এক সপ্তাহ ধরে অনেকে আন্দাজ করেছিল, জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করা হতে চলেছে। তার পরে কাশ্মীর উপত্যকায় অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে ধরে নিয়েই আগেভাগে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এরপর রবিবার কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি করা হয়। উপত্যকার নানা জায়গায় জারি হয় কার্ফু। অবশেষে সোমবার বেলা ১১ টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় জানালেন, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করেছেন। সেই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরকে দু’ভাগ করার জন্য বিল আনছে কেন্দ্র।
- সংবিধানে জম্মু-কাশ্মীরকে ‘সাময়িকভাবে’ বিশেষ স্বশাসন দেওয়া হয়েছে সংবিধানের ৩৭০ ধারায়। সংবিধানের ২১ নম্বর পরিচ্ছেদে ৩৭০ ধারার কথা বলা আছে। ওই পরিচ্ছদে নানা অস্থায়ী ব্যবস্থা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩৭০ ধারা একটি। সংবিধানের প্রতিটি ধারা অন্যান্য রাজ্যে প্রযোজ্য হলেও জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা নয়। এতেই অনেকে আপত্তি করেন।
- ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরকে নিজস্ব সংবিধান রাখতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানকার সরকার প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও যোগাযোগ বাদে সব ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
- ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরের ভারতভুক্তির সময় সংবিধানে ৩৭০ ধারা ঢোকানো হয়েছিল। ওই ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও পলিসি বা সাংবিধানিক ক্ষমতা কার্যকর করার আগে বিধানসভার অনুমতি নিতে হত।
- জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে সংবিধানের আরও একটি বিতর্কিত ধারা হল ৩৫ এ। অনেকের ধারণা ছিল, ওই ধারাটিকেও ৩৭০ ধারার সঙ্গে বাতিল করা হবে। তা অবশ্য হয়নি। কিন্তু একটি মহলের ধারণা, আগামী দিনে মোদী সরকার ওই ধারাটিকেও বাতিল করার পদক্ষেপ করবে।
- ৩৫ এ ধারা অনুযায়ী রাজ্যের বিধানসভা স্থির করতে পারে, কে জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা আর কে নন। স্থায়ী বাসিন্দারা সেখানে বিশেষ অধিকার ও সুবিধা পেয়ে থাকেন। ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ওই ধারাটি সংবিধানের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ওই ধারায় বলা আছে, যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাঁরা সেখানে অস্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারবেন না। স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন না। রাজ্যের কোনও স্কলারশিপ পাবেন না।
- ওই ধারায় রাজ্যের অস্থায়ী বাসিন্দাদের সরকারি চাকরি দিতেও নিষেধ করা আছে।
- এই ধারার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছিল। আবেদনকারীদের মধ্যে ছিল উই দ্য পিপল নামে এক এনজিও। তাদের বক্তব্য ছিল, ৩৫ এ ধারা অবৈধ। কারণ তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়নি। রাষ্ট্রপতির নির্দেশে তা সংবিধানের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল।