শ্রমিকদের উন্নয়নে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন, যাঁদের তৈরি চা খেয়ে সকালে নিদ্রাভঙ্গ করেন দেশ তথা বিশ্ববাসী, সেই সকল শ্রমিকদের উন্নতি করতে বর্তমান বিজেপি সরকার বদ্ধপরিকর। শনিবার গুয়াহাটিতে আয়োজিত তৃতীয় দফার ‘চা বাগান ধন পুরস্কার মেলা’র সমাবেশে বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
আজ খানাপাড়ায় পশু চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ময়দানে বিশাল সমাবেশে রাজ্যের ৭,৪৬,৬৬৭ জন চা শ্ৰমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিন হাজার টাকা করে সরকারি অনুদানের ধনরাশি জমা করে বিশাল এই প্রকল্পের সূচনা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলি, তিন সাংসদ কামাখ্যা প্রসাদ তাসা, পল্লবলোচন দাস ও কৃপানাথ মালাহ, রাজ্যের চা জনজাতি মন্ত্রী সঞ্জয় কিষাণদের সঙ্গে নিয়ে প্রদীপ প্রজ্বলন করে তৃতীয় দফার ‘চা বাগান ধন পুরস্কার মেলা’র শুভারম্ভ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তবে এদিন মঞ্চে ছয় বাগান শ্রমিকের হাতে তিন হাজার টাকার প্রতীকী চেক তুলে দিয়েছেন সীতারমণ। চেক-গ্রহীতাদের মধ্যে কাছাড় জেলার ডলু চা বাগানের জনৈক শ্রমিকও ছিলেন।
মন্ত্রী সীতারমণ প্রদত্ত ভাষণে বলেন, অসমের চায়ের একটি ব্র্যান্ডভ্যালু আছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই কেন্দ্রীয় এবং অসম সরকার চা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, চা জনগোষ্ঠীর ঝুমুর গীত শুনলে তাঁর খুব ভালো লাগে। কিন্তু চা বাগানের শ্রমিকদের জীবনশৈলি নিয়ে রচিত গানের করুণ বর্ণনা তাঁকে ব্যথিত করে। গানের তর্জমা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যে চা সকালে খেয়ে বিশ্ববাসী স্ব স্ব কৰ্মক্ষেত্ৰে যান, সেই সব চা বাগানের শ্ৰমিকদের সন্তান-সন্ততিরা প্রতিদিন সকালে আগের রাতের বাসি খাদ্য খায়, তা কখনও হতে পারে না। এই ধারা বর্তমান সরকার পাল্টাতে শুরু করেছে।
চা বাগানগুলিকে দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরুর সঙ্গে তুলনা করে কেন্দ্ৰীয় অর্থমন্ত্ৰী সীতারমণ বলেন, ‘চা বাগান মুম্বাই থেকে কম নয়। কেননা, ব্যাংক, এটিএম কাউন্টার, মোবাইল এটিএম ব্যবস্থার সুবিধা চা বাগানের বাসিন্দারা এখন পাচ্ছেন। দালাল ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সরাসরি গ্রহীতারা তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাচ্ছেন। এই সব প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্র মোদীর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সাফল্য বা সু-প্ৰয়োগ প্ৰতিফলিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, দেশের সব রাজ্যরে সমবিকাশ চায় ভারত সরকার, এটা সরকারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। চা বাগানের উন্নয়নের জন্য পরবৰ্তীতে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন নির্মলা।
তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে সাংসদ কামাখ্যা প্ৰসাদ তাসা চা বাগানের বাসিন্দাদের উন্নয়ন করতে তাঁকে বহুবার অনুরোধ করেছেন। একই ভাবে পল্লবলোচন দাসও সংসদে চা বাগানের বাসিন্দাদের উন্নয়ন ঘটাতে তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, এখন সরকারের বরাদ্দকৃত আবাসগৃহ, আয়ুষ্মান ভারত সহ অন্য বহু সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে, যাঁরা সরকারি সুবিধা পাননি, তাঁদের শীঘ্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করতে বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব সুবিধা তাঁরা পেয়ে যাবেন, বলেন নির্মলা।
অর্থমন্ত্ৰী নির্মলা আরও বলেন, করোনা কালে ব্যাংকের আধিকারিক এবং কৰ্মচারীরা ব্যাপক তৎপরতার সঙ্গে চা বাগানের শ্ৰমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলায় সহায়তা করেছেল। এর কৃতিত্ব অবশ্য তাঁদের দিতে হবে। তিনি ব্যাংকের সকল আধিকারিক এবং কর্মচারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।