নীচের ছবিটি জহর সরকারের, আর ঠিক পাশে তাঁর টুইট করা ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তাঁরই করা পোস্ট ।
একজন প্রাক্তন আমলা কতটা রুচিহীন হলে পারেন এ জাতীয় পোস্ট করতে ! ভাবছিলাম । ভাবছিলাম পাকিস্থানের কোন উগ্র ভারত বিদ্বেষী মৌলবাদীর ওয়ালে যদি পেতাম এই পোস্ট অবাক হতাম না ।
বেশ কিছুদিন ধরেই এই তীব্র মোদী বিদ্বেষ চালাচ্ছিলেন মানুষটি । তাঁর টুইটারে ঢুকলেই দেখবেন যে কেউ । অশালীন, কুরুচিকর যুক্তিহীন ব্যক্তি বিদ্বেষের প্রতিফলন ছত্রে ছত্রে । প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে ।
২০১৬ সালে প্রসার ভারতীর সি ই ও পদ মেয়াদ ফুরানোর চার মাস আগে জহর সরকার দায়িত্ব ছেড়ে চলে এসেছিলেন । মিলছিল না নাকি মোদীর সঙ্গে ! হতেই পারে । সব আমলার সঙ্গে সব রাজনীতিবিদের সবসময় মিলবে সেটাতো হয় না, হয়ওনি । দিল্লির এক প্রাক্তন বাঙালি আমলার মুখে শুনেছিলাম তাঁর ছাড়ার কারণগুলোর কিছুটা । চমকে উঠেছিলাম । মানুষটার প্রতি আমার দীর্ঘদিন ধরে থাকা ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা চলে গিয়েছিল লহমায় ।
মানুষটি যেহেতু বাঙালি, যেহেতু শিক্ষিত এবং কথাগুলো বেশ গুছিয়ে বলেন, লেখেন, বহু বাঙালির মনে জহর সরকার সম্বন্ধে একটা ভালো ধারণা কিন্তু গেঁথে আছে । তার ওপর মনে প্রাণে কংগ্রেসী এবং নেহেরু ভক্ত হওয়ায় ইউ পি এ আমলে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়ে মনমোহন সিংয়ের ট্রাস্টেড হয়েছেন একসময় । এবং শেষ পর্যন্ত প্রসার ভারতীর সি ই ও র প্রাইজ পোস্টিং কাটিয়ে অবসর নিয়েছেন । কর্মজীবনে বরাবরই আলোয়ে থাকতে পছন্দ করতেন, থেকেছেন নিজ ক্ষমতায় । এই ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে তিনি বি জে পি বিরোধী হবেন সেটাই স্বাভাবিক । খুব স্বাভাবিক ।
কিন্তু শালীনতার বাঁধটা ভাঙবেন কেন ? একজন প্রাক্তন আমলার কাছে সমাজের এই প্রত্যাশা করাটা কি খুব অযৌক্তিক ?
তিনি নীতির বিরোধিতা করবেন, আদর্শের বিরোধিতা করবেন, কাজের বিরোধিতা করবেন, সেই অধিকার তাঁর আছে, করতেই পারেন । কিন্তু কোন উগ্র ভারত বিদ্বেষী মৌলবাদী যে ভাষায় কথা বলবেন জহর সরকারও কি সেই ভাষায় কথা বলবেন ? কোন তফাৎ থাকবে না ?
একসময় জহর সরকার নামটার প্রতি যেহেতু শ্রদ্ধাশীল থেকেছি প্রশ্নটা নিজেকেই বারবার ঘুরেফিরে করে উত্তর খুঁজেছি নিরন্তর । পাইনি উত্তর ।
প্রায় প্রতিদিন নরেন্দ্র মোদীর ওপর জহর সরকারের আক্রোশের ভাষাগুলো শুনুন –
১. The master spy of Pegasus
২. একটি অত্যন্ত কুরুচিকর ছবি পোস্ট করে লিখেছেন Best describes Modi’s Pegusus spy software
৩. The meanest person to be PM of India
আরও কদর্য কত অগুন্তি রুচিহীন, অশালীন ভাষা ! বোঝানোর জন্য কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করলাম এখানে । ভেবেছি বারবার, কেন নিজেকে নামালেন এতটা নীচে, একজন প্রাক্তন আমলা জহর সরকার ?
উত্তরটা শেষ পযন্ত আজ পেলাম । আজ ২৪ জুলাই । তৃণমূলের টুইটারে একটা লেখা ভেসে এল – রাজ্যসভায় তৃণমূল প্রার্থী হচ্ছেন তিনি । তিনি মানে জহর সরকার ।
মেলালাম হিসেব । মিলে গেল অঙ্ক । দুয়ে দুয়ে চার । আসলে এই কদর্য ভাষা, রুচিহীন, অশালীনতার মধ্যেই হীরে-জহরত খুঁজে পেয়েছে কালীঘাট । কালীঘাট যে এই নিম্ন রুচির সন্ধানে থাকে জানতেন তাহলে তিনি ? তাহলে হিসেব কষেই এই নীচে নামা ?
পাশাপাশি ভাবছিলাম এই মানুষটির মধ্যেই কি না খুঁজে পেয়েছে এতদিন এ বি পি আনন্দ কিম্বা আনন্দবাজার ! আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে যখন কেন্দ্র রাজ্য বিরোধ ঠিক সেই সময় চ্যানেলে প্রতিদিন তীব্র শ্লেষ, বিদ্বেষ ঝরিয়েছেন জহর সরকার নিয়ম করে । সেন্ট্রাল ভিস্টা কত খারাপ আনন্দবাজার পোস্ট এডিট করিয়েছে এঁকে দিয়েই । আর সেই সুযোগেই নরেন্দ্র মোদী কত খারাপ তার বর্ণনা করেছেন প্রায় প্রতি লাইনে । আনন্দবাজার তাঁর এই রুচিহীন শব্দ প্রয়োগের কথা জানতো না ? কি কারণে তিনি এসব করছেন তাঁরা জানতো না ? বিশ্বাসযোগ্য ?
নিজের টুইটারে জহর সরকার দুটো ছবি পোস্টও করেছেন ক দিন আগে । একটিতে দেখা যাচ্ছে মোদী তাঁকে দেখে হাসছেন না । আরেকটিতে দেখা যাচ্ছে ড: মনমোহন সিং তাঁকে দেখে হাসছেন । সঙ্গে জহর সরকারের মন্তব্য – দেখুন দুই প্রধানমন্ত্রীর তফাৎ । আমার সম্বন্ধে তাঁদের ধারণা ।
একটা মানুষ শিক্ষাটাকে কাজে লাগায় কত ক্ষেত্রে, কত রকম ভাবে সেটাই আজ জহর সরকারকে দেখে বারবার ভাবছিলাম । “শিক্ষিত বাঙালি বুদ্ধিজীবী”র আড়ালে দিনের পর দিন কি খেলাটাই না খেললেন তিনি ! শেখার আছে ।
প্রণাম নেবেন জহরবাবু ! প্রণাম ।।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)