রাজ্যজুড়ে ঝড় আসছে! কি বিশ্বাস করছেন না তো? এখনও দেখতে পাচ্ছেন না সেই ঝড়! সে কি, আর তো দিন কয়েকের মধ্যেই ঝড় উঠবে প্রবল বেগে, এই ঝড় অনেক কিছুই লন্ডভন্ড করে দিতে পারে!

মাস দু’য়েক আগে এই ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়েছিলেন জনা চারেক সিপিএম নেতা। বসন্তের শুরুতেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন পুরুলিয়ার বাগমুন্ডি এলাকায় এক আদিবাসী। খালি পায়ে হেঁটে যাওয়া সেই প্রৌঢ় বলেছিলেন, বাবু আমার পায়ে জুতো নেই, কিন্তু আমার বাড়িতে মাথার উপরে ছাদ রয়েছে। সেই ছাদের তলায় এখন আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি। আমাকে ঘর দিয়েছে মোদীবাবু। মোদীবাবুকে যদি না দিই তাহলে ধম্মে সইবে না। এটা ছিল প্রথম পূর্বাভাস। তারপর ধীরে ধীরে একে একে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই পূর্বাভাসের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। একই পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদরে। সেখানে এক চায়ের দোকানের প্রৌঢ়া, তিনিও দিয়েছিলেন ঝড়ের পূর্বাভাস। তাঁর দোকানে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আসেন, বসেন, আড্ডা দেন, চা খান। কিন্তু একদিন হঠাৎ তিনি তাদের আলোচনায় অংশ নিয়ে ফেলেছিলেন। বলে ফেলেছিলেন না, দেশ রক্ষার জন্য মোদীকেই দরকার। এই ঝড়ের পূর্বাভাস আবার পাওয়া গেল গত ৩ এপ্রিল। ব্রিগেডের মঞ্চে তখন নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ চলছে। একটি বাড়িতে রাজমিস্ত্রিরা কাজ করছেন। রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ে এক প্রৌঢ়া সেই বাড়ির গিন্নিকে বলে বসলেন দিদি, মোদী কী বলছে একটু আমাকে জানাবেন তো। এ তো ছিল ছোট ছোট পূর্বাভাস। তারপরে এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়ে গেল ঝড়।

দিন কয়েক আগে দক্ষিণ দিনাজপুরেও একটা ঝড় উঠেছিল। আমরা প্রায়দিনই দেখি পথেঘাটে কেউ যদি কাউকে মারধর করে কেউ তার প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। দেখা যায় লোকজন লোক চুপচাপ দাড়িয়ে দেখছে এক নিরীহকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটাচ্ছে। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। কারণ তাহলে তাকেও মার খেতে হবে। এই ভয়টা সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই আছে। কিন্তু গত সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ফতেনগর বাজারে দেখা গেল উল্টো চিত্র। সেখানে এক রাজনৈতিক দলের কর্মী এসেছিলেন বাজারে। হঠাৎ তাঁকে ঘিরে ফেলল বাইক বাহিনীর কিছু সদস্য। তারা বাইক থেকে নেমেই তাকে উত্তম—মধ্যম দিতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তাওরা তাকিয়ে দেখে বাজারে আসা সাধারণ লোকজন দলবেধে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের চোখ মুখের চেহারা দেখে বাইক ফেলে রেখেই দৌড়াতে শুরু করলো হামলাকারীরা
কিন্তু সেই ঝড় তাদের পিছু নিল। তাড়া করে ধরতে না পারলেও সেই ঝড় টর্নেডোর আকার নিয়ে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় গিয়ে বাইক বাহিনীর ডেরা—একটা ক্লাবঘর গুঁড়িয়ে দিল।

আবার সোমবারই ঝড়ের পূর্বাভাস দেখা গেল বর্ধমান শহরে। পাহাড় থেকে সমতলে নেমে আসা ওই ব্যক্তি প্রথমে বুঝতে পারেননি যে ঝড় হতে পারে। তিনি যখন পুজো দেওয়ার পরে সাধারণভাবেই মিছিল করে এগোচ্ছিলেন হঠাৎ কার্জন গেটের কাছে এসে থমকে গেলেন। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলেন অজস্র কালো মাথা, আর স্লোগান উঠছে মোদী মোদী। তিনি ভড়কে গেলেন! হঠাৎ সেই ঝড় নেমে এলো, ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল জিটি রোড। স্তব্ধ হয়ে গেল যান চলাচল।
আর তার পরের দিনই মঙ্গলবার ছোট্ট একটা ঝড় উঠলো বীরভূমের সিউড়ির হাটজন বাজার কলোনীর মাঠে। সেখানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী পূর্বাভাস পেয়েছিলেন যে ওই গ্রামে একটা ঝড় উঠতে পারে। রাস্তায় সেই নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। তিনি ভেবেছিলেন ঝড়কে কাটিয়ে যাবেন। সেই চেষ্টায় কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু ঝড় যখন খবর পেল তাদের কাটিয়ে সেই নেত্রী অন্য গ্রামে চলে গেছে। তখন হঠাৎ শ’তিনেক মানুষের সেই ঝড় প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করলো যাতে প্রার্থী পালিয়ে যেতে না পারে। শ’তিনেক মহিলা পুরুষ প্রার্থীকে ঘিরে ধরে পানীয় জলের দাবি জানাতে শুরু করলো। প্রার্থী কোনও রকমে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচলেন।

এই ঝড়ের পূর্বাভাস শুরু হয়েছিল পুরুলিয়াতে। কিন্তু নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল সেই নিম্নচাপের প্রথম প্রকাশ পেল উত্তর দিনাজপুরে। সেখানে হঠাৎ ভোট কর্মীরা আওয়াজ তুললেন আমরা আর রাজকুমার হতে চাই না। আমাদের নিরাপত্তা চাই। অসংগঠিত সেই ঝড় ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পরল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থেকে হুগলির ভদ্রেশ্বর, শ্রীরামপুর, আরামবাগ, উলুবেরিয়া, হলদিয়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ছাড়িয়ে খোদ রাজধানী কলকাতাতেও। এই নিম্নচাপ ছোট ছোট হয়ে তৈরি হয়েছিল গ্রামে-গঞ্জেও। তাই যখন জলপাইগুড়ির এক অখ্যাত গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে বলল আপনারা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন, তখন রাজগঞ্জ ব্লকের ভাঙ্গামালির নাজিমা খাতুন বলেছিলেন গতবারে তো দিতে পারিনি। বিএসএফ এসে গেল এবার হয়ত আমরা দিতে পারব।
এই নিম্নচাপে তৈরি ঝড় যে কোনও সময় আছড়ে পড়ার অপেক্ষায়। সেই ঝড়ে অনেক কিছুই লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। সেই ঝড়ের পূর্বাভাস কিন্তু খানিকটা বুঝেছেন কেউ কেউ। আপনি বুঝতে পারছেন না তাদের চোখে মুখের অবস্থা? তাদের বক্তব্যের ধার কমে গেছে। এই ঝড় শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যাবে ১২, ১৭ না ২৩—এ, উত্তর মিলবে তেইশেই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.