একদিকে রাওয়ালপিন্ডির সেনা হাসপাতালে ভর্তি জইশ মাথা মৌলানা মাসুদ আজহার। অন্যদিকে, একে একে তার তিন আত্মীয়ের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আনল ভারতীয় সেনা। নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে ভারতীয় বায়ুসেনার চরম প্রত্যাঘাতে খতম হয়েছে আজহারের বড় ভাই ইব্রাহিম আজহার, ছোট ভাই মৌলানা তলহা সইফ এবং শ্যালক ইউসুফ আজহার। ১৯৯৯ সালে কন্দহর বিমান হাইজ্যাকের ঘটনার অন্যতম চক্রী ছিল ইউসুফ ও ইব্রাহিম।
মঙ্গলবার ভোর রাতে মুজফ্রাবাদে সেক্টর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রবেশ করে ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ ২০০০ বিমান। বালাকোটের দূরত্ব সেখান থেকে প্রায় পঞ্চাশ মাইল। সাউথ ব্লক জানায়, ১২টি মিরাজ যখন নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে ওপারে ঢোকে তখন টেরও পায়নি ইসলামাবাদ। এর পর বালাকোটের জইশ লঞ্চপ্যাড ও ট্রেনিং ক্যাম্প লক্ষ্য করে শুরু হয় কার্পেট বোম্পিং। ১০০০ কেজি বিস্ফোরকের ধাক্কায় গুঁড়িয়ে যায় জইশ, লস্কর ই তৈবা এবং হিজবুল জঙ্গি ঘাঁটি। নিকেশ হয় প্রায় ৩৫০ জঙ্গি। সেনা সূত্রে খবর, সেই ঘাঁটিতে আস্তানা গেড়েছিল মাসুদ আজহার ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য। হামলার আগেই জঙ্গি ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায় মাসুদ।
সেনা সূত্রে খবর, দু’দশকেরও বেশি বালাকোটে চলছিল এই জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির। এ দিনের এয়ার স্ট্রাইকে খতম হয়েছে অন্তত ২৫ জন জইশ প্রশিক্ষক। তাদের মধ্যে ছিল মৌলানা মুফতি আজহার। মুফতি জইশের কাশ্মীর মডিউলের প্রধান।
ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গির তালিকায় ছিল ইব্রাহিম ও ইউসুফ। ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর কাঠমান্ডু থেকে দিল্লিগামী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান অপহরণ করে কন্দহরে নিয়ে গিয়েছিল হরকত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গিরা। ইউসুফ ও ইব্রাহিম ছিল ২০ বছর আগের সেই বিমান অপহরণের অন্যতম চক্রী। কাঠমান্ডু থেকে দিল্লিগামী আইসি-৮১৪ বিমানটি ছিনতাই করে অমৃতসর-লাহৌর-দুবাই হয়ে শেষ পর্যন্ত তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের কন্দহরে নামিয়েছিল জঙ্গিরা। বিমানের ভিতর সে সময় ছিলেন ১৯০ জন যাত্রী। পরে ইউসুফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে বিমানযাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত ইউসুফকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ভারত। সেই সঙ্গে ছাড়া পায় ভারতীয় জেলে বন্দি মৌলানা মাসুদ আজাহার, আল উমর মুজাহিদিন সুপ্রিমো মুশতাক জারগার ও আহমেদ ওমর সায়েদ শেখ।
ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, ইউসুফের একাধিক নাম ছিল। কখনও মহম্মদ সেলিম, কখনও উস্তাদ ঘুহারি নামে তাকে চিনত প্রশিক্ষণরত জঙ্গিরা। মাসুদ আজহারের তত্ত্বাবধানে বালাকোটে জইশ জঙ্গি শিবিরে প্রশিক্ষণ দিত এই জঙ্গি নেতা। একই কাজ করল মাসুদের বড় ভাই ইব্রাহিম ও ছোট ভাই মৌলানা তলহা সইফও। কন্দহর বিমান অপহরণের পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে অপহরণকারীদের যে তালিকা বার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ইউসুফ, ইব্রাহিম ছাড়াও ছিল সানি আহমেদ কাজি, শাহিদ সায়েদ আজহার, জাহুর ইব্রাহিম মিস্ত্রি এবং শাকির।
২০০০ সালে সিবিআইয়ের অনুরোধে ইন্টারপোল ইউসুফের নামে রেড কর্নার নোটিস জারি করে। নোটিসে লেখা ছিল, করাচিতে জন্ম ইউসুফের। উর্দু ও হিন্দি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে সে। অপহরণ, খুন, ছিনতাই-সহ একাধিক অভিযোগে তাকে খুঁজছে ভারত। ২০০২ সালে ফের ২০ জন মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গির তালিকা ইসলামাবাদে পাঠায় ভারত। যার মধ্যে শীর্ষেই ছিল ইউসুফের নাম।