প্রবন্ধ: বাংলার বৈশাখী সংস্কৃতি কাল ও আজ /বৈশাখী পরম্পরায় পশ্চিমবাংলা

পয়লা বৈশাখ, জরাজীর্ণ দীনতা পদতলে পিষ্ট করে সুন্দরের পথে সজীবতার পথে অগ্রসর হওয়ার ও শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার দিন। নতুন এক বৎসর ১৪২৭ বঙ্গাব্দ। বাঙালীর জীবনে পয়লা বৈশাখের সাধারণত দুটি দিক। একটি আধ্যাত্মিক অন্যটি উৎসব কেন্দ্রিক। সেই উৎসবে শামিল হওয়ার জন্য আপামর জনগণ উদগ্রীব হয়ে থাকে। ধর্মবোধ ও হৃদয়ের আবেগ এই দুই মিলিয়ে বৈশাখ। যার আগমনের অপেক্ষায় আনন্দের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকে প্রকৃতি ও মানুষ। কিন্তু এই প্রথমবার , বৈশাখ এমন এক বর্ষবরণের সাক্ষী হতে চলেছে যেখানে মানুষের মনে না আছে আনন্দ না আছে উৎসব, আছে শুধু এক ভয়াবহ মহামারী করোনার ভয়। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষ বাড়িতে গৃহবন্দী কিন্তু ঋতম পত্রিকার মানুষের গৃহবন্দী দশা তে কিছুটা একঘেয়েমি জীবনের স্বাদ পাল্টানোর জন্য পয়লা বৈশাখের যে বিশেষ সংখ্যা, তা মরুভূমির মাঝে এক অমৃত মরুদ্যান । এমন বৈশাখ হয়তো আমরা আগে কোনদিন দেখিনি …দুঃখ আছে ,ভয় আছে, কিন্তু পয়লা বৈশাখের অতীতের পৃষ্ঠা ঘেঁটে আনন্দময় বিচিত্র ও কৌতুক রঙ্গময় ও রসবোধ প্রিয় হিন্দু বাঙালির অনুভূতিগুলোর স্মৃতিচারণার প্রয়াসে আজ সচেষ্ট হবো। পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, পয়লা বৈশাখ মানেই বেনীমাধব শীল আর আদি অকৃত্রিম বাঙালীয়ানা যা আন্তরিক অনুভূতির স্বাদে ভরপুর। চড়ক এবং নীল পূজার মধ্য দিয়েই বৈশাখী পার্বনের সূচনা, চৈত্র মাসের শিবের গাজন এবং চৈত্র সংক্রান্তির মেলা দিয়েই বৈশাখ তার উপহার ডালি সাজিয়ে বসে। আমার শৈশবের স্মৃতিচারণায় বৈশাখ আবেগতাড়িত করে তোলে, এমনই এক মধুর পরিবেশ সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে মঙ্গলধ্বনিতে আবাহন হত নতুন বছরের। মা ঠাকুমারা বাড়ির চারপাশে গোবরজল ছিটিয়ে তুলসী মঞ্চ নিকিয়ে প্রস্তুত করতেন পূজা সামগ্রী, ভোরের স্নিগ্ধ বাতাসে ফুলের সৌরভে মাতোয়ারা করত মন প্রান, ঠাকুরদা চালিয়ে বসতেন রেডিও…. বজ্র গম্ভীর আওয়াজে শুরু হতো প্রথম ভোরাই বা আলাপন অনুষ্ঠান… আকাশ বানী কোলকাতা… মানবেন্দ্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বা হেমন্তের কন্ঠের গানে ভোরাই আলাদা মাত্রা নিত। বাড়ি বাড়ি সেজে উঠতো আম্র পল্লব মালি ফুলে। সকালে চা পানের অব্যাহতি পরেই বসতো লুচি তরকারী বা চিড়ে মুড়ি দই গুড় নারকেলের উৎকৃষ্ট ফলারের আয়োজন। বাড়ির কর্তারা বেরোতেন বগলে ছাতা হাতে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজারের পথে , হতো একে অপরের সৌহার্দ্য শুভেচ্ছা বিনিময় কোলাকুলি প্রনামের অকৃত্রিম পরম্পরা, বাজারে ঢোকার মুখে কোন বিশু বা নিতাই এর দোকানে উঠতো গরম চায়ের হুল্লোড়….. বাজার ময় সাজ সাজ রব…. গমগমে কেনাকাটা… দরদাম আর প্রানখোলা হাসি….. নতুন নতুন পোশাক পড়া শিশুদের বড়দের হাত ধরে বায়না। বাড়িতে সদস্যদের নতুন জামা-কাপড় আসা… নতুন কাপড়ের গন্ধের সেই আমেজ, ছোটদের কার কটা কাপড় হলো তাই নিয়েও চলত প্রতিযোগিতা। বাজারের দোকানে উঠত সাজ সাজ রব…. সেজে উঠতো ফুল মালায়, পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণ আর ধুনো গুগুলের গন্ধে পরিবেশ হয়ে উঠত মধুময়, মিষ্টির দোকানে চলত হরেক রকমের মিষ্টান্নের প্রস্তুতি, দোকানির দম ফেলার ফুরসত নেই, বেলায় সব দোকানে পাঠানোর তোড়জোড় চলতো। নানা জায়গায় বসতো এলাহি মেলার আয়োজন.সাধারনত গ্রামের সংযোগস্থলে বা স্কুল মাঠে হত মেলার বিপুল বন্দবস্ত.. মাটির পুতুল, নাগর দোলা, পাঁপড় ভাজা, কাঠের গাড়ি, খেলনার দোকান, বাদাম ভাজা জিলিপির দোকানে আর বিপুল জনস্রোতে গমগম করতো মেলা প্রাঙ্গণ, কোথায় কোথায় বসতো পুতুল নাচের আসর বায়স্কোপ বা ভিডিও উত্তম সুচিত্রার নস্টালজিয়ায় বুঁদ হত আবালবৃদ্ধবনিতা… সন্ধ্যায় শুরু হতো হালখাতার অনুষ্ঠান , দোকানে দোকানে প্রাত্যহিক বা মাসিক ক্রেতাদের কলতানে পরিবেশ মুখরিত হতো… নানা ধরনের বাহারি মিষ্টি , রঙীন নানা ঠাকুর দেবতার ক্যালেন্ডার বা গুপ্ত প্রেস ক্যালেন্ডার নিয়ে হাসিমুখে ক্রেতারা ঘরমুখো হতেন। পাড়ার নানা ক্লাব বাজার সমিতি বা হরিসভা গুলো থেকে আয়োজিত হতো শ্যামল মিত্র হেমন্ত কিশোর রফি নাইট অথবা নিমাই সন্ন্যাস , সাবিত্রী সত্যবান যাত্রাপালা অথবা হরিনাম সংকীর্তন এর আসর… পাড়ার ফাংশান গুলো চলতো সারা রাত…. গানের অনুরোধে ক্লান্ত হতো গায়ক…. পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা পত্র ও পাঠানো হতো শুভানুধ্যায়ী দের, ছাত্র শিক্ষক এর নিকট আশীর্বাদ নিত, প্রবাসী রাঙা পিসি বা নঠাকরুন এর কাছে পাঠানো হতো শুভ নববর্ষের বার্তা…. কোন কোন স্থানে মনিমেলা বা ব্রতচারী বা গানের স্কুল কোচিং সেন্টার থেকে আয়োজিত হতো প্রভাত ফেরী, রবি ঠাকুরের প্রতিকৃতির সামনে লাল পেড়ে শাড়িতে পাজামা পাঞ্জাবীতে কিশোর কিশোরীদের কন্ঠে গেয়ে উঠতো এস হে বৈশাখ বা হে নূতন… এক পলকের চোখের দেখায় নব যৌবনের প্রারম্ভে প্রবেশ করতো কেউ কেউ……. কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিকতার সাথে ডিজিটাল হয়েছে উৎসব অনুষ্ঠান বৈশাখী পার্বন পর্যন্ত। সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রা যেমন পাল্টেছে তেমনি নতুন বর্ষ বরণের পদ্ধতির, চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। এখন ফ্ল্যাটে আবাসনে থাকা মানুষ দক্ষিণেশ্বর , কালীঘাট ,পাড়ার কালী মন্দিরে পুজো দিয়ে বৈশাখ শুরু করে, গঙ্গা স্নানের বাহুল্য নেই, আমপাতা বেলপাতা নাই বা ঝোলালো ঘরের দুয়ারে সিঁদুরের পবিত্র ছোঁয়া নাই বা লাগলো। সস্তার চায়না লাইট ,চাইনিজ রংবেরঙের আলো দিয়ে বাড়ি সাজানো এখন উৎসবের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। (চাইনিজ বাঁশ কেনো ঝাড়ে এসো আমার ঘাড়ে) এটুকু পরিবর্তনতো বাঙালির অধিকার, এ নিয়ে কথা হবে না!
পয়লা বৈশাখের দিন দুপুরে বাড়ির বাচ্চা বুড়োদের পাতে খিচুড়ি লাবরা , বেগুন ভাজা বা কাতলা মাছের পেটির পরিবর্তে বিরিয়ানি ,ফিশ অর্লি ,চিলি চিকেন, মটন ভিন্দালু বাঙালির ভোজন মেনুতে প্রবেশ করেছে( খাদ্যাভ্যাস গত অবক্ষয়)। বলাই বাহুল্য বাঙালীর আহার ও ডিজিটালাইজড হয়েছে, সত্যি কথা বলতে এই খাবারের নাম গুলো খুঁজতে গিয়ে আমারও জিভে জল চলে আসছে, বেচারা বাঙ্গালীদের দোষ কি! তবে এই বৈশাখে সব বাঙালীর চিত্র কিন্তু এক নয় , বিশেষ করে যেখানে পূর্নিমার চাঁদ ঝলসানো রুটি, সেখানে একটা জামা না কিনে দেওয়ার তাড়নায় হুহু করে সর্বকালের পিতার মন , একটু ভালো খাওয়ার আশায় অশ্রুসিক্ত অপেক্ষায় থাকে নিষ্পাপ কিছু ক্ষুধার্ত চোখ…. এখানে সমাজ বৈশাখ আনন্দ সব অসহায় এখানে একটা ঠান্ডা সিঙ্গারা পেলেই ভালো, উৎসবের ছোঁয়াও পেল আবার ঠান্ডা সিঙ্গারা খেলে অম্বল হবে এবং রাত্রে আর খিদে পাবে না, ক্ষুধার নিয়ন্ত্রণ ও হলো ( নির্মম নিয়তির পরিহাস) হয়তো এই সুযোগে পোজ দিয়ে ফটো তোলা সমাজসেবী দের দান করা চাল আরো এক বেলা বেশি চলবে। শহুরে শপিং মল বিপনন কেন্দ্র গুলোতেও বৈশাখি কেনাকাটার ছোয়া বেশ চোখে পড়ে , আয়োজন জমকালো চোখধাঁধানো রোশনাই এ ভরা। নানান কেনাকাটার উপর বিশেষ ছাড়, ফ্রি ক্যুপন সুবিধা, লাকি ড্র একটার সাথে আরেকটা ফ্রি.. এসবের মোহে বাঙালীর বৈশাখ ক্রমাগত এখন শপিং মল মুখি। সময়ের সাথে সাথে বাঙালীর সংস্কৃতি গত আচার রুচিবোধেও পরিবর্তন এসেছে, বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পাড়ার বয়ঃ বৃদ্ধ প্রবীণ বা অবসর প্রাপ্ত হেডমাস্টার বা স্কুল শিক্ষক প্রভৃতির পরিবর্তে এখন স্থান অলংকৃত করেন পাড়ার কোন দাদা কোন স্বঘোষিত নেতা তথা বিশিষ্ট সব সমাজসেবী বৃন্দ।
অনেক বোদ্ধাই বলেন বৈশাখ আসে ,বৈশাখ যায় নেতার চরিত্র একই রয়। পাড়ায় বৈশাখী অনুষ্ঠানে আগেও যেমন নেতার বক্তৃতা ডেসিবেলে মাপা যায় নি বর্তমানেও মাপা যায় না। পাবলিক বড্ড বেয়াদপ নেতাদের ষষ্ঠী পূজা না করলে ভাত হজম হয় না। কিন্তু বাঙালির গুন হলো পাড়ায় যতই মাস্টার ,উকিল, ব্যারিস্টার ,ডাক্তার থাক মঞ্চের মুখ্য বক্তা সেই সর্ব জ্ঞানী নেতা।
কয়েক দশক আগেও কোন গ্রাম কত বড় আর্টিস্ট বৈশাখী মেলার অনুষ্ঠান এ নিয়ে আসতে পারবে এ নিয়ে অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতা চলত। যেই গ্রাম টেক্কা দিতে পারবে সেই গ্রামের মানুষজন পরের বৈশাখ পর্যন্ত 56 ইঞ্চি ছাতি ফুলিয়া ঘুরবে। কয়েক দশক আগের এক ঘটনা ,রামচন্দ্রপুর গ্রামে সেবার বৈশাখী মেলার আকর্ষন কন্ঠ শিল্পী শ্যামল মিত্র ( দেয়া নেওয়া বই সবে সিনেমাহলে মুক্তি পেয়েছে, উত্তম তনুজার রোমান্টিসিজমে মোহাবিষ্ট বাঙালী) শ্যামল মিত্র আসবেন বৈশাখের আসরে গান গাইতে ( শ্যামল মিত্র তখন বাঙালী সেন্টিমেন্ট) মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে উদ্যোক্তাদের গলদঘর্ম অবস্থা কিন্তু অনুষ্ঠান শেষের পর্যায়ে শ্যামল মিত্র এসে পৌঁছায়নি, জনতা ক্ষিপ্ত মারমুখি। কিন্তু সেই সময়ে পাড়ার অখ্যাত ঘোষকের উপস্থিত বুদ্ধিতে জনসাধারণ শান্ত হয়, ঘোষক ঘোষণা করছে শ্যামল মিত্রের ই গানের কলি , জীবন খাতার প্রতি পাতায়/যতই লেখ হিসাব নিকাশ কিছুই রবে না…. বন্ধুগন জীবন খাতার এই পরিহাস কোন হিসাব নিকাশ খাতায় লেখা রবে না… কিন্তু আপনারা উত্তেজিত হবেন না…. বলে ঘোষক আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন/ দেখি এই চোখ সাগরের লীন… গান গেয়ে উঠলো, হাততালিতে ফেটে পড়ল সভা।
বর্তমানের মতো এতো প্রফেশনাল অ্যাঙ্কার নয় সাধারণ গ্রাম্য পাড়ার ঘোষক দাদা, কিন্তু কি অদ্ভুত হিউমার দেখুন । গ্রাম ভিত্তিক এই প্রতিযোগিতা প্রকৃত অর্থে গ্রামের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করত ,যৌথ ভাবনা, যৌথ লড়াইয়ের মানসিকতা তৈরি করত। কিন্তু বর্তমান বর্বর আধুনিকতা তা গ্রাস করেছে।
ইংরেজদের প্রতি অদ্ভুত শ্রদ্ধাভাজন বাঙালিরা আজ আর বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা পত্র পাঠায় না, সামাজিক উৎসবে আনন্দের সাথে শরিক হয়না কিন্তু ইংরেজি নববর্ষে বাঙালি সমাজ নববর্ষের শুভেচ্ছা পত্র কিনতে কার্ডের দোকানের সামনে যত লম্বা লাইন দেয় তা নোট বন্দির সময় এটিএম এর দাঁড়ানোর লাইন কেও লজ্জা দেয়, যেভাবে কোলকাতা বা কোন শহরতলীর নাইট ক্লাবে পাবে উন্মাদনা চলতে থাকে তা বাঙালীয়ানাকেও লজ্জা দেয়।তবে এসবই যুগ সময় বিবর্তনের ফল হয়তো বাঙালী সেই আঙ্গিকে নিজেকে ঢেলে নেবে। ইংরেজরাই বাঙালীদের বাঙালি বাবু বানালো , তাই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন না করাটাই বেইমানি নয় কি!! অবশ্য এখন ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ এর দৌরাত্ম্যে কাগজের কার্ড শেষ নিঃশ্বাস গুনছে। হয়তো ভবিষ্যতের বৈশাখে কার্ডের স্মরণসভা পালন করতে হতে পারে।
পয়লা বৈশাখের বাঙালির জমাটি আড্ডা এক আইকনিক সংস্কৃতি, আড্ডা প্রিয় বাঙালী আড্ডা দেবে না তা হয় নাকি! চায়ের কাপে তুফান তুলে বিশ্বসংসার কোন চায়ের দোকানে পাড়ার রকে নামিয়ে আনত বাঙালী, তাসের আসরে আড্ডা চায়ের দোকানে আড্ডা পাড়ার রকে বসে আড্ডা ঘরোয়া জমায়েত এ আড্ডা , আড্ডা ইস মেড ইন বেঙ্গল তবে সময়ের সাথে সাথেই এই বৈচিত্র্য আজ অনেকটাই বিবর্ন এখন কোন ৫ বন্ধুর দু’ঘণ্টার আড্ডায় দেড় ঘন্টা নিজেদের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয় বাকি সময়টা জমিয়ে আড্ডা । তারমধ্যেই একটু চায়ের চুমুক আর দাম মিটানো নিয়ে হাস্যকর খুনসুটি চলতে থাকে আড্ডার মধ্যে শুভেচ্ছা আসতে থাকে অনলাইন মারফৎ… মিষ্টির হাড়ি অথবা ডিজিটাল শুভেচ্ছা পত্র দামি স্মার্টফোনে জ্বল জ্বল করে ওঠে, বাঙালী দুধের সাধ ঘোলে মেটায়।
নিন্দুকেরা বলেন …. হায় বাঙালি হায় তুই আর বাঙালি নয়, তোর চলন বলন কথার ধরন নিজের মত নয়, তুই আর বাঙালি নয়। তবে বিশ্বায়নের ফলে আমাদের মূল্যবোধ হারিয়ে গেল বলে যারা রব তুলেছেন তারা অনেকটাই নিরাশাবাদী। মূল্যবোধ তৈরি হয় মনে ছড়িয়ে পড়ে গৃহ থেকে কর্মজগতে। যাই হোক…পয়লা বৈশাখের রং বদলেছ বদলাবেই কিন্তু হতাশ হবার কিছু নেই। আজ বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতি সমগ্র ভারতবর্ষে তথা বিশ্বে যথেষ্ট সমাদৃত। পহেলা বৈশাখে বাঙালি হিন্দু সমাজের মধ্যে যে মেলা, খেলা, পাড়ায় পাড়ায় অনুষ্ঠান, সার্বজনীন আমোদ-প্রমোদ হত সেগুলিকে পুনর্জীবিত করা বাঁচিয়ে রাখার কাজ করে যেতে হবে কারণ এটাই বাঙালি হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা স্নেহ বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে । পূজা -পার্বণ ,উৎসব গৃহ কেন্দ্রিক না হয়ে, সমাজ কেন্দ্রিক হওয়া কাম্য, সমাজ কেন্দ্রিক পয়লা বৈশাখ উদযাপন যেমন ব্যক্তিকেও সংঘবদ্ধ করে তেমন সমাজকেও বলীয়ান করে তোলে। এর অন্তর্নিহিত শক্তির গুরুত্ব আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।

উত্তম অধিকারী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.