একেবারে ‘কাঁটে কি টক্কর।’
ভোটের এখনও কুড়ি দিন বাকি। কিন্তু ব্যারাকপুর যেন ফুটছে। তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষে ফের উত্তপ্ত নৈহাটি। বিজেপি-র অভিযোগ, সোমবার রাতে তৃণমূলের বাহিনী গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি-র একটি পার্টি অফিস। পাল্টা তৃণমূল অভিযোগ করেছে, গভীর রাতে অর্জুনের বাহিনী জ্বালিয়ে দিয়েছে একটি ক্লাব। সব মিলিয়ে দু’পক্ষের গণ্ডহোলে আহত হয়েছেন তিন জন। পুড়ে গিয়েছে তিনটি মোটর সাইকেল এবং একটি বোলেরো গাড়ি।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই উত্তেজনায় ফুটছে শিল্পাঞ্চল। অর্জুনের কথায়, “সন্ধে বেলা দলীয় কর্মীর বাড়িতে বসে মিটিং করছিলাম। তখনই তৃণমূলের এক-দেড়শ ছেলে এসে ভাঙচুর শুরু করে।” স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, “গভীর রাতে অর্জুনের লোকজন কুলিয়াগড়ে একটি ক্লাবে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।”
এত দিন তৃণমূলের হয়ে ভোট করাতেন অর্জুন। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, ‘স্ট্রং ম্যান’ বিজেপি-তে যাওয়া মানেই অশান্তি অবধারিত। হচ্ছেও তাই। কয়েক দিন আগে ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে অর্জুন সিংকে সরে যেতে হয়। আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন তিনি। ১১-২২ ব্যবধানে হারতে হয় তাঁকে। তারপরই গণ্ডগোল শুরু হয়ে গিয়েছিল, জগদ্দল, ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া-সহ শিল্পাঞ্চলের একাধিক এলাকায়।
সোমবার সন্ধে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নৈহাটিতে যা চলেছে, তা দেখে আতঙ্কিত অনেকেই। বিজেপি-র বিরুদ্ধে গুলি চালানোরও অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। যদিও পুলিশ প্রশাসন গুলি চালানোর কোনও প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছে। বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে কুলিয়াগড়ে। চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুট মার্চও।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনীতির খবর রাখা অনেকেই মনে করেন, এখানে চিরকালই শক্তির রাজনীতির দাপট। বাম জমানাতেও একই রকম গণ্ডগোল দেখা যেত। কিন্তু বামেদের সেই প্রতাপের সময়েও অর্জুন জোড়া ফুল ফুটিয়েছিলেন ঘরের মাঠে। রাজ্যে বামফ্রন্ট ২৩৫টি আসন পাওয়ার বছরেও ভাটপাড়া জিতে নিয়েছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার ‘বাহুবলী’ নেতা। অনেকের মতে, এখন লড়াইটা সেয়ানে সেয়ানে। তৃণমূল শাসক দল, উল্টো দিকে অর্জুনেরও নিজস্ব একটা শক্তি আছে। একাধিক জুট মিল এবং কারখানার শ্রমিক মহল্লায় অর্জুনই ‘দ্য বস।’ ফলে পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই আশঙ্কা, ভোটের দিন যত এগোবে, ততই উত্তপ্ত হবে ব্যারাকপুর।