টোটো বনাম পুলকারের গণ্ডগোল থেকে পাড়া বনাম পাড়া। সেই গণ্ডগোল শেষ পর্যন্ত গড়াল তৃণমূল বনাম তৃণমূলে। আর যা নিয়ে দিনে দুপুরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বেলুড়। নামল র্যাফ। হিমশিম খেতে হল পুলিশকে। গুলি চালানোরও অভিযোগ উঠেছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে বেলুড় থানার অন্তর্গত লিলুয়া বিগবাজার এলাকায় একটি পুলকার মোটরসাইকেলে ধাক্কা মারলে গণ্ডগোল শুরু হয়। জানা গিয়েছে, কয়েকদিন ধরেই টোটো চালকদের সঙ্গে পুলকার সংগঠনের একটা ঝামেলা চলছিল। রবিবার রাতেও বেলুড় বাজারের লালাবাবু শায়ার রোডে একপ্রস্ত গণ্ডগোল হয় দু’পক্ষের। কিন্তু এ দিন তা চরম আকার নেয়। মোটর সাইকেলে পুলকার ধাক্কা মারলে বচসা শুরু হয় টোটো চালকদের সঙ্গে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারুদের স্তূপ জমাই ছিল। শুধু অপেক্ষা ছিল আগুনের ফুলকি পড়ার। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই জঙ্গি সিং গলি নামের একটি পাড়ার বেশ কিছু যুবক এসে পুলকার গোষ্ঠীকে পেটাতে শুরু করে। পাল্টা লোক জড়ো করে পুলকার গোষ্ঠী। বাঁশ, লাঠি, রড নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। অভিযোগ, শূন্যে গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে।
জানা গিয়েছে, প্রাক্তন দুই কাউন্সিলর কৈলাশ মিশ্র ও রাজীব ঠাম্মানের গোষ্ঠীর মধ্যে এই লড়াই অনেক পুরনো। কয়েক বছর আগে বেলুড় লালবাবা কলেজের সামনেও এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল বলে জানা গিয়েছে। এ দিন দু’পক্ষের সংঘর্ষ শেষ পর্যন্ত লিলুয়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কোয়ার্টার এলাকায় ঢুকে পড়ে। দিনের বেলা এমন তাণ্ডবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ।
বেলুড়ে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। এর আগেও সেখানকার তিন ত্রাস রাখাল দাস, প্রভাত চক্রবর্তী এবং লাল্টু পালের গণ্ডগোলে অতীতে দিনে দুপুরে বোমাবাজি, গুলি চালানো সবই দেখেছে হাওড়ার এই জনপদ। একটা সময় তিন ‘দাদা’র কালীপুজোতে অশান্তি ছিল একেবারে বাঁধাধরা। অনেকের মতে, এ দিনের গণ্ডগোলের পিছনে ভরপুর রাজনীতি রয়েছে। হিন্দিভাষী অধ্যুষিত এই অঞ্চলে কাঁচা টাকার কারবার। যার মূল জায়গা ঘুসুড়ির বজরংবলি মার্কেট। লোহার স্ক্র্যাপের কাঁচা পয়সা নিয়েই অশান্তি।
বেলুড় থানার ইনস্পেক্টর অরিজিৎ দত্ত অবশ্য জানিয়েছেন, এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। তাঁর কথায়, “এটা দুটো পাড়ার গণ্ডগোল। রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।” বেলুড়ের এক পুরনোর বাসিন্দার কথায়, “ভোটের আগে এমন ঘটনা এখানে নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই হয়ে আসছে। ষোলর ভোটের আগে ভোটবাগান এলাকায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, দিনের বেলাও রাস্তায় বেরোতে ভয় লাগত।” সোমবারের ঘটনার পর ওই এলাকার মানুষের এখন একটাই আতঙ্ক, রাত বাড়লে না জানি আবার কী হয়!