বহুতল আবাসনের পর এবার মহানগরের ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের দু’পাশের জনপদে করোনা সংক্রমণের মাধ্যম হিসাবে উঠে এল অটোরিকশার নাম। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার নয়া ‘হাসপাতাল-হাব’ মুকুন্দপুর ও আনন্দপুরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর পরিজনরা অটো বা রিকশা চেপেই লাগোয়া ফ্ল্যাট বা গেস্ট হাউজে যাতায়াত করছেন। হাসপাতাল ও গেস্ট হাউজের যে সমস্ত কর্মী উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত, তাঁরাও মূলত এই দু’টি যানবাহনই ব্যবহার করছেন। তাই সংক্রমিত হাসপাতাল ফেরত যাত্রীদের পাশাপাশি অটোচালকরা নিজেদের অজান্তেই দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতায় কোভিড সংক্রমণের জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে পূর্ব যাদবপুর থানা সূত্রে খবর। স্থানীয় ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার স্বীকার করেন, “হাসপাতালগুলিতে যাতায়াত করা মুকুন্দুপুর ছুঁয়ে যাদবপুর থেকে নয়াবাদ বা গড়িয়া রুটে চলাচল করা দু’জন অটোচালক ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন।” বস্তুত এই কারণেই উদ্বিগ্ন পুরসভার স্বাস্থ্যকর্তারা অটোচালকদের মধ্যে কতজন উপসর্গহীন করোনা রোগী আছে তা জানতে আগামী ৪ আগস্ট মুকুন্দপুরে ফের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শিবির করছে।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের নির্দেশে মুকুন্দপুর বাজারের পাশে এদিন যে অ্যান্টিজেন টেস্ট শিবির হয় সেখানে ৬০ জনের মধ্যে পাঁচজনের করোনা পজিটিভ চিহ্নিত হয়েছে। চরম উদ্বেগের বিষয়, পাঁচজনই উপসর্গহীন এবং দু’জন আবার স্থানীয় বাজারের দোকানদার। হেলথ অফিসারদের আশঙ্কা, শুধু শিবিরে চিহ্নিত এই পাঁচজন বা অটোচালকরাই নয়, এলাকার রিকশাচালক এবং হাসপাতাল লাগোয়া নানা গেস্ট হাউজের কর্মীরাও সংক্রমণের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে কাজ করছেন। চিকিৎসা-হাবে যে সমস্ত ছোট দোকান ও রেস্তোঁরা চলছে সেগুলিও যে সংক্রমণের অন্যতম ক্ষেত্র তা এদিন স্বীকার করছেন বরোর হেলথ অফিসাররা। বাইপাসের দু’পাশের সমস্ত হাসপাতালে ছুঁয়ে চলা অটো নিয়ন্ত্রিত হয় যাদবপুর কেপিসি হাসপাতালের পাশের স্ট্যান্ড থেকে। ছয়টি রুটের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস এদিন দুই অটো চালক সংক্রমিত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,“ এখন হাসপাতালের কর্মী ও রোগীর পরিবারের লোকেরাই অটোতে উঠছেন। তাই কে সংক্রমিত আর কে নন, বোঝা যাচ্ছে না। প্রতিবার যাত্রা শেষে চালকরা গাড়ি স্যানিটাইজ করছেন। তাও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।” উল্লেখ, বাইপাসের এই হাসপাতাল-হাবের ওয়ার্ড ১০৯ নম্বরে এদিন পর্যন্ত ৩৭০ জনের বেশি করোনা আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যভবন ও নবান্নের নজরে গোটা এলাকা।
কলকাতার আরেকটি পুরনো ‘হাসপাতাল-হাব’ একবালপুর এলাকাতেও কোভিড সংক্রমণের মাধ্যম অটো এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা বলে দাবি করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। শহরের ওই এলাকায় কমান্ড হাসপাতাল, কোঠারি থেকে শুরু করে ছোট ছোট অনেকগুলি নার্সিংহোমেও করোনা রোগী রেখে প্রথম থেকেই কোভিডের চিকিৎসা করছেন ডাক্তাররা। ভবানীপুর, একবালপুর, সেলিমপুর থেকে শুরু করে খিদিরপুর এলাকায় সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধির নেপথ্যে এই হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চাকরি করা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ। কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী ও কর্মচারী যে ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তা স্বীকার করেছেন দুই নামী হাসপাতালের শ্রমিকনেতারা। পুরসভার স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছে কোভিড পজিটিভ রোগীদের যে তালিকা সেখানেও এই সমস্ত হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীর নাম রয়েছে। স্বভাবতই মহানগরের পুরকর্তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে কলকাতার পুরনো হাসপাতাল-হাবের চারপাশে সংক্রমণ বৃদ্ধির সংখ্যা ঘিরেও।