মধ্যরাতে স্বপ্নভঙ্গ: মাথা নীচু, গলা ধরে এলো ভারতের রকেট ম্যানের

সব তো ঠিকই ছিল। সকাল থেকে দেশ জুড়ে উত্তেজনা। হয়ত তাঁর ঘুম হয়নি কয়েকটা রাত। শুক্রবার সকাল থেকেই তাঁকে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। পরনে সাদা শার্ট। সাদামাটা চেহারার ভদ্রলোক কিন্তু তখনই বলেছিলেন, “15 minutes of terror” অর্থাৎ আতঙ্কের ১৫ মিনিটের সাক্ষী থাকতে হবে গোটা দেশকে। কিন্তু সেই আতঙ্কের কয়েকটা মিনিট যে এভাবে এক ভয়ঙ্কর সত্যির চেহারা নেবে, তা বোধহয় বিশ্বাস করতে পারেননি ভারতের ‘রকেট ম্যান’ তথা ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিবান।

ভারতের মহাকাশ গবেষণায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে দক্ষিণের এক কৃষক পরিবারের সন্তান এই কে সিবানের। যেদিন মঙ্গলের মাটি ছুঁল ভারত। সেদিনও তাঁর মুখ জুড়ে হাসি। তখনও চেয়ারম্যান ছিলেন না তিনি। তবে মঙ্গল অভিযানে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে ১০৪টি স্যাটেলাইট লঞ্চ করে বিশ্বের কাছে নজির গড়েছিল ভারত। সেই অভিযানও তাঁর নেতৃত্বেই। তিনিই ঠিক করেছিলেন যে কীভাবে, কোথায় কক্ষপথে স্থাপন করা হবে স্যাটেলাইটগুলো।

অনেকেই জানেন না, যে ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনে ভর করে ভারত আজ মহাকাশ গবেষণার নতুন দিক খুলে দিয়েছে, সেই ইঞ্জিনও এনারই মস্তিষ্কপ্রসূত। এত সাফল্য যাঁর কাঁধে তিনি হয়ত একটা ব্যর্থতায় নিস্পৃহ থাকতে পারতেন। কিন্তু ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রযান যেন তাঁর সন্তানসম। তাঁরই তত্ত্বাবধানে দিন-রাত গবেষণা করেছেন একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের মুখে হাসি দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরেই আটে গেল ১৩০ কোটির বুক ভরা আশা। স্বপ্নভঙ্গের ছাপ তাই ভারতের রকেট ম্যানের গলাতেও।

মধ্যরাতে ঘুম উড়িয়ে ভারতবাসী তখন তাঁর দিকে তাকিয়ে। লাইভ টেলিকাস্টে কয়েক মিনিটের নৈশব্দ। অবশেষে খবরটা তাঁকেই শোনাতে হল। সদাহাস্যময় লোকটার মাথা নীচু। স্পষ্ট গলায় বলতে শুরু করলেন, ‘ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দিকে নামতে শুরু করেছিল পূর্ব পরিকল্পনা মতই। ২.১ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে।’ বললেন, ‘এরপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।’ ততক্ষণে তাঁর গলা ধরে এসেছে। পুরো কথাটা আবার রিপিট করলেন। বললেন, সব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হয়ত বুক ফাটল সারা দেশের। হয়ত স্বপ্ন পূরণ হল না। তবু চন্দ্রযান এতটা পথ যেভাবে সাফল্যের সঙ্গে পার করেছে, যেভাবে শেষ মুহূর্তে একটা মিরাকলের জন্য প্রার্থনা করল গোটা দেশ। তাতেই তো জিতে গেল ইসরো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.