বাগিচা পরিকল্পনার বিষয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেনিং দিলেন বিজ্ঞানীরা ।

মিলন খামারিয়ার প্রতিবেদন। ১১ ই ফেব্রুয়ারী, ২০২১। জীব-জগতের প্রতিটি প্রাণীর জন্য নিজেকে ফুলে-ফলে সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। তার অফুরন্ত ভান্ডার। তবুও জনসংখ্যার চাপে তাতে টান পড়েছে। খাদ্যের অন্যতম উৎস হল ফল। ফলের উপর নির্ভর করেই অনেক প্রাণীর জীবনপ্রবাহ। অনেক প্রাণীর অবলুপ্তি খাদ্যের যোগানের অভাবে। আজকাল দেশীয় ফলের অভাব দেখা যায়। যতটা ফল আমাদের খাওয়ার কথা, তার যোগানে ঘাটতি আছে। এই ঘাটতি পূরণ করতেই ফলচাষের প্রাসঙ্গিকতা। আর চাহিদার কথা মাথায় রেখেই চাষিভাই নতুন করে ফল চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। সর্ব ভারতীয় সমন্বিত ফল গবেষণা প্রকল্পের (ICAR-AICRP on Fruits) খামার থেকে নতুন প্রযুক্তি শিখতে পঞ্চাশ-ষাট জন এসেছিলেন। এটি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনপুর সন্নিহিত মন্ডৌরীতে অবস্থিত। ১০ ই ফেব্রুয়ারী এখানেই আয়োজিত হল একদিনের কৃষক প্রশিক্ষণ শিবির। ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ছিলেন বিশিষ্ট উদ্যানবিদ ও কৃষক-দরদী অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তী।

কল্যাণ বাবু এদিন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা দিয়ে প্রশিক্ষণ-প্রয়োজনীয়তার সুর বেঁধে দেন, “মন্বন্তরে মরি নি আমরা/মারি নিয়ে ঘর করি।”বাংলার চলতি কথা হল,” নিম নিসিন্দা যেথা/মানুষ মরে না সেথা”।”বারো মাসে বারো ফল/না খেলে যায় রসাতল”। ভারতবাসী প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকেন বলেই করোনা তাদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠতে পারে নি। কোভিড পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষ বেঁচে গিয়েছে তার নানান ভেষজ বৈচিত্র্যে, বারোমাসি ফলের সৌকর্যে এবং দেশীয় শাকসব্জি, লতাপাতার ব্যবহারে। করোনা পরিস্থিতিতেও এই প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা অনলাইনে যেমন কৃষকদের সঙ্গে নিত্য সংযোগ বজায় রেখেছেন, তেমনই সতর্কতা মেনে সরাসরি কৃষকের জমিতে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছেন। ফলচাষে মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় বাগান রচনার বিজ্ঞানসম্মত ট্রেনিং প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই বাংলার নানান অঞ্চল থেকে কৃষকেরা এসেছিলেন এদিন। ড. কল্যাণ চক্রবর্তী এদিনের প্রশিক্ষণে নেতৃত্ব দেন।

আজকের কার্যক্রমে প্রধান অতিথি ছিলেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিকাশরঞ্জন সিংহ মহাপাত্র। উপস্থিত প্রবুদ্ধ মানুষের মধ্যে ছিলেন গবেষণা অধিকর্তা অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সাহু, সম্প্রসারণ অধিকর্তা অধ্যাপক উমেশ থাপা, স্নাতকোত্তর পঠন-পাঠনের অধ্যক্ষ অধ্যাপক প্রণব কুমার হাজরা, উদ্যানপালন অনুষদের অধ্যক্ষ অধ্যাপক পল্লব দত্ত ও প্রকল্প আধিকারিক অধ্যাপক দিলীপ কুমার মিশ্র এবং অধ্যাপক ফটিক কুমার বাউড়ি।

অধ্যাপক মিশ্র অনুষ্ঠানে সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,”এই গবেষণা কেন্দ্রে আম, লিচু, কলা, পেয়ারা ও কাঁঠালের মতো পাঁচটি ফলের উপর নানান বিষয়ে গবেষণার কাজ চলছে।গবেষণালব্ধ উন্নত মানের চারা রোপণ করলে চাষিভাইরা ভালো ফসল উৎপাদন করে লাভবান হবেন।সে-ই জ্ঞান ভাণ্ডার কৃষকদের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্যে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয় আমাদের এখানে।প্রশিক্ষণের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তীর মতো বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী।”

অধ্যাপক চক্রবর্তী, অধ্যাপক মিশ্র ছাড়াও এদিন প্রশিক্ষণ দেন ড. সঞ্জিত দেবনাথ। কৃষি সম্প্রসারণ বিষয়ে বলেন অধ্যাপক অমিতাভ বিশ্বাস। হাতে কলমে চারা তৈরির কলাকৌশল শেখানো হয়। আমের জোরকলম, পেয়ারার গুটিকলম, নানান গাছের কাটাকলম বা কাটিং। মাঠ প্রদর্শন করে গাছের সৌধ নির্মাণ বা প্ল্যান্ট আর্কিটেকচার বিষয়ে এবং উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়েও ড. চক্রবর্তী কৃষকদের অবহিত করেন।

আজকের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ড. চক্রবর্তী জানান যে,”আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় আশি হাজার কোটি টাকার ফল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।চাহিদার কথা মাথায় রেখে উন্নত মানের চারা থেকে ফলবাগিচা নির্মাণ করলে চাষিভাইরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হবেন আর ফল চাষে স্বাবলম্বী হলে আমাদের দেশ আরও ‘আত্ম-নির্ভরশীল’ হয়ে উঠবে।”

প্রশিক্ষণান্তে প্রত্যেককে দু’টি উন্নত জাতের ফলগাছের চারা, কিছুটা সার এবং অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। উপস্থিত কৃষকেরাও নানান বিষয়ে মত বিনিময় করেন। পরিশেষে সকলকে অভিজ্ঞান পত্র প্রদান করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.