চন্দা ও চন্দা..একরাশ হাসি ছড়িয়ে উড়ে গেল চন্দ্রযান, ঢুকে পড়ল পৃথিবীর কক্ষপথে, অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রীরও

চাঁদে যাচ্ছে ভারত। ভূপৃষ্ঠকে গুডবাই জানিয়ে আপাতত পৃথিবীর কক্ষপথে হইহই করে ঢুকে পড়েছে ভারতের চন্দ্রযান ২। লাট্টুর মতো এ বার পৃথিবীর কক্ষপথে কয়েকবার পাক খেয়ে অভিকর্ষ বলের মায়া কাটিয়ে সে রওনা দেবে চাঁদের দিকে। মনিটরে চোখ রেখে বসে তারই গতিবিধি নিরিখ পরখ করছেন বিজ্ঞানীরা।

ধূমধাম, সমারোহের কোনও খামতি নেই। আগের বার মাত্র ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে থমকে গিয়েছিল উৎক্ষপণ। সে ভুল এ বার শুধরে নেওয়া গেছে। কোটি কোটি ভারতবাসীর মুখ রক্ষা করে ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ২টো ৪৩মিনিটে চন্দ্রযাত্রার অভিষেক হলো শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের দ্বিতীয় লঞ্চ প্যাড থেকে। জিএসএলভি মার্ক-৩ রকেট ওরফে ‘বাহুবলী’র পিঠে চেপে আনন্দ ছড়াতে ছড়াতে সাঁ করে উড়ে গেল চন্দ্রযান ২। ঠিক যেন বাপের বাড়ি থেকে বিদায় জানানো হলো আদরের মেয়েকে। উল্লাসে আলিঙ্গন করলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। টিভির পর্দায় চোখ রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ১৩০ কোটি ভারতবাসী।

ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন বলেছেন, “৬৪০ টন বাহুবলীর পিঠে চেপে একেবারে সঠিক সময়ে যাত্রা করেছে চন্দ্রযান। আমি খুশি পরিকল্পনা মাফিক ঘড়ি ধরেই পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছে গেছে জিএসএলভি মার্ক-৩। ভারতের চন্দ্রাভিযানের ঐতিহাসিক সফর শুরু হলো। ইসরোর মুকুটে সাফল্যের নতুন পালক জুড়বে চন্দ্রযান ২।”

ইসরোর সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। টুইট করে তিনি বলেছেন, “ভারতের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। চন্দ্রযান ২ নতুন করে প্রমাণ করলো ভারতের বিজ্ঞানীদের ক্ষমতা। ১৩০ কোটি ভারতবাসীর কাছে বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত খুলে দিল।”

৪৪ মিটার উচ্চতার প্রায় ১৬ তলা বাড়ির সমান চন্দ্রযানের বাহক রকেট ‘বাহুবলী’ ওরফে জিএসএলভি মার্ক-৩। ইসরোর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আগের বার তার ক্রায়োজেনিক স্টেজে জ্বালানির যে ক্রুটি দেখা গিয়েছিল এ বার সেটা মেরামত করে দেওয়া গেছে।  আর নতুন করে ‘দুষ্টুমি’ করেনি ‘বাহুবলী।’ নিয়ম মেনেই তাতে হিলিয়াম গ্যাস ভরা হয়েছে। লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বারের গ্যাসের চাপ নিয়ন্ত্রণকারী ভাল্বের রোগ সারানো হয়েছে। এ বার তাই বাধ্য ছেলের মতোই চন্দ্রযানকে পিঠে নিয়ে নিরাপদেই চাঁদের দিকে পাড়ি জমিয়েছে সে।

আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরে চতুর্থ দেশ হিসেবে এটাই ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান। ২০০৮ সালে প্রথম চাঁদে পা রেখেছিল চন্দ্রযান-১। সেই খুঁজে বার করেছিল চাঁদে জমে আছে বরফ। সেই খোঁজকেই প্রমাণস্বরূপ পৃথিবীর তাবড় মহাকাশবিজ্ঞানীদের দরবারে থালা সাজিয়ে পেশ করতে দ্বিতীয়বারের জন্য চাঁদে পাড়ি দিয়েছে ভারত। চাঁদে জল আছে কি না, বরফ থাকলেও সেটা কতটা ও কী পরিমাণে আছে, খনিজ ভাণ্ডারের মধ্যে কতটা গুপ্তধন লুকিয়ে আছে তারই জরিপ করবে চন্দ্রযানের রোভার ‘প্রজ্ঞান।’ সর্বোপরি চাঁদের অন্ধকার পিঠ অর্থাৎ দক্ষিণ মেরুর (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) রহস্য উন্মোচনেও বিশেষ ভূমিকা থাকবে চন্দ্রযানের।

২২ জুলাই রওনা দিয়ে অগস্টেই চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়বে চন্দ্রযান ২। চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কিলোমিটার দূরে। ৬ সেপ্টেম্বর চাঁদে ল্যান্ড করবে চন্দ্রযান। কক্ষপথে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উপরে থাকতেই চন্দ্রযানের পেট থেকে বেরিয়ে আসবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম।’ নামবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) । ল্যান্ডার থেকে বার হবে ২৭ কেজি ওজনের ৬ চাকার রোভার। চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে ছবি ও তথ্য পাঠাবে সে। এক পক্ষকাল অর্থাৎ ১৪ দিন ধরে ঘুরেফিরে চাঁদের মাটি থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রাইন্ড স্টেশনে পাঠিয়ে দেবে চন্দ্রযানের রোভার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.