গতকাল কলকাতার থিওজফিক্যাল সোসাইটি হলে ১৯০৩ সালে সরলাদেবী চৌধুরানী প্রবর্তিত “প্রতাপাদিত্য উৎসব” অনুষ্ঠিত হল। মূল্যবান বক্তব্য রাখলেন অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ, কর্ণেল সব্যসাচী বাগচি, কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহসিকতার জন্য “প্রতাপাদিত্য পদক” দেওয়া হল লাল্টু শী ও দীনবন্ধু ঘরামীকে। মহারাজা প্রতাপাদিত্যের জীবন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হল। হিন্দু সংহতির সভাপতি শ্রী দেবতনু ভট্টাচার্য “প্রতাপাদিত্য ক্যালেন্ডার” উদ্বোধন করলেন। সংস্কার ভারতীর কিশোরেরা বীররসাত্মক সঙ্গীত পরিবেশন করল।
প্রখ্যাত সাংবাদিক শ্রী রন্তিদেব সেনগুপ্ত নির্বাচনী কাজের জন্য আসতে না পারলেও একটি ভিডিও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করলেন শ্রী অনিমিত্র চক্রবর্তী।
কানায় কানায় পূর্ণ অনুষ্ঠান গৃহ বারে বারে জানিয়ে দিচ্ছিল- আত্মবিস্মৃত বাঙালী হিন্দু তার অতীত সম্পর্কে আবার আগ্রহী হতে শুরু করেছে। এই সব অনুষ্ঠান আরো বৃহৎ পরিসরের দাবি রাখে। এর সুবাস আরো ছড়িয়ে পড়বে দিকে দিকে। বাঙালী হিন্দু মোগল, ইংরেজ, কমিউনিস্টের আস্তরন সরিয়ে খুঁজে পাবে তার নিজস্ব ঐতিহ্যকে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা তাদের বক্তব্যে বাঙালির গর্বের ইতিহাস প্রতাপাদিত্যের সাশনকালের বিভিন্ন দিক, মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং বাঙালি হিন্দুর হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে কিভাবে তাঁর থেকে প্রেরণা পেতে পারে, তা তুলে ধরেন। সব্যসাচী বাগচী তার বক্তব্যে বলেন যে, প্রতাপাদিত্য মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাংলায় হিন্দু শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই গৌরবের দিনগুলিকে বাঙালির ভুলে গেলে চলবে না।বরং তা থেকে প্রেরণা নিয়ে বাঙালি হিন্দুকে জিহাদি শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে হবে এবং যদি প্রয়োজন হয়, তবে প্রতিশোধের রাস্তায় হাঁটতে হবে ।
সাহিত্যিক বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে বাঙালি হিন্দুর মধ্য থেকে হারিয়ে যাওয়া লড়াইয়ের ধারাটি তুলে ধরেন।তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাঙালি হিন্দু লড়তে জানে না, এ এক মিথ্যে প্রচার। বাঙালি হিন্দু লড়তে জানে।তবু বারবার বাঙালি হিন্দুকে হারতে হয়।তার কারণ বাঙালির মধ্যে বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতার অভাব। তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজ সবাইকে বাঙালি হিন্দুর গৌরব ফেরানোর লড়াইয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী পাশে দাঁড়াতে হবে। তবেই বাঙালি তাঁর হৃৎগৌরব ফিরে পাবে।
বঙ্গের বীরযোদ্ধা মহারাজা প্রতাপাদিত্যের স্মরণে কলকাতায় পালিত হলো ‘প্রতাপাদিত্য উৎসব’। এই উৎসবের আয়োজক ছিল ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’ নামক একটি সংগঠন। এই অনুষ্ঠানে সহযোগী ছিল #হিন্দু_সংহতি। কলকাতার থিওসোফিক্যাল সোসাইটি হলে এই অনুষ্ঠানে কলকাতার বহু জ্ঞানী-গুণী ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ উপস্থিত ছিলেন। শুরুতে সবাই মহারাজা প্রতাপাদিত্যের ছবিতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। প্রতাপাদিত্য স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শ্রী বিমল নন্দী, শ্রী সব্যসাচী বাগচী এবং সাহিত্যিক বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়।
এছাড়াও, এই অনুষ্ঠানে হিন্দু সংহতির পক্ষ থেকে মহারাজা প্রতাপাদিত্য স্মরণে একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। সেটি প্রকাশ করেন হিন্দু সংহতির সভাপতি শ্রী দেবতনু ভট্টাচার্য। এছাড়াও আয়োজকদের তরফে কল্যাণ সরকার, ধ্রুব মহাজন, প্রবীর ভট্টাচার্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এবার আপনাদের এমন কয়েকটি ঘটনার কথা শোনাব যা কেবল দুঃসাহসিক নয়, রহস্যঘন রোমাঞ্চকরও বটে। যা বাংলার সিনেমার গল্পকেও হার মানায় …
সালটা ১৯৯৭, হঠাৎ করে নিখোঁজ ক্যানিং স্টেশন সংলগ্ন কুজি পাড়ার 13 বছরের মেয়ে বৈশাখী মান্না (নাম পরিবর্তিত)। পরে জানা যায় কাজের প্রলোভন দেখিয়ে মুম্বাইয়ের তারদেও থানার পাশেই, হাজিআলী মসজিদের নিকটে পতিতা পল্লীতে বিক্রি করে দেয় তাদেরই প্রতিবেশী চম্পা ও তার মেয়ে তিন্নি (নাম পরিবর্তিত)। সেখানে তাদের কাছ থেকে
বৈশাখীকে কিনে নিয়েছিল কোনো এক রাহিম (নাম পরিবর্তিত) । ঠিক একই রকম ভাবে কাজ দেওয়ার নাম করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল মানিশা চ্যাটার্জী (নাম পরিবর্তিত) নামের গৃহবধূকেও।
মানিশা চ্যাটার্জী অনেক কষ্টে মুম্বাই থেকে পালাতে সক্ষম হলেও বছর ১৩-এর ছোট্ট
বৈশাখী মান্না তা পারেনি।
তখন চলছে দুর্গাপূজো। সপ্তমীর দিন বৈশাখীকে উদ্ধারের আশায় আর এক অসহায় গৃহবধূ মানিশা চ্যাটার্জীকে দিয়ে ক্যানিং থানার লিখিত সার্টিফিকেট নিয়ে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বাংলার এক তরুন সাহসী যুবক, যার অদমনীয় সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধির জোরে উদ্ধার পায় বাংলার বুক থেকে হারিয়ে ১৩ বছরের ছোট্ট বৈশাখী। গ্রেফতার করা হয় মহিলা পাচারকারী রাহিমকে। সাথে সাথে উদ্ধার হয় আরও চার অল্প বয়সী মেয়েকেও।
এরপর আসি, 2004এর ঘটনায় …
ক্যানিং আমড়াবেড়িয়া গ্রামের সুন্দরী গৃহবধূ দিপ্তি ধরকে (নাম পরিবর্তিত) ফাইভষ্টার হোটেলের কাজ দেওয়ার নাম করে কর্নাটকের ব্যাঙ্গালোরে বিক্রি করে দিয়েছিল তার পাতানো আত্মীয় দক্ষিন 24পরগনার কুলতলী থানার অন্তর্গত জামতলা নিবাসী নির্মলা সাউ ও মানসী সাউ (নাম পরিবর্তিত)। নির্মলা সাউ তখন ICDS-এ চাকরি করতো। এই
নির্মলার যোগাযোগ ছিল কোলকাতার পার্কসার্কাসের রেশমা নামের এক মুসলিম মেয়ের সঙ্গে। রেশমার (নাম পরিবর্তিত) একটা হিন্দু নামও ছিল যার আড়ালে এইসব প্রতারনার কাজ করতো। দিপ্তি যখন বুঝতে পারলো সে বিক্রি হয়ে গেছে এবং নোংরা কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে তখন প্রতিবাদ করে। ফলস্বরূপ তাকে দুবাই পাঠিয়ে দেবার জন্য পাসপোর্টের তোড়জোড় শুরু হয়, ঠিক এমনই একসময় দিপ্তি বাড়ির সাথে যোগাযোগ করে এবং বাড়ির লোকেরা ঘটনাটা সামনে নিয়ে আসেন। এবারও তাকে উদ্ধারে নামেন বাংলার সেই তরুন সাহসী যুবক। প্রথমে ফোনের সূত্র ধরে জানতে পারা যায় যে ওটা ব্যাঙ্গালোরের মেরিয়ান পাল্লা নামের একটা জায়গা তারপর বৈদ্যনাথ মন্ডল নামের এক ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্গালোর উদ্দেশ্য রওনা হন সেই যুবক। পুলিশের রেইড করার সময় বৈদ্যনাথ বাবু সাহায্য করেন এবং দুদিন থেকে ওখান থেকে ক্যানিং ফিরে আসেন। সেই সঙ্গে বিজেপির অনন্ত কুমার এর ভাই দিবাকর কুমার প্রচণ্ডভাবে সাহায্য করে ছিলেন উদ্ধারকারি সেই যুবককে। সেই অভিযানে দিপ্তি ছাড়াও আরও প্রায় ছয়জন মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। দিপ্তি ক্যানিং এ ফিরে এলে এবার ক্যানিং পুলিশ দিপ্তিকে নিয়ে আসামী ধরার জন্য ব্যাঙ্গালোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সঙ্গে উদ্ধারকারি সেই বাঙ্গালী যুবককেও সঙ্গে নেওয়া হয় এবং FIR অনুযায়ী ইয়ুসুফ আলি (নাম পরিবর্তিত) ও ঐ রেশমাকে গ্রেপ্তার করে ট্রনজিডে ক্যানিং এ নিয়ে আসলে আলিপুর জেলখানায় তাদের স্থান হয়।
এর পর পর আরও কিছু উদ্ধারের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন সেই যুবক,
যেমন বাসন্তী থানার অন্তর্গত আদিবাসী পাড়ার নলিয়া সর্দারের মেয়ে আদুরীকে (নাম পরিবর্তিত), ক্যানিং এর আমড়াবেড়িয়ায় দিপ্তি ধরের পাশের বাড়ি মমতাজ আলমের মেয়ে রুজিয়া আলমকে (নাম পরিবর্তিত)। রুজিয়াকে একটা মুসলিম ছেলে, ভালোবেসে বিয়ে করার নাম করে দূরে নিয়ে চলে যায়।এক্কেবারে পুনে তে। পুনাতে পেট নামক পতিতা পল্লী থেকে উদ্ধার করা হয় তাকে। দুর্দান্ত রহস্যঘন রোমাঞ্চকর ছিল সে কাহিনী। ওখানে ও মালকিন কে তো গ্রেপ্তার করা হলো।সঙ্গে সঙ্গে রুজিয়া সহ মুর্শিদাবাদের জেসমিনা খাতুন, নদীয়ার সুবর্ণা খাতুন ও নেপাল দেশের সারিকাকে (নাম পরিবর্তিত) উদ্ধার করা হলো।
উদ্ধারের এই ঘটনার শুরু আছে কিন্ত শেষ নেই,
ক্যানিংএর 1নং দিঘীর পাড়ের জয়দেব পল্লীর বাসিন্দা অসীম হালদারের মেয়ে মিমি হালদারকে (নাম পরিবর্তিত) দিল্লীর কমলা মার্কেট থানার পাশেই বিশাল রেড লাইট এরিয়া, জে বি মার্কেট, ওখান থেকে উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে সিঙ্গুরের আয়ুশি ঘোষকেও। মিমিকে দিল্লী থেকে আনবার সময় শিয়ালদহ স্টেশন থেকে যে মহিলা মিমিকে খাবারের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে বেহুশ করে দিল্লীতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিয়েছিল সেই মহিলাকে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের সহায়তায় নিভা পাল ও মেঘনাথ আগারওয়াল (নাম পরিবর্তিত) নামে আরও একটা লোককে গ্রেফতার করে পুলিশ।পরে
মেঘনাথ জামিন পেলেও নিভা পালের ৫ বছরের জেল হয়ে ছিল।
ছোট্ট আরও একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করবো…
ক্যানিং মাছ বাজারে মাছ বিক্রি করে আমিয় দাসের মেয়ে মেঘা দাসকে (নাম পরিবর্তিত) ভালো কাজ দেওয়ার নাম করে পুণে তে বিক্রি করে দেয় অরুন মদকের মেয়ে,তৃষ্ণার বান্ধবী দিপিকা (নাম পরিবর্তিত)। এক্ষেত্রে কোলকাতার ভবানী ভবনকে সব রকমের সাহায্য করে মেঘার বাবা। আমিয় বাবুকে সঙ্গে নিয়ে পুণে গিয়ে মেঘাকে উদ্ধার করে বাঙ্গালার সেই অসমসাহসী সেই যুবক।
সেই যুবক যার হাত ধরে উদ্ধার পায় অসহায় বঙ্গ রমণী থেকে ছোট্ট ফুলের মতো নিস্পাপ মেয়েগুলো। যার সাহস এবং উপস্থিত বুদ্ধি প্রশংসনীয় শুধু নয় সাথে সাথে গর্বিত করে বাঙ্গালিকে সমাজকেও। তিনি দীনবন্ধু ঘরামী যার দুঃসাহসিক অভিযানের কথা এতক্ষণ শোনালাম আপনাদের …
সেই দীনবন্ধু ঘরামীকে প্রতাপাদিত্য পদক দিলেন কর্ণেল সব্যসাচী বাগচী। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা লাভ জিহাদ ও নারী পাচার প্রতিরোধ করার কাজে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য হাওড়া জেলার শ্রী লাল্টু শী এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার শ্রী দীনবন্ধু ঘরামীর হাতে বিশেষ সম্মান প্রতাপাদিত্য পদক তুলে দেন।