তোষণ করতে গিয়েই কী লকডাউন করতে দেরি করে ফেলল সরকার ?!

রাজ্যসরকার আজ লকডাউন ঘোষণা করল, ১৬ই মে থেকে ৩০ শে মে পর্যন্ত। বন্ধ থাকবে সমস্ত রকম সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবা, কেবল কিছু জরুরী পরিষেবা ছাড়া।
সকাল ৭টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকবার বাজার, এবং ১০-৫ টা পর্যন্ত মিষ্টির দোকান। কিন্তু বাস,ট্রেন, রিক্সা, ট্যাক্সি, ক্যাব,ফেরী সব পরিষেবাই থাকবে বন্ধ ।

বর্তমানের রাজ্যে রোজ নুতন সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার মত, যা কিছুদিন আগে ভোটের রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার দিন ছিল ১৭ হাজারের কাছাকাছি । তাহলে তার পরই লকডাউন ঘোষণা করলনা কেন রাজ্য সরকার ? এতদিন অপেক্ষার কারণ কী তাহলে শুধু ঈদ! প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ মানুষ তথা বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি। নির্বাচন শুরু হওয়ার পর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি করে, কিন্তু নির্বাচন যেহেতু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া তাই সেটা মাঝখানে আটকানো অসম্ভব ছিল। আর কোভিডের কথা ভেবে নির্বাচন কমিশন বুথ বাড়ানো থেকে শুরু করে নানান রকম ব্যবস্থা নিয়েছিল যাতে কোভিড সংক্রমণকে আটকানো যায়। যদিও সেই লক্ষ্যে কিছুটা ব্যর্থ হয়েছে কমিশন । কিন্তু নির্বাচনের সময় থেকে বাড়তে থাকে সংক্রমণের কথা ভেবে ফল প্রকাশের পরও লকডাউন করতে কেন এত দেরি করল সরকার ?!

বর্তমান তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ ওঠে আসছে গত ১০ বছর ধরেই আর এবারও সেই একই অভিযোগ।
গত বছর কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় লকডাউন শেষ হওয়ার বহুদিন পর হয়েছিল হিন্দুদের তথা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ দুর্গাপূজা। কিন্তু সেই দুর্গাপূজাতেও ছিল নানান ধরণের নিষেধাজ্ঞা। মণ্ডপে পূজা দেখতে না যেতে দেওয়া, ৫ জনের বেশি পূজা মণ্ডপে না থাকতে দেওয়া এমনকি বিসর্জন নিয়েও ছিল নানান নিষেধাজ্ঞা । কিন্তু তখন রাজ্যে দৈনিক সংক্রমন ছিল মাত্র ৩৫০০ থেকে ৪০০০ এর মধ্যে। যেখানে এখন গত একমাস ধরে সংক্রমণ উর্ধমুখী হয়েই চলেছে। সেক্ষেত্রে ধার্মিক অনুষ্ঠানে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রাখা যেত না কী?! কেন মসজিদে, বাজারে এত জমায়েত করতে ছাড় দেওয়া হয়েছে, কেন রাস্তার পাশে পাশে শয়ে শয়ে মানুষকে জমেয়েত করে ইফতার পার্টি করতে দেওয়া হল, এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল।

এবার লকডাউনে মিষ্টির দোকান খুলর রাখা যাবে ৭ ঘন্টা, যা বাজার খোলা রাখার সময়ের থেকে ৪ ঘন্টা বেশি। কিন্তু কেন? মিষ্টির দোকান তো জরুরী পরিষেবার মধ্যে পরে না । তাছাড়া যেখানে বাস, ট্রেন, ট্যাক্সি বন্ধ সেখানে মিষ্টি কেনার লোক না থাকাটা স্বাভাবিক। মানুষের রোজগার বন্ধ থাকলে সে মিষ্টি যে মিষ্টি কিনতে পারবে না তা কী সরকার বুঝে উঠতে পারেনি! তাহলে কী এই ছাড় শুধু মাত্র এই কারণে যাতে ঈদ নিয়ে এত ছুটের কথা হিন্দুরা না তুলতে পারে! বিশেষজ্ঞ মহল এমনটাই মনে করছে অবশ্য।

রাজ্য সরকারের নেওয়া লকডাউনের পদক্ষেপ যে দেরিতে নেওয়া হল তা বোঝাচ্ছে রোজ বাড়তে থাকা দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা। দেশের দৈনিক মোট সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ৪ লাখের উপরে যাওয়ার পর যখন গত ১ সপ্তাহ ধরে ৩.৫ লাখের কাছাকাছি এসেছে তখন রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ প্রীতি দেখাতে গিয়ে ঈদের জন্য লকডাউন না করে রাজ্য সরকার যে ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে তা বলাই বাহুল্য।

একদিকে ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হচ্ছে বিজেপির হাজার হাজার “হিন্দু” কর্মী আর একদিকে রাজ্য তার চিরাচরিত প্রথায় তোষণনীতিতে অনড়…

বাপ্পাদিত্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.