মিথ্যা প্রচারের শিকার দেশের অর্থনীতি

কিছুদিন ধরে কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএম নেতারা দেশজুড়ে একটা প্রচার চালাচ্ছেন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাকি তীব্র সংকটে। এমন ঢঙে এই প্রচার চালানো হচ্ছে যেন আজকালের মধ্যেই দেশের অর্থনীতি ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কমরেডদের ছানাপোনারা বিকৃতভাবে কার্টুন সহযোগে আগামীদিনে দেশের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একশ্রেণীর মিডিয়া বিশেষত বাংলা সংবাদপত্রগুলো দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা তথ্য সহযোগে আতঙ্ক সৃষ্টি করার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। একটি পত্রিকা সম্প্রতি তাদের প্রথম পাতায় এমন সংবাদও করেছে সরকার নাকি টাকার দাম বিদেশি মুদ্রার সাপেক্ষে পড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে জরুরি সভা তলব করেছে। আর পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী আরও সরেস। বলেই বসলেন দেশ আবার পরাধীন হতে চলেছে। এহেন প্রচারের অন্যতম কারণ কাশ্মীর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের অভাবনীয় সাফল্যের দিক থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া। আর সেই দৃষ্টি ঘোরানোর কাজে তারা হাতিয়ার করেছেন অর্থনৈতিক সংকটকে। এমনভাবে প্রচার চলছে। যেন ভারতের অবস্থা ভেনেজুয়েলার থেকেও খারাপ হতে চলেছে। পরপর ঘটমান দুটি বিষয়কে বিকৃত করে সাধারণ মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করতে চাইছেন।
প্রথম বিষয়টি বিদেশি মুদ্রার সাপেক্ষে টাকার মূল্য হ্রাস। যারা সমালোচনা করছেন তারা ভালোমতো জানেন এই মূল্যহ্রাস আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য যুদ্ধের অঙ্গ। বিশ্ববাজারে উৎপাদনশীল দেশগুলো কেউ এই মুহূর্তে কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে রাজি নয়। প্রতিটি দেশই চাইছে তার দেশের বাজারে বিদেশি পণ্যের থেকে স্বদেশি পণ্যের বিক্রি বাড়ুক। দেশীয় বাজারে বৃদ্ধি পাক বিদেশি পণ্যের পরিবর্তে বিদেশি লগ্নি। পাশাপাশি বিদেশের বাজারে জনপ্রিয় হোক তাদের পণ্য। আর তা যদি সফল করে তুলতে হয়, অবশ্যই আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়াতে হবে। ভারত ডব্লিউটিও-র অন্যতম সদস্য। যে চুক্তিপত্রে ভারত স্বাক্ষর করেছে তা অবমাননা বা অস্বীকার করার ক্ষমতা তার আর নেই। অতএব একটাই পথ খোলা। বিদেশি পণ্যের মূল্য স্বদেশি বাজারে বাড়িয়ে দেওয়া। আর স্বদেশি পণ্যের মূল্য বিদেশি বাজারে কমিয়ে দেওয়া। একমাত্র মুদ্রার মূল্য হ্রাসই যা সফল করে তুলতে পারে। এতে আমদানি করা গহনার সোনা বা পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং পাচ্ছেও। শেয়ার বাজারে সাময়িক পতন হবে। এবং হচ্ছেও। কিন্তু বিদেশি লগ্নিকারীরা ভারতের বাজার থেকে তাদের মুনাফা তুলতে পারবে না। পক্ষান্তরে মুনাফা বাড়াতে গেলে লগ্নি তাদের বাড়াতেই হবে ভারতের বাজারে। এর কোনোটিতেই সরাসরি সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি হয় না। অথচ এগুলোকে বিকৃত করেই কংগ্রেস আর সিপিএম প্রচারে নেমেছে। দেশের অর্থনীতি গেল গেল। একবারও তারা প্রকৃত ঘটনা বলছেন না।
তাদের এই প্রচারে আরও একটি বিষয় তারা যোগ করেছে। সেটি হলো ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে সরকারের প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার সাহায্য নেওয়া। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে সরকার টাকা নিয়েছে। অতএব এই সুযোগে জোরদার প্রচার লাগাও ভারতের অর্থনীতির হাল খারাপ। কিন্তু বিজেপিসরকার কেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিল? নিশ্চয়ই সরকারের এই মুহূর্তে বাজেট বহিভূত বিশাল খরচের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কাশ্মীরের পুনর্গঠনের জন্য সরকারি বিনিয়োগেই তো প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।
কাশ্মীরে গত ৭২ বছর ধরে দেশের টাকা নয়ছয় হয়েছে। কেনও উন্নয়নশীল কাজ সেই রাজ্য সরকার সেখানে করেনি। পক্ষান্তরে রাজ্য নেতারা তাদের অগাধ সম্পত্তি বাড়িয়েছে। সন্ত্রাসবাদীদের মদত দিয়েছে। রাজ্যের যুব সম্প্রদায়কে কোনও দিশা দেখাতে তো পারেইনি উপরন্তু বেঁচে থাকার প্রয়োজনে তাদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের খপ্পরে। তাই তৈরি হয়েছিল পাথরবাজের দল। সেনার উপর পাথর ছুঁড়েই তারা আয় করছিল। এই কাশ্মীরের আমূল পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এখন আর ৩৭০ ধারা নেই। কাশ্মীরে নতুন করে পরিকাঠামো গঠনের প্রয়োজন। বিনিয়োগের পথ সুগম করতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়নের। এই উন্নয়নের কাজ শুরু হলেই কাশ্মীর উপত্যকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান হবে। তারাও মিলিত হবে দেশের মূলস্রোতে। সরকারের এই মুহূর্তে এই পরিকল্পনা রূপায়ণে চাই বিপুল অর্থ। যা বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে মোদী সরকার নেবে না। কারণ বিশ্বের প্রথম সারির দেশে আজ ভারতের অবস্থান দীর্ঘ ছ’বছর বিশ্বব্যাঙ্কের দ্বারস্থ না হবার কারণেই। তাই সরকার নিজের সম্পদ ব্যবহার করে এই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কংগ্রেসের এবং সিপিএম নেতারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এই বিষয় সম্বন্ধে অবগত। তবুও নিছক রাজনৈতিক স্বার্থে তারা সম্পূর্ণ বিকৃত প্রচার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।
দেশের অর্থনীতি যখন সঙ্কটে পড়ে, তার সর্বপ্রথম প্রভাব পড়ে দেশীয় বাজারে। ভারতের দেশীয় বাজার তো অনেক বেশি স্থিতিশীল। চড়া মূল্যবৃদ্ধির কোনও গল্প নেই। সামাজিক প্রকল্পের জন্য অর্থের কোনও ঘাটতি নেই। দীর্ঘ প্রায় কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে রেলের ভাড়া না বাড়লেও রেলের পরিকাঠামো উন্নয়ন থেমে নেই। গ্রামে গ্রামে সড়ক যোজনার কাজ এগিয়ে চলেছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনে গরিব মানুষের শৌচাগার নির্মাণ তড়িৎ গতিতে চলছে। গরিব মানুষের গৃহ নির্মাণের টাকা সরকার দিয়ে চলেছে। মিড ডে মিল সারাদেশের কোথাও বন্ধ নেই। কোনও রাজ্যে ডিম ভাতের বদলে নুন ভাত খাইয়ে টাকা লুটপাট হলে তার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বর্তায় না। কেন্দ্রীয় সরকার ৭৫টি নতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয়ে কর বর্তমানের ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ এসেছে। অন্ত্যোদয় অন্নপূর্ণা যোজনায় গরিব মানুষকে দু’টাকা কেজিতে চাল গম সরবরাহও থেমে নেই। সঙ্গে সঙ্গে থেমে নেই কংগ্রেস আর সিপিএমের মিথ্যা প্রচার।
পবন চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.