উদেতি পূর্বং কুসুমং ততঃ ফলং
ঘনোদয়ঃ প্রাক্ তদনন্তরং পয়ঃ।
নিমিত্তনৈমিত্তিকয়োরয়ং ক্রমঃ
তব প্রসাদস্য পুরস্তু সম্পদঃ।।
অর্থাৎ প্রথমে ফুল ফোটে তারপর ফল হয়। প্রথমে মেঘ তারপর বৃষ্টি…. কার্যকারণে এটিই ক্রম , কিন্তু তোমার প্রসাদের পূর্বেই সম্পদের প্রাপ্তি হয়েছে।
ঠিক এইভাবে স্রষ্ঠার করুণা উপলব্ধির জন্য জগতের রোগ দূর করে দিতে প্রথমে ভেষজের প্রকাশ পরে আয়ুর্বেদের সৃষ্টি করেছেন ।
সোহয়মায়ুর্বেদঃ ভৈষজ্যবেদমাদিশেৎ শ্বাশত।
ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাচীনতা কি ? এই প্রশ্ন মনে জাগ্রত হলে – সবার আগে আসে বেদের প্রসঙ্গ। বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞান এর পূর্ণরূপ নিয়েছে তাতে ভারতের দান সুমহান। বেদ বিদ্যা নিঃসৃত আয়ুর্বেদের দানকে বিংশ শতাব্দীর মানবসভ্যতা নতশিরে গ্রহণ করে সুদূর ভবিষ্যতকে সত্য দর্শনের পথে নিয়ে চলেছে । বেদ দ্বারা সমগ্র জগতের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়েছে।
শতং হ্যস্যভিষজঃ সহস্র বিরুধঃ। ( অথর্ব বেদ)
তুমি ভিষক রূপে এবং সহশ্র সহশ্র ভেষজ , বৃক্ষ , গুল্ম, লতারূপে আমাদের কাছে প্রকাশিত হও।
বেদ সুক্তি অবলম্বন করে ভারতে ভুরিভুরি আয়ুর্বেদ গ্রন্থ সৃষ্টি হয়েছে ।যদিও সেই সমস্ত প্রাচীন গ্রন্থ বহুলাংশে দুর্লভ। তথাপি পরবর্তীকালে ভেল, ক্ষারপাণি, অগ্নিবেশ নবীতক প্রমুখের রচিত কয়েকখানি সংহিতা গ্রন্থে তাদের সারসংকলন দেখতে পাই।
কালের বিবর্তনে আলো, মাটি , জলের ন্যায় আয়ুর্বেদ সংহিতা গুলিতেও পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধিত হয়েছে। এই পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ফলশ্রুতি হলো ভারতবর্ষের আয়ুর্বেদ বিদ্যা চর্চা।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অতি প্রাচীনকাল থেকে আরম্ভ করে আধুনিক কাল পর্যন্ত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে ভারতীয় বনৌষধি গুলির পর্যালোচনা সম্পর্কে বর্তমানে বহু সমীক্ষা করা হয়েছে। প্রতিটি ভেষজের রাসায়নিক সংযুক্তি আলোচনা দ্বারা ভারতের বনৌষধর রস , গুন, বীর্য বিপাক প্রভৃতি রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে কতখানি কার্যকর তা তীক্ষ্ণদৃষ্টি সহকারে বিশ্লেষণ করা হয়েছে । তা ব্যতীত আয়ুর্বেদের ক্ষেত্রে এক বিশেষ বিজ্ঞান অতিদেশের অভিব্যক্তিও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বর্তমানে সমালোচিত হয়েছে, যে জ্ঞান এর পরিনতি টোটকা ঔষধ।
পৃথিবীর প্রতিটি ভূখণ্ডের আকাশ , বাতাস , জল আগুনের তারতম্য খুব সহজেই উপলব্ধ হয়। ঋতুগুলিতে কালের ঐক্য থাকলেও তাদের স্বরূপগত এবং গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিষ্কার অনুভূত হয়। ভাব, ভাষা ,আচার-ব্যবহার সামাজিক রীতিও এক হয় না, এইসব বৈশিষ্ট্যের জন্যই। এই সহজ বাস্তবরূপ উপলব্ধি করেই ভারতের প্রাচীন বৈদিক সুক্ত প্রণেতারা আমাদের অন্যতম নিকট প্রতিবেশী বৃক্ষলতাদিও যে এমনই ভূ, অগ্নি, বারি, আকাশ , বাতাসের তারতম্যের দ্বারা পৃথক পৃথক সত্ত্বায় অবস্থান করে এবং তারাও যেন স্বেচ্ছায়, অনিচ্ছা এবং অপরের ইচ্ছায় ভূ স্তরের পৃথক পৃথক সত্ত্বা বুঝে নিজেরা এবং তাদের সন্তানদের জন্য প্রিয় ভূমি নির্বাচন করে – এরই রূপ প্রদান করেছেন প্রাচীন মুনি ঋষিরা ঋক্ , যজু , অথর্ব বেদে এবং সংহিতার যুগে বৃক্ষায়ুর্বেদে।
যজুর্বেদের মাধ্যনন্দি শাখার দ্বাদশ অধ্যায়ে ৮০ সুক্ত থেকে সুদীর্ঘ সম্পূর্ণ অধ্যায়টিতে, ঋকবেদের কয়েকটি মন্ডলের স্থানে স্থানে এবং অথর্ববেদের বৈদ্যককল্পের প্রায় সর্বত্রই বৈদ্যক গুরু #সোমের নিকট বৃক্ষ লতাদির সমাগম এবং তাদের প্রত্যেকের কি কি রোগ দূর করার সামর্থ্য আছে তারই আলাপন সুন্দর ও সহজ ভাবে রয়েছে।
ওষধয়ঃ সমবদৃন্ত সোমেন সহ রাজ্ঞা ।
যস্মৈ কৃনোতি ব্রাহ্মণস্তং রাজানং পারয়ামাসি।।
সেই বৈদিক যুগে কথোপকথনের ছলে দ্রব্যগুলিকে অনুশীলনের সূত্র দিয়েছেন প্রাচীন ঋষিগণ। পরবর্তীকালে অর্থাৎ সংহিতার যুগে সেটা গুরু-শিষ্য সংবাদে রূপান্তরিত হয়েছে । সেটাই আবার পরবর্তী যুগের #তদ্_বিদ্যসম্ভাষা, যাকে বর্তমানের ভাষায় বলা হয় #সিম্পোসিয়াম- এ পরিণত হয়েছে ।
বৈদিক গুরু সোমের নিকট মানবের কল্যাণে বৃক্ষরাজি প্রত্যেকের কি রোগ নিরাময় দক্ষতা আছে সেটিই যেন তাঁরা কথোপকথনের মাধ্যমে জ্ঞাপন করেছেন । সেই বার্তালাপে – কেউ বলছেন ” শ্বয়থুঃ গুড়ূচী”, আমি গুড়ূচী , ফুলো দূর করতে পারি । আবার কেউ বলছেন , ” নাশয়িত্রী বলাসস্য পৃশ্নিঃ”, ক্ষয়রোগ দূর করতে পারি আমি – পৃশ্নিপর্নী । কেউ নিজের গুণের পরিচয় দান করছেন – ” অর্শসঃ অপামার্গ ” । আমি অর্শ দূর করতে সক্ষম। “পাকায় নির্গুন্ডীঃ ” – আমি মুখপাক, ক্ষত, বাতরোগ দূর করতে পারি। আমি নির্গুন্ডী।
এই সমস্ত বার্তালাপের পর গুরু সোম আবাহন করলেন অন্যান্য শ্রেষ্ঠ বৃক্ষাদিকে ; ” পলাশ – ধব – তমালাসনাঃ ” অর্থাৎ পলাশ , ধব, তমাল , অসন প্রভৃতিকে। তারপর বললেন –
ত্যমুৎ মস্যেষধে বৃক্ষাঃ পরষ্পরা উপত্তিরস্তু।
অর্থাৎ উত্তম বৃক্ষগণ, তোমরা পরস্পরে মধ্যে পরিচয় পর্ব সম্পন্ন কর, বলো কে কোন কোন ব্যাধি দূর করতে পারো ?
এমনই কল্প প্রশ্ন ও বার্তালাপ তুলে বলা হয়েছে কে কোন্ কোন্ ব্যাধি দূর করতে পারে। নিজ নিজ রোগনাশক যোগ্যতার কথা সম্পন্ন হলে, গুরু সোম তখন সকলকে একত্র করে বললেন , আপনারা সকলে কল্যাণের জন্য কি সর্বত্র যেতে পারেন ? সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে, কোথায় কোথায় অর্থাৎ কোন কোন দেশে কোন গাছটির স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি হতে পারে ,এমনকি কোন প্রাণীর হতে পারে।
ওষধি গুন সম্পর্কিত আরো কয়েকটি সুক্তের উল্লেখ করছি।
শর-শণ-অঘদ্বিষ্ঠা দেবজাতা বীরুৎ শপথরোপণী।
বভ্ৰো অর্জুনস্য কান্ডস্য যবস্য তেলাল্য তিলস্য তিলপিঞ্জ্য।।
এইযে শর , শণ এরা মূত্র পাপ দূর করে। এই দৈবশক্তি বীরুৎ অর্থাৎ লতাগুলি, এরা গ্রন্থি ক্ষত প্রভৃতি রোপন করে , অর্জুন পত্র, অর্জুনের কান্ড এরা হৃদয় বল সঞ্চার করে। এইযে যব , তিল এরা – ক্ষার , উদরের তিমির দূর করে।
দশবৃক্ষ মুঞ্চমাং রক্ষসো গ্রাহ্যা
শং নো দেবী পৃশ্নিপর্ণ্যশম্।
পাঠমিন্দ্র জলায় ভেষজ
ইদং হিরণ্য্্ গুগগুলুঃ।।
অর্থাৎ অদৃশ্য অথচ ক্রিয়াশীল রাক্ষসগণ যে ইতস্তত বিচরণ করে সর্বপ্রকার প্রাণীদের এবং বৃক্ষলতাদির অহিত সাধন করে , পৃশ্নিপর্ণীদেবী তাদের নাশ করে সকলের হিতসাধন করে । ইন্দ্রবীজাদি এরা জলের অমৃত শক্তির মত হিত সাধন করে। এই যে গুগগুলু এও হিরণ্য শক্তি ধারণ করে। এই শক্তি সকলের
নিমিত্ত হিতকর। ইনি জলে মধ্যে আত্মগোপন করে সকলের সুখায়ু বর্ধন করে।
এরপর সেই উদ্ভিদগণ গুরু সোমকে বললেন –
ভূতার্থা প্রাণিনাং প্রাণাঃ বয়ং…
অর্থাৎ ,আপনি আমাদের প্রাণীগনের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করুন। তাদের এই প্রেরণা বাণী শুনে ওষধিরাজ গুরু সোম ঋষিদের বললেন –
ভূতার্থ চিন্তাংচোদয়েৎ …
অর্থাৎ , আপনারা জীবের কল্যাণের জন্য ভেষজগুলিকে উৎসর্গ করুণ । এনারা স্বতপ্রণোদিত হয়ে বলছেন , তাঁদের দেহ ও প্রাণ দিয়ে ভূত কল্যাণ করবেন ।
এইভাবে ভারতে ভৈষজ্যদীক্ষা প্রদান করা আছে বৈদিক সূক্ত গুলিতে।
এই বক্তব্য থেকে এটি পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে যে ভৈষজ্য বিদ্যায় পারদর্শী হতে গেলে তাকে সোমবিদ্যা অধিগত করতে হবে। অর্থাৎ ভেষজের রাজা হলেন সোম এবং সেই সোম আবার সৌরশক্তির অধীন। অর্থাৎ সর্ব ঊর্ধ্বে সৌরবিদ্যা, মধ্যে সোমবিদ্যা এবং পরে জানতে হবে রাজবিদ্যা ।
অপরপক্ষে আমাদের কাছে একান্ত শিক্ষনীয় এই ত্রয়ী বিদ্যা। আবার অন্যভাবে বলা যায়, অর্থাৎ দেহের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান শির মধ্যস্থ মস্তিষ্ক । এখানকার শারীরবৃত্ত অধিগত না হলে বল ,আরোগ্য এবং পুষ্টি দানকারী ভৈষজ্যশক্তিকে আবিষ্কার করা সম্ভব হয়না। রাজবিদ্যা, না জানলে দেশ,কাল, অবস্থা, পাত্র বিচার করে ভেষজ প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না। এখানে কিন্তু দ্রব্যের আহার্য রস ও বীর্যবত্তার পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞানের প্রয়োজন এবং সাত্ম্য বিচারটাও এই বিদ্যার অন্তর্গত। তৃতীয় হল সৌরবিদ্যা। এর দ্বারা প্রতিটি ভেষজের দ্রব্যশক্তি সোমধর্মী না সৌরধর্মী এবং গ্রহ, তিথি , নক্ষত্রের প্রভাব কবে এবং কখন সেটাতে প্রভাবিত হয় তার পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান এই বিদ্যার অন্তর্গত। এর মধ্যে আছে তাদের বসতিস্থানের পৃথ্বীগুন বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগানো । জলজ কুসুম বহু থাকলেও সূর্যালোকের প্রথম স্পর্শে পদ্মের ঘুম ভাঙে। এই যে তার ভৈষজ্য শক্তি তা, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এর দ্বারা তার গুণগত বৈশিষ্ট্য কোন ক্ষেত্রে এবং রোগ নিরাময়তাকে কি ভাবে প্রয়োগ করা যায় সেটি সৌরবিদ্যার অন্তর্গত।
প্রকৃতপক্ষে বৈদিক সূক্তগুলির মধ্যে সোমবিদ্যা, রাজবিদ্যা এবং সৌরবিদ্যাই সংহিতার কালে এসে ত্রিধাতু রূপে প্রকাশিত হয়েছে । সেই ত্রি ধাতুর উল্লেখ ব্যাস কৃত চরণবূ্্যহের একটি অংশে এবং ঋক্ বেদের ১/৩/৬ সূক্তে পাই –
ত্রির্ণো অশ্বিনা দিব্যানি ভেষজাং শং যো সোমা , তেজসা যৎ সদস্তং ত্রিধাতু শর্ম বর্ধতাং।
এই সূক্তের ভাষ্যে আচার্য সায়ন বলেছেন –
ত্রিধাতুরিতি বাত পিত্ত শ্লেষ্ম ধাতু ত্রয়োপশমং শর্ম বহতাং।
অর্থাৎ সূক্তোক্ত ধাতু অর্থ হলো বায়ু-পিত্ত-কফ এবং তারায় সোম, তেজস, অপ্।
পরবর্তীকালে আচার্য এবং পন্ডিতগণ আরোও বিশদীভূত ভাবে অখিল জগতের স্থাবর জঙ্গমের মধ্যে বায়ু, পিত্ত ,কফ এর তিনটি ধাতুকে পঞ্চভূতেরই সম্পূট রূপে দেখেছেন । অর্থাৎ বায়ুর আকার-প্রকৃতি বিশ্বের সর্বত্র ব্যাপ্ত । পিত্তের এবং কফেরও । ঋষি, পন্ডিতগণ মানবাদি প্রাণীর মধ্যে বায়ু , পিত্ত , কফের স্বাভাবিক প্রকৃতির মতোই বৃক্ষলতাদিরও আকৃতি প্রকৃতিতে সাম্য দেখেছেন। তাঁরা সেই যুগে আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন যে ক্ষিতি, অপ্, তেজ ,মরুৎ ,ব্যোম এর মধ্যেও বায়ু-পিত্ত-কফের কোন গুণের আধিক্য আছে।তার সঙ্গে সাম্য দেখে নির্বাচন করেছিলেন বিশ্বব্যাপী ত্রিধাতুর প্রাধান্য অপ্রাধান্য।
প্রাচীন ঋষি, পন্ডিত, আচার্যগণ মানবদেহের দীর্ঘ, স্থূল, কৃশ , মধ্যম খর্ব এবং গৌর, শ্যাম ,কৃষ্ণ ,রক্তাভ প্রভৃতি বর্ণের সাম্য দেখেছেন বৃক্ষলতাদির মধ্যেও । এই সাম্য জ্ঞানই তাঁদের প্রকৃতি বিকৃতির সাম্য অসাম্য জ্ঞানের প্রেরণা অনুশীলন জাগিয়েছে ।
তাই বৃক্ষলতাদির প্রাণীদেহে সুস্থতার মধ্যে ঐক্য দেখেছেন বলেই স্থাবর জঙ্গমের মধ্যেই গুণগত , রূপগত, কর্মগত ক্ষেত্রেও তাদের মধ্যে ঐক্য দেখেছেন তাঁরা।
আবার সেই ঐক্য অনৈক্য বোধটির মধ্যেই তাঁরা দেখেছেন কালগত তারতম্যের সৃষ্টি হচ্ছে । একের অনৈক্য অপরের অনৈক্য না হওয়ার কারণও প্রাকৃত বৈষম্যের তারতম্যের জন্য। অনৈক্যই ব্যাধি সৃষ্টির মূল। ঐক্যই সুস্থতা। এরূপ আদর্শবাদই আয়ুর্বেদের মৌলভিত্তি।
সত্য কথা বলতে কি ,বর্তমান নববিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে এই সমস্ত গাছগাছড়া থেকে তৈরি ঔষধ রোগনিরাময়ের উপায় বলে সাধারণত গৃহীত হয় না। কিন্তু বিভিন্ন প্রাচীন পুস্তকগুলোতে ভেষজ ঔষধি গুনাগুন বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে । দেহের কোন ধাতুর বিকারে কি ধরনের রোগ উৎপত্তি হয় তার সংবাদ দিয়ে এই আলোচনা এক নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে।
আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে
আমার ভয়ভাঙা এই নায়ে ।।
মাভৈঃ বাণীর ভরসা নিয়ে ছেঁড়া পালে বুক ফুলিয়ে
তোমার ওই পারেতেই যাবে তরী ছায়াবটের ছায়ে ।।
বর্তমানে যেই ভীষণ অতিমারী প্রকোপ দেখা গেছে হয়তো তারও কোন নিরাময়ের উপায় এই প্রকৃতির মধ্যেই লুকিয়ে আছে । আয়ুষ প্রকল্পকে আরো বেশি ভাবে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারি তাহলে হয়তো পৃথিবীতে এই সুপ্রাচীন ভারত তাঁর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবেন। যা কেবলমাত্র রোগ নয় , রাজনীতি অর্থনীতি, সমাজনীতি সকল ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করবে। আজও চিকিৎসক কিংবা সাধারণ সকলেই অসুখ হলে পথ্য বিবেচনার বিষয়ে সমস্যায় পড়েন। যে কোনো অসুখ হোক , সাগু ,বার্লি , ডাবের জল,হলুদ দুধ, আপেল, ন্যাস্পাতি ছাড়া আর হালকা ঝোল সহ গলাভাত বা সেদ্ধ ভাত ছাড়া আমাদের কোনো খাদ্যই ভাবনায় আসে না। কেটে গেলে এখনো তো ক্ষতে তৎক্ষণাৎ কিছু না পেলে হলুদ লাগাই! রোগের সূচনা হলে তার নিদান ও বিকাশে এবং রোগ নিরাময়ের সময়েও প্রচলিত ভারতীয় খাদ্য হতেই পৃথক পৃথক পথ্যের নির্দেশ দেওয়া যায় সেই সম্পর্কে বেদ হতে সংহিতা যুগের প্রাচীন গ্রন্থ গুলিকে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
অতীতের সঙ্গে বর্তমানের , পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বৈজ্ঞানিকতার , প্রজ্ঞার সঙ্গে রস বোধের এক মেলবন্ধন করা একান্ত প্রয়োজন।
পথ আমারে সেই দেখাবে যে আমারে চায়-
আমি অভয় মনে ছাড়ব তরী, এই শুধু মোর দায় ।
দিন ফুরালে, জানি জানি, পৌছে ঘাটে দেব আনি
আমার দুঃখ দিনের রক্তকমল তোমার করুণ পায়ে ।।
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১. চিরঞ্জীব বনৌষধি
২. আয়ুর্বেদোক্ত উদ্ভিদ সংগ্রহ