কুলীনগ্রাম এক বৈষ্ণবতীর্থ – প্ৰথম পর্ব

প্ৰথম পর্ব
প্রভু কহে কুলীনগ্রামের যে হয় কুক্কুর ।

সেহ মোর প্রিয় অন্যজন রহু দূর।।

কুলীনগ্রামীর ভাগ্য কহনে না যায় ।

শূকর চরায় ডোম সেহ কৃষ্ণ নাম গায়।।


বর্দ্ধমানের কুলীনগ্রামে …শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের পূর্বেও অনেক বৈষ্ণব বাস করতেন। …হ্যাঁ , বৈষ্ণব মার্গের আরো বহু ভাগ বা উপবিভাগ আছে। যাঁরা বিষ্ণুর উপাসক বা তাঁর কোনো অবতার , চিহ্ন, প্রতীক অথবা তাঁর সংসর্গকৃত যে কারুর উপাসক তাঁরাই বৈষ্ণব। যেমন – রামায়েত , নিম্বার্ক, লক্ষ্মী , কৃষ্ণ বা মাধব ,  ব্রহ্মা , বল্লভাচার্য , রুদ্র, বরকরী, জগন্নাথ , হরিদাস, পুষ্টিমার্গ, বিট্টল বা বিঠোবা, রামানন্দি, মহাপুরুষীয় , আলোয়ার, রাগানুগা, হংস , জগন্মোহনী বাউল, বৈষ্ণব সহজিয়া , গৌড়ীয় ইত্যাদি সকলেই বৈষ্ণব সম্প্রদায় । প্রত্যেক সম্প্রদায়ের বা বিভাগকে চিহ্নিত করার জন্য আলাদা আলাদা রকম ভাবে কপাল ও দেহে তিলক আঁকা হয়। কেবলমাত্র তাই নয় , এর মধ্যে কয়েকটি সম্প্রদায় একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী অর্থাৎ, তাঁদের নিকট বিষ্ণুই সব কিছু। 


বাঙ্গালীর নামে – ধামে – মানে স্থাননামে ভূতের ভয় ভাঙাতে , মেঘগর্জন থামাতে , নাম সংকীর্তনে , গানে – যাত্রাপালায় – পুতুলনাচে – কাব্যে – মন্দির টেরাকোটা অলঙ্করণে , বিগ্রহে সেই প্রভু রামচন্দ্র আর বানর বাহিনী এমন ভাবে শিকড়ের সঙ্গে মিশে আছে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা অসম্ভব৷ পণ্ডিতরা বলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণবের বিস্তারের আগে বাঙ্গালী মেতেছিলেন রামায়েত বৈষ্ণবধর্মে৷


চৈতন্যজীবনীকার স্বয়ং জয়ানন্দের পরিবারই ছিলেন রামায়েত বৈষ্ণবধর্মে দিক্ষীত৷ পরে গৌড়ীয় বৈষ্ণবের বিপুল প্রভাবে রামায়েতরা মিশে যান৷ এই কারণে অধিকাংশ প্রাচীন রামচন্দ্র বিগ্রহের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহাপ্রভুর নাম৷ কাটোয়া অঞ্চলে নৈহাটি খাজুরডিহি দাঁইহাট বেড়া গহোগ্রাম পাটুলি প্রভৃতি জনপদে রয়েছে রামসীতা লক্ষণ আর হনুমানজির বিগ্রহ৷ বলগোনা , নিত্যানন্দপুর প্রভৃতি গ্রামে হনুমান পুজো দেখার মতো৷


এ তো মুদ্রার এক পিঠ৷ অন্য পিঠে আছে চমৎকার লোকরামায়ণ৷ মঙ্গলকোটের ঝিলুগ্রামের ধর্মরাজ পুজোয় রামায়ণ পালায় শোনা যায় ধর্মঠাকুরের ব্যতিক্রমী উপাখ্যান৷ অখণ্ড বর্ধমান জেলার বৃহত্তম মেলা দধিয়ার বৈরাগ্যতলা মেলা তো রামায়েতদের অন্যতম ঘাঁটি ছিল৷ 
এমনকী রাঢে়র মহাদেবী যোগাদ্যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কৃত্তিবাসী রামায়ণের মহীরাবণবধের উপাখ্যান৷ ।


স্বয়ং শ্রীচৈতন্যদেবের অমোঘ প্রভাবে শুধু পদাবলী কীর্তন ও হরিনাম সংকীর্তন যেমন সুপ্রচলিত হয় তার সঙ্গে তা আপামর বঙ্গ জীবনের ধর্ম সংস্কৃতি চর্চায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। টহলের গান তার ব্যতিক্রম হয় নি। 


আচণ্ডালে দিল প্রেম আলিঙ্গন

জাতিবিচার তার না ছিল কখন


তবে কিনা প্রাক্ চৈতন্য যুগেও যেমন বৈষ্ণব ছিলেন ( রামায়েত) , পৌরাণিক বৈষ্ণব ধর্মের প্রচার এবং প্রসার রুক্ষ রাঢ় বঙ্গের বুকে হয়েছিল। তাই তন্ত্রের রাঢ় কৃষ্ণ কথায় রসসিক্ত হয়েছিল। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে বাঁকুড়ার শুশুনিয়ার লিপি তার উল্লেখ্য দৃষ্টান্ত। 


যাই হোক, আজ অবধি কুলীনগ্রামে ব্রাহ্মণ হতে শূদ্র সকল  ভূম্যধিকারীদের প্রাধান্য দেখা যায়। বৈষ্ণবমার্গ এখানে জনপ্রিয়। পূর্ব্ব বর্দ্ধমানের বহু গ্রামে শৈব , শাক্ত এবং বৈষ্ণব মার্গ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তার প্রমাণ কুলীনগ্রামের সংস্কৃতি। সম্ভবত চৈতন্যদেবের আবির্ভাবকালে গ্রামস্তরে লোকস্তরে এইরূপ সুসমন্বিত সংস্কৃতি ছিল। তাই বৃন্দাবন দাস প্রতিটি সনাতনী মার্গ সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বৃন্দাবনদাসের চৈতন্যজীবনী চৈতন্যভাগবত গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি , শ্ৰী চৈতন্যের জন্মের পূর্বে , সময়কালে এবং তার পরেও গাঁ – গঞ্জ – নগরের মানুষজন পরম আগ্রহে মনসা , চণ্ডী, শুলী – শিবের গান শুনতেন। যোগীপাল, ভোগীপাল, মহীপালের গানও তখন অবলুপ্ত হয় নি। কৃষ্ণলীলা বা কৃষ্ণযাত্রা , পাঁচালি , রামায়ণ – মহাভারত গীত , নাচগান  সম্বলিত কৃষ্ণলীলা বিষয়ক নাট্যগীতও ছিল। এইসব স্বভাব লোকসাহিত্যিক অনেক সময়েই উচ্চাঙ্গের সাহিত্যরস পরিবেশন করতে পারঙ্গম ছিলেন। কিন্তু সেসবের লিখিত রূপ অজানা।


শ্রীচৈতন্যদেবের প্রাক্ কালে বঙ্গে কৃষ্ণকথার প্রথম ঢেউ উঠেছিল বর্দ্ধমান জেলার কুলীনগ্রামে। এই গ্রাম অত্যন্ত প্রাচীন ও বৈষ্ণব সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শ্ৰীচৈতন্যদেব এই গ্রামটিকে ও গ্রামের মানুষকে পরম শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। 


শ্ৰীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব সেই সময় যখন বাঙ্গালী হিন্দু সঙ্ঘবদ্ধ হতে ভুলে গিয়েছিলেন। প্রকৃত পন্ডিত হতে খেটে খাওয়া মানুষ সকলে সমান ভাবে অত্যাচারিত হচ্ছিলেন। বিদেশীরা সেই সময় ইচ্ছানুসারে  সনাতনী নারীদের দখল করত। প্রতিবাদ করার চেষ্টা হলেও করা যেত না। কারণ , অসংগঠিত সমাজে প্রতিবাদের দণ্ড ছিল মৃত্যু। ধীরে ধীরে শাসকের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করা যায় এই ধারণাই বাঙ্গালী হিন্দু ভুলে গিয়েছিলেন। 


তারপর একদিন , বৈষ্ণব আসর ভাঙাচুরকে কেন্দ্র করে সূচিত হল সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ। নেতৃত্ব দিলেন নবদ্বীপের এক মহাপন্ডিত। অংশগ্রহণ করলেন সাধারণ মানুষ। পরাভূত হয়েছিল কাজি। সঙ্ঘশক্তিতে মানুষ বল ফিরে পেলেন। একক একজন ব্যক্তির ঋজু চরিত্র, সাহস, যুক্তিবোধ, সংগঠনশক্তির জয় সম্পর্কে অনন্য নির্ভরতা সেই মধ্যযুগের বঙ্গকে এক নতুন উজ্জীবনের দ্বারে পৌঁছে দিয়েছিল।
শ্রীচৈতন্যদেবের এই সাড়ম্বর সম্বর্ধনা থেকেই ইতিহাসে কুলীনগ্রামের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর শ্রীচৈতন্যদেবের দৃষ্টি যিনি বা যাঁর রচনা আকৃষ্ট করেছিল ,তিনি বলেন বৈষ্ণব ভক্ত কবি মালাধর বসু। মালাধর বসু রচিত #শ্ৰীকৃষ্ণবিজয় মহাপ্রভুকে আনন্দাপ্লুত করেছিল। সেই সূত্রেই বৈষ্ণব ইতিহাসে গ্রন্থটি বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। 


বলাবাহুল্য , শ্রীকৃষ্ণবিজয়ই সাল তারিখযুক্ত প্রথম বাঙ্গালা গ্রন্থ। গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল ১৪৭৩ – ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে। কুলীনগ্রামে বৈষ্ণব ঐতিহ্য চৈতন্য পূর্ব্ব । চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের কিছু মাত্র আগে বা বলতে গেলে প্রায় সমসাময়িক এই গ্রন্থ বৈষ্ণব সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান  রেখে গিয়েছে। মহাপ্রভুর কালেও কুলীন গ্রামে সেই একই ধারা বজায় ছিল। তার পরিচয় কুলীন গ্রামের নানা পুরাতাত্ত্বিক নির্দশনে, পূজা পার্বণ, আচার অনুষ্ঠানে , সাহিত্যে প্রাপ্ত হয়। প্রাচীন গ্রন্থগুলি ছিল বঙ্গের সংস্কৃতির পরিচয়বাহী । অন্যতম প্রাচীন গ্রাম এই কুলীনগ্রামকে অবলম্বন করে সেকালের ও পরবর্তীকালের বৈষ্ণব সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। 


মধ্যযুগের বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাসে বর্দ্ধমান জেলার একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অধিকাংশ প্রাচীন কবি ও ভক্তের জন্মস্থান অথবা সাধনভূমি এই বর্দ্ধমান। বর্দ্ধমানজেলার প্রাচীন গ্রন্থগুলিকে অবলম্বন করে বৈষ্ণব মার্গ যেমন বিকাশ লাভ করেছিল, তেমনই বৈষ্ণব সাহিত্যচর্চারও কেন্দ্রভূমি হয়ে উঠেছিল এইসব গ্রাম।এসব গ্রামগুলি #বৈষ্ণবপাট রূপে পরিগণিত হত  এবং বৈষ্ণব সংস্কৃতির ইতিহাসে এই সকল পাটগুলির ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এক একজন বৈষ্ণবভক্ত বা সাধকের আবাসস্থল বা সাধনার ক্ষেত্রকে অবলম্বন করে বৈষ্ণব #শ্ৰীপাট গুলি গড়ে উঠত। বঙ্গে বা তার সংলগ্ন বাকি প্রদেশগুলিতে এমন শ্রীপাট কম নেই। কুলীনগ্রামও অনুরূপ একটি শ্রীপাট। 
 নন্দ নন্দন কৃষ্ণ মোর প্রাণনাথ ।
এই বাক্যে বিকাইনু তার বংশের হাত।

কুলীনগ্রামের মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয় মহাপ্রভুকে অভিভূত করেছিল সেই কথা পূর্বেই বলেছি। শ্ৰীচৈতন্যদেব এই গ্রামে আসেন , কয়েকদিন  অতিবাহিত করেন। তখন তিনি এই গ্রামের প্রতিটি মানুষ, তৃণ, তরুশ্রেণী , লতাগুল্ম, পশুপক্ষীকে সম্মানের সঙ্গে উচ্চতম আসন প্রদান করেছিলেন। 
কুলীনগ্রাম হল সেই গ্রাম যেখানে সম্ভবত মাধবেন্দ্র পুরীর চরণস্পর্শ লাভ করেছিল, যে গ্রাম হরিদাস ঠাকুরের আখড়া, দৈনিক একলক্ষ নাম জপকারী জগদানন্দের বাসস্থান, স্বকীয় ধর্মের উপাসক আত্মারাম ঠাকুরের আবির্ভাব যে গ্রামে, সেই গ্রামের মূল্য বঙ্গ তথা ভারতীয় ঐতিহ্য এবং ইতিহাসে কম নয়। 
যেহেতু কুলীনগ্রাম একটি অন্যতম শ্রীপাট হিসাবে পরিচিত ছিল সেহেতু এই গ্রামে গুণী ব্যক্তির অভাব ছিল না । লক্ষ্মীকান্ত বসুর  ( সত্যরাজ )  ন্যায় কৃতী পুরুষ ও কীর্তনিয়া এবং বসু রামানন্দের ন্যায় ভক্ত ও কবি আবির্ভূত হয়েছিলেন। শ্ৰীচৈতন্যদেব স্বয়ং এঁদের পট্টডোরী গ্রহণ করেছিলেন।

 
এই পট্টডোরি তুমি হও যজমান।

প্রতি বর্ষ আসিবে ডোরি করিয়া নির্ম্মান।।


আজ পর্যন্ত সেই পট্টডোরী নীলাচলে পাঠাচ্ছেন বসু বংশ। এই বসু বংশের অমরকীর্তি রূপে সাক্ষী হয়ে আছে গোপালের মন্দির, রঘুনাথ মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, ভুবনেশ্বরী মন্দির, কৃষ্ণরাই মন্দির, গোপীনাথ মন্দির , গোবিন্দ মন্দির। প্রতিটি মন্দিরে নারায়ণ সেবিত হচ্ছেন । তাছাড়াও রাঢ়দেশে,  ধর্ম স্বরূপ নারায়ণের কুর্ম্ম রূপ ধর্মঠাকুর।

একে শনিবার তায় ঠিক দুপুরবেলা।

সম্মুখে দন্ডাইল ধর্ম্ম গলে চন্দ্রমালা।।

গলায় চাঁপার মালা আসাবাড়ি হাথে।

ব্রাহ্মণ রূপে ধর্ম্ম দন্ডাইল পথে।।


রাঢ় বঙ্গের অন্ত্যজ দরিদ্র শ্রেণীর সাধারণ মানুষের ঠাকুর হলেন নারায়নের লৌকিক রূপ স্বরূপনারায়ণ অর্থাৎ ধর্ম্মঠাকুর। তিনি রাঢ় বঙ্গের সাধারণ মানুষের ত্রাণ কর্তা। তাঁর নিকট লাউসেনও যা কালু ডোমও তাই। ধর্মমঙ্গল তাই হয়ত রাঢ় বঙ্গের মহাকাব্য।ধর্মমঙ্গল থেকে জানা যায় তৎকালীন সামাজিক, অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় পরিস্থিতির কথা। এসব কারণেই রাঢ় বঙ্গের গাঁয়ে গাঁয়ে ধর্ম ঠাকুর নানা নামে স্বয়ং অবস্থান করেন।

 
উর ধর্ম্ম আমার আসরে।।

কাতর কিঙ্কর ডরে  আসরে স্মরণ করে।

তেজ ধর্ম্ম বৈকুণ্ঠ নগর ।।

বিড়ম্বনা দন্ড কত  দেখ নাট শুন গীত।

আপনি আসরে কর ভর।।


ধর্মমঙ্গল’ কাব্যের ধর্মঠাকুর নিজেই কৃষি দেবতা। বৃষ্টির দেবতাও। তাঁর কৃপায় কৃষক ভাল ফসল পায়। সপ্তদশতকের কবি রূপরাম চক্রবর্তী তার ‘ধর্মমঙ্গলে’ ধান, কাপাস, কলাই ইত্যাদির কথা উল্লেখ করেছেন। ধর্মমঙ্গল রাঢ়ের মহাকাব্য বলে বিবেচিত হয়। যদিও বিষয়টি বিতর্কিত।রাঢ় বঙ্গ সহ তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বহু বহু স্থানে তাই আজও তিনি কুলদেবতা রূপে পূজিত হন। কুলীনগ্রামে ধর্মঠাকুর ডোম দ্বারা পূজিত হন।


কবি জয়ানন্দ চৈতন্যমঙ্গলে তিন প্রাচীন কবির নামোল্লেখ করেছিলেন , তাঁর মধ্যে অন্যতম ছিলেন মালাধর বসু।

 
রামায়ণ করিল বাল্মীকি মহাকবি।

পাঁচালি করিল কীর্তিবাস অনুভবি।।

শ্ৰীভাগবত কৈল ব্যাস মহাশয়।

গুণরাজ কৈল শ্রীকৃষ্ণবিজয়।।

জয়দেব বিদ্যাপতি আর চণ্ডীদাস।

শ্ৰীকৃষ্ণ চরিত্র করিল প্রকাশ।।


মালাধর বসু কেবলমাত্র একজন প্রাচীন কবিই নন , মধ্যযুগের বাঙ্গালা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় ভাগবত কথা বঙ্গের বুকে প্রচার করেন। এই ভাগবত বৈষ্ণবমার্গীয়দের নিকট অমৃত সমান।  


ভাগবতের #কৃষ্ণস্তুভগবান_স্বয়ং মালাধরের অবলম্বন । আর মালাধরের প্রাণনাথ শ্ৰী চৈতন্যের চিত্তবাণী। মালাধর কেবলমাত্র ভক্ত নন , তিনি জনগনের কবিও ছিলেন। তিনি শ্ৰীকৃষ্ণবিজয় রচনা করেছিলেন কিছু লোকশিক্ষার উদ্দেশ্যে। কারণ সকলেই তো পন্ডিত হতেন না, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষজন সংস্কৃত বুঝতেন না , তাই সকলের জন্য তিনি বাঙ্গালা ভাষায় শ্রীকৃষ্ণবিজয় রচনা করলেন। 

ভাগবত সংস্কৃত না বুঝে সর্বজনে।

লোকভাষা রূপে কহি সেই সে কারণে।।


বসু বংশের দুই কৃতী পুরুষ হলেন লক্ষ্মীকান্ত বসু ( সত্যরাজ) ও রামানন্দ বসু। 


ক্রমশঃ
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ  ১)শ্ৰীপাট কুলীনগ্রাম ও নামাচার্য শ্রীল হরিদাস ঠাকুর
২) শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত
৩) বর্ধমান : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
৪) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.