বাজারে নগদ সংকট, মোকাবিলায় ৭০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে দিচ্ছে সরকার

নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার বৃহস্পতিবার কোনওরকম রাখঢাক না করে বলেছিলেন, বাজারে তীব্র নগদের অভাব তৈরি হয়েছে। গত সত্তর বছরে এতো বড় সংকটে পড়েনি সরকার। শিল্পমহল থেকে শুরু করে শেয়ার বাজার, তাঁর এই কথাতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল শুক্রবার সকাল থেকে।

অবশেষে আতঙ্ক কাটাতে দ্রুত ওষুধ নিয়ে এলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। যাকে বুস্টার ডোজ বললেও অতিশয়োক্তি হবে না। বাজারে নগদ সমস্যা কাটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মূলধন খাতে অবিলম্বে সত্তর হাজার কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। এ দিন বিকেলে নয়াদিল্লির শাস্ত্রী ভবনে জরুরি ভিত্তিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে ওই ঘোষণা করেন তিনি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই সাংবাদিক বৈঠক যেন একটা ছোটখাটো বাজেট ঘোষণার মতোই।

এই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার আশা করছে এই টাকা পেয়ে ব্যাঙ্কগুলি আরও বেশি করে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তার ফলে সামগ্রিক ভাবে বাজারে ৫ লক্ষ কোটি টাকার মতো নগদের জোগান বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

শুধু এ টুকু ঘোষণা করে এ দিন থেমে থাকেননি নির্মলা। কারণ, সংকট শুধু নগদের সমস্যাতেই সীমিত নয়। বরং তা আরও গভীর। মন্দার মেঘ ক্রমশই গ্রাস করছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। শিল্পে উৎপাদন কমেছে। গাড়ি বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। শিল্প ও ব্যবসা বাঁচাতে লক্ষ লক্ষ কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। গড় জাতীয় উৎপাদনও কমে গিয়েছে প্রত্যাশার তুলনায়। ফলে একটা ওষুদে এই বহুমুখী সমস্যার যে নিরাময় সম্ভব নয় তা সকলের কাছেই পরিষ্কার ছিল।

বড় কথা হল, নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান এও পরিষ্কার জানিয়েছেন যে, বাজার এতটাই আন্দোলিত যে পারস্পরিক আস্থাটাই টলে গিয়েছে। তাঁর কথায়, কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না। এমন নয় এটা শুধু সরকার ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। প্রাইভেট সেক্টরেও একে অপরকে কোনও রকম ধার দিতে চাইছে না।

নির্মলাও এ দিন সরকারের উপর শিল্প মহলের আস্থা ফেরানোর উপরেই বেশি জোর দিতে চেয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্রে মোদী সরকার শিল্পের জন্য সরকারি লাল ফিতের বাধা কমাতে সবরকম করতে প্রস্তুত। সেই কারণে বাজেটে ঘোষণা করা সিদ্ধান্তও ফেরত নিয়েছেন নির্মলা। সরকার সুপার রিচ তথা অতিশয় ধনীদের জন্য বাজেটে যে সারচার্জ ঘোষণা করেছিল, তা বিদেশি লগ্নির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সেই কারণে তা প্রত্যাহার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

একই সঙ্গে নির্মলা জানান, কর সন্ত্রাস বন্ধ করতে নতুন ব্যবস্থা শুরু করতে চলেছে সরকার। বিজয়া দশমীর দিন থেকে তা চালু হবে। এ বার থেকে কোনও আয়কর অফিসার আর অতি উদ্যোগী হয়ে কাউকে নোটিস ধরাতে পারবেন না। সব নোটিস হবে কম্পিউটার জেনারেটেড, তাতে ডকুমেন্ট আইডেনটিফিকেশন নম্বর থাকবে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীকে হেনস্থা করার সুযোগ থাকবে না। এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরই পাশাপাশি জিএসটি রিফান্ডের প্রক্রিয়া সহজ করার আশ্বাস দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, পণ্য পরিষেবা কর তথা জিএসটি-র হার কমানোর ব্যাপারে সরকার গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে। জিএসটি আদায়ের প্রক্রিয়া আরও সহজ করা যায় কিনা সেই চেষ্টাও চলছে। এ ব্যাপারে রবিবার সকালে জিএসটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।

এ ছাড়াও গাড়ি শিল্পের সংকট কাটানোর জন্য এ দিন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সেই সঙ্গে গৃহ, গাড়ি ও ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার কথা জানান।

শেষমেশ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এও জানান, সরকার এ টুকু করেই থেমে থাকবে না। বলা যেতে পারে এটা হল প্রথম কিস্তি। শিগগির দ্বিতীয় ঘোষণা করবে কেন্দ্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন বিদেশ সফরে রয়েছেন। মনে করা হচ্ছে তিনি দেশে ফিরলেই পরবর্তী ঘোষণা করবে সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.