কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আশঙ্কা এমনটাই। করোনা গ্রাফ যেভাবে বেড়ে চলেছে তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে সেটাই এখন চিন্তার মূল কারণ। গত বছর সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৯৫ হাজার সংক্রমণ ধরা পড়েছিল একদিনে। সেটা ছিল রেকর্ড। নভেম্বরের পর থেকে ফের করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করে। একুশে এসে আরও কমে। কিন্তু গত দু’মাসে সংক্রমণ যেভাবে বাঁধ ভেঙেছে তাতে কুড়ি সালের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আবার ফিরে আসতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। একেই দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ঘুম উড়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। তার ওপর উদ্বেগ বাড়িয়েছে গত ২৪ ঘণ্টার হিসেব। একদিনে নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৪৬ হাজার ৯৫১ অর্থাৎ প্রায় ৪৭ হাজার। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, ৭ নভেম্বরের পর থেকে এই প্রথম দৈনিক সংক্রমণ এত বেশি ধরা পড়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই ৫০ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে যাবে।
দৈনিক সংক্রমণের হার যেমন বেশি তেমনি ভাইরাস সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও লাগামছাড়া। কোভিড অ্যাকটিভ কেসের হার যেখানে দেড় শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছিল, তা এখন পের তিন শতাংশ ছুঁতে চলেছে। দেশে ভাইরাস সক্রিয় রোগীর সংখ্যা তিন লাখের বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড অ্যাকটিভ কেসের হার বাড়লে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হারও বাড়ে। পাল্লা দিয়ে বাড়ে কোভিড পজিটিভিটি রেট। করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে কোভিড অ্যাকটিভ কেসের হার এক শতাংশের নীচে নামাতেই হবে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। বেশি মানুষের মেলামেশা বন্ধ করতে না পারলে সংক্রমণের হার কমানো কোনওমতেই সম্ভব নয়।
মহারাষ্ট্রে আজও সর্বোচ্চ সংক্রমণ ধরা পড়েছে। একদিনেই আক্রান্ত ৩০ হাজারের বেশি। রাজ্যে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা ২৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বৃহন্মুম্বই পুরসভা প্রথমে বলেছিল, রাজ্যে বস্তি এলাকাগুলিতে সংক্রমণেরহার কম। মুম্বইয়ের ধারাভি যা এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি সেখানে ফের কোভিড সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। আজ মুম্বইতেই চার হাজারের কাছাকাছি সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। পাঞ্জাব, কেরল, কর্নাটক, গুজরাটেও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। গতকালই বাংলায় নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছিল চারশোর বেশি। সর্বাধিক সংক্রমণ কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনাতে।
কেন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ? কোভিড টিকাকরণ প্রক্রিয়া চলছে দেশে, সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, তা সত্ত্বেও করোনা গ্রাফ বেড়ে চলেছে কেন? দিল্লির এইমসের প্রধান ডক্টর রণদীপ গুলেরিয়া বলছেন, করোনা বাড়ার কারণ হল মানুষের অবাদ মেলামেশা এবং বেপরোয়া মনোভাব। করোনা বিধি মানা হচ্ছে না কোথাও। রাস্তাঘাটে মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন লোকজন, গণপরিবহনে পারস্পরিক দূরত্ব মানার ব্যাপারই নেই। ট্রেনে-বাসে একই রকম বাদুড়ঝোলা ভিড়। যত মানুষ পরস্পরের সংস্পর্শে আসবে ততই করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকবে।
নীতি আয়োগের সদস্য ডক্টর ভি কে পল বলেছিলেন বিয়েবাড়ি, অনুষ্ঠানবাড়িগুলিই করোনার আঁতুরঘর হয়ে উঠছে। কারণ জনসমাগম যেখানে বেশি সেখানে ভাইরাসের সংক্রমণও বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আনলক পর্বে বিয়েবাড়ি বা যে কোনও অনুষ্ঠানবাড়িতে ৫০ জনের বেশি অতিথি সমাগমে রাশ টানা হয়েছিল। শেষকৃত্যেও একই নিয়ম চালু হয়েছিল। কিন্তু দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পরে এই নিয়মের তোয়াক্কাই করেননি কেউ। নাইট পার্টি, বিয়েবাড়িতে একই রকম জমায়েত হচ্ছে। পল বলছেন, বিয়েবাড়িতে গিয়ে বহু মানুষ ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন এমন খবর বারে বারেই শোনা গেছে। দিল্লি, পাঞ্জাবে অন্তত ৩০ শতাংশ সংক্রমণ ছড়িয়েছে এই অনুষ্ঠানবাড়িগুলি থেকেই। কাজেই এখনও যদি সচেতনতা না আসে, তাহলে কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।