সিএএ বিরোধী আন্দোলন আসলে দেশভাগের চক্রান্ত! দাবি সংঘের প্রচারক অরুণ কুমারের

রক্তিম দাশ,কলকাতা:  সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতাকারীরা আসলে ফের দেশ ভাগের চক্রান্ত করছে এমনটাই মনে করছে রাষ্ট্রীয় স্বংয় সেবক সংঘ। বুধবার কলকাতার সল্টলেকের পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ভারত বিকাশ পরিষদ দ্বারা আয়োজিত ‘বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে ভারতের রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনার বক্তা সংঘের কেন্দ্রীয় প্রচার প্রমুখ এবং জম্মু ও কাশ্মীর স্টাডি সেন্টারের অধিকর্তা অরুণ কুমার তা জানিয়ে দিলেন।
এদিনের আলোচনা সভার মুখ্যবক্তা অরুণ কুমার অভিযোগ করে বলেন,‘ জেএনইউয়ের আন্দোলনের নেপথ্যে দেশকে খন্ড খন্ড করে দেওয়ার চক্রান্তেরই ইঙ্গিত। ‘আইসা’-র মত সংগঠনের এই স্বপ্নে ইন্ধন দিচ্ছে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি। গত ছ’বছর ধরে এই শক্তি দেশে নানা অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘কেবল ভাষণ, ধর্ম একটা রাষ্ট্রের পরিচয় হতে পারে না। আমাদের প্রধান এবং মূল পরিচয় আমরা ভারতবাসী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নির্যাতিত  ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তখন কে প্রতিবাদ করেছিলেন? ১৯৫৬-তে পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র হয়ে গেল। শুরু হল ওদেশের অন্য ধর্মাবলম্বীদের গোলামির জীবন। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনা এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন হয়েছে। নাগরিক আইনের রূপায়ণ তাই আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। ধর্মের বিভেদ না রাখতে চাইলে সীমান্তের বিভাজনের প্রয়োজন কী?’

অরুণ কুমার বলেন, ‘বিদেশি হানাদারদের ইতিহাস কোনও দেশের ইতিহাস হতে পারে না। মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও কাশ্মীর প্রসঙ্গে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নানা দলের সঙ্গে এক সুরে কথা বলেছে কংগ্রেস।’ কাশ্মীরের ব্যাপারে স্বাধীনতা-উত্তর নানা সময়ের ঘটনা, শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকা প্রভৃতির উল্লেখ করে এক দেশ, এক জাতি, এক সংবিধানের বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃঢ় মনোভাবের প্রশংসা করেন সংঘের এই প্রবীণ নেতা।

সিএএ-র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলতে গিয়ে দেশভাগের প্রসঙ্গ টেনে কী পরিস্থিতিতে দেশ ভাগের সিদ্ধান্ত নিতে হল, কীভাবে অসহায়ের মত শরণার্থীরা ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন, কীভাবে অতীতে নানা সময় বিভিন্ন দল এঁদের রাজনীতির পাশা হিসাবে ব্যবহার করেছেন, গত সাত দশকে তার বেশ কিছু উদাহরণ দেন অরুণ কুমার।

এ প্রসঙ্গে ১৯৫০ সালের ৫ নভেম্বর বাবাসাহেব অম্বেদকরের খসরা, জওহরলালের ভূমিকা, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি, সংসদে দুই বাম নেতা ভূপেশ গুপ্ত ও প্রকাশ কারাতের বক্তব্য, ২০০৩-এ সংসদে মনমোহন সিংয়ের প্রস্তাব, ২০১০-এর ২৮ ডিসেম্বর মতুয়াদের সমাবেশে সিপিএম নেতা গৌতম দেবের আশ্বাসের কথা উল্লেখ করেন অরুণ কুমার। তিনি বলেন,‘ভৌগোলিক  বিভাজনের পর যাঁরা নিজেদের এককালের মূল নিবাস ছেড়ে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদের সম্পত্তির মূল্যায়নের দাবি উঠেছিল। কিন্তু তা হয়নি।’

রাম জন্মভূমি প্রসঙ্গে অরুণ কুমার বলেন, ‘আমরা আত্মবিস্মৃত হয়েছি। আমরা কারা ভুলে গিয়েছি। এই ভারতের লক্ষ্য কী ছিল বাস্তবের ভেতর দিয়ে তা আমাদের জানতে হবে। এদেশের সনাতন আদর্শ বসুধৈব কুটুম্বকম— ভোগ নয়, ত্যাগেই জীবন। হিন্দুত্ব আমাদের শিখিয়েছে এক দেশ এক জাতি এক সংস্কৃতি। ভারতে অনেক রাজ্য থাকলেও দেশ একটাই। বিদেশে কোনও দিন উপনিবেশ তৈরি কথা ভাবেনি ভারত। এদেশ থেকে যাঁরা বিদেশে গিয়েছেন তাঁরা বরাবর গিয়েছেন সংস্কৃতির দূত হিসাবে।’

কাশ্মীর, সিএএ, এনআরসি নিয়ে গুলাম নবি আজাদ, পি চিদাম্বরম, অভিষেক মনু সিংভির অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে অরুণ কুমার বলেন, ‘কংগ্রেস কিভাবে বিভিন্ন সময় অসাংবিধানিক পথে হাঁটার চেষ্টা করেছে। রাজনীতির জন্য রাজনীতি নয়। সব মত, সব ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রের বিকাশের জন্য এগোতে হবে আমাদের।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.