এবার অরুণাচল প্রদেশের ভিতর রাতারাতি তিনটি গ্রাম গড়ল চিন! নিঃশব্দে বাড়ছে আগ্রাসন

লাদাখের পর এবার কি অরুণাচল লক্ষ্য চিনের? সেনা সূত্রের খবর, সম্প্রতি চলতে থাকা ভারত-চিন দ্বৈরথের মধ্যেই এবার অরুণাচল প্রদেশে তিন-তিনটি গ্রাম স্থাপন করে ফেলেছে চিন। জানা গেছে, বুমলা পাস থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বের ভিতরেই ঘটেছে এই ঘটনা। ভারত, চিন এবং ভুটানের সীমান্তের কাছেই অবস্থিত বুমলা পাস।

ভারত-চিনের সীমান্ত সমস্যা নতুন নয়। বহু বছর ধরেই ভারতের নানা এলাকা নিজের বলে দাবি করেছে বেজিং। কখনও লাদাখ, কখনও উত্তরাখণ্ড, কখনও অরুণাচল। এখন সেই আগ্রাসী মানসিকতাই আরও বেশি তীব্র। কখনও সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দিচ্ছে চিন, কখনও বা গ্রাম গড়ে ফেলছে সকলের অজান্তে।

ভারতের কৌশলগত বিশেষজ্ঞ এবং চায়না ওয়াচার ডক্টর ব্রহ্ম চেলানি বলেন, “হ্যান চাইনিজ গোষ্ঠীর মানুষ এবং তিব্বতীদের নিয়ে এসে রাতারাতি গ্রাম গড়ে ফেলছে চিন। এই স্ট্র্যাটেজিতেই সীমান্তে নিজেদের শক্তি বাড়াচ্ছে তারা।”

তবে এই গ্রাম গড়ার কৌশল চিনের নতুন নয়। দিন কয়েক আগেই ভুটান সীমান্ত থেকে দু’কিলোমিটার ভেতরে আন্ত একটা জনপদ করে তুলেছিল চিন। জানা গেছিল, ছোট্ট একটা গ্রাম যেখানে নাকি বসতিও গড়ে তুলেছে লোকজন। নতুন উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ে এমনটাই। গ্রাম শুধু নয় তার লাগোয়া রাস্তাও তৈরি করছে চিন। মাস কয়েক আগে ডোকলাম মালভূমির যে জায়গা নিয়ে অশান্তি বেঁধেছিল ভারত-চিনের, নতুন গ্রাম তৈরি হয় তার কিছু দূরেই। উপগ্রহ চিত্র জানান দিয়েছে, চিন ও ভারতীয় বাহিনী যেখানে ৭৩ দিন মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল তার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বেই রয়েছে ওই গ্রাম।

ভারতের সেনা সূত্র জানাচ্ছে, এ বছরের গোড়ার দিকে গালওয়ানে সংঘাতের আগে থেকেই ডোকলাম নজরে ছিল চিনের বাহিনীর। চিন-ভুটান সীমান্তের মধ্য ও পশ্চিম সেক্টরে বহুদিন ধরেই তৎপর লাল ফৌজ। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভুটানকে চাপে রাখতেই চিনের এই কৌশল।

উপগ্রহ চিত্র আরও দেখিয়েছে, ডোকলামের কাছে টানেল তৈরি করছে চিনের বাহিনী। ডোকলাম সীমান্তে যে রাস্তা তৈরি নিয়ে বিতর্কের শুরু হয়েছিল, সেই রাস্তা লাগোয়াই টানেল বানাচ্ছে চিন। মেরুগ লা-র কাছে অন্তত ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য সেই টানেলের। শীতে সেনাদের আশ্রয় নেওয়ার জন্যই ওই টানেল তৈরি হচ্ছে বলে অনুমান।

বস্তুত, গালওয়ানের সংঘর্ষের পরে সিকিম, অরুণাচলে চিনা বাহিনীর তৎপরতা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। হিমাচলের কাউরিস পাসের কাছে চুরুপ গ্রাম ঘেঁষে রাস্তা তৈরি করছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। তুনজুম লা-র কাছে নতুন নির্মাণ হচ্ছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ডেমচক থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরে শিকুয়ানহিতে চিনা যুদ্ধবিমানের ওঠানামা লক্ষ্য করা গেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণেরাখা থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে চাংমুতে কমিউনিকেশন টাওয়ার বানাচ্ছে চিনা বাহিনী।

অরুণাচল সীমান্ত বরাবর চার জায়গায় সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করতেও আগেও দেখা গিয়েছিল চিনের বাহিনীকে।

এছাড়া সপ্তাহ দুয়েক আগেই চিনা প্রেসিডেন্ট নির্দেশ দেন, দ্রুত কাজ শেষ হোক অরুণাচল প্রদেশ সীমান্ত লাগোয়া রেল লাইনের। তিনি জানান, কৌশলগত দিক থেকে এই রেলপথ চিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। তাঁর এ নির্দেশও অত্যন্ত সুপরিকল্পিত বলেই মনে করছেন সকলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.