”লেখা আছে পুঁথির পাতে, ন্যাড়া যায় বেলতলাতে, নাহি কোনো সন্দ তাতে কিন্তু প্রশ্ন কবার যায়?” প্রশ্নটি করেছিলেন সুকুমার রায়। প্রবচনে এর সহজ উত্তর হল ‘একবার’। কিন্তু বেলতলার বদলে স্থানটি যদি ভারতীয় সংসদ হয় তাহলেই সহজ প্রশ্নটা যথেষ্ট জটিল হয়ে পড়ে। কারণ ১৯৫১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১৬ টি লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়া সাংসদদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ সাংসদ দ্বিতীয়বার আর সংসদ কক্ষে প্রবেশাধিকার পাননি। এ পর্যন্ত নির্বাচিত সাংসদের সংখ্যা ৪,৮৪৩। এছাড়া রয়েছেন মনোনীত প্রার্থী। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা এই হিসেবের বাইরে রয়েছেন কারণ ভোটের মাধ্যমে তাঁরা নির্বাচিত হন না। চলতি লোকসভা নির্বাচনে যে প্রার্থীরা দ্বিতীয়বারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন বা ইতিমধ্যেই যাঁদের নির্বাচন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে তাঁদের জন্য অবশ্যই এই পরিসংখ্যান খুব স্বস্তিদায়ক নয় বলাই বাহুল্য।
দ্বিতীয়বার সাংসদ হয়ে গেলে তৃতীয়বারের লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে যায়। ২,০০৩ জন সাংসদ, যাঁরা দ্বিতীয়বার সাংসদ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন তাঁদের অর্ধেকই আর কখনই নির্বাচিত হতে পারেননি। সদ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ লোকসভার সাংসদ, যাঁরা ২০১৪ সালে প্রথমবার সংসদে প্রবেশ করেছেন তাঁদের কাছে অবশ্য আশান্বিত হওয়ার ভিন্ন উদাহরণও আছে। সিপিআই নেতা ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত সাংসদ হয়েছিলেন ১১ বার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নির্বাচিত হয়েছিলেন ১০ বার। এছাড়াও ন’জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন ন’বার, ১৮ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন আট বার ৩৪ জন সাংসদ হয়েছেন সাত বার, ৫৪ জন নির্বাচিত হয়েছেন ছ’বার এবং ১৩৪ জন জনপ্রতিনিধি সংসদে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছেন পাঁচ বার।
যাঁরা একবারের বেশি সাংসদ হতে পারেননি তাঁরা পরবর্তীকালে নিজেদের কীভাবে রাজনৈতিক পরিসরে প্রাসঙ্গিক রেখেছেন বা আদৌ সক্রিয় থাকতে পেরেছেন কিনা বা সাময়িক ভাবে হারিয়ে গেলেও তাঁদের মধ্যে কজনের পুনরুত্থান ঘটেছে সেটা ভিন্ন গবেষণার বিষয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনে সবথেকে বেশি সংখ্যক সাংসদ প্রথমবার সংসদ কক্ষে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছেন। ৫৪৩ জন ভোটে নির্বাচিত সাংসদের মধ্যে ৩১১ জন সাংসদই গত নির্বাচনে ছিলেন প্রথমবারের সাংসদ। যাঁদের মধ্যে বিজেপি’র সাংসদ সংখ্যা সর্বাধিক (১৬০)। প্রথমবারের সাংসদদের মধ্যে অন্যতম স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এআইডিএমকে (৩৩) এবং তৃতীয় তৃণমূল কংগ্রেস (২১)। নির্বাচিত হওয়ার পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে যত বেশি বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায় ততই বিজয়ী হওযার সম্ভাবনা কমতে থাকে। সুতরাং চলতি নির্বাচনে সেই একই ধারা বজায় থাকবে কিনা সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২৩ মে পর্যন্ত যেদিন ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হবে।