বিধান রায়ের আমলে কেনা সরকারি জমি যার মালিক হয়েছিল হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট, কে বেচছে সেটা কাকে ?

মোদী বেচছেন দেশটা ! তাই না !

বিধান রায়ের আমলে কেনা সরকারি জমি যার মালিক হয়েছিল হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট, কে বেচছে সেটা কাকে ?

৫৬ একরের গল্প । হাওড়ার ডুমুরজলার মাঠ ।
ছিল হাওড়ার ফুসফুস । হাজার হাজার পাখির আসা যাওয়া, কলতান । সূর্যোদয়ের আগে মানুষের ভিড়, লম্বা দৌড়, হাঁটা, প্রাণভরে খেলা । সকাল হতেই বলের দাপাদাপি । জলাশয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া, দেখা যেত না অন্য প্রান্ত, সকাল দুপুর হত, বিকেলে আবার মানুষের আসা, হাঁটা, দৌড়ানো বাড়তো । ৫৬ একর সাদরে টেনে নিত সবাইকে, আবাল বৃদ্ধ বনিতাকে । বুক ভরা অক্সিজেন দিয়ে ফিরিয়ে দিত বাড়িতে, আরেকটা সকালে আসার আহ্বান জানিয়ে । সে এক অদ্ভুত মাদকতা !

সেই ৫৬ একরই ছিনতাই হচ্ছে চোখের সামনে ।

বেশ কিছুদিন ধরে ১৪ তলার নজর ছিল এই উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে । ছিল একটা শুধু স্টেডিয়াম । সেখানে খেলা নয় পার্টির বিরিয়ানি খাওয়া অধিবেশন হয় মাঝে সাঝেই । তাও সয়ে নিয়েছিল এলাকার মানুষ ।

এরপর হঠাৎই একদিন তারা দেখল হেলিপ্যাডের জন্য দখল হল ৬ বিঘে জমি । নো এন্ট্রি বোর্ড লাগিয়ে প্রাত ভ্রমণকারীদের বলা হল সেদিকে যাওয়া কিছুতেই যাবে না । তাও মেনে নিলেন তাঁরা ।
বাকি ছিল আরও । হাওড়ার প্রশাসনিক এক সভায় হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রী আচমকা ঘোষণা করলেন – হবে সেখানে ‘খেল নগরী’ । সি এ বি কে দেওয়া হবে ১৪ একর । বাকি অংশে হবে খেলা ধুলার ব্যবস্থা । কিরকম ? ৬০ তলা বাড়ি করবে ঠিকাদার । একদিকে আবাসন, অন্য দিকে শপিং কমপ্লেক্স । মানুষ থাকবে, ব্যবসা বাণিজ্যও হবে । বিনোদন থাকবে, থাকবে খেলাধুলা । নাম হবে খেল নগরী ।

যেমন বলা ঠিক তেমনই কাজ । নিমেষে ঠিকাদার ডেকে কাজ দেওয়া হয়ে গেল । কোন এক এম এস কনস্ট্রাকশনকে । কলকাতার কোন এক হাকিমের নাকি লোক । স্থানীয় যাঁদের সঙ্গে এই মাঠ, এই জলাশয়ের আত্মীয়তা ছিল তাঁরা প্রতিবাদে সরব হলেন, পথে নামলেন । তৈরি হল সেভ ডুমুরজলা ফোরাম । দাবি খুব স্পষ্ট – প্রকৃতি বাঁচিয়ে হোক উন্নয়ণ । আপত্তি নেই ।

কিন্তু কে শোনে কার কথা ।

চোখের সামনে আস্ত অতবড় ঝিল, জলাশয় ভরাট হচ্ছে দেখে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে মেল করলেন, ছুটলেন চ্যাটার্জি হাট থানায় । দায়িত্বে থাকা অফিসার সাফ জানিয়ে দিলেন অভিযোগ নেওয়া যাবে না । হাওড়ার মানুষ তাঁরা, সুভাষ দত্তর কাছে গেলেন তাঁরা । নিরাশ হলেন এক অদৃশ্য কারণে । ছুটলেন মন্ত্রী অরূপ রায়ের কাছে । সেখানে শুনলেন – সি এম কারুর কথা নাকি শোনেন না । আমি আর কি করব । স্থানীয় বিধায়ক, মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি বললেন – আমি নতুন, আমি কিছু করতে পারব না ।

অতঃপর ভরাট চলছে এখন জোর কদমে । প্রায় ৫ বিঘে জলাশয় ভরাট শেষ হয়ে গেছে । বাকিটুকুও বছর শেষের আগেই মিলিয়ে যাবে ।

এদিকে ধীরে হলেও প্রতিবাদকারীরা জোট বদ্ধ হচ্ছেন । সংখ্যায় বাড়ছেন প্রতিদিন । কাল সন্ধ্যেতেও প্রতিবাদ সভা করেছেন । এই নিয়ে দ্বিতীয় প্রতিবাদ । মানব বন্ধনও করেছেন । আওয়াজ তুলেছেন – ফিরিয়ে দাও আমার অরণ্য, আমার জল, আমার বায়ু । আমাকে বাঁচতে দাও, আমাদের বাঁচতে দাও । ইট কাঠ জঙ্গলে ঘিরো না আমাদের । আমাদের নিশ্বাসে বড় কষ্ট । ক্লাস নাইনের ছেলেটাও আজ ইন হেলার নেয় । দেখ না কি তোমরা ?

কে দেখবে ? কে শুনবে ? এই আওয়াজ ? এই বাঁচার আর্তনাদ ? ইতিমধ্যেই প্রায় ১৮০ টা গাছের নিধন যজ্ঞ সম্পন্ন । দূর দেশের পাখিরা যারা আসত, গাছে বসত, ঝিল পাড়ে বসে যারা কত কথা বলত, তারাও হয়তো দূর থেকে আকাশ পথে দেখে গেছে তাদের আস্তানা গেছে, এক হাঙরের মুখে, যার হাঁ গিলছে একটা রাজ্যকে ।

ডুমুর জলার মৃত্যুতে যাঁরা এখনও নীরব, ভয়ে যাঁরা কাতর, মুখে আর কলমে যাঁদের লিউকো প্লাস্ট তাঁরা মনে করে আসবেন, শ্রাদ্ধ বাসরে । ৬০ তলার গৃহ প্রবেশে । খেল নগরীর উদ্বোধনে ।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.