পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিতেছেন নরেন্দ্র মোদি। এমন পূর্বাভাস দিয়াছিল প্রায় সব ধরনের একজিট পোল। বুথ ফেরত এই সকল জরিপ যেই ইঙ্গিত দিয়াছিল, তাহা লইয়া ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও তাহার এনডিএ জোটের বাহিরে ভারতের সকল রাজনীতিকের সংশয় ছিল ষোলো আনা। বিরোধীরা বলিয়াছিলেন যে, ওই বুথ ফেরত জরিপ আসলে বিজেপির কারসাজি। ২৩ মে চূড়ান্ত গণনায় বাহির হইয়া যাইবে আসল সত্য। তবে লোকসভা নির্বাচনটির বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্যারিশমায় ২০১৪ সালের মতোই নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করিয়াছে বিজেপির এনডিএ জোট। ইতোপূর্বে, গত ১৯ মে সপ্তম তথা শেষ পর্বের লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির ইভিএম ইঞ্জিয়ারিং বা বদলের কথা কথায়-কথায় উচ্চারণ করিয়াছেন অনেক রাজনীতিক। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তথা ইভিএম-এর গণনার পাশাপাশি সকল ভিভিপ্যাডের স্লিপ গণনার দাবিও তোলা হইয়াছিল। যদিও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সেই দাবি বাতিল করিয়া দেন।

ভারতীয় নির্বাচন কমিশন ৩৮ দিন ধরিয়া সাত দফায় যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করিয়াছে, তাহাকে বলা যাইতে পারে এই বিশ্বের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক মহাযজ্ঞ। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, প্রায় একশত পঁয়ত্রিশ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে এমন অনেক দুর্গম অঞ্চল রহিয়াছে যেইখানে ভোট গ্রহণ করাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। এমন কিছু পাবর্ত্য অঞ্চল রহিয়াছে যেইখানে ইভিএম, অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্লিপিং ব্যাগ ঝুলাইয়া ট্রেকিং করিয়া দুর্গম কেন্দ্রে পৌঁছাইতে হয় ভোটকর্মীদের। রহিয়াছে খামখেয়ালি আবহাওয়া। আবার এমন অনেক ভোটকেন্দ্র রহিয়াছে যেইখানে ভোটার সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন; কিন্তু ৯০ কোটি ভোটারের এই দেশটির নির্বাচন কমিশন গণতান্ত্রিক অধিকার বজায় রাখিতে একজন ভোটারের জন্য হইলেও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়া ঘোড়ায় করিয়া নির্বাচনী সরঞ্জামসমেত সকল কিছুর ব্যবস্থা সম্পন্ন করিয়া থাকে। তাহাদের গণতান্ত্রিক নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতা বিশ্বের জন্য দারুণ এক দৃষ্টান্ত।

আবার একই সঙ্গে, ভোটের সময় সহিংসতা এবং বিভিন্ন ধরনের রাজনীতিকের অমার্জিত মন্তব্য, কাদা ছোড়াছুড়ি, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ— কোনো কিছুরই কমতি নাই ভারতের নির্বাচন জুড়িয়া; কিন্তু তাহার পরও সেইখানে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা অভাবিত পর্যায়ে। দেশটির ১,৮৪১টি রাজনৈতিক দলের আট সহস্রাধিক প্রার্থী এইবারের লোকসভা নির্বাচনে অংশ লইয়াছেন, যাহাদের মধ্যে নারীপ্রার্থীর সংখ্যা ৭২০ এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীও রহিয়াছেন ৪ জন। যাহারা পরাজয় বরণ করেন, তাহারা মানিয়া নেন ব্যর্থতার কণ্টকমালা। যাহারা বিজয়ী হন, তাহারা অভিনন্দন বার্তা পাইয়া থাকেন প্রতিন্দ্বন্দ্বী পরাজিত প্রার্থী বা দলের নিকট হইতেও। এমনই এক অপূর্ব নির্বাচনী সংস্কৃতি ভারতে গড়িয়া উঠিয়াছে। বৃহত্তর গণতান্ত্রিক শক্তি হিসাবে ভারতের এই নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিবেশি দেশসমূহের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এইবারের লোকসভা নির্বাচনে সমাজের অতি সাধারণ পর্যায় হইতে উঠিয়া আসিয়া বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি যেইভাবে দ্বিতীয়বারের মতো ভারত জয় করিলেন তাহা নিঃসন্দেহে চমত্কার একটি দৃষ্টান্ত। নির্বাচনী ফলাফলের সুখবর আসিতেই নরেন্দ্র মোদি টুইট করিয়া জানাইয়াছেন—সবার সঙ্গে, সবার বিকাশ এবং সবার বিশ্বাস মিলিয়াই বিজয়ী ভারত।

বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জোট এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করিতেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.