শ্যমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এমন একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব যিনি জওহরলাল নেহেরুর বিকল্প হয়ে উঠতে পেরেছিলেন দিল্লির রাজনীতিতে। শ্যমাপ্রসাদ ব্যতীত আরও একজন ছিলেন, তিনি নেতাজি। এই দুই বাঙালি ব্যাক্তিত্ব ছাড়া বাংলার অন্য কোনও রাজনীতিবিদ নেহেরুর বিকল্প হয়ে উঠতে পারেননি। অনেকেই বড় রাজনীতিবিদ হিসেবে দিল্লিতে উঠে এসেছেন, কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের মন্ত্রী হয়েছেন, সরকারে দু’নম্বর স্থান পেয়েছেন, এমনকি রাষ্ট্রপতিও হয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী কালে শ্যমাপ্রসাদের সমকক্ষ কোনও বাঙালি রাজনীতিবিদ হতে পারেননি। অথচ শ্যমাপ্রসাদের রাজনৈতিক জীবনটি ছিল খুব অল্প সময়ের। ওই সামান্য সময়ের জীবনেই শ্যমাপ্রসাদ প্রমান করেছিলেন তিনি নিছক রাজনীতিবিদ নন। অনেকেই অনেক ভালো রাজনীতিবিদ হতে পারেন, কিন্তু শ্যমাপ্রসাদ তাঁদের উচ্চতাকে ছাপিয়ে গিয়ে হয়ে উঠেছিলেন রাষ্ট্রনায়ক ।
শ্যমাপ্রসাদের নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন যে দুটি কারণে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে, তা হল, পূর্ববঙ্গের নির্যাতিত হিন্দু বাঙালিদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো এবং কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদের বীজ উপড়ে ফেলার প্রয়াস। ওই কাশ্মীরেই তিনি আত্মবলিদান দিয়েছিলেন। এমন একজন ব্যক্তিত্বকে স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করা হয়নি। অথচ বাঙালির আইকন বলতে রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্রের পাশে শ্যমাপ্রসাদের নামটি উঠে আসে। পশ্চিমবঙ্গের জনকও তিনি।
কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, দলমত নির্বিশেষে বাঙালি এই আওয়াজ তুলতে পারল না, শ্যমাপ্রসাদকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়া হোক। শ্যমাপ্রসাদকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার দাবিটি আমি বিভিন্ন সভা সমিতিতে করেছিলাম। কিন্তু আজ বলছি, এই দাবি আমি ফিরিয়ে নিচ্ছি। ফিরিয়ে নিচ্ছি কারণ, যত্রতত্র এই রত্ন অবাধে বিলি করা হচ্ছে। যাঁরা ভারতরত্ন পেয়েছেন বা পাবেন আমি তাঁদের খাটো না করেই বলছি, তাঁরা যে উচ্চতায়, শ্যমাপ্রসাদ তাঁদের থেকে অনেক উপরে অবস্থান করেছেন। ভারতরত্ন সম্মানটি যত্রতত্র বেলানোর ফলে সম্মানটির গরিমাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে শ্যমাপ্রসাদের জন্য এই সম্মানটি আর যথেষ্ট নয়। কোনও সরকারি সম্মানের প্রয়োজন শ্যমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বের নেই। শ্যমাপ্রসাদ আমাদের হৃদয়ের রত্ন হয়েই থাকুন। চিরজীবী ও চির ভাস্বর হয়েই থাকুন। সেই সঙ্গে একটি দাবি দল-মত নির্বিশেষে প্রতিটি বাঙালির কাছে করার আবেদন জানাই যে, শ্যমাপ্রসাদের মৃত্যু রহস্যের যথাযথ তদন্ত করতে হবে। এই দাবিতে সবাই সরব হোন। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার বাইরে বেরিয়ে শ্যমাপ্রসাদের মৃত্যু রহস্যের তদন্ত দাবি করুন।