ঘরে ঘরে বাচ্চাদের জ্বর-কাশি-চোখ লাল, বড় ভিলেন ‘অ্যাডিনো ভাইরাস’

বাড়ির ছোট্ট বাচ্চার জ্বর হয়েছে। সঙ্গে সর্দি-কাশি। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর পরেও জ্বর কমছে না। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে সে। বাবা-মা, পরিবারের লোক, এমনকী চিকিৎসকরা পর্যন্ত ধরতে পারছেন না হয়েছে কী। আসলে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সে। এই ভাইরাস থাবা বসিয়েছে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে। আক্রান্ত হচ্ছে একের পর এক শিশু। সূত্রের খবর, অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যে ১০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে এখনও কোনও ঘোষণা করা হয়নি।

চিকিৎসকদের মতে, এই ভাইরাসে মূলত শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে। উপসর্গ সর্দি-কাশি-জ্বর। ২-৩ সপ্তাহ থেকে কখনও কখনও ৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত থাকছে এই জ্বর। এছাড়া চোখ লাল থাকছে। অনেকে দেখে ভাবছেন কনজাংটিভাইটিস হয়েছে। ফলে কী অসুখ, সেটা বুঝতে দেরি হচ্ছে। এই ভাইরাসে মূলত আক্রান্ত হয় ফুসফুস। ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। অ্যাডিনো ভাইরাসে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এই ভাইরাসের প্রতিষেধক কোনও ওষুধ এখনও পর্যন্ত বের হয়নি, এমনটাই বক্তব্য চিকিৎসক মহলের। একমাত্র উপায় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া। অর্থাৎ পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা ‘পিকু’তে রোগীতে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে রাজ্যে ‘পিকু’তে বেড বিশেষ ফাঁকা নেই বলেই জানা যাচ্ছে।

চিকিৎসকরাও বেশ চিন্তিত। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ-এর ডিরেক্টর অপূর্ব ঘোষ বলেছেন, “এই ভাইরাস আগে মূলত সুইমিং পুল থেকে ছড়াত। কিন্তু এখন নরম্যালি ছড়াচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি-কাশি হচ্ছে। এই ভাইরাসে প্রধানত ফুসফুস আক্রান্ত হয়। ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাই ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়। কিন্তু এখন এই ভাইরাস মহামারীর আকার নিচ্ছে। ‘পিকু’তে বেড একদম নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় আমরা খুব চিন্তিত।”

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুব্রত চক্রবর্তী অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্লু হলেও ভাইরাল ফিভার ততটা থাকছে না। মূলত হাঁচি-কাশি থেকেই বাচ্চাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যদি শিশু অ্যাডিনো ভাইরাস আক্রান্ত হয়, সেক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি বাড়ছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই জ্বর ৩-৪দিনের বেশি থাকছে। যে সব বাচ্চার হাঁপানির ধাত রয়েছে, তাদের এই জ্বর থেকে অনেক সময় নিউমোনিয়া হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে ড্রপলেট ইনফেকশনের প্রভাব বেশি হচ্ছে। অর্থাৎ স্কুল বা খেলার মাঠ থেকে অন্য কোনও বাচ্চার হাঁচি-কাশি থেকে ওই ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ছে।”

তাঁর পরামর্শ, “তাই বাবা-মায়েরা উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং এ জাতীয় লক্ষণ দেখতে পেলেই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আর অবশ্যই স্কুল যাওয়া বা খেলতে যাওয়া বন্ধ রাখুন। নইলে বাকিদের মধ্যেও এই সমস্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.