কলকাতা, ২১ জানুয়ারি: এতদিন আন্দোলন ছিল রাজপথে। এবার তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হল খেলার মাঠে।সম্প্রতি সল্টলেকের যুবভারতীতে মোহনবাগানইস্টবেঙ্গলের ডার্বি ম্যাচে বাঙাল বলে গর্বিত বাঙালির গ্যালারিতে শোভা পেল ‘রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়’।
শুধু তাই নয়, কমিকস চরিত্র বাটুল দি গ্রেটের টিফোর আড়ালে সিএএ আর এনআরসি বিরোধী ব্যানার দেওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ গেরুয়া শিবির। তাদের বক্তব্য, এই ব্যানার দিয়ে খেলার মাঠে দেশ বিরোধী রাজনীতিকে টেনে আনল বামেরা।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্তর প্রশ্ন, ‘রক্ত দিয়ে কেনা মাটি। এই রক্ত কারা নিয়েছিল সেটা বলছেন না কেন? । কারা পূর্ববঙ্গে রক্ত দিয়েছিল আর কেন দিতে হয়েছিল? যাঁরা এই ব্যানার লাগিয়েছেন তাঁরা মুখ ফুটে বলুন। বাংলাদেশে এখনও হিন্দুদের রক্ত ঝরছে। কারা ঝরাচ্ছে তা কেন বলছেন না আপনারা?
বিজেপির যুবনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, ‘যারা মুর্থ, অপদার্থ তারাই বিকৃত। উপস্থাপন করে সস্তা প্রচারের আশায়। শরণার্থীদের কষ্ট বোঝার ক্ষমতা ডাবি দেখতে আসা হতভাগ্যদের নেই। বৈধ কাগজ থাকলে ভয় কী? আমি বলব, রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা, রক্ত দিয়েই বাঁচাব। শুধু কাগজ কেন, টুকরে টুকরে গ্যাং রুখতে, রক্ত দিয়েই দেশ বাঁচাব।’
পশ্চিমবঙ্গের আদি বাসিন্দা রাজনৈতিক ভাষ্যকার সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এটা সুকৌশলে ফের ‘ঘটি-বাঙালের দ্বন্দ্বকে উসকে দেওয়ার পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ‘এটা বামেদের নৱজ্য রাজনীতি। পায়ের তলায় মাটি হারিয়ে মানুষকে উত্যক্ত করা। কোন মাটি কিনেছেন? যারা দেশ থেকে এখানে এসেছিলেন, তারা তোর করিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তারা এখানে মাটি কলে কিনলেন? সরকারিভাবে তাদের বিভিন্ন কলোনিতে থাকার জায়গা দেওয়া হলেও অনেকেরই নাগরিকত্ব ছিল না। মোদি সরকার তাঁদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে। কিন্তু এটা কী ব্যানার দেওয়া হল ? আমার প্রশ্ন, গোটা ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কি বামপন্থী হয়ে গেল? এটা পশ্চিমবঙ্গকে পৃথক জান্দ্র পরিবারের সন্তান এবং শিক্ষাবিদ ড. অচিন্ত্য বিশ্বাসের মতে, গ্যালারিতে এই ব্যানার লাগিয়ে শরণার্থীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হল। তিনি বলেন, শিরনার্থীদের রক্তে পশ্চিমবঙ্গের নয়, পূর্ববঙ্গের মাটি ভিজেছে। তাতে আমাদের পূর্বপুরুষদের দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে রয়েছে। খুন-ধর্ষণের রক্তে ভেজা সেই জমির কাগজ তারা ফেলে এসেছে এ পারে। যা এখন শত্রু সম্পত্তি। এই ব্যানার লাগিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ঐতিহ্যকে অপমান করা হল। ক্লাবের আত্মগরিমাকে কলম্বিত করল কতিপয় বামেরা।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনত্রীৰী শাওন সিংহ বলেন, মূলত আমরা ভণ্ড। কেন পালিয়ে এসেছিলাম তা বলিনি কখনও। ওটা ভুলে গেছি। বাংলা ধর্মের কারণে ভাগ হয়েছিল। আমরা কি জারজ, যে জন্মের প্রমাণ দিতে পারছি না ? যারা এই ব্যানার লাগিয়েছেন, তাঁরা মরিচঝাপির কথা জানেন কি? যাদবপুরে যাৱা আজাদির স্লোগান দিচ্ছেন তাঁদের নকই শতাংশের বাপ-ঠাকুরদা ওপার থেকে পালিয়ে এসেছেন। এখানে বীরত্ব দেখাচ্ছেন। ওপারে গিয়ে দেখান না কেন? তখন বোঝা যাবে।’