অণুগল্প: ঘা

বউ, দুই মেয়ে আর কোলের ছেলেটাকে নিয়ে রতন ফুটপাথে থাকে। মেয়ে দুটো চুপ থাকলেও কোলের ছেলেটি সব সময় খিদের জন‍্য কাঁদে। ছেলেটি যখন‌ কাঁদে তখন রতনের ব‌উ তার দুধের বোঁটা ছেলেটির মুখে গুঁজে দেয় কিন্তু ছেলেটি তা মুখ থেকে বার করে দেয়। রতনের বউও জানে সব খালি হয়ে শুকিয়ে গেছে!

       একদিন ছেলেটির একঘেয়ে কান্নায় রতন বিরক্ত হয়ে তার মুখের জ্বলন্ত বিড়িটা ওই ছোটো শিশুটির মুখে ঠেসে দেয়। রতনের বউয়ের আর্তনাদের সঙ্গে ছেলেটির ভয়ংকর চিৎকার সেদিন ফুটপাথকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

       রতনের কাজ বলতে প্লাস্টিক কুড়ানো। তা সারা দিনের কুড়ানো প্লাস্টিক জমা দিয়ে কত টাকাই-বা আয় হয়। যা পায় তাতে এতগুলো পেট চলে না। তবুও সে বাবা। 

নিজের ভুল বুঝতে পেরে ছেলেটিকে কোলে নিয়ে ফুটপাথের এক কোণায় অসহায় ভাবে বসে থাকে। সে খেয়াল করে তার ছেলের মুখের দগদগে ঘা দেখে অনেকে পয়সা দিয়ে যাচ্ছে। মুখের উপর যখন মাছি বসে তখন সে হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। 

সে দেখলো লোকে যখন পয়সা দিচ্ছে তখন ছেলেটিকে কোলে নিয়ে ওইভাবে সে প্রতিদিন বসবে। সে ভাবে গরীবের আবার ভালো-খারাপ! এভাবে পয়সা আসলে অন্তত পেটগুলো বাঁচবে।যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুধু ছেলের পোড়া ঘা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সে তার জ্বলন্ত বিড়ির ছ‍্যাঁকা দিয়ে পুনরায় ঘা-টাকে দগদগে করে দেয়।

সোমনাথ বেনিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.