আজ আমাদের পৃথিবী মহা সংকটের মুখোমুখি। করোনা ভাইরাস-এর জন্য সাময়িকভাবে বিপর্যস্ত ।
বিশ্বজুড়ে অর্ধ কোটিরও বেশি লোক ইতিমধ্যেই আক্রান্ত ,আড়াই লক্ষাধিক মৃত্যুর কবলে পতিত । চিকিৎসা শাস্ত্রে, অর্থনীতিতে উন্নত বলে পরিচিত দেশ গুলিও এই বিপদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছে না। ইতালি থেকে আমেরিকা পর্যন্ত সমগ্র পাশ্চাত্য দুনিয়ায় শোনা যাচ্ছে এর অশুভ পদধ্বনি।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার তাগিদে গৃহবন্দী প্রায় সকলেই। সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে ভারতবর্ষও বিপদের সম্মুখীন এবং বিপদ শুধুমাত্র চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং অধিক জনঘনত্বের দেশ হওয়ার কারণে আমাদের দেশের বিপদ অর্থনীতি শাস্ত্রের পরিধিতেও ব্যাপ্ত ।
মানুষ যখন কোন বিপদে পড়ে তখন সেই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য নিজের ন্যূনতম যা সম্বল থাকে তার মাধ্যমেই সে সংগ্রাম করে থাকে। এক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের অর্থাৎ সমগ্র দেশবাসীকে তাদের সামগ্রিক যা ন্যূনতম সম্বল তার মাধ্যমেই সংগ্রাম করতে হবে। প্রথমতঃ,সংগঠিত ক্ষেত্রের যারা কর্মী বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের কর্মী এবং সরকারি কর্মী যারা বেতন এবং পেনশন পাচ্ছেন তাদের ক্রয়ক্ষমতা থাকছে অটুট অর্থাৎ তাদের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে না ।সংখ্যার বিচারে খুব অল্প হলেও দেশের যে অংশটি উচ্চবিত্তের পর্যায় পড়েন তাদের ক্রয়ক্ষমতাও অটুট থাকছে অর্থাৎ তাদের চাহিদাও হ্রাস পাচ্ছে না ।
সমাজের বাকি অংশের লোকেদের ক্রয়ক্ষমতা অর্থাৎ চাহিদা অনেক হাসপ্রাপ্ত হলেও ন্যূনতম কিছুটা ক্রয় ক্ষমতা অর্থাৎ চাহিদা তাদেরও বজায় থাকবে ।
সমাজের এই সব শ্রেণীর ব্যক্তিরা যদি তাদের চাহিদা পূরণ করেন শুধুমাত্র স্বদেশী জিনিসের দ্বারা তাহলে সেই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে আমাদের দেশের উৎপাদকরা এবং পরিষেবা প্রদানকারীরা নিজেদের হাতে কিছু কাজ পাবে ।এই সব শ্রেণীর ব্যক্তিরা মানে সম্মিলিত ভাবে আমরা সবাই । অর্থাৎ স্বদেশী জিনিসের মাধ্যমে আমরা সবাই যদি আমাদের নিজেদের চাহিদা পূরণ করি তাহলে আমাদের দেশবাসী কিছু কাজ পাবে নিজেদের হাতে।আমরা যদি বিদেশি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় না করে স্বদেশী খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করি তা হলে স্বদেশী কৃষি ক্ষেত্র কিছুটা বাজার পাবে ,আমরা যদি বিদেশি শিল্পজাত দ্রব্য ক্রয় না করে স্বদেশী শিল্পজাত দ্রব্য ক্রয় করি তাহলে স্বদেশী শিল্পক্ষেত্র কিছুটা বাজার পাবে, আমরা যদি বিদেশি পরিষেবা গ্রহণ না করে স্বদেশী পরিষেবা গ্রহণ করি তাহলে স্বদেশী পরিষেবা ক্ষেত্রও কিছুটা বাজার পাবে। অর্থাৎ বলা যায় নিজেদের সমস্ত চাহিদা স্বদেশী দ্রব্য ও পরিষেবার মাধ্যমে পূরণ করলে সামগ্রিকভাবে দেশের সবকটি ক্ষেত্রই কিছুটা বাজার পাবে অর্থাৎ সবকটি ক্ষেত্রেই চাহিদা বৃদ্ধি পাবে ফলে সবকটি ক্ষেত্রই উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হবে এবং সবকটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা কিছুটা উপার্জন করতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ এইসব ব্যক্তির ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ তাদের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। তারা যদি আবার তাদের চাহিদা স্বদেশী দ্রব্য ও পরিষেবার মাধ্যমে পূরণ করে তাহলে তা বাজারে নতুন করে চাহিদা সৃষ্টি করবে যা পুনরায় উৎপাদন বৃদ্ধি ও উপার্জন বৃদ্ধি ও ফলস্বরুপ ক্রয় ক্ষমতা ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াবে । অর্থাৎ বলা যায় চাহিদা বৃদ্ধি-উৎপাদন বৃদ্ধি-উপার্জন বৃদ্ধি-ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি-পুনরায় চাহিদা বৃদ্ধি এরকম একটি অর্থনৈতিক বৃদ্ধির চক্রে প্রবেশ করবে ভারতীয় অর্থনীতি এবং এই অর্থনৈতিক বৃদ্ধির চক্রে গতি সঞ্চারিত হলে তবেই ভারতীয় অর্থনীতির রথ এই দুঃসময়কে কেউ অতিক্রম করে সুসময়ের দিকে অগ্রসর হতে পারবে ।
আপাতদৃষ্টিতে এও মনে হতে পারে যে করোনার জন্য বিপর্যয় তো গোটা পৃথিবীতেই এসেছে তাহলে শুধু ভারত কেন, এই চিন্তা তো গোটা পৃথিবীর সমস্ত দেশের হওয়া উচিত। বিশ্বায়নের এই যুগে স্বদেশী অর্থনীতির চিন্তা করা কত প্রাসঙ্গিক এ প্রশ্নও অনেকের মাথায় আসতে পারে ।উত্তরে বলা যায় ,করোনা উত্তর পৃথিবীতে প্রায় সমগ্র দেশই নিজেদের দেশে স্বদেশী অর্থনীতির শরণাপন্ন হতে চলেছে এমনকি বিশ্বায়নের উদগাতা দেশ আমেরিকা পর্যন্ত আজ “আমেরিকা শুধুমাত্র আমেরিকানদের জন্য ” এই স্বদেশী চিন্তার দ্বারস্থ হচ্ছে নিজেদের অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের জন্য ।তারা বিদেশী কর্মীদের আমেরিকায় আসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে দেশী কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুরক্ষার জন্য অর্থাৎ বলা যায় নিজেদের অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য স্বদেশীর পথে হাঁটছে আমেরিকা। ভারতকেও নিজেকে বাঁচানোর জন্য স্বদেশী অর্থনীতির এই পথেই হাঁটতে হবে।
অতএব করোনা পরবর্তী ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য আমাদের দেশের প্রত্যেক মানুষকে শপথ নিতে হবে আজ থেকে আমরা কোনরকম বিদেশী জিনিস ব্যবহার করব না ,নিজেদের চাহিদা পূরণ করব শুধুমাত্র স্বদেশী জিনিসের ও পরিষেবার মাধ্যমে। স্বামীজির কথানুযায়ী আমার দেশবাসী, ভারতবাসী হল আমার রক্ত ,আমার ভাই ,তারা যদি নিজেদের দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের কিছুটা রসদ পায় আমারই স্বদেশী বস্তু ও পরিষেবা ক্রয়ের মাধ্যমে চাহিদা নিবারণের ফলে তবে তার চেয়ে বড় পুণ্যকর্ম আর কিছু হতে পারে না। তাই এ সময় আমাদের প্রথম শপথ হওয়া উচিত সম্পূর্ণরূপে বিদেশি বর্জন এবং স্বদেশী গ্রহণ।
দেশের অর্থনৈতিক নবজাগরণের জন্য তাই আজ আবাহন করতে হবে সেই স্বদেশী অর্থনীতিকে এবং
এই স্বদেশী অর্থনীতিকে দেশে পুণরায় ফিরিয়ে আনার জন্য দরকার মানুষের মনের মধ্যে স্বদেশী ভাবনার বিকাশ, যে স্বদেশী ভাবনার বিকাশ ঘটেছিল আমাদের দেশে একদা , যখন আমরা মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নিতে পেরেছিলাম, তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না আর আমরা ছিলাম পরাধীন একটি দেশমাত্র ,সেই সময় ব্রিটিশের একটি সেটেলড ফ্যাক্ট বঙ্গভঙ্গ কে আমরা আনসেটেলড করে দিতে পেরেছিলাম শুধুমাত্র স্বদেশী গ্রহণ করে শুধুমাত্র বিদেশি বয়কট করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকান পণ্য সামগ্রী তে যখন জাপানের বাজার ভরে গিয়েছিল তখন কিন্তু জাপানিরা আমেরিকান পণ্য কিনে নি ,আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার আপেল বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম আপেল ,জাপানের বাজারে পড়ে পচে ছিল, জাপানিরা কেনেনি ,পরে বিনামূল্যে দিলেও নেয়নি, না নিয়ে নিজেদের দেশের অপেক্ষাকৃত কম মানের আপেল কিনে খেয়েছিল । তাদের বক্তব্য ছিল আমরা যদি আমাদের দেশের আপেল কিনে না খাই তাহলে আমাদের দেশের আপেল চাষিরা আপেলের দাম পাবে না ।এই স্বদেশি চেতনা ছিল বলেই জাপানের এত উন্নতি, এই স্বদেশি চেতনা ছিল বলেই আমরা একদা ব্রিটিশকে পরাজিত করতে পেরেছিলাম, এই স্বদেশী চেতনা ছিল বলেই আমরা এক সময় গোটা পৃথিবীর অর্থনীতিতে প্রভুত্ব করেছিলাম, এই স্বদেশী চেতনা যদি আবার ফিরে আসে তাহলে ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে।
আপামর দেশবাসীর মনের মধ্যে এই স্বদেশী চেতনার বিকাশ ঘটানোর জন্যই স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ দেশব্যাপী একটি ডিজিটাল হস্তাক্ষর অভিযানের কর্মসূচি নিয়েছে । সকলের কাছে আবেদন ,নিম্নলিখিত লিঙ্কে গিয়ে, স্বনির্ভর ভারত গড়ার লক্ষ্যে ,ডিজিটাল হস্তাক্ষর করে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের এই দেশব্যাপী অভিযানের সামিল হন ।
(25 শে মে থেকে শুরু)স্বদেশী স্বনির্ভরতা অভিযানের অংশ হিসেবে
আমিও স্বনির্ভর ভারত দেখতে চাই
আসুন আমরা সকলে মিলে ভারতকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ করি
নিম্নলিখিত লিঙ্কে ক্লিক করে ডিজিটাল হস্তাক্ষর অভিযানে সামিল হই
এটিকে আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ও বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন