তিনি আমাদের ‘সঙ্ঘ’-সম্পৃক্ত করেছেন; একত্রিত করেছেন, সঙ্ঘবদ্ধ করেছেন, এক থাকতে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি শাক্যমুনি গৌতম বুদ্ধ। ‘সঙ্ঘ’ বলতে আদিতে বৌদ্ধভিক্ষু-সমাজ বোঝালেও, ক্রমে তাই হয়ে ওঠে নানান হিন্দু সমাজের নয়নের মণি। তাছাড়া বৌদ্ধধর্মকে হিন্দু ধর্ম থেকে তো আলাদা করা যায়ই না। গৌতম বুদ্ধকে দশাবতারের অন্যতম কল্পনার মধ্যেই হিন্দু ধর্মের বৃহত্তর সমন্বয় সাধিত হয়েছে।
১৯১৭ সালে যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজী প্রতিষ্ঠা করলেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। এখানে ‘সঙ্ঘ’ কথাটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। একেতে সাধুসন্তের দেশ ‘ভারত’, তার উপর ‘সেবা’-ধর্মের মাধ্যমে মোক্ষ লাভের কথা, শেষে ‘সঙ্ঘ’-শক্তি। পৃথিবী ব্যাপী মহাপ্রলয়কে নিশ্চেষ্ট করতে দীর্ঘ ১৬ বছর ৮ মাস মৌনীব্রত অবলম্বন করে গম্ভীরালীলায় অবস্থান করছিলেন প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর। এ কোন প্রলয়, কোন প্লাবন? এ কি নিতান্তই জলোচ্ছ্বাস? এ আসলে হিন্দু ধর্মের ভিত নাড়ানোর অধর্মের, অপশক্তির প্রচেষ্টা সাধকের মৌনীব্রত দিয়ে দূর করার সাধনা। দেখা যাচ্ছে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পর ব্রত সংবরণ করছেন জগদ্বন্ধু সুন্দর। স্বামী প্রণবানন্দজীও আধ্যাত্মপথে বন্ধুসুন্দরকে আহ্বান করছেন সূক্ষ্মদেহে। স্বামী প্রণবানন্দজী পরে হিন্দু একতাকে সুনিশ্চিত করতে ‘হিন্দু মিলন মন্দির’ রচনা করলেন, গড়ে তুললেন ‘হিন্দু রক্ষীদল’ (১৯৪০)।
১৯২৫ সালে আমরা দেখতে পেলাম প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ’, তৈরি করছেন ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার। এভাবেই সঙ্ঘশক্তি এগিয়ে চলেছে ভারতবর্ষে। ক্রমাগত আসছে হিন্দু ধার্মিকদের মধ্যে এক অনন্য সংহতি। তবে সেটা প্রয়োজনের চাইতে এখনও কম। হিন্দুদের বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুকে টিঁকে থাকতে হলে সঙ্ঘশক্তির বিকাশ অপরিহার্য করে তুলতেই হবে।
বিশ্বের বৌদ্ধধর্মাবলম্বী দেশগুলি আদতে হিন্দুরাষ্ট্রই বটে, একটা সুনির্দিষ্ট সুস্থির হিন্দু রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই বিশ্বের হিন্দু সমাজের বৃহত্তম বাণী ঘোষণা করবে বৌদ্ধ সমাজও। তার মঙ্গল যাত্রা হয়তো আসন্ন।
যে দান স্বয়ং বুদ্ধদেব দিয়ে গেছেন, ‘সঙ্ঘম শরণম্’, তার প্রতি যথাযথ মান্যতা দেওয়া আজ অপরিহার্য, সে যে ফর্মেই হোক না কেন — বৌদ্ধিক, বিচার, শিক্ষা, সনাতনী চেতনা, ক্রীড়া, কৃষি, গ্রামবিকাশ, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে। মনে রাখতে হবে সঙ্ঘই শক্তি। United we stand, divided we fall. সঙ্ঘম শরণম্ গচ্ছামি ।
কল্যাণ গৌতম।