প্রথম আর্যভট্টের বৈপ্লবিক যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা

প্রথম আর্যভট্ট (জন্ম ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন একজন, যুক্তিবাদী তেজস্বী প্রতিভাধর বিজ্ঞানী। তিনি ছিলেন পঞ্চম শতাব্দীর ভাববাদী ধ্যানধারণার এক প্রতিবাদী চরিত্র। তিনি সেই সময়ের সমস্ত ভাববাদী ধ্যান-ধারণা, ভাবনা-চিন্তা পাল্টে দিয়ে। তাদের সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা সাধন। করেছিলেন। তিনি পৃথিবীর গতি ও আকার, গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ের গতানুগতিক, অযৌক্তিক ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সঠিক ও যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন; আবার ভাববাদী দার্শনিকদের পঞ্চভূত-তত্ত্বকে অগ্রাহ্য করে বস্তুবাদী চার্বাকদের মতো চতুর্ভূর্ত-তত্ত্বে একনিষ্ঠ ছিলেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের বড়ো বড়ো সংখ্যালগুলিকে বর্ণমালার সাহায্যে সংক্ষেপে প্রকাশের জন্য তিনি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এছাড়াও পাই-এর মান নির্ণয়, সময় সম্পর্কে চিন্তাধারা প্রভৃতি বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বিজ্ঞানভিত্তিক। তিনি ছিলেন একজন বিশুদ্ধ গাণিতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। প্রথম আর্যভটের দুখানি গ্রান্থ ‘আর্যভট্টীয়’ও ‘আর্যভট্ট-সিদ্ধান্ত’ এর মধ্যে প্রাপ্ত ‘আর্যভট্টীয়’ গ্রন্থটি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সংকলন এবং সম্পূর্ণভাবেই গ্রন্থকারের মৌলিক চিন্তা-প্রসূত। গীতিকা পাদের প্রথম ও শেষ শ্লোক থেকে দেখা যায় গ্রন্থকারের আরাধ্য দেবতা পরম ব্রহ্ম যিনি এক ও অনেক রূপ বিশিষ্ট এবং পরম ব্রহ্মের সন্ধান পাওয়ার অর্থই হলো সত্যের সন্ধান পাওয়া। আর্যভট্ট-গবেষক ড. পরমেশ্বর ঝা মনে করেন— এক্ষেত্রে গ্রন্থকার নিজেকে বেদান্তধর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাতিম তলায় ব্রহ্মের উপাসনা করতেন। ভারতীয় দর্শন অনুসারে এ হলো পরম ব্রহ্মের অর্থাৎ পরম সত্যের সন্ধান। আর্যভট্ট বিশেষ কোনো ধর্মাবলম্বী ছিলেন না। পরবর্তী গণিতজ্ঞদের মধ্যে ব্রহ্মগুপ্ত, প্রথম ভাস্কর, লল্লাচার্য, শ্রীধরাচার্য শৈব ছিলেন, মহাবীরাচার্য জৈন ও ভাস্করাচার্য সূর্যের উপাসক ছিলেন কিন্তু আর্যভট্ট বিশেষ কোনো দেবতার উপাসনা করে পরম ব্রহ্মের অর্থাৎ পরম জ্ঞানের প্রার্থনা করে গেছেন— এ মত অধ্যাপক কে.ভি. শর্মা এবং অধ্যাপক রাধাচরণ গুপ্তা প্রমুখ গণিত ইতিহাসবিদদের। এগুলি আর্যভটের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির এক বিশেষ দিক।
প্রথম আর্যভট্ট ছিলেন বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞানী যিনি ‘পৃথিবী স্থির’— এই ভাববাদী বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করে ভূ-ভ্ৰমণবাদের পক্ষে তার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনিই প্রথম পৃথিবীর আহ্নিক গতির ধারণা দিলেন ‘প্রাণেনৈতি কলাং ভূঃ (গীতিকাপাদ, ৪) অর্থাৎ পৃথিবী এক প্রাণ বা চার নক্ষত্র সেকেন্ডে নিজ অক্ষের চারদিকে এক কলা বা এক মিনিট কোণে আবর্তিত হয়। তিনি আরও জানান— ‘এক চতুর্যুগে বা ৪৩,২০,০০০ সৌরবর্ষে পৃথিবী ১,৫৮,২২,৩৭৫০০ বার আবর্তিত হয়’যা থেকে পৃথিবীর আবর্তনকাল বা দিনের পরিমাণ দাঁড়ায় 23056m4.1 যা আধুনিক মানের সঙ্গে (23h564.095) সঙ্গতিপূর্ণ। এছাড়া ভূ-ভ্রমণের দৃষ্টান্ত প্রসঙ্গে তিনি পূর্বদিকে গতিশীল নৌকাতে অবস্থিত কোনো ব্যক্তির নদীর উভয় পাশের স্থির বা অচল গাছ, পর্বত প্রভৃতিকে পশ্চিমগামী দেখার কথা উল্লেখ করে বলেন যে, অনুরূপভাবে লঙ্কাতে অচল নক্ষত্রগণকে সমবেগে পশ্চিমদিকে সরে সরে যেতে দেখা যায়। নিরক্ষরেখার কাছাকাছি শ্রীলঙ্কা অবস্থিত বলেই শ্রীলঙ্কার সাপেক্ষে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে বলে সুকুমার রঞ্জন দাস, অরূপ রতন ভট্টাচার্য প্রমুখ পণ্ডিত মনে করেন। কিন্তু যে সত্য আর্যভট্ট সাহসের সঙ্গে লিখতে পারলেন তাঁর গ্রন্থে, বরাহমিহির (৫০০ খ্রিঃ), ব্রহ্মগুপ্ত (৫৯৮ খ্রিঃ) এবং লল্লাচার্য (ষষ্ঠ শতাব্দী) প্রমুখ গণিতজ্ঞ সেকথা মেনে নিতে সাহস পাননি। বরং আর্যভট্টের প্রখর বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা না করে, গতানুগতিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য তারা তীব্রভাবে তার সমালোচনা করেন। বরাহমিহির বিরোধিতা করে বলেছেন— “পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে গতিশীল হলে পতাকা সর্বদা পশ্চিম দিকেই উড্ডীন থাকত এবং পাখিরা একবার আকাশে উড়তে আরম্ভ করলে আর বাসায় ফিরে আসতে পারত না”। লল্লাচার্য ‘বিহঙ্গের কুলায় প্রাপ্তি’ উল্লেখ করে প্রশ্ন তোলেন—পৃথিবী গতিশীল হলে আকাশ অভিমুখে প্রক্ষিপ্ত বাণ সর্বদা পশ্চিম দিকে পতিত হয় না কেন বা মেঘ কেবলমাত্র পশ্চিমদিকে ভেসে যায় না কেন? ব্রহ্মগুপ্ত প্রশ্ন তোলেন— ‘প্রাণেনৈতি কলাং ভূঃ যদি হবে তবে কোথা থেকে এই আবর্তন শুরু এবং কোন পথেই বা এই আবর্তন? যদি একই স্থানে এই আবর্তন ঘটে তবে লম্বা বস্তুগুলি পড়ে যায় না কেন?”অবশ্য ভূ-ভ্ৰমণবাদকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানান পৃথুদক স্বামিন (৮৬০ খ্রিঃ)। ব্রাহ্মস্ফুট সিদ্ধান্তের ভাষ্য লিখতে গিয়ে তিনি জানান—“পৃথিবীর আবর্তনের জন্য গ্রহ-ক্ষত্রদের উদয়াস্ত সম্পাদিত হয় এবং এই তত্ত্বের বিরোধিতা লোকমতের বিরুদ্ধে যেতে না পারার জন্যই একে সমর্থন জানাননি”। জনরোষের ভয়ে ও গতানুগতিক বিশ্বাসহেতু ভূ-ভ্ৰমণবাদের বিরোধী টীকাকারগণ ‘প্রাণেনৈতি কলাং ভূ’-এর পরিবর্তে লিখলেন ‘প্রাণেনৈতি কলাং ভ’অর্থাৎ ভ বা গোলীয় জ্যোতিষ্ক গতিশীল হলেও পৃথিবী নিশ্চলাই থেকে গেল আরও এক হাজার বছর। আর্যভট্টের মতবাদের প্রতিধ্বনি করায় হাজার বছর পরে ইউরোপে কোপারনিকাস ব্রুনো, গ্যালিলিওকে অশেষ দুর্দশায় পড়তে হয়েছিল। এমনকী বিজ্ঞান চর্চাতেও বাধা এসেছিল। কিন্তু ভারতবর্ষে সেরকম কিছু হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে ভারতের বিজ্ঞান ইতিহাসের প্রশংসনীয় দিক বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানী রমাতোষ সরকার মনে করেন।
সূর্যের চারদিকে গ্রহগুলি আপন কক্ষপথে বিভিন্ন বেগে আবর্তন করে। গ্রহগতির এই বৈশিষ্ট্য ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল না। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে উৎকেন্দ্রীয় বৃত্ত (eccentric circle) এবং নীচোচ্চ বৃত্তের (epicycle) সাহায্যে গ্রহগতির আপাত বৈষম্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার সর্বপ্রথম চেষ্টা করেন আর্যভট্ট। গণিত ইতিহাসবিদ প্রবোধ চন্দ্র সেনগুপ্ত তাঁকে Father of Indian Epicyclic Astronomy আখ্যা দিয়েছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আর্যভটের একটি সাহসী ও যুক্তিবাদী পদক্ষেপ হলো কেন্দ্র শোধন (eqn of Centre) স্কুটকর্ণের প্রয়োগ। যুতিশোধনের (eqn of conjunction) ক্ষেত্রে কর্ণের ব্যবহার উপকেন্দ্রীয় ও নীচোচ্চ বৃত্তের তত্ত্বের প্রবক্তাদের দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছে বলে টি.এস. কুম্পন্নস্বামী শাস্ত্রী উল্লেখ করেন এবং কেন্দ্ৰশোধনের ক্ষেত্রে ফুটকর্ণের ব্যবহার যুক্তিসঙ্গত ও সঠিক বলে দাবি করেন।
পৃথিবীর আকার কমলালেবুর মতো গোল—একথা বর্তমানকালে সর্বজনবিদিত। কিন্তু এই সত্যের আবিষ্কার হতে বিজ্ঞানের ইতিহাসে হাজার হাজার বছর সময় লেগেছে। পূর্বে মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবী সমতল। কিন্তু আর্যভট্ট একথা স্বীকার করেন না বলেই লিখলেন—‘মৃঙ্খল শিখি বায়ুময়ো ভূগোল সর্বতো বৃত্ত’ (গোলপাদ, ৬)। পৃথিবীর চারদিকেই গোল অর্থাৎ পৃথিবী একটি গোলক। এ কারণে পৃথিবীর সর্বত্র একই সময়ে সূর্যোদয় হয় না। একথা বলে তার সপক্ষে তিনি আরও তথ্য দেন- ‘যখন শ্রীলঙ্কাতে সূর্যোদয় হয় সে সময় সিদ্ধপুরে সূর্যাস্ত এবং একই সময়ে জাভাতে দুপুর ও রোমকে মধ্যরাত্রি হয়। ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে শ্রীলঙ্কা, সিদ্ধপুর, জাভা ও রোমক এই চার নগরী বিষুবরেখায় অবস্থিত। শ্রীলঙ্কার ৯০’ পশ্চিমে রোমক ও ৯০° পূর্বে জাভা এবং শ্রীলঙ্কার ঠিক বিপরীতে (১৮০° ব্যবধানে) সিদ্ধপুর অবস্থিত। এরূপ বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাভাবনা সে সময় আর্যভট্ট করেছিলেন।
প্রাচীন ভারতে চার্বাক নামে এক আপোশহীন বস্তুবাদী সম্প্রদায়ের সন্ধান পাওয়া যায়। এঁরা মাটি, জল, আগুন ও বায়ু এই চারপ্রকার ভূতবস্তুর অস্তিত্ব স্বীকার করতেন। অধিকাংশ ভারতীয় জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ তাদের মূলগ্রন্থে ও ভাষ্যে পঞ্চভূতে আস্থা স্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে একমাত্র বিস্ময়কর ব্যতিক্রম হলেন মহান আর্যভট্ট। পঞ্চভূতের ব্যোম বা আকাশের অস্তিত্ব স্বীকার না করে তিনি লিখলেন মৃঙ্খল শিখি বায়ুময়ো ভূগোল”। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে প্রবল ব্রাহ্মণ্যবাদের অভ্যুত্থানের যুগে সর্বত্র ভাববাদের প্রভাব দেখা যায়। এ যুগে ভাববাদের বিরুদ্ধে কীভাবে আর্যভট্ট বস্তুবাদী চার্বাকদের চতুর্ভুজ তত্ত্বের প্রচার করলেন তা খুবই কৌতুহলের সৃষ্টি করে। আর্যভট্টীয়ের ভাষ্যকার প্রথম ভাস্কর মৃঙ্খল শিখি বায়ুময়ো ভূগোল’সম্পর্কে লিখেছেন প্রত্যক্ষ যৎ উপলভ্যতে অর্থাৎ যা প্রত্যক্ষের দ্বারা উপলব্ধ হয়। এই ব্যাখ্যা থেকে বিদগ্ধ গবেষক শ্রীযুক্ত নন্দলাল মাইতি মনে করেন আর্যভট্ট প্রত্যক্ষ প্রমাণে বিশ্বাসী ছিলেন, অনুমানে তার বিশ্বাস ছিল না। তিনি প্রত্যক্ষ প্রমাণের দ্বারা ফলাফল উপলব্ধি করতেন। এ সকল ছিল আর্যভটের বস্তুবাদী চিন্তাভাবনা। ভারতীয় পরম্পরা শ্রুতি, সংহিতা, স্মৃতি ও পুরাণ অনুসারে রাহু দৈত্যের কারণে গ্রহণ হয়— একথা অধিকাংশ মানুষ স্বীকার করতেন। কিন্তু আর্যভট্ট ছিলেন মূলত পর্যবেক্ষক। পর্যবেক্ষণের দ্বারা তিনি গ্রহণের প্রকৃত বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দিলেন—“চান্দ্রমাসের শেষে অর্থাৎ অমাবস্যায় চাঁদের ছায়া পৃথিবীর উপর পড়লে সূর্যগ্রহণ হয় এবং চান্দ্রপক্ষের শেষে অর্থাৎ পূর্ণিমায় পৃথিবীর ছায়ার ভিতর চাঁদ প্রবেশ করলে চন্দ্রগ্রহণ হয়। বিখ্যাত ভারত গবেষক অলবিরুনি তার ইন্ডিয়া গ্রন্থে বলেছেন— ব্রহ্মগুপ্ত গ্রহণের সঠিক ব্যাখ্যা জেনেও সত্য থেকে পিছিয়ে গেলেন, কারণ যেহেতু তিনি পুরাণে পড়েছেন যে, গ্রহণের জন্য সূর্য-চন্দ্রকে গ্রাস করতে অবশ্য একটি মুণ্ডের (রাহুর) দরকার, তাই তিনি শেষ পর্যন্ত। পৌরাণিক মিথ্যা ধারণাকেই স্বীকার করলেন। আর্যভট্টের পণ্ডিতদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই আর্যভট্টের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার দেড় হাজার বছর পরেও ভারতবর্ষের মানুষ গ্রহণ অবলোকন করতে সাহস পান না, গ্রহণের সময় খাবারে তুলসীপাতা দিয়ে রাখেন।
পৌরাণিক ধারণা অনুযায়ী একটি মহাযুগকে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চার যুগে ভাগ করা হয়েছে ও এদের সময়কালের অনুপাত 4: 3:2:1। আর্যভট্ট এই ধারণাকে অসার আখ্যা দিয়ে বলেন যে, ওই চার যুগের সময়কালের পরিমাণ সমান। তার মতে সময় হলো ‘অনাদি অনন্ত’।
জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত অর্থাৎ পাই-এর মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনি বলেন—কোনো বৃত্তের ব্যাস 20,000 হলে তার পরিধির আসন্ন মান হবে 62832’।
অর্থাৎ পাই = 3.1416
…যা আধুনিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি এই মানকে আসন্ন বলেছেন যা থেকে এর অমূলদ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
আর্যভটের একটি সাহসী পদক্ষেপ হলো বর্ণমালার সাহায্যে বড়ো বড়ো সংখ্যার প্রকাশ। তিনি এক চতুর্যুগের মান দিয়েছেন ‘খাদ্য’ বছর অর্থাৎ (খ + য) x উ + (ঘ x ঋ) = (2+30) x 104 + 4 x 10 = 43,20,000 বছর। ওই সময়ে পৃথিবীর আবর্তন তিনি দিয়েছেন ‘ঙিশিবুশৃঙ্খ’যার মান (ঙ xই) (শ xই) (x উ) (ণ x) (x খ) x ঋ = 5x 100 + 70 x 100 + 23 x 104 + 15x 108 + (2+80) x 106 = 158,22,37,500। যদিও বর্তমানকালে এগুলি জনপ্রিয়তা লাভ করেনি, তবুও তার পদক্ষেপ যে সাহসী ও যুক্তিসঙ্গত ছিল সেকথা স্বীকার করতেই হয়।
‘কুলপ’ বা শিক্ষক আর্যভট্ট ছিলেন মূলত একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পর্যবেক্ষক। জ্যোতির্বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও সূত্রগুলি তার পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করেই পাওয়া যায়। তিনি প্রত্যক্ষ প্রমাণে বিশ্বাস করতেন। বর্তমানকালের জ্যোতিঃশাস্ত্র (astrology) তাঁর ধারণার মধ্যে কোনোদিনই ছিল না। তিনি ছিলেন এক বিশুদ্ধ গাণিতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী (astronomer)।
বিকাশ কুমার ঘোষাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.