নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে দাউদ, জইশ, লস্করের মতোই জঙ্গি সংগঠন ডি-কোম্পানি, রাষ্ট্রপুঞ্জে সরব দিল্লি

আন্তর্জাতিক হাওয়ালা ও ড্রাগ পাচারের অভিযোগ আগেই ছিল। দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানি যে জইশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তৈবার মতো পুরোপুরি জঙ্গি সংগঠনে পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জে সেটাই জোর গলায় বলল ভারত।

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে সন্ত্রাস ও সাম্প্রতিক কালে জঙ্গি সংগঠনগুলির কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনার প্রসঙ্গে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আকবরুদ্দিন বলেন, ডি কোম্পানির মতো অপরাধ চক্রগুলি জঙ্গি সংগঠনগুলির মূল পরামর্শদাতা। এদের মদতেই জইশ, লস্করের মতো জঙ্গি সংগঠন গোটা বিশ্বে নাশকতা তৈরি করছে। ড্রাগ পাচার, অস্ত্র পাচার, প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে অবৈধ ব্যবসা, জাল নোটের কারবার থেকে মানুষ পাচারের মতো অপরাধ দিন দিন বাড়ছে।

আকবরুদ্দিনের কথায়, “দাউদ ইব্রাহিম ও তার পরিচালিত ডি কোম্পানি সম্পর্কে হয়তো অনেকের কাছেই সঠিক খবর নেই। তবে দক্ষিণ এশিয়ার বড় অংশ জুড়ে দাউদ-চক্র সক্রিয়। সোনা পাচার, অস্ত্র ও মাদক পাচারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক হাওয়ালা চক্রে এই কোম্পানি প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত, যেটা ভারতের পক্ষে উদ্বেগের কারণ।”

প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসার পর, মুখে শান্তির কথা বললেও এই মুহূর্তে পাকিস্তানের আশ্রয়েই আছে ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণের মূল চক্রী দাউদ ইব্রাহিম এবং ২০০৮-এর ২৬/১১ হামলার মাস্টারমাইন্ড এবং লস্কর ই তৈবা প্রধান হাফিজ সইদ। এক দিকে এই দুই সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয় দান, অন্য দিকে শান্তি আলোচনার আহ্বান, এই দ্বিচারিতা নিয়েই আপত্তি ভারতের। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতীয় দূত সৈয়দ আকবরুদ্দিন পাকিস্তানের নাম না করেই বলেন, “দাউদ এক নিরাপদ আশ্রয় থেকে তার কাজকর্ম চালাচ্ছে। এমন এক নিরাপদ স্বর্গে সে বাস করছে, যেখানে তাকে সব রকম ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে।” আকবরুদ্দিনের মতে, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলি চাপ বজায় রাখায় আইএস বড় ধাক্কা খেয়েছে। ডি কোম্পানি, জইশ ও লস্করের বিরুদ্ধেও এমন পদক্ষেপ প্রয়োজন।

দাউদের পাকিস্তানে থাকার খবর ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে থাকলেও তা বিভিন্ন সময় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। যদিও ভারতের দাবির পাশেই দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এই বছরেই পৃথিবীর সব থেকে বিপজ্জনক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পাশাপাশি সব থেকে বিপজ্জনক জঙ্গিদের একটি তালিকা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেখানে দাউদ ইব্রাহিমের নামের সঙ্গে তার করাচির ঠিকানাও প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

১৯৯৩ সালে মুম্বইতে সব মিলিয়ে ১২টি বিস্ফোরণ ঘটানো হয় দাউদের নেতৃত্বে। নিহত হন ২৫৭ জন, আহত হন প্রায় সাতশো সাধারণ মানুষ। এর পরই ভারত থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয় দাউদ। তাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু, পাকিস্তানের আশ্রয়ে থাকায় তাকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.