ক্ষমতার লোভে ইন্দিরা গান্ধী জারি করেছিলেন জরুরি অবস্থা, যার ফল ভোগ করতে হয়েছিল পুরো ভারতবাসীকে !

ভারতীয় (India) সাধু সন্ন্যাসীদের উপর গুলি চালানোর আদেশ দেওয়া ইন্দিরা গান্ধীকে (Indira Gandhi) কংগ্রেস মহান দেখানোর চেষ্টা করলেও তার আসল স্বরূপ এমারজেন্সি বা আপাতকাল লাগু করার সময়ে সকলের সামনেপ্রকাশিত হয়েছিল। জানিয়ে দি, ১৯৭১ সালের নির্বাচনে রাজ নারায়ণ ইন্দিরা গান্ধীর (Indira Gandhi) বিরুদ্ধে নির্বাচন লড়েছিলেন। নির্বাচন ইন্দিরা গান্ধী জয়লাভ করেন। কিন্তু রাজ নারায়ণ অভিযোগ তোলে যে ইন্দিরা গান্ধী সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচনা জয়লাভ করেছেন। রাজ নারায়ণ এর জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়। ৪ বছর ১২ জুন ১৯৭৫ এ আদালত ইন্দিরা গান্ধীকে দোষী ঘোষণা করে। এর ফলে শ্রীমতী ইন্দ্রিরা গান্ধীর লোকসভা মেম্বারশিপ বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় এবং আগামী ৬ বছরের জন্য ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন লড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কিন্ত পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তাই ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সঙ্কটে পড়ে যায়। নিজেকে রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে বাঁচানোর জন্যেই দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার অজুহাত দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী এমারজেন্সি বা আপাতকাল লাগু করেছিলেন যা মার্চ ১৯৭৭ অবধি চলেছিল।

এমারজেন্সি (Emergency In India) বা আপাতকাল ভারতের স্বাধীনতা পর হওয়া ইতিহাসের একটা কালো অধ্যায়ঃ। যা এখনও স্মরণে এলে মানুষের চোখে জল আসে। ২৬ শে জুন ১৯৭৫ সালের এই তারিখে ভারতীয় লোকতন্ত্রের কালো দিন পরোক্ষ ভাবে ঘোষিত করে ভারত দেশে আপতকাল লাগু করা হয়েছিল এবং জনতার সমস্থ নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রতিবাদ করলেই ইংরেজদের মতো করে গুলি করে উড়িয়ে দেওয়া হতো। অর্থাৎ ভারতের সরকার ভারতের লোকজনের উপরেই অত্যাচার শুরু করেছিল। লোকজন ইন্দ্রিরা গান্ধীর(Indira Gandhi) সরকারকে ইংরেজদের সাথে তুলনা করতে শুরু করেছিল। বড় বড় বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এই সিদ্ধান্তের পর তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) সরকারের প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্মেছিল। আর প্রথমবার তার বিরুদ্ধে দেশ দেশব্যাপী বিরোধ ঝঙ্কারের শুরু হয়েছে, কিন্তু মামলাটি যতক্ষণে ঠিক হতো তার আগে অনেক দেরি হয়ে গেছিলো ও অনেক কিছু বিগড়ে গেছিলো। তবে এই এমারজেন্সিতে দেশের একটা পক্ষকে দমন করা হয়েছিল, যারা সর্বদা সরকারি আদেশকে শিকার করেছিল ঈশ্বরের আদেশের থেকেও সরকারি আদেশকে উপরে রাখতো। হিন্দু সমাজকে এমারজেন্সিতে শিকার বানানো হয়েছিল। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার অজুহাত দিয়ে চালু করা হয়েছিল দেশ জুড়ে জোর করে নির্বীজকরন পক্রিয়া। কম বয়সী ছেলে, অবিবাহিত এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ৬০ বছর বয়স্ক লোকজনের উপরেও এই পক্রিয়া চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সেই সময় দেশে একপক্ষ ছিল যারা সরকারের আদেশকে মানতে নারাজ ছিল এবং তারা শুধুমাত্র নিজেদের ধার্মিক বিষয়কে প্রাধান্য দেবে তাও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিল। সরকারও এদের ভোট ব্যাঙ্ক হারানোর ভয় পেত তাই অত্যাচার শুধুমাত্র হিন্দুদের উপরেই করা হতো। ওইসময় আপতকাল দেশের রাজনৈতিক দল গুলি থেকে শুরু করে পুরো ব্যবস্থাকে খুব বাজে ভাবে প্রভাবিত করেছিল কিন্তু সেই সময় নেওয়া নির্বীজকরণ এর মতো কঠোর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহল থেকে অন্যদের প্রকাশ্যের নিজ জীবন অব্দি পৌঁছে দেয়। জনতার অধিকার প্রথমেই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তারপর নির্বীজন ঘরে ঘরে অভিঘাত ছড়ানোর কাজ করে। সেই সময় বিভিন্ন গলি-এলাকায় আপতকালের শুধু  একটি সিদ্ধান্তের চর্চা ছিল আর সেটি হলো নির্বীজকরন। জোর করে জনসংখ্যা দমন করার যে প্রয়াস করা হয়েছিল তা খুবই ভয়ংকর ছিল।

এটি আপতকালের সবচেয়ে দমনকারী অভিযান হিসাবে প্রমাণিত হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের যখন নির্বীজন লাগু করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন মাটিতে তারা এটিকে কাটার মতো শক্ত ও নির্মম বানিয়ে দিয়েছিল। এই সময় ঘরে ঢুকে, লোকজনকে বাস থেকে দিয়ে নেমে এবং লোভ দেখিয়ে লোকেদের নির্বীজন করানো হয়েছিল। সব সরকারি বিভাগের পরিষ্কার আদেশ ছিল যে নির্বীজন এর জন্য ঠিক করা টার্গেট যেন তারা সময়ের মধ্যে পুরো করে, নাহলে মাইনে আটকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নির্বীজনের সিদ্ধান্ত ইন্দিরা সরকার নিয়েছিল কিন্তু এটাকে লাগু করার দায়িত্ব তার ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধীকে দেওয়া হয়েছিল।

সেভাবে শক্ত প্রকৃতির ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ফায়ার ব্র্যান্ড নামে পরিচিত সঞ্জয় গান্ধী এই সুযোগটি একটি লঞ্চ প্যাড এর মত ছিল। সঞ্জয়ের আসল উদেশ্য ছিল, রাজনৈতিক রূপে বড় উচ্চতা প্রাপ্ত করা। কিন্তু নির্বীজনকে লাগু করানোর জন্য তিনি যেই কঠোরতা দেখালেন তখন দিয়ে দেশের দিকে দিকে তার নিন্দা হতে শুরু হয়েছিল। সেই সময় হিন্দু সমাজের  জনসংখ্যা মুসলমানদের থেকে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এর পর থেকে তুলনামূলক ভাবে দেখা যায় তার পরই জনসংখ্যার অনুপাত খুব দ্রুত বদলে যায়। হিন্দু সমাজের অনেক লোকেরাই সরকারি আদেশকে পুরোপুরি শিকার করে নিজেরাই হাসপাতালে গিয়ে নিজেদের নির্বীজকরন করায় এবং সরকারের এই আদেশকে নিজেই গৃহীত ও প্রসসিরত করার ক্যাম্পেইন করা চালু করে।

এই সিদ্ধান্তের পিছনে  সঞ্জয় গান্ধীর উচ্চাকাঙ্ক্ষাও ছিল কারণ তাকে কম সময়ের মধ্যে নিজেকে বড় নেতা হিসেবে প্রমান করতে হতো। কিন্তু এর ফলে একটি বর্গের দমন হয় যার পরিনাম আমরা আজ অব্দি দেখতে পাচ্ছি। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী শুধুমাত্র ১ বছরের মধ্যে দেশে ৬০ লাখের বেশি মানুষের নির্বীজকরণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৬ বছরের কিশোর থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধ উপস্থিত আছে। শুধু তাই নয় ভুল অপেরেশন ও চিকিৎসায় অবহেলার কারণে প্রায় ৪ হাজার লোক নিজের প্রাণ হারায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.