সমাজে এক প্রকার এক ঘরে হয়েছে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, বহু বছর আগেও ভারতে যে মুসলিমদের হাসিখুশি দেখেছি, হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দাপটে তারাও এখন চাপে রয়েছে। আসলে মোদী ও ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে কোনও ফারাক নেই। দু’জনের ভোট রাজনীতিই ‘ভয়ের পরিবেশ তৈরি ও জাতীয়তাবাদ’ নির্ভর।
চলতি সপ্তাহেই তাদের ভোট ইস্তাহার প্রকাশ করেছে বিজেপি। তাতে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের কথাও জানানো হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে ইমরান সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কাশ্মীরে জমি বাড়ি কেনা বাইরের লোকেদের জন্য খুলে দেওয়া হবে শুনছি। হতে পারে এটাও ভোটের জন্যই বলা হচ্ছে।
ভারতের বিদেশমন্ত্রক বা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় অবশ্য সরকারি ভাবে পাক প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকারের জবাব দেয়নি। তবে নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের একাংশ ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, পুলওয়ামা কাণ্ডের পর ঘরোয়া রাজনীতিতে বিরোধীরা মোদীকে যতই সমালোচনা করুন, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভাল করতে মোদী সরকার গোড়া থেকে সচেষ্ট ছিল। যেমন অতীতে মনমোহন সিংহও চেয়েছিলেন দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়ে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রসার ঘটাতে। কিন্তু ইসলামাবাদ যে রকম ধারাবাহিক ভাবে সন্ত্রাসে মদত দিয়ে চলেছে, তাতে নয়াদিল্লির সেই প্রয়াস বার বার ভেস্তে গিয়েছে।
নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের এও বক্তব্য, ভারতে মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করার কোনও অধিকার ইমরানের নেই। তিনি আগে নিজের দেশের দিকে দেখুন। সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অবস্থার কথা পরের কথা, সংখ্যাগুরু মুসলিমরাও কি আদৌ সেখানে ভাল রয়েছেন? তাঁরাও তো মৌলবাদী সন্ত্রাসের জ্বালায় ভুগছেন। আর্থ, সামাজিক ভাবে পিছিয়ে রয়েছেন দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমান। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক পরিকাঠামো, অধিকার দিতে গত সত্তর বছরে কী করতে পেরেছে ইসলামাবাদ?
ইমরান অবশ্য রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করতে তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা শুরু করেছে ইসলামাবাদ। পাক সেনাও এ প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে রয়েছে। এমনকী সাক্ষাৎকারে ইমরান এও বলেছেন, পাকিস্তানের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস বন্ধ করতেও তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন। কারণ তা কাশ্মীরের মানুষেরও স্বার্থ এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সঙ্কট তৈরি করছে। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ হলে, ভারতীয় সেনা তার জবাব দেয়। তাতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে নিরীহ কাশ্মীরিদের।
প্রসঙ্গত, কদিন আগে পাক বিদেশ মন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেছিলেন, খুব শিগগির ফের পাকিস্তানের উপর হামলা চালাতে পারে ভারত। এ ব্যাপারে তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন ইমরানও। তাঁর মতে, ভোটে সুবিধা নিতে সে পথে হাঁটতে পারে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল।
যদিও ভারতের বিদেশমন্ত্রক ইসলামাবাদের এই মন্তব্যকে আগেই খারিজ করেছে। বুধবার ইমরানের সাক্ষাৎকার শোনার পর বিজেপি মুখপাত্র অরুণ সিংহ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-চন্দ্রবাবু নায়ডুরা যে কথা বলছেন, সেটাই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে পাক প্রধানমন্ত্রীর মুখে। ঘরোয়া রাজনীতিতে নেতিবাচক কথা যে ইসলমাবাদকে এ সব বলার সুযোগ করে দিচ্ছে তার হাতে নাতে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ ঠিক করবে, এতে ভাল হচ্ছে না খারাপ। নয়াদিল্লির বিদেশ ও কৌশলগত নীতির প্রশ্নে গোটা দেশ এক সুরে কথা বলা উচিত কিনা!