ইচ্ছে থাকলে বয়স যে পড়াশোনার বাধা হতে পারে না, তা দেখিয়ে দিলেন কেদারনাথ মুখোপাধ্যায়। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সির (সিএ) ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন ৬৬ বছর বয়সে। প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গিয়েছে খবরটি। সদ্য প্রকাশিত ওই ফলাফলে সর্বভারতীয় পর্যায়ে প্রথম দুটি স্থান পেয়েছে কলকাতার দুই যুবা।
কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে শনিবাঐর দেশের বাঘা বাঘা সিএ-দের এক সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তাঁকে সম্বর্ধনা জানান ‘দি ইন্সটিট্যুট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অফ ইন্ডিয়া’-র কর্তাব্যক্তিরা। কেদারবাবুর জন্ম হুগলির বলাগরে। ক্লাশ টেন পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনার পর কলকাতায় এসে ভর্তি হন ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে। এর পর নর্থ সিটি থেকে বি কম পাশ। ফল প্রকাশের আগেই ১৯৭৫-এ ঢুকে পড়েন এলআইসি-র চাকরিতে। কিন্তু পড়াশোনার ইচ্ছে তাঁকে কুড়ে কুড়ে খেত।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যায় ক্লাশ করে এম কম করলেন ’৭৭-এ। চাকরি করতে করতে সে বছর ডিসেম্বরে কস্টিং (ইন্টার) পাশ করেন। যোগ দেন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোজেক্টস অফ ইন্ডিয়ার ঝাড়খন্ড দফতরে। ১৯৮০-র ডিসেম্বরে কস্টিং (ফাইনাল) পাশ করেন। যোগ দেন কোল ইন্ডিয়ায়, মধ্যপ্রদেশের চিড়িমিড়িতে। এবার শুরু করেন কোম্পানি সেক্রেটারিশিপ পড়তে। ‘৮৭-তে তাতেও সফল হন।
একে একে দূর শিক্ষণে কস্টিং ইন্সটিট্যুট থেকে ‘ম্যাক’, ন্যাশনাল ইন্সটিট্যুট অফ পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট থেকে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা, ‘ইকফাই‘ থেকে ‘মাস্টার অফ ফিনান্স’, ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (ইগনু) থেকে এমবিএ এবং অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম করলেন কেদারবাবু। ইন্সটিট্যুট অফ কস্ট অ্যাকাউন্টেন্টস-এর ধানবাদ ও চিড়িসিড়ি চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন কিছুকাল। ২০০১-এ কর্মক্ষেত্রে ফিনান্স থেকে সরে গেলেন কোম্পানি সেক্রেটারিশিপে। যোগ দিলেন ভারত কোকিং কোল লিমিটেডে। ২০১৩-তে অবসর জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে।
কিন্তু পড়াশোনা যাঁর নিত্যসঙ্গী তিনি থামবেন কিভাবে? ‘ক্যাট’ দিয়ে সিএ পড়ার ছাড়পত্র পেলেন। গত নভেম্বরে বসেছিলেন ফাইনালে। তাতে কেল্লা ফতে।
২০১৫-তে স্ত্রী মারা যান। নিঃসন্তান কেদারবাবু থাকেন জোকায়। সিএ, কস্টিং, কোম্পানি সেক্রেটারিশিপের মত দূরুহ পরীক্ষাগুলোয় উৎরানোর রহস্যটা কী? কেদারবাবুর উত্তর, “নিষ্ঠা। ইচ্ছে এবং একাগ্রতাই মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে দিতে পারে।“
ইন্সটিট্যুট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অফ ইন্ডিয়ার (আইসিএআই) পূর্বাঞ্চলীয় ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশিস মিত্র কথায়, সিএ-র মত কঠিন পরীক্ষায় এই বয়সে উত্তীর্ণ হওয়ার কেদারবাবুর এই কীর্তি সত্যি অনুপ্রেরণাদায়ক। ওনার এই অভিজ্ঞতা ও সাফল্য নিজের ও দেশের কাজে ব্যবহৃত হলে ভাল। সিএ পরীক্ষায় কলকাতার ভাল ফল করার একটা ধারাবাহিকতা আছে। আইসিএআইয়ের চমৎকার পরীক্ষাব্যবস্থা মেধাকে স্বীকৃতি দেয়। ওঁর দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন কামনা করছি।