প্রধানমন্ত্রীকে ৪৯ জন ‘বুদ্ধিজীবী’ চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন দেশে ক্রমবর্ধমান ‘অসহিষ্ণুতা’ প্রসঙ্গে অনুরোধ করেছিলেন তিনি যেন ব্যবস্থা নেন। এর পাল্টা ৬২ জন সংবেদনশীল বিশিষ্টনাগরিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে পত্র প্রেরণ করেন, ওই ৪৯ জনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আলোকপাত করার জন্য। এখন দেশের যা পরিস্থিতি তাতে এধরনের বাদ-প্রতিবাদ চলবে। বুদ্ধিজীবী’র তকমাধারী ওই ৪৯ জন, যার মধ্যে ২২ জনই আবার বাঙ্গালি। এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী’কে সামনে বসিয়ে এদের প্রত্যেকের মুখোশ খুলে দিয়েছেন সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামী। তার রিপাবলিক টিভিতে নেওয়া অভিনেত্রীটির সাক্ষাৎকার, মুসলমান তোষণে তাদের নীরব থাকা নিয়ে অর্ণবের তীব্র আক্রমণ আর তার জবাব দিতে না পারা— এই ধরনের ‘বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র বঙ্গের মানুষ আগেও জানতেন যদিও, তবুও ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটি ‘বাঙ্গালিদের বিস্তর আমোদ জুগিয়েছে। এরপরও নাটকেরও অন্ত নেই। একজন অভিনেতা’ আবার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে অসহিষ্ণুতা নিয়ে লেখা চিঠি লেখার পর নাকি তাকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এই অভিনেতাটি একটি বৈদ্যুতিক ‘জনপ্রিয়’সংবাদ চ্যানেলে ঘণ্টাখানেকই বসুন বা আধঘণ্টা, সময়-সুযোগ পেলেই বিজেপি। আর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হেট-ক্যাম্পেন চালান, তিনি একটি ফুটবল টিমের সমর্থক হওয়ায় বিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীর সম্পর্কে ‘আই হেট’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন বহু আগে, ওই বৈদ্যুতিন মাধ্যমটির যদিও তখন জন্ম হয়নি কিন্তু তার মুদ্রণ বিভাগটি ছিল। আবার তৃণমূলের পদলেহী একটি সংবাদপত্রে একবার লেখা হয়েছিল অভিযোগকারী ওই ‘অভিনেতা’টি নাকি বার দু’য়েকতার মা-কে খুনের চেষ্টা করেন। গুণধর ‘অভিনেতা’র এই চেষ্টা আজীবন ব্যর্থ হোক, ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করি। যাই হোক, আসল কথা হলো একহেট ক্যাম্পেনার’এখন নাটক করতে অনেক কিছুই বলতে পারেন, চিলে কান নিয়ে উড়ে গেছে রব শুনে কানের পেছনে ছোটাটা ঠিক হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘অসহিষ্ণুতা’ নিয়ে অভিযোগকারী ৪৯ জনের বায়োডেটা’তুলে ধরলে এমন অনেক কুকীর্তিরই পরিচয় পাওয়া যাবে। এইসব কাদা ঘাঁটায় আমরা খুব বিশ্বাসী নই। কিন্তু এই বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম মহামান্য এক ‘কবি’র কন্যা কর্তৃক পরিচালিত একটি সংবাদমাধ্যম, যার সম্পাদকীয় দপ্তর ও নিউজ রুম এই মুহূর্তে ‘আরবান নকশাল’ দ্বারা অধিগৃহীত ও পরিচালিত, যেভাবে এই ধামাধরা, ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত অসৎ ‘বুদ্ধিজীবী তকমার সুযোগ গ্রহণকারীদের সম্বন্ধে সাধারণের শ্রদ্ধা আদায়ের অপচেষ্টা করছে তার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ ও দেশের মানুষকে সচেতন করাটা জরুরি।
আসলে বিষয়টা ৪৯ বনাম ৬২ নয়, তৃণমূল ভার্সেস বিজেপি নয়, এমনকী হিন্দু বনাম মুসলমানও নয়। প্রবাদ রয়েছে ঘরপোড়া গোরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। দেশভাগের বীভৎসতার শিকার হিন্দুরা হলো ঘরপোড়া গোরু। কিন্তু এতকালের একটা প্রবাদ যে কীভাবেনস্যাৎ হতে পারে, তা হিন্দুরা দেখালেন বটে। উদ্বিগ্ন হবার মতো অনেক আভাস পেয়েও তারা চুপ ছিলেন, ধর্ম আফিমের মৌতাতে তারা এতদিন মশগুল ছিলেন। মমতা ব্যানার্জির মুসলমান তোষণ নামে জিওন কাঠির স্পর্শে সেই মৌতাত এখন কেটে গিয়েছে। বাপ-ঠাকুর্দাকে অস্বীকার করা প্রজন্ম এখন বুঝতে পারছে, ভিটে মাটি চাটি হওয়ার পিতৃ ভাগ্য তাদেরই ললাট -লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে দীর্ঘকাল চোখ-কান বন্ধ রাখার কারণে। ‘লাল পার্টি করেপুকার’ স্লোগানে আকাশ-বাতাস ভরিয়ে তোলা শেষ বয়সের মানুষগুলো এখন আবার তাদের শৈশবে ফিরে গিয়েছেন, বুঝেছেন দীর্ঘদিন মার্কসীয় সংস্কৃতির চর্চা করতে গিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তারা তাঁদের পিতৃপুরুষের ভাগ্যকেই লিখে দিয়ে যাচ্ছেন।
যার নিট ফল, কমিউনিস্ট পার্টির ভোট সাত শতাংশে নেমে যাওয়া। এরপরও যেভাবে ‘শুভবুদ্ধি উদয়ের তাগিদে তারা। ‘প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘ক্রিকেটে বাংলাদেশই সেরা, ভারত নয়’ গোছের তত্ত্ব হাজির করছেন তাতে স্বাধীনতাপূর্ব অতীতের ব্রিটিশ দালালি, স্বাধীনতা উত্তর অতীতের । চীন-দালালি আর জন্মলগ্ন থেকে মুসলিম লিগের দালালি আর পাক সমর্থক এই দলটির সংরক্ষণ প্রয়াস অবিলম্বে ভারতীয় জাদুঘরের পক্ষে নেওয়া উচিত, অন্তত ‘অশুভ শক্তির কিছু স্যাম্পেলও তো ভবিষ্যতের ‘শক্ত ভারত, সমর্থ ভারত’-এর অধিবাসীরা দেখতে চাইতে পারেন!
‘দল মরে, মতাদর্শ তো মরে না’ গোছের তত্ত্ব বহুদিন এরা চালু রেখেছিল, আজ তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে উনপঞ্চাশী ‘বুদ্ধিজীবীদের দৌলতে। এক বৃন্তে দুটি কুসুম’-এর কবি এক ভেবে লিখেছিলেন, এখন হয়েছে আরেক। মুসলমান মৌলবাদকে প্রশ্রয়, ‘পাকি আমাদের ভাই’, ‘মোদী শত্রুর তো ভারত শর’এই যাঁদের মনোবৃত্তি তারা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে‘অসহিষ্ণুতা’নিয়ে সরব হবেই, এর পেছনে পেট্রোডলারের ইন্ধন থাকতে পারে, পররাষ্ট্রের মদত থাকার সম্ভাবনাও বিচিত্র নয়। ভুলে গেলে চলবে না এদের মতো স্বার্থান্বেষী লোকেরা হাতে টাকা পেলে সব করতে পারে, হনুমান চালিশা থেকে জিল্যাক্সোর বিজ্ঞাপন। পর্যন্ত। সম্প্রীতি’র খোয়াব দেখিয়ে এরা দীর্ঘদিন দেশের সর্বনাশ করে এসেছে, এদের সম্প্রীতি’ ভারতে পাক-পতাকা তোলায়, মেটিয়াবুরুজ রাজাবাজার থেকে ধুলাগড়, দেগঙ্গা সর্বত্র ছোটো ছোটো পাক উপনিবেশ গড়ে তোলায়। আর ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গকে বিচ্ছিন্ন করার। কৌশলে এই ‘সম্প্রীতি’তত্ত্ব বাংলাদেশ থেকে ভারতে ‘এথনিক ক্লিনসিং’ (মূলবাসী নিধন)-এর পটভূমি তৈরি করেছে, যার সিকুয়েল (উত্তরভাগ) হলো মুসলমান-দলিত ঐক্য তত্ত্ব।
সুতরাং সাধু সাবধান!
বিশ্বামিত্র-র কলম
2019-08-02