সন্ময় কাণ্ডে নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সমালোচনা রাজ্যপালের

সোশাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে গ্রেফতার হয়েছিলেন কংগ্রেস মুখপাত্র সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সরকার এ ক্ষেত্রে যে অসহিষ্ণু আচরণ করেছে প্রকারান্তরে তাই যেন বোঝাতে চাইলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বা সরকারের নাম অবশ্য মুখে আনেননি রাজ্যপাল। কিন্তু রবিবার সকালে এক টুইট বার্তায় বলেন, “সংবিধান যে মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে তা হল এক স্বর্ণালী উপহার এবং যে কোনও ধরনের অসহিষ্ণুতাই গণতন্ত্রের পক্ষে ধ্বংসাত্মক”। তাঁর কথায়, “মতের ফারাক হতেই পারে। তা যাতে ভদ্র ভাবে হয় সেটাই শেখা উচিত”। এ সব কথা বলার পরই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একটি মন্তব্য করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “স্ট্রাকচারড মেকানিজম তথা একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে যে অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পায় তা শুধু উদ্বেগজনক নয় দুঃখজনকও বটে”।

অনেকের মতে, পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাকেই স্ট্রাকচারড মেকানিজম বলে হয়তো মন্তব্য করতে চেয়েছেন রাজ্যপাল।

সোশাল মিডিয়া তথা ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে রাজ্য সরকার ও একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি সমালোচনা শুরু করেছিলেন সন্ময়বাবু। ২০১৬ সালে তিনি পানিহাটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। ইদানীং লোকসভা ভোটের পর তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করেন। বাংলার বার্তা নামে একটি মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তিনি সরকারের সমালোচনায় অবতীর্ণ হন। তা ছাড়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও একটি ফেসবুক পোস্টে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন সন্ময়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময় সন্ময় ছিলেন আলাপনের সতীর্থ।

এই পরিস্থিতিতে পুরুলিয়ার যুব তৃণমূল সভাপতির অভিযোগের ভিত্তিতেই তিন দিন আগে সন্ময়কে খড়দহ থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। রবিবার জামিন পাওয়ার পর দেখা যায় সন্ময়বাবু অপমানে-অভিমানে দৃশ্যত ভেঙে পড়েছেন।

সন্ময়বাবু গ্রেফতার হওয়ার পর কংগ্রেস, সিপিএম এমনকী বিজেপি-ও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দেন। ফের তাজা হয়ে ওঠে অতীতে অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতারের স্মৃতি। এমন একটি আবহেই নাম করে সরকারের সমালোচনা করেছেন রাজ্যপালও।

বস্তুত বাংলায় সংবাদমাধ্যম কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে তা নিয়ে সম্প্রতি বারবার সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। এমনকী তিনি এও বলেছেন, বাংলায় সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখানো হচ্ছে কিনা জানি না। তবে তা যদি হয়ে থাকে তা হল গণতন্ত্রের জন্য ঘোর বিপজ্জনক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.