পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে হামলা হোক বা বানিহালে গাড়িবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা, অথবা শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ— হামলাকারীদের মধ্যে বারে বারে উঠে এসেছে শিক্ষিত, বিদেশ ফেরত বা অভিজাত বংশের ছেলেদের নাম। এদের বয়সও ২০-৩০ বছরের মধ্যে, কোনও ক্ষেত্রে আরও কম। পুলওয়ামায় ফিদায়েঁ হামলার নেপথ্যে এ বার উঠে এল এমনই এক তরুণের নাম। গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, বানিহালে গাড়িবোমা বিস্ফোরণের অন্যতম চক্রীও ছিল সে।
হিলাল আহমেদ মান্টো। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-এ-ইসলামির স্টুডেট উইং-এর মাথা সে। পঞ্জাবের বাটিন্ডার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি থেকে সোমবারই তাকে পাকড়াও করেছে এনআইএ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি-র ছাত্র হিলাল আহমেদ পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী। শিক্ষকদের অত্যন্ত প্রিয়, মুখচোরা স্বভাবের এই তরুণ যে জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হতে পারে সেটা ভাবতেই পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে হিলালের বন্ধুরাও। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিশেষত পড়ুয়াদের মধ্যে উত্তেজনা, মানসিক চাপের কারণ খোঁজাই ছিল তার গবেষণার মূল বিষয়।
গোয়েন্দাদের দাবি, নিজের গবেষণার বিষয়কেই হাতিয়ার করে কমবয়সীদের মগজধোলাই করাই ছিল হিলালের মূল কাজ। পাশাপাশি, নানা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে হামলার নিপুণ ছক বানানোও ছিল তার পেশা। জামাত-এ-ইসলামি ছাড়াও জামাত-উল-তৈবার সঙ্গেও সরাসরি যোগ ছিল হিলালের।
পুলওয়ামা হামলার ছক কষার পিছনের ছিল হিলালের মাথা। ১৪ ফেব্রুয়ারি আত্মঘাতী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ৪৯ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। তার দু’মাস পরে এপ্রিলে পুলওয়ামার ধাঁচেই ফের গাড়িবোমা বিস্ফোরণ হয় বানিহালের নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয়ের কাছে। জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে জওহর টানেলের কাছে বিস্ফোরণে উড়ে যায় একটি স্যান্ট্রো গাড়ি। প্রথমে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ মনে করেছিল, গাড়ির ভিতরে রাখা সিলিন্ডার ফেটেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। পরে বিস্ফোরণস্থল খতিয়ে দেখে এনআইএ জানায়, গাড়িতে দু’টি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ছাড়াও পেট্রল, জেরি ক্যান, জেলাটিন স্টিক, ইউরিয়া ও সালফারের মতো বিস্ফোরক মজুত ছিল। অতএব পরিকল্পনা মাফিকই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল এবং সেটা এমন ভাবে করা হয়েছিস যাতে সাধারণ দুর্ঘটনা বলেই ভ্রম হয়।
জম্মু-কাশ্মীরের ইনস্পেকটর জেনারেল এমকে সিনহার কথায়, বানিহালের এই গাড়িবোমা বিস্ফোরণে পিছনে ছিল জইশ-ই-মহম্মদ এবং হিজবুল-উল-মুজাহিদিনের হাত। পাকিস্তানের জঙ্গি নেতা মুন্না বিহারির সঙ্গে হামলার ছক কষেছিল উপত্যকার হিজবুল নেতা রিয়াজ নাইকু ও শইফুল্লা। অপারেশনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ছ’জন কলেজ পড়ুয়াকে। তাদের নাম উমর সফি, ওয়াসিম, শোপিয়ানের বাসিন্দা আকিব শাহ, শাহিদ ওয়ানি, ওয়াইস আমিন এবং হিলাল আহমেদ মান্টো। বাকি পাঁচজনকে চালনা করত হিলাল। এই ছ’জনকেই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাদের জেরা করছে গোয়েন্দারা।
জানা গেছে, গাড়িতে বিস্ফোরক ঠাসার দায়িত্বে ছিল উমর সফি এবং আকিব শাহ। এরা হিজবুলের গ্রাউন্ড ওয়ার্কার। উমর শ্রীনগরের একটি কলেজের বিসিএ-র ছাত্র। পড়াশোনায় ভালো। আকিব হিজবুল কম্যান্ডার রয়িস খানের থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। হিলালের সঙ্গে যোগ রয়েছে হিজবুলের।
স্যান্ট্রো গাড়ির চালক ওয়াইস আমিন দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানের হিজবুল জঙ্গি। বিবিএ-র ছাত্র আমিন ঘটনার দিন শেষ মুহূর্তে গাড়ি ছেড়ে পালায়। জ্বলে যাওয়া সাদা রঙের স্যান্ট্রো গাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে একটি নোট উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তা থেকেই পরে আমিনের পরিচয় জানা গিয়েছিল। জেরায় সে স্বীকার করেছে, পুলওয়ামার ধাঁচে হামলার উদ্দেশ্য ছিল তাদের।